ইদানিং যতবারই তোমার সাথে দেখা হয়, ততবারই আমি চমকে উঠি। চলতি পথে এক চিলতে জানালার ফাক দিয়ে তোমাকে দেখি আর ভাবি এটাই কি সেই তুমি? কোথায় তোমার সেই উচ্ছল, দূরন্ত, প্রানবন্ত, সর্বনাসী রুপ? যা দেখে আমি বার বার তোমার প্রেমে পড়েছি আর নিজেকে প্রস্তুত করেছি কোন এক প্রচন্ড দূরন্ত যুদ্ধের জন্য। সকল প্রেমই হয় স্বার্থ ও শর্তবিহীন। তাই তো তোমার প্রতি ছিল না আমার কোন স্বার্থ ও শর্তের দেয়াল। শুধু তোমাকে আঁকড়ে ধরে নতুন করে বাঁচতে চেয়েছি। দীর্ঘদিনের হৃদয়ের দাবিগুলো মেটাতে চেয়েছি। আর চেয়েছি তোমাকে নিয়ে সফলতার উচু পর্বত থেকে দেখতে নতুন দিনের প্রথম সূর্য। কিন্তু তুমি কথা রাখলে না। তুমিও হয়ে গিয়েছ সেই সব কথা না রাখা প্রেমিকাদের মত। যারা ভালোবাসার দাবি দেখিয়ে ভালোবাসাই এড়িয়ে যায়। আচ্ছা, এত ভালোবাসার দায় কিভাবে তুমি এড়াতে পার?
তুমি এখন পড়ে আছো নির্জিব হয়ে। নির্লিপ্ত তোমার রঙ ফ্যাকাশে। তোমার সেই সব আদুরে, শিহরন জাগানো রং গুলো সব বিবর্ন হয়েছে। তুমি দিন দিন ফ্যাকাশে থেকে শুধু ফ্যাকাশেই হয়েছ। অনেকটা যেন রক্তচোষা কোন প্রানী প্রবল আক্রোশে চুষে খেয়েছে সকল রক্ত। তোমার অবস্থা দেখে আমার গ্রীষ্মের পাকা রসালো আমের কথা মনে হয়। রসালো পাকা আম যেভাবে চুষে খেয়ে ছুঁড়ে ফেলা হয় শুধু ছোবড়াটাকে, তোমার দেহকে তারা আজ অনেকটাই তেমন করেছে। তুমি আজ আর রসালো নও, শুধুই ছোবড়া।
তোমার দেহ এখন আর উত্তাপ ছড়ায় না, তোমার স্পর্শে এখন আর আমি শিহরিত হই না। বরং ঠান্ডা নির্বিষ জিনিসে আমার করুনা হয়, বড্ড করুনা। চলতি পথে যখন তোমাকে দেখি তখন আমি চোখ বন্ধ করে ফেলি। বন্ধ চোখে করি কল্পনা, খুঁজে ফিরি সেই আগের উষ্ণতা, আমার প্রিয় সেই উষ্ণতার রাত, যেই ঝড়ের রাত। আমার অনেক কষ্ট লাগে, যখন দেখি তোমার বুকের হতাশার চাপা দীর্ঘশ্বাসে আমার চুলগুলো এলোমেলো হয়, আমার অনেক কষ্ট লাগে যখন দেখি তোমার পরিধি কমে আসছে, তুমি চলে যাচ্ছ বিস্মৃতির অতল গভীরে। তোমাকে ব্যবহার করে তোমাকে ছুঁড়ে ফেলেছে রাস্তায়। সেই রাস্তায় এখন শুধু ধুলো আর ধুলোদেরই রাজত্ব।
হে আমার প্রিয় গল্পের মৃত প্রেমিকা, হে আমার প্রিয় শাহবাগ, যখন তোমাকে দেখি তোমার শরীর জুড়ে ছড়ানো শুধু মৃত সব ফুলেদের পাপড়ি, যখন দেখি তোমার প্রানকেন্দ্রে হতাশ কোন এক যুবকের উদভ্রান্ত চাহুনী তখন আমার বড় কষ্ট হয়। জোরে দীর্ঘশ্বাস ফেলি না ভয়ে, শুনেছি প্রতারিত প্রেমিকের দীর্ঘশ্বাস কালবৈশাখী ঝড়ের মতই ভয়ংকর। আমি চাই না, তুমি আরো লন্ডভন্ড হও, তাই দীর্ঘশ্বাসগুলো আমার বুকেই কেবল ঝড়ের মাতম তোলে। আমার বুকে উঠে শুধু বিষন্ন ভয়ংকর ঝড়ের তান্ডব। আমি খুব চাই এই তান্ডব গুলো প্রকাশ পাক, তান্ডবে ধ্বংশহোক তোমার গায়ে লেগে থাকা রক্তচোষা পরগাছাগুলো। আমি আবারও তোমার জন্য রাজপথে নামতে চাই, আবারও তোমার স্তুতি গাইতে চাই, তোমাকে ভালোবাসতে চাই, তোমার মাঝে প্রানের ছোঁয়া আনতে চাই। প্রতিশোধের কালো মেঘগুলো হৃদয়ে জমাট বেধেছে। থেকে থেকে সেখানে বজ্রপাত হচ্ছে। ঠান্ডা বাতাসও বইছে। এখন অপেক্ষা শুধু বর্ষনের
** শাহবাগ আন্দোলনের প্রথম সেই দিন গুলোর কথা ভেবে লিখা।