somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পাকিস্তানকানা বনাম ট্রিপল প্রহসন [[]] আবু হাসান শাহরিয়ার

২৩ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ সকাল ১০:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


পাকিস্তানকানা বনাম ট্রিপল প্রহসন
আবু হাসান শাহরিয়ার

যৌগশব্দ রচনায় আমার আগ্রহ আছে। এ আগ্রহের কথা লেখক-বন্ধুরা জানেন। নিবিড় পাঠকদেরও কেউ-কেউ বিষয়টি সম্পর্কে অবহিত। তাদেরই একজন সেদিন বললেন, আপনার ‘দলকানা’ শব্দটি বেশ পাঠকপ্রিয়তা পেয়েছে। হ্যাঁ, আজকাল অনেকের লেখায় এটি ব্যবহূত হতে দেখি। না, দলকানারা নন, এ লেখার প্রতিপাদ্য বিষয়— বিএনপির পাকিস্তানপ্রেম এবং আওয়ামী লীগের ট্রিপল প্রহসনের নির্বাচন।
দুই.
জন্মলগ্ন থেকেই বিএনপি পাকিস্তানপ্রেমী। ‘দলকানা’র সঙ্গে মিল রেখে অন্যভাবেও কথাটি বলা যায়— যারা বিএনপি

করেন, তারা পাকিস্তানকানা। এই দলের পাকিস্তানপ্রেম যে বাংলাদেশপ্রেমের চেয়ে বেশি, তা এবার বিজয়ের মাস ডিসেম্বরেই খোলাসা হয়েছে। একাত্তরের যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার ফাঁসি-পরবর্তী ঘটনাবলি এর প্রমাণ।
এই ডিসেম্বরে আমরা নিশ্চিত হয়েছি, বাংলাদেশের জামায়াতকে পাকিস্তানের জামায়াতপন্থীরা এখনও নিজেদের শাখা মনে করে। কী সাংঘাতিক কথা! কিন্তু দুর্ভাবনা জামায়াতে নয়— বিএনপিতে। তথ্যটি জেনে সংশোধিত হওয়া দূরে থাক, জামায়াতের সঙ্গে দহরম-মহরম আরও বাড়িয়ে দিয়েছে বিএনপি। হরতাল-অবরোধে এখনও দলটির পরম বন্ধুজামায়াত। দেখে-শুনে মনে হয়, নির্বাচন ইস্যুতে বন্ধুত্ব আরও নিবিড় হয়েছে। তাই বাংলাদেশের ২৭ হাজার ১১৭ জন শিশু-শিক্ষার্থী যখন বিশ্বের বৃহত্তম মানব-পতাকা রচনার মাধ্যমে বিশ্বরেকর্ড সৃষ্টি করছে, তখনও জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে পেট্রলবোমায় মানুষ পুড়িয়ে মারছে বিএনপি। এসব মানুষ-মারা কর্মসূচির ঘোষণা বিএনপির মুখপাত্রদের কাছ থেকেই আসতে দেখছে মানুষ। পরন্তু দলটির কোনও নেতা বা নেত্রী হাসপাতালগুলোর বার্ন ইউনিটে চিকিত্সাধীন অগ্নিদগ্ধ মানুষকে দেখতেও যাননি। কোন মুখে যাবেন? তারা ভালোই জানেন, গেলে গণপিটুনির শিকার হওয়ার আশঙ্কা আছে। খোদ প্রধানমন্ত্রীকেই ছেড়ে কথা বলেননি অবরোধের আগুনে ঝলসে-যাওয়া এক নারী। আরও আছে। এখন বিএনপির মিছিল থেকেই উচ্চারিত হচ্ছে মৃত্যুদণ্ডিত কাদের মোল্লার পক্ষে স্লোগান— ‘এই দেশ সেই দেশ/কাদের মোল্লার বাংলাদেশ’। মিছিলের অগ্রভাগে দেখা যাচ্ছে রাজশাহীর সাবেক মেয়র বিএনপি-নেতা মিনুর মতো কাউকে না কাউকে। এখানেই শেষ নয়। কাদের মোল্লার ফাঁসির প্রতিবাদে পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নিন্দাপ্রস্তাব পাসের পর এক সপ্তাহ চলে গেলেও বিএনপির পক্ষ থেকে কোনও প্রতিবাদ আসে না। বরং ভিন্ন প্রসঙ্গে তারা সেই সব ভিনদেশ ও আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীর মোড়লিপনার কথা ইনিয়ে-বিনিয়ে বলার চেষ্টা করছেন, যারা কাদের মোল্লার ফাঁসিতে পাকিস্তানের মতোই অসন্তুষ্ট। এ মৃত্যুদণ্ডে তালেবান জঙ্গিরা পাকিস্তানে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস উড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিলেও বিএনপির কিছু যায় আসে না। ভাবখানা এমন, পাকিস্তানই তো আমাদের দেশ, সেখানে বাংলাদেশের দূতাবাস থাকলেই কী, আর না-থাকলেই কী?
গত ১৯ ডিসেম্বর ‘বিএনপির দেশ কি বাংলাদেশ, না পাকিস্তান?’ শিরোনামে আমার একটি গদ্য প্রকাশিত হয় আমাদের সময়ে। সেখানে একটি প্রশ্নসূচক বাক্য ছিল— ‘মুক্তিযুদ্ধ আগে, না নির্বাচন আগে?’ সে-লেখার লিংক দিয়েছিলাম আমার ফেসবুক স্ট্যাটাসে। তাতে প্রচুর লাইক ও কমেন্ট পড়েছে। সবারই এক কথা— নির্বাচনের আগে মুক্তিযুদ্ধ, নির্বাচনের আগে দেশ। একজন আমার লেখার শিরোনাম টেনে নিয়ে একটি চিন্তাশীল মন্তব্যও করেছেন—
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী যেমন জামায়াতে ইসলামী পাকিস্তানের শাখা বা সংস্করণ, বিএনপিও তেমনি পাকিস্তান মুসলিম লীগের বাংলাদেশ শাখা বা সংস্করণ।
বিএনপির নেতা-কর্মী-সমর্থকরা যে পাকিস্তানকানা, তা তাদের চলনে-বলনে-আচরণেই ধরা পড়ে। ‘সঙ্গদোষে স্বভাব নষ্ট’ বলে একটি প্রবাদ আছে। জামায়াত-সঙ্গ আজকাল বিএনপির স্বভাবকে বিস্তর তালেবানি উপাদানও উপহার দিচ্ছে। অজ্ঞাত স্থান থেকে ভিডিওবার্তায় দল ও জোটের কর্মসূচি ঘোষণাই এর বড় উদাহরণ। বৈদ্যুতিন মিডিয়ায় ওই ঘোষণাগুলো এমনভাবে এসেছে, যেন বিএনপি কোনও জঙ্গি সংগঠন।
তিন.
নির্বাচনের চেয়ে মুক্তিযুদ্ধ বড়, দেশ বড়। তার মানে এই নয়, মুক্তিযুদ্ধ আর দেশের দোহাই দিয়ে একটি একতরফা নির্বাচনকে জায়েজ করতে পারবে আওয়ামী লীগ। আগামী ৫ জানুয়ারি যে-নির্বাচনটি অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে, হওয়ার আগেই তা দেশে-বিদেশে গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছে। গতকাল সরকারের অর্থমন্ত্রীও একই কথা বলেছেন। ৩ মার্চ ১৯৮৮ ও ১৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৬ তারিখে অনুষ্ঠিত চতুর্থ ও ষষ্ঠ নির্বাচনের মতো দশম জাতীয় নির্বাচনও যে প্রহসনের নির্বাচন হিসেবে কুখ্যাত হবে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। যতদিন সরকারি দল মানেই বিরোধী দলকে নিরন্তর উপেক্ষা করা আর বিরোধী দল মানেই লাগাতার সংসদবর্জন, ততদিন বাংলাদেশের সব নির্বাচনই প্রহসনের নির্বাচন। সেই বিবেচনায় চতুর্থ ও ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ‘ডাবল প্রহসনের নির্বাচন’ বলা যেতে পারে। একই বিবেচনায় ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনটিকে বলতে হবে ‘ট্রিপল প্রহসনের নির্বাচন’। ইতোমধ্যেই এ নির্বাচনে ১৫৪ জন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আগাম জয়লাভ করেছেন। ষষ্ঠ নির্বাচনে এ সংখ্যা ছিল ৪৯। সে কারণেই দশমকে ‘ডাবল প্রহসন’ না-বলে ‘ট্রিপল প্রহসন’ বলা উচিত। তাছাড়া এ নির্বাচনে অর্ধেকেরও বেশি ভোটারকে ভোটকেন্দ্রে যেতে হবে না। থাকবেন না দেশি-বিদেশি অধিকাংশ পর্যবেক্ষক। সম্ভবত এ কারণেই দশম সম্পন্ন না-হতেই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে জল্পনা-কল্পনা শুরু হয়ে গেছে। প্রধানমন্ত্রী নিজেই এক ভাষণে এ সম্ভাবনার ইঙ্গিত দিয়েছেন। হ্যাঁ, আগাম একাদশকেই এখন অনেকে চলমান নির্বাচনি সংকট থেকে উত্তরণের একমাত্র পথ বলে ভাবছেন। তারা ভুল কিছু ভাবছেন না। তবে নিকট-অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে বলা যায়, পথটি খুব মসৃণ হবে না। নেতৃত্বে যদি প্রজ্ঞা আর রাজনীতিতে যদি যুক্তি না থাকে, দশম জাতীয় নির্বাচনের মতো একাদশ জাতীয় নির্বাচনও জাতিকে ভোগাবে। কেননা নির্বাচনি একাদশ আর একাদশে উত্তীর্ণ হওয়া সম্পূর্ণ ভিন্ন দুটি ব্যাপার। কেমন? প্রাচ্যের মুনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর অনেক আগেই এর উত্তর দিয়ে রেখেছেন—
প্রতিভা ও পাগল উভয়েই ১০-এর বাইরে থাকে। পাগল কোনওদিনই ১০-এর ভেতরে প্রবেশ করে না। কিন্তু প্রতিভা ১০-এর সঙ্গে যুক্ত হয়ে ১০কে একাদশে উত্তীর্ণ করে।
পাদটীকা
নির্বাচনের নামে গত এক বছর ধরে দেশে যা ঘটে চলেছে, তাতে আমাদের রাজনীতিকদের মোটেও প্রতিভাবান বলা যায় না। পাগল বলা যায় কি না, তা নিয়ে তর্ক হতে পারে।
রাজনীতিকদের প্রতি নাগরিক-ভর্ত্সনা এই যে— পাগলামি ছাড়ুন, ঘটে কিছু থাকলে প্রতিভার পরিচয় দিন। এভাবে দেশের মানুষকে আর জিম্মি করে রাখবেন না।


৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কমলার জয়ের ক্ষীণ ১টা আলোক রেখা দেখা যাচ্ছে।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:১৮



এই সপ্তাহের শুরুর দিকের জরীপে ৭টি স্যুইংষ্টেইটের ৫টাই ট্রাম্পের দিকে চলে গেছে; এখনো ট্রাম্পের দিকেই আছে; হিসেব মতো ট্রাম্প জয়ী হওয়ার কথা ছিলো। আজকে একটু পরিবর্তণ দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×