সাদা কচ্ছপ আর কাউয়া পাখি
মৌসুমী কাদের
সাদা চামড়ার ভিখেরী সুং লি’র সামনে দাঁড়িয়ে ভিক্ষে করছে, ‘স্যার একটি ডলার দান করুন-নিনজাস কিলড মাই ফ্যামিলি, কারাতে শিখবার জন্যে এখন আমার ডলার প্রয়োজন,’ সারাজীবন ভিখেরী মানে বুঝেছি অভুক্ত থাকা, জীর্ণ অবসন্ন মানুষ আর কালো অথবা বাদামী চামড়া। আজই প্রথম প্যান্ট টি-শার্ট পড়া সাহেব ভিখেরী দেখে অভিভুত আমি। বাহ এইতো কত সভ্য ভিখেরী।
কালিগঞ্জ বাজারে যতবার গেছি, বটগাছের নিচে সারি সারি ভিখিরী, থালা নিয়ে বসে আছে, বাজারে, দোকানে, খালপাড়, মুন্সিবাড়ী, সবখানে মানুষের ভিক্ষের থালা। মনে মনে কষ্ট পেতাম আর মুখ শুকনো করে মাটির পথ ধরে হেটে ফিরতাম । দাদার বাড়ীতে পাশাপাশি অনেকগুলো পরিবার ছিল। দাদার চাচাতো ভাই। তার ভাই, তারও ভাই, তারও ছেলেমেয়েরা। আবার তাদেরও ছেলেমেয়েরা। এরা কেউ পড়াশুনা করলনা। পুরো বাড়ী জুড়ে শুন্য থালা বাড়তেই লাগলো। দালান খসে টিনের ঘর, সেও খসে মাটির ঘর। এর পর শুধু পড়ে রইল ভিক্ষের থালা।
ইচ্ছে করে পকেট থেকে গোটা এক ডলার বের করে সাদা ভিখিরীর হাতে দিলাম। সে খুশী হয়ে আমাকে শপিং কার্টটা কাছে টেনে দিল। পকেটে মুঠো ফোন ভোঁ ভোঁ বাজছে;
- হ্যালো, মুশুমী? দিস ইস পাওলা হেয়ার
- ইয়েস ইয়েস পাওলা, কি খবর? ক্যামন আছো? আমার জন্য কি কোন খবর আছে?
- নো নো, নট ইয়েট, তোমার তিন নম্বর ইন্টারভিউটা দিতে হবে, কারন দুজন সাদা প্রাইমারিলি সিলেক্ট হয়ে আছে।
-তিন নম্বর? এ তো দেখি কঠিন পরীক্ষা!!! বিসিএস! সিটিজেনশীপ! মাই গড, আমাকে কি আসলে নেবে তোমরা?
-হতাশ হোয়োনা মুশুমী, এটা ‘মাল্টিকালচার’ এর দেশ, তুমি জানোনা? চেষ্টা করো, ওকে?
আমার কান গরম, জিরো ট্রান্সফ্যাট তেল, চিপস, উঠে গেল শপিং কার্টে, ফিলিপিনো মহিলা ব্যাগের ভেতর কাঁকড়া তুলছে, নেড়ে নেড়ে দেখছে, তরতাজা কিনা, তাজাগুলো সুরসুর করে যেই দৌড়ে পালাতে চাইছে ওমনি বদ ফিলিপিনো খপ করে সেগুলোকে ধরে ধরে ব্যাগে ঢুকাচ্ছে। মানুষ, হার্ডলস রেইসে কোন না কোন কালে হুমরি খেয়ে পড়ছেই। মানুষের পেছনে কত মানুষ। তার পেছনে কাঁকড়া। তাদেরও বাঁচার সম্ভাবনা নাই।
বড় বড় শত বছরের কোম্পানীগুলোর ছাটাই বাড়ছেই। স্কুলেও বাজেট নাই, শিক্ষক নাই। সাদা ভিখিরী কি ট্যাক্স দ্যায় নাই? হায় ভাগ্য !! ওর স্ত্রীর চাচাত ভাই ওবামা আর খালাত ভাই হারপার টার্কি আর মদের দাওয়াত দিয়েছিল। লোভী ভিখিরী সেই দাওয়াতে আফিমও খেয়েছিল বেশ। তারপর আরো একধরনের নেশাযুক্ত সন্দেশ। নেশায় নেশায়…ঘুম ঘুম আর ঘুমের মধ্যে চেয়েছিল সব সমাজ পরিবর্তন! পরিবর্তনের জন্যে চাই অস্ত্র। সেইটি যোগাড় করতে গিয়েই যতসব ঝামেলা! ওরা লু্টপাট করে বাড়ী ঘর জ্বালিয়ে দিয়ে গেল। সাদা মানুষটি ভিখিরী হয়ে গেল।
সাদা ভিখিরীকে প্রশ্ন করলাম,
- তোমার নাম কি?
- কচ্ছপ
- মানে কি? ফাইজলামি মারো মিয়া আমার লগে?
- না, ফাইজলামি না। আমার নাম নাই। হয়তো ছিল কোন এক কালে এখন মনে নাই।
- তাইলে, তোমার নামযে কচ্ছপ এইটা মনে থাকলো ক্যামনে?
- কারন, এই মুহুর্তে খপ কইরা তোমার গলাটা ধইরা টিপা খায়া ফালাইতে ইচ্ছা করতেসে।
- ক্যান? আমি তোমার কি করছি?
- তুমি আমারে জ্বালাইতেস?
ওই মিয়া, কে কারে জ্বালায়! আমার ঘারে চইরা, আমার ডলার নিয়া এখন তুমি আমারেই খাইতে চাও
- ইয়েস, চাই, তোমারে খামু, খায়া…আবার গলাটা পেটের মধ্যে ঢুকায়া বইসা থাকুম। মানুষ হত্যার দায়ে তখন তোমরা চিক্কইর পারবা, থানা পুলিশ করবা, আমি কিছুই শুনুম না…
- হা হা হা, হত্যা করবা ক্যামনে?
- অনেক তরিকা আছে আমার, স্লো, ফাস্ট, মিডিয়াম, সিক্রেট, ওপেন, …কোনডা চাও?
-স্লো টা ইন্টারেস্টিং মনে হইতাসে
- কল মাই গালফ্রেন্ড…মোবাইল আসেনা তোমার? ফোন লাগাও…
-তোমার গার্লফ্রেন্ড্রে আমি ক্যান ফোন দিমু
-ক্যান? তরিকা দেখবার চাও, কাম করবানা এইডা ক্যামুন কথা……।ফোন দাও মিয়া……।
-রিং যাইতাসে……
-ধরলে কইবা, হোয়াইট বেগারের কিডনী নষ্ট হয়া গ্যাসে…হাসপাতালে ভর্তি
-কি? যদি জিগায়, কাইলকেই না দেখা হইল, আইজকাই আবার সবনষ্ট হয়া যায় ক্যামনে?
-কোবি, হঠাৎ কইরা ধরা পড়সে, ডলার লাগবো,
-আমি পারুমনা।
-তইলে তোর পকেটে যা যা আসে বাইর কর। অই দিক্কইর পারবিনা………চুপ চুপ শালার পুত…
২০ ডিসেম্বর, ২০০৯ টরন্টো, কানাডা