সন্ধ্যার কালো অন্ধকারে আড়ালে ছলিমপুর ইউনিয়ন পরিষদ চত্তরে পৌঁছলাম। সেখানে টিনশেড ঘরের চারপাশে কয়েক শ মুক্তিযোদ্ধার জটলা। গত তিনদিনে ঈশ্বরদীর চারপাশের গ্রাম ও শহরতলীর রাজাকার পোস্টগুলো থেকে অনেক রাজাকারকে গ্রেফতার করে আনা হয়েছে। আরো আছে যারা অবস্থা বেগতিক দেখে রাজাকার বাহিনী ত্যাগ করে নিজেরাই পালিয়ে বাইরে চলে এসেছিল এবং জনারণ্যে মিশে যাবার চেষ্টা করছিল। এসব গ্রেফতারকৃতদের সংখ্যা বাড়তে বাড়তে পরিস্থিতি এমন হলো যে এদেরকে কোথাও রাখাটাও বিপজ্জনক হয়ে উঠলো। এসব সংকট নিয়ে আলোচনা এবং করণীয় ঠিক করতেই মুলতঃ আজকের আয়োজন। এখানে সাধারণ মুক্তিযোদ্ধাদের চাইতে কমাণ্ডারদের ভুমিকাই মুখ্য। এখানে দু'টো কোম্পানীর অধীনস্ত সকল প্লাটুন ও সেকসন কমাণ্ডার ছাড়া বহুসংখ্যক সাধারণ মুক্তিযোদ্ধাও উপস্থিত হয়েছেন।
এ তিনদিনে আমরা বুঝে গেছি বাংলাদেশের স্বাধীনতা এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। দেশের বেশিরভাগ অঞ্চল এখন পাকহানাদার তথা শত্রুমুক্ত। বৃহত্তর খুলনা বিভাগের কুস্টিয়ার যুদ্ধ আর রাজশাহী বিভাগের বালুরঘাট ও বগুড়ার যুদ্ধে উভয়পক্ষের যে অপুরণীয় ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা হয়তো ইতিহাসে লেখা থাকবে। সেখানে হাজার হাজার মুক্তিযোদ্ধা, মিত্রবাহিনীর সোলজার ও পাকহানাদার নিহত হয়েছে। তা সত্ত্বেও আমরা শেষতক জয়ী হয়েছি।
ইউনিয়ন পরিষদের হলঘর তখন কমাণ্ডারে ঠাসা। মোমবাতি বা হারিকেনের আলোয় মিটিং চলছে। কিন্তু সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা আর সম্ভব হয় না। কখন হবে তাও বোঝা যাচ্ছিল না। রাত দশটার দিকে আমাদের কোম্পানী থেকে জানানো হলো শুধুমাত্র কোম্পানীস্তরের কয়েকজন ছাড়া বাকি সবাই যেন স্ব স্ব শেলটারে ফিরে যাই।
পরদিন বিকেলে খবর এলো, গ্রেফতারকৃত ৮৪ জন রাজাকারকে গতরাতেই রুইমারির পুকুরে নিয়ে ব্রাশ করা হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে উগ্রবাদীরা এই কাণ্ড ঘটিয়েছে।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই এপ্রিল, ২০১৫ রাত ২:১৫