মূলত একারণেই হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহ তায়ালা আনহুম উনারাই হর-হামেশা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সুমহান বিলাদত শরীফ-এর শানে বিভিন্নভাবে খুশি প্রকাশ করতেন তথা ঈদ উদযাপন করতেন।
যেমন, এ সম্পর্কে হাদীছ শরীফ-এ আরো ইরশাদ হয়েছে-
عن ابن عباس رضى الله تعالى عنهما انه كان يحدث ذات يوم فى بيته وقائع ولادته صلى الله عليه وسلم لقوم فيستبشرون ويحمدون الله ويصلون عليه صلى الله عليه وسلم فاذا جاء النبى صلى الله عليه وسلم قال حلت لكم شفاعتى.
অর্থ: “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত আছে যে, একদা তিনি বিলাদত শরীফ উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করে নিজ গৃহে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে সমবেত করে হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ-এর ঘটনাসমূহ শুনাচ্ছিলেন। এতে শ্রবণকারীগণ আনন্দ ও খুশিতে তাসবীহ-তাহলীল ও দুরূদ শরীফ পাঠ করতেছিলেন। ঠিক এমন সময় হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উক্ত মজলিসে তাশরীফ আনলেন। তিনি হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের এমন মীলাদ শরীফ পাঠের মজলিস দেখে সন্তুষ্ট হয়ে উনাদের উদ্দেশ্য করে ইরশাদ করলেন- আপনাদের জন্য আমার শাফায়াত ওয়াজিব হয়ে গেলো।” সুবহানাল্লাহ! (আন নি’য়ামাতুল কুবরা)
অন্য হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে-
عن ابى الدرداء رضى الله تعالى عنه انه مر مع النبى صلى الله عليه وسلم الى بيت عامر الانصارى وكان يعلم وقائع ولادته صلى الله عليه وسلم لابنائه وعشيرته ويقول هذا اليوم هذا اليوم فقال عليه الصلوة والسلام ان الله فتح لك ابواب الرحمة والملائكة كلهم يستغفرون لك من فعل فعلك نجى نجتك.
অর্থ: “হযরত আবু দারদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন- একদা আমি হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে হযরত আমের আনছারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার বাড়িতে গেলাম। সেখানে দেখলাম তিনি বিলাদত শরীফ উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করে নিজ সন্তানাদি এবং আত্মীয়-স্বজন, জ্ঞাতি-গোষ্ঠী, পাড়া-প্রতিবেশীদেরকে সমবেত করে হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ-এর ঘটনাসমূহ শুনাচ্ছিলেন। এমন সময় হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সেখানে তাশরীফ আনতে দেখে উপস্থিত সকলেই দাঁড়িয়ে সালাম পেশ করতঃ আহলান সাহলান জানিয়ে আসন মুবারক-এ বসালেন। হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মীলাদুন নবী উদযাপনের এমন মজলিস দেখে সবাইকে উদ্দেশ্য করে ইরশাদ ফরমান, নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা উনার রহমতের দরজা আপনাদের জন্য উন্মুক্ত করেছেন এবং সমস্ত ফেরেশতাগণ আপনাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করছেন। যে কেউ আপনাদের মতো মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উদযাপনের এমন আয়োজন করবে তারাও অনুরূপভাবে নাজাত লাভ করবে।” সুবহানাল্লাহ! (আন নি’য়ামাতুল কুবরা)
হে মানবজাতি! পবিত্র কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ-এ এমন সুস্পষ্ট প্রকাশ্য প্রামাণ্য আদেশ-নির্দেশ থাকার পরও তা পালন না করে যদি উল্টো হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শান সংশ্লিষ্ট বিষয়ে চু-চেরা, কিল-কাল করা হয়, নানা প্রকার মিথ্যা-তোহমত দেয়া হয়, হালালকে হারাম, হারামকে হালাল, সুন্নতকে বিদয়াত, বিদয়াতকে সুন্নত বলে চিৎকার চেচামেচি করা হয় তাহলে তার পরিণতি কি ইহকাল-পরকালে অত্যন্ত ভয়াবহ হবে না? অবশ্যই হবে।
এ প্রসঙ্গে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে একটি হাদীছ শরীফ বর্ণিত রয়েছে। “একজন অন্ধ লোকের এক উম্মু ওয়ালাদ ছিলো। মহিলাটি অন্ধ ব্যক্তির খুবই অনুগতা ছিলো। অথচ সে মহিলা প্রায় সময় শুধুমাত্র হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শানের খিলাফ এলোমেলো কথাবার্তা বলতো। অন্ধ লোকটি এমন জঘন্য কাজ থেকে বিরত থাকার জন্য ওই মহিলাকে খুব ভালো করে বুঝাতেন। কিন্তু তা সে শুনতো না। এক রাতে যখন সেই মহিলা এমন বকবকানি শুরু করলো, তখন ওই অন্ধ লোকটি একটি ধারালো চাকু নিয়ে অগ্রসর হয়ে মহিলার পেট বরাবর চাকুটি চেপে ধরলেন। ফলে পাপিষ্ঠা মহিলাটি সেখানেই মারা গেলো অর্থাৎ জাহান্নামী হয়ে গেলো। পরদিন হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দরবার শরীফ-এ বিষয়টি নিয়ে সালিস বসলে ওই অন্ধ ব্যক্তি হত্যাকা-ের কারণ বিস্তারিত বিষয় খুলে বললেন। সবকিছু শুনে হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অন্ধ লোকটিকে হত্যাকা-ের দায় থেকে মুক্তি দিয়ে দিলেন।” (দলীল : আবু দাউদ, নাসায়ী শরীফ)
মূলত পবিত্র ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে তা’যীম-তাকরীম সম্মান করে উদযাপন করার জন্য পবিত্র কুরআন শরীফ-এই অসংখ্যবার অসংখ্যভাবে তাগিদ এসেছে। যার ফলে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারাই সর্বপ্রথম তা যথাযথভাবে আদায় করেছেন। প্রতিযুগের প্রত্যেক ঈমানদার বান্দা তথা উম্মতগণের জন্য ফরয-ওয়াজিব হচ্ছে- হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের পদাঙ্ক পূর্ণাঙ্গরূপে অনুসরণ-অনুকরণ করা। কেননা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ ফরমান-
اصحابى كلهم كالنجوم بايهم اقتديتم اهتديتم
অর্থ: “আমার প্রত্যেক ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমই আকাশের তারকাসদৃশ। উনাদের যে কাউকে যেকোনো বিষয়ে যে ব্যক্তিই অনুসরণ-অনুকরণ করবে সেই হিদায়েত লাভ করবে।” সুবহানাল্লাহ! (দলীল : রযীন, মিশকাত, মিরকাত, আশয়াতুল লুময়াত, আত তা’লীকুছ ছবীহ, শরহুত তীবী, মুযাহিরে হক্ব)