গোপালগঞ্জের ওপর কেন এত রাগ বেগম জিয়ার ?
সৈয়দ বোরহান কবীর
‘গণতন্ত্রের অভিযাত্রা’ কর্মসূচি আবারো প্রমাণ করলো ‘যত গর্জায় ততটা বর্ষায় না।’ বিরোধী দলের আস্ফালন, হুমকি আর টকশোতে সুশীলদের আর্তনাদ দেখে মনে হয়েছিল, লাখ লাখ মানুষ রাস্তায় নেমে পড়বে। খালেদা জিয়া বলেছিলেন, ‘যেকোন মূল্যে কর্মসূচি সফল করা হবে।’ কিন্তু নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা রাজধানীতে কাকপক্ষী দেখা গেলেও বিএনপি নেতাকর্মীদের দেখা গেল না। আচমকা পুলিশ ব্যারিকেড ভেঙে জনতার বাঁধভাঙা জোয়ারের ছিটেফোঁটাও দেখা গেল না। ২৯ ডিসেম্বর আবারো প্রমাণ করলো, জনগণের সম্পৃক্ততা ছাড়া ষড়যন্ত্র হয় কিন্তু আন্দোলন হয় না। সাম্প্রতিক সময়ে মিশর, সিরিয়া কিংবা থাইল্যান্ডের আন্দোলনে আমরা দেখেছি, জনতার স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সব বাঁধা উপেক্ষা করেই সেখানে জনগণ রাস্তায় নেমে পড়েছিল। আমরা যদি ইতিহাস বিস্মৃত না হই তাহলে দেখবোÑ ২০০১ সালে জনতার বাঁধভাঙা ঢল কীভাবে নেমেছিল রাজপথে। নব্বইয়ের গণআন্দোলনের কথা না হয় বাদই দিলাম। কিন্তু ২৯ ডিসেম্বর নিরুত্তাপ জনগণ খালেদা জিয়াকে প্রত্যাখ্যান করলেন। তারা বেগম জিয়ার ডাকে সাড়া দিলেন না। প্রেসক্লাবে কিছু সাংবাদিক-অসাংবাদিকের চিৎকার-চেঁচামেচি ও সুপ্রিম কোর্টের সামনে কালো কোট পরিহিত কিছু রাজনৈতিক কর্মীর তামাশা ছাড়া ‘গণতন্ত্রের অভিযাত্রা’ ছিল অনুল্লেখ্য। এ যেন পর্বতের মুসিক প্রসব।
সকাল থেকে শুনেছিলাম, বেগম জিয়া বেরুবেন। কিন্তু সকাল পেরিয়ে পরন্ত বিকালে আপোসহীন নেত্রীর অশোভন কিছু খিস্তি হলোÑ ‘গণতন্ত্রের অভিযাত্রা’র একমাত্র প্রাপ্তি। বেগম খালেদা জিয়া বিরোধী দলের নেত্রী। এই সরকারকে ইদানীং প্রায়ই তিনি ‘অবৈধ’ বলেন। তাহলে ‘অবৈধ’ সরকারের, অবৈধ সংসদের বিরোধী দলের নেতা হিসেবে তিনিও অবৈধ। অবৈধ হলেও তিনি সরকারি সুযোগ-সুবিধা ঠিকই নিচ্ছেন। এমনকী যে গাড়িতে উঠে তিনি পল্টন যাত্রার নাটক করলেন, টেলিভিশনের বদৌলতে দেখলাম সেই গাড়িতে জাতীয় পতাকা লাগানো।
বেগম জিয়াকে নিরাপত্তার জন্য তার বাসভবন থেকে বেরুতে দেওয়া হয়নি। তিনি যে গৃহবন্দি বা গ্রেপ্তার হননি, তার প্রমাণ পাওয়া গেল বিকালে। তিনি টেলিভিশন ক্যামেরার সামনে বেশ কিছু কথা বললেন। গ্রেপ্তার বা গৃহবন্দি কোনো ব্যক্তি নিশ্চয়ই গণমাধ্যমের সামনে এভাবে গালাগাল করতে পারেন না। বিরোধী দলের নেতা একজন সম্মানিত ব্যক্তি। তাই তার কাছে জনগণ সবসময় শালীন এবং শিষ্টাচারসম্মত বক্তব্য আশা করেন। কিন্তু তিনি যে ভাষায় এবং সে স্বরে উপস্থিত আইন প্রয়োগকারী সংস্থার লোকজনকে ধমকালেন, সেই ভাষা রাজতন্ত্রের যুগে ‘মহারানী’রাও ধমকাতেন কিনা সে জন্য ইতিহাস ঘাটতে হবে। তিনি একনারী কর্মকর্তাকে তারস্বরে ধমকে ‘বেয়াদব’ বললেন। এর আগে সংসদেও তিনি একবার ‘বেয়াদব’ বলে আওয়ামী লীগের সাংসদদের শাসিয়েছিলেন। কথায় কথায় কাউকে ‘বেয়াদব, চুপ’ ইত্যাদি বলা গণতান্ত্রিক চর্চা নয়। এটা সামন্ততান্ত্রিক রীতি ও সংস্কৃতি। বেগম জিয়া যে জনগণের অধিকারে বিশ্বাস করেন না, সামন্ততন্ত্র, স্বৈরতন্ত্র, রাজতন্ত্রে বিশ্বাস করেন এই ‘ধমক’ তার একটি প্রমাণ মাত্র।
বেগম জিয়া দুবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী, তিনি বর্তমান প্রধানমন্ত্রীকে কি ভাষায় সম্বোধন করলেন? এটা কি ভদ্রসমাজে ব্যবহার্য ভাষা?
বেগম জিয়া একজন পুলিশ কর্মকর্তাকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘গোপালী’ এর পর তিনি যে কথাটা বললেন, তা ভয়াবহ। তিনি বললেন ‘গোপালগঞ্জের নাম পাল্টে দেবো।’ গোপালগঞ্জ, বাংলাদেশ এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িয়ে থাকা তিনটি নাম। গোপালগঞ্জের পবিত্র মাটিতে জš§ নিয়েছিলেন হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। গোপালগঞ্জের পবিত্র মাটিতেই শায়িত আছেন এই জাতির প্রতিষ্ঠাতা পুরুষ। এজন্যই কি বেগম জিয়ার গোপালগঞ্জের ওপর এত রাগ? ‘বাংলাদেশ’ নামে রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠায় ‘গোপালগঞ্জ’ চির ভাস্বর একটি নাম। এজন্যই কি গোপালগঞ্জের ওপর বেগম জিয়ার এত ক্ষোভ? এজন্যই কি তিনি গোপালগঞ্জের নাম পাল্টে ফেলতে চান? গোপালগঞ্জ নাম পাল্টে তিনি কি রাখতে চান? কান্দাহার? পাঞ্জাব? বেলুচিস্তান? নাকি অন্য কোনো নাম? গোপালগঞ্জ নাম পাল্টানোর গোপন ইচ্ছা প্রকাশ্য হওয়ার মধ্য দিয়ে বেগম জিয়ার জন্য গোপন ইচ্ছাগুলো উঁকি দিল। তিনি কি ‘বাংলাদেশ’ নামটাও পাল্টে ফেলতে চান? তিনি কি আমাদের জাতীয় সংগীত পাল্টে ফেলতে চান? এজন্যই কি তার এ আন্দোলন? তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মোড়ক এটাই কি তার আসল উদ্দেশ্য? এসব প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে বেগম জিয়াকেই। এর জবাবে আমাদের ‘বেয়াদব’ বলা হলেও আমরা চুপ থাকবো না।
পাদটীকা : ২৪ ডিসেম্বর বেগম জিয়ার লিখিত বক্তব্যটি ছিল মার্জিত, সুন্দর, কিন্তু ২৯ ডিসেম্বর তার তাৎক্ষণিক বক্তব্যটি কুৎসিত, অরুচিকর। এর আগে বেগম জিয়া প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে টেলিসংলাপেও এরকম নোংরা শব্দ ব্যবহার করেছিলেন। বেগম জিয়ার লিখিত বক্তব্য যে তার কথা নয়, অন্যের লিখে দেওয়া বক্তব্য তা বোঝার মতো লোকের অভাব নেই বাংলাদেশে।
গোপালগঞ্জের ওপর কেন এত রাগ বেগম জিয়ার ][ সৈয়দ বোরহান কবীর
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
১৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
কমলার জয়ের ক্ষীণ ১টা আলোক রেখা দেখা যাচ্ছে।
এই সপ্তাহের শুরুর দিকের জরীপে ৭টি স্যুইংষ্টেইটের ৫টাই ট্রাম্পের দিকে চলে গেছে; এখনো ট্রাম্পের দিকেই আছে; হিসেব মতো ট্রাম্প জয়ী হওয়ার কথা ছিলো। আজকে একটু পরিবর্তণ দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন
বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?
সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন
শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী
বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন
শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন
জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন
=বেলা যে যায় চলে=
রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।
সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন