আমার চোখের নিচেই একটা কাটা দাগের চিহ্ন-
শৈশবের দুরন্তপনার চিহ্ন হয়ে যা এখনো সাবলিল।
মাঝে মধ্যে তুমি কাতর হয়ে আমার কাটা চিহ্নটা ছুয়ে দাও।
তোমার কন্ঠ হতে মেঘচূর্ণের মত ঝড়ে পড়ে আফসোস।
এটা নাকি আমার আমার চেহারার কলঙ্ক যা
আমকে আরও অসুন্দর করেছে ।
আমি তোমাকে বোঝাতে কখনোই চাই নি যে
এই কলঙ্কের
নিচে বয়ে যাওয়া প্রতি বিন্দু রক্ত কনা আমার গর্ব। আমার
চোখের নিচে বাকানো এই ক্ষতটাকে আমি বলি নদী ।
সেই নদী-
চরাচর প্লাবিত করে যা একবার কেড়ে নিয়েছিল
এক কিশোরের সম্মোহন।
তুমি হাসো
মমতায় হাত বুলিয়ে দাও ক্ষতে।
আর গভীর ভালোবাসায় আপ্লুত আমি
অনর্গল বৃষ্টির ঝমঝম শব্দে
চোখ বুজে অন্ধকারে জেগে থাকি।
আমি আমার মুখটাকে এই বাংলাদেশ হয়ে
শতাব্দির প্রথমার্ধে
হঠাৎ নড়ে উঠতে দেখি। আশ্চর্যরকমভাবে
আমার দুটি চোখ পদ্মা মেঘনা হয়ে
তোমার সব উপকূল প্লাবিত করে। আমার
ঠোঁট একদা কথা বলতে চেয়ে
বুলেটে বিদীর্ন হয়ে নির্বাক হয়ে গিয়েছিল। তারপর
তুমি তোমার শিল্পকে উজাড় করে সেই ঠোঁটের উপর নির্মান করেছো ভষার মিনার।।এই মিনার দিয়ে
শব্দ শুকতে শুকতে তোমার নগ্ন বুকের ভেতর আমি
উপযুক্ত উপমা পেয়ে আকুল হয়েছিলাম ।
তুমি জানো।
আমি হাসলে আমার দরিদ্র ও নোংরা দাঁত বেরিয়ে পড়ে।
ক্ষুদ্র কিন্তু ধারালো
তুমিতো জানোই ্
এই অপরিপক্ক আটাশটি দাঁত চব্বিশ বছরের তুমুল দ্রোহে
কামড়ে ধরেছিল শোষনের হাতিয়ার। ছিন্ন করে দিয়ে
শোষকের সব পতাকা
এক উতকীর্ণ সকালে ঝলক দিয়ে হেসে উঠেছিল।
তুমি সেদিন আমার পাশে ছিলে।
তোমার বাহুতে
একটি চুম্বন করে আমি স্বপ্নের সোপানে ঘষে ঘষে
অতঃপর ভোতা করে দিয়েছি সেই দাঁতগুলো।
কারন –
অনর্গল স্বাধীনতার হাসি ছাড়া তুমি আমার কাছে কিছু চাওনি।
নক্ষত্রঝড়া সাবলিল সুখে হারিয়ে গিয়ে
তুমি বারবার আমাকে উপহার দিতে চেয়েছো শাব্দিক সুখ।
আমার বাম চোখের নিচে এই দাগ।
তোমার চোখের জল এখানে লেগে আছে।
তোমার কাতর আফসোস বারবার আমাকে বিব্রত করে দিয়েছে।
কিন্তু তুমি কি জানো এটা আসলে কী?
আমার আগুনভরা চোখের নীচে শুয়ে আছে আসাদের লাশ।
কতটুকু জানো তুমি-
আমি প্রত্যহ আমার চোখের জলে
চিরন্তন এই লাশের শরীর ভিজিয়ে আস্তে করে উচ্চারন করি একটি শব্দ
-বাংলাদেশ...
আসাদের লাশ চোখের নিচে নিয়ে
আমি আকাশে তাকিয়ে থাকি।
আকাশে রং-
আকাশে আসাদের আততার ওড়াওড়ি
আর রামধানু রং নিয়ে
আকাশে আরাধ্য আবীর।
এখন আমি আর কোথায় যাব?
তোমার
চোখের মধ্যে পুরে যাবতীয় স্মুতি
নিশ্চিত
হারিয়ে যাব। নত্রঝড়া নগ্ন রাতে
নেমে এলে উদাস শ্রাবন
ভেবো-
আমি আছি।
আসাদকে সঙ্গে নিয়েই আছি।