একমুঠো অন্ধকার নিয়ে একা দাড়িয়ে আছি । কোথায় যাব? আমরা যেখানে বাস করি তার নাম রাষ্ট্র। আর আমরা যেখানে বাস করি তার নাম অন্ধকার। একমুঠো অন্ধকার রাষ্ট্র হাতে নিয়ে এখন আমি দাড়িয়ে আছি।
রাজনীতির কথা তবে থাক। এসো, আমরা এই অন্ধকারে কিছুটা বাতাস এবং চাঁদের গল্প করি। কিংবা আমরা অঙুলি উচ্চকিত ঐ সীমাহীন মেঘের দিকে যেগুলোর শরীরে তারা লুকিয়ে রেখেছে অজস্্র শ্রাবন। বোঝ, কী বিষন্নতা ! রোদের দেশে থেমে গেলে কোলাহল, নির্জন দুপুরে তুমি মালা গাঁথতে বসে যাও। তোমার সৌরভকে অতিক্রম করে যায় ফুলের সৌরভ, তোমার স্বপ্নকে বেছে নিয়ে হেঁটে যায় রোদ- আর আমার গৃহে নির্বাচন নিয়ে দাড়ায় কাঙাল জ্যোৎøা। অথচ নিজের ব্যাপারে আমার কোন নির্বাচন নেই। বোহেমিয়ান শব্দমালার পিছু পিছু ছুটতে ছুটতে আমি এমন এক বন্দরে এসেছি যেখানে নোঙর ফেলে অজস্র উপমা নিঃসঙ্গতায় বুদ হয়ে আছে। আমি সেই নিঃসঙ্গতাকে স্পর্শ করতে গিয়ে চমকে উঠেছি । পরাজীত প্লাবনের সামনে দাড়িয়ে থাকতে দেখেছি সে পুরুষকে- আর কৃতার্থ কন্ঠে উচ্চারিত হয়েছে নূহ ! অথচ শব্দমালার কাছে পরাজীত হয়ে আমি এখন এই বিসন্ন নগরের সর্বশেষ আলো নিভে যাওয়ার প্রত্যাশায় নির্ঘুম জেগে থাকি। আর আমার হাতে একমুঠো অন্ধকার প্রান্তিক আয়োজনে নাচতে থাকে। আমার হাতে রোদের পৃথিবীর সর্বশেষ সমাধিতে ফলক লিখতে থাকে পরাজীত কবিতার দল।
তোমাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম ”কবিতা কী?” তুমি বলেছিলে প্রিয়তমার নীল নাকফুল হল কবিতা। তুমিহীন এখন আমি কোন সেই নীল নাকফুলওয়ালা কোন নারীর কথা ভাবতে পারি না। অতএব এসো, পর্যাপ্ত পর্বনে আজ তোমার তোমার নাকফুলে আমি লেপ্টে দেই খানিকটা অন্ধকার- দুলে উঠুক ঢাকার মাঝরাত, আর নিরন্ন পৃথিবীতে এক যুবতীর নাকফুল অন্ধকারে অলংকৃত হয়ে আমাকে দিক সম্মোহিত নির্বাচন। কিংবা খানিকটা বিবস্ত্রা হও তুমি। তিব্বতের সৌন্দর্য্যে আপ্লুত তোমার স্তনে আমি এই নাগরিক যন্ত্রনার শেষ সম্মোহন মেখে দেই। স্বীকার্য হও তুমি। কিংবা নূহের প্লাবিত পৃথিবীর সামনে একমাত্র জোড়াহীন প্রানী হিসেবে ঈশ্বরের সামনে মেলে ধর তোমার একজোড়া অন্ধকারে অলংকৃত স্তন। আজ ঈশ্বর তৃপ্ত হোক। মুগ্ধতা যদি হয় মূর্খতা তবে কসম হে যুবতী- পৃথিবীর প্রতিটি প্রান্তরকে তুমি তোমার বুকের সৌন্দর্য্যে মূর্খ করে দাও।
ততণে তোমার উরুর আলো আমি নিঃশেষ করে দেব যন্ত্রনাময় অন্ধকারে। সহবাস স্বীকার্য নয়, তুমি শুধু তোমার দুটি চোখ মেলে গ্রহন করে নাও এই কাব্যিক অন্ধকার যেখানে অসংখ্য নি®প্রান স্বপ্নের নিনাদে কাব্যসিক্ত এক কবির অশ্র“ বয়ে চলেছে।
খ.
এই অন্ধকার নিয়ে আমি আর কোথায় যাব বলো? ঐ দেখো, সর্বশেষ আলোটি নিভে গেল। আর ল্যামপোস্ট হয়ে গেলো আলোর সম্রাট। সেই সম্রাট যে একদা শত্র“র সামনে দাড়িয়ে নির্বাক হয়ে গিয়েছিল। আমিও আজ তেমনি নির্বাক হয়ে যেতে যেতে আস্তে আস্তে উচ্চারণ করছি কিছু শব্দ যা এই শহরের শেষ প্রান্তে নির্ঘুম জেগে থাকা এক তরুণীর পড়ার টেবিলে আছড়ে পড়ছে। তার এলোমেলো চুলে জড়িয়ে দিচ্ছে অন্ধকারের ফুল, ওড়নাহীন বুকে গড়ে দিচ্ছে বিপর্যস্ত উপমা। তার বিসন্নতা স্পর্শ করে ফিরে আসছে শতগুন প্রানবন্ত অসংখ্য শব্দমালা। আর আমি ততণে নির্বাক হয়ে যাবার সকল আয়োজনে ব্যস্ত। তবু ধীরে, অতি ধীরে একটি উপমা উচ্চারণ করি যা তরুণীর শীতলতম দুঃখের গহ্বরে ছড়িয়ে দেয় উত্তরাধুনিক উষ্ণতা। মধ্যরাতের চোখের সামনে দাড়িয়ে এলোমেলো সে তরুণী নির্দ্ধিধায় মুগ্ধতায় বরণ করে নেয়। এক নিশাচর অন্ধকারাচ্ছন্ন যুবকের কাছে তখন পিপাসার কাকের মত ছটফট করে আরো অসংখ্য শব্দের মিছিল।
কিন্তু ততণে নির্জনতা তাকে ঘিরে ধরে পরিচ্ছন্নভাবে নির্বাক করে দিয়েছে । এই নিঃসঙ্গ নির্জনতায় নির্বাক নিজস্বতার মুখোমুখি দাড়িয়ে সে যুবক তখন তোমার নীল নাকফুলে প্রার্থনা করে চলেছে নির্বাচিত অন্ধকার।