আমার জন্মভূমি বাংলাদেশ, একটি সুজলা, সুফলা, শস্য-শ্যামলার দেশ। বাংলাদেশের মতো এমন সমতল উর্বর দেশ খুব কমই আছে। লোকে বলে যেখানে বীজ পড়ে সেখানেই শস্য ফলে। অন্যান্য দেশের মতো এত কষ্ট করে শস্য ফলাতে হয় না। এ দেশ বহু সমৃদ্ধির দেশ; কিন্তু যে ঘটনাগুলো ঘটে তাতে দেশে বাসযোগ্য পরিবেশ থাকে না। আমাদের দেশ অর্থনৈতিক দিক দিয়ে দুর্বল তা বলা কতটা যুক্তিসঙ্গত তা জানি না। কিন্তু এই কথা বলতে পারি যে, দেশে অনেক অর্থ, সম্পাদ রয়েছে। আর তা রয়েছে মুষ্টিমেয় কিছু লোকের হাতে। তারা টাকার পাহাড় গড়ছে, কেউবা গরিবদের শোষণ করে টাকার মালিক হচ্ছে। কেউবা গরিব-দুঃখী, আদিবাসী তাদের নামে বিদেশ থেকে সাহায্য পাচ্ছে, কিন্তু সেসব তাদের কিছু পরিমাণ দিয়ে বাকি টাকা নিজেদের কাজে লাগাচ্ছে। ফলে এক শ্রেণী হচ্ছে ধনী; আরেক শ্রেণী গরিব হচ্ছে। রেল স্টেশনের বস্তিতে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, অপর্যাপ্ত স্থান, বিপদসঙ্কুল স্থানে তাদের বসবাস। না দেখলে এসব বোঝা যায় না। আমাদের দেশ কি সত্যিই বাসযোগ্য? নইলে কেন এত হানাহানি, বিদ্বেষ, দুর্নীতি, হত্যা, ধর্ষণ, অশানত্মি, বিভেদ? কেন মানুষ দেশ ছেড়ে পালিয়ে যায়। কেন মানুষ দেশানত্মরী হয়? কেন ফেলানীর মতো নিরীহ মানুষ পাখির মতো মরে? আজ সেই বোন ফেলানীর জন্য দুঃখ হচ্ছে। দৃশ্য চোখে ভাসলেই বেদনায় অন্তর পুড়ে যায়। হয়তো বাসযোগ্য আশ্রয়ের জন্য গিয়েছিল সে। তার বাবার চোখে ছিল স্বপ্ন। ভারতে গেলে জীবনে উন্নতি হবে। কিছুদিন পর দেশে ফেরার স্বপ্ন দেখে। মেয়েটির চোখেও স্বপ্ন ছিল নববধূ হয়ে শ্বশুরবাড়িতে যাবে। কিন্তু হায়। পাখির মতো জীবন দিতে হলো তাকে। বিএসএফের কাছ থেকে বাঁচার জন্য কাঁটাতার ডিঙ্গিয়ে পাড়ি দিচ্ছিল। তার জামা কাঁটাতারে আটকে তাকে বাদুরের মতো ঝুলিয়ে রাখল। বাঁচার জন্য বাবা গো! বলে চিৎকার দিতেই বিএসএফের গুলি এসে তাকে বিদ্ধ করল এবং তার চিৎকার থামিয়ে দিল। সে তবুও চার ঘণ্টা পাখির মতোই ঝুলে ছিল। এমন দৃশ্য দেখে কি থাকা যায়?
বিএসএফের হাতে বাংলাদেশী মানুষ অনেক নিগৃহীত হয়, কেউ মারা যায়। এত লোক কষ্ট পায়, মারা যায় তবুও কেন সেখানে যায়?
তার কারণ তাদের কিছু অভাব রয়েছে। এ অভাব পূরণ করতেই ভারতের কাছে ভিৰা চাইতে হয়, ভারতে পালিয়ে যেতে হয়। মুক্তিযুদ্ধের পর অনেক আদিবাসীই ভারতে পালিয়ে যায় দেশে নিরাপত্তার অভাবে। এখনও তাই হয়। নিরাপত্তার অভাব, অর্থনৈতিক অভাব এগুলোর কারণে অনেক মানুষ মৃতু্য অবধারিত জেনেও দেশ ছেড়ে পালিয়ে বেড়ায়। যেদিন এ দেশের মানুষ মিলেমিশে থাকবে, পরস্পর পরস্পরকে সাহায্য-সহযোগিতা করবে, একে অপরের দুঃখ-কষ্ট বুঝবে, যেদিন এ দেশে শানত্মি প্রতিষ্ঠা হবে, ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠা হবে, যযে দিন সবাই সবাইকে মানুষ বলে, ভাই বলে কাছে টানবে সেদিন কেউ এই দেশ ছেড়ে চলে যাবে না, অন্য দেশে পা দেবে না, পাখির মতো কেউ প্রাণ হারাবে না।
আমাদের দেশে অর্থনৈতিক দুর্বলতার পাশাপাশি সামাজিক অবহেলা, জনগণের অসচেতনতাও দেশটাকে বিপর্যয়ের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। প্রকৃতি, গাছপালা নিধন, নদ-নদীতে ময়লা আবর্জনা নিৰেপ, যেখানে সেখানে ময়লা-থুথু ফেলা এগুলো দেশটাকে বসবাসের অযোগ্য করে তুলছে। তাই আমাদের সবার উচিত দেশটাকে বাসযোগ্য গড়ে তোলা। আসুন আমরা আমাদের মা-বোনদের সম্মান করি। প্রকৃতি আলো-বাতাস তাদের যত্ন করি। অর্থ-সম্পদ মঙ্গলের জন্য ব্যবহার করি, নারী-শিশু-প্রতিবন্ধী তাদেরও ভালবাসা দিয়ে শানত্মি রাজ্য গড়ে তুলি।