প্রিয় নীলা,
এই মাত্র তোমার হাতের চিঠি পেলাম,
বরাবরের মতই নীল খামে পাঠিয়েছ ভালোবাসার চিঠি।
আচ্ছা, বল তো নীল রং দিয়ে কি বুঝাও তুমি? ভালোবাসা?
কি জানি, হবে হয়ত।
বেশ গোটা গোটা অক্ষরে লিখেছ তুমি -
-ভালোবাসা, তোমাকে ভালোবাসি আমি,
-ভালোবাসা, আমার স্নিগ্ধ ভোরবেলা কাটে শুধু তোমার কথা ভেবে।
-ভালোবাসা, আমার ক্লান্ত দূপুর কাটে শুধু তোমার ছবি এঁকে,
-ভালোবাসা,আমার রক্তিম গোধুলী আরো রক্তিম হয় শুধু তোমায় ভেবে ভেবে।
-ভালোবাসা, আমার একাকী রাত্রিগুলো আরো দীর্ঘ হয়, শুধু তোমার অভাবে।
-ভালোবাসা, আচ্ছা এত কিপটে কেন তুমি?
-প্রতিদিন তো কথা ছিল একটা করে চিঠি পাবো আমি।
আমি চিঠি পড়ি আর হাসি,আরো কত কি যে লিখেছ তুমি।
তোমার এক একটা অভিমান জড়ানো কথা যেন,
এক একটা নতুন কোন ভালোবাসার চিঠি।
তোমার ভালোবাসার এক একটা সরল স্বীকারক্তিতেই
জীবনের পূর্নতা খুঁজে পাই আমি।
তোমার চিঠিতেই পেয়েছি আমি,
তুমি আর তোমার ভালোবাসাময় এই জীবন।
তোমার এই দূরত্ব আমাকেও ক্লান্ত করে দেয়,
তাই তো আমি এবার আমাদের স্বপ্ন কিনেছি,
আমাদের সেই ছোট্ট বাসা, নীল পর্দা,
বারান্দায় চেয়ার এবং চায়ের কাপের স্বপ্ন।
তুমি ছাড়া এই শহরে বড় একলা লাগে,
তুমি ছাড়া আমার স্বপ্নগুলো হতাশায় ভোগে।
তাই, তোমার চিঠিগুলো পড়ে বেঁচে থাকি আমি,
চিঠিগুলোর নেশাগ্রস্ত আমি।
আচ্ছা এত ছোট চিঠি লেখ কেন তুমি?
কি ব্যাপার এখনও অভিমানে তুমি?
উফ! এত ছেলেমানুষ কেন তুমি?
আচ্ছা বাবা যাও, ভুল স্বীকার করছি আমি।
আমি তো কবিতা পারি না, তাও কবিতার ছন্দে বলি,
-লিখিনি তোমাকে চিঠি, আসছে মাসেই আসছি আমি বাড়ি।
-লাল ফিতা, চুড়ি, শাড়ি সবই কিনেছি আমি,
-আরো কিনেছি, আলতা, টিপ সব-ই পরাবো আমি।
-অনেক আদর দিয়েছ তুমি, আমার পালা বাকি,
-ভালোবাসার রং যে লাল, এবার জানবে তুমি।
- আসছি আমি বাড়ি।
পরিশিষ্টঃ
বাংলামটরে বাস চাপায় এক যুবক নিহত। নিহতের তেমন কোন পরিচয় পাওয়া যায়নি। শুধু বুক পকেটে এই লাল রক্ত মাখা চিঠিখানি পাওয়া যায়।
আর নীলার ভাগ্য কি ঘটেছিল, তা জানা যায় নি।