রানী ক্লিওপেট্রা
৩৪ খ্রিস্টপূর্বাব্দে মার্ক এন্টনি আর্মেনিয়া রাজ্যের জনসাধারনের মধ্যে জনমত গঠনে নামলেন যা পরবর্তীকালে অর্থনৈতিকভাবে ব্যাপক সাফল্য বয়ে আনে। এসব পূর্বাপর বিজয়কে স্মরণীয় করে রাখতে তিনি দেশব্যাপী এমনকি আলেকজান্দ্রিয়াসহ উৎসবের আয়োজন করেন, ক্লিওপেট্রাকে ‘নতুন আইসিস’ হিসেবে তুলে ধরার মানসে তাকে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির মর্যাদায় ভূষিত করেন। এন্টনিও প্রাচীন গ্রীক-রোমান শাসনের প্রতিভূ হিসেবে নিজেকে ‘নতুন ডিওনাইসাস’ হিসেবে উপস্থাপন করেন যা ছিল তার বহুদিনের স্বপ্ন। কিছুদিনের মধ্যে আরও অনেক রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ, শিশু-উৎসব অনুষ্ঠান করলেন যেখানে শিশুদের জন্য রাজকীয় উপাধিপ্রদান এমনকি রাজসিংহাসনে তাদের নিয়ে বসারও সুযোগ দিলেন।
প্রাচীন আলেকজান্দ্রিয়া নগরী
সেই অনুষ্ঠানে টলেমি-১৫তম(সিজারিওঁ)-কে সহযোগি সম্রাট ও ‘রাজাদের রাজা’ হিসেবে সনসমক্ষে পরিচয় করিয়ে দেয়া হলো। ক্লিওপেট্রা রইলেন ‘রাজাদের রানী’ হিসেবে যা ছিল সিজারিওঁর উপরের পদবী। আলেকজান্ডার হেলিওস যার অর্থ সূর্য্য, ভুষিত হলেন ‘গ্রট কিং অব দি সেলিউসিড সাম্রাজ্য’; ক্লিওপেট্রা সিলেনি যার অর্থ ‘চন্দ্র’ যাকে দেয়া হলো ‘সেরেনাইকা ও ক্রেট রাজ্যের রানী’র খেতাব, ‘ক্লিওপেট্রা-এন্টনি’র পুত্র টলেমি ফিলাডেলফোস-কে দেয়া হলো ‘সিরিয়া ও এশিয়া মাইনরের রাজা’র খেতাব, যার বয়স তখন মাত্র ২ বছর। ক্লিওপেট্রার স্বপ্ন ছিল তিনিই হবেন সমগ্র বিশ্বের রানী এবং সেই স্বপ্ন পুরণের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানের খুবই কাছাকাছি অবস্থান করছিলেন, "As surely as I shall yet dispense justice on the Roman Capital."
রানী ক্লিওপেট্রা
খ্রিস্টপূর্ব ৩২-৩১ সালের মাঝামাঝি সময়ে এন্টনি চূড়ান্তভাবে অক্টাভিয়ার সঙ্গে বিবাহ-বিচ্ছেদ ঘটালেন। এই ঘটনা সমগ্র পশ্চিমা বিশ্বে এটাই প্রমান করলো যে, ক্লিওপেট্রার সঙ্গে তাঁর প্রণয় রয়েছে। এন্টনি ইতিমধ্যে রোমন মুদ্রা ‘সিলভার দিনারি’তে ক্লিওপেট্রার মুখের ছবি প্রকাশ করেছিলেন যা মেডিটারিনিয়ান রাজ্যগুলোতে ব্যাপকভাবে প্রচলিত ছিল। ফলশ্রুতি দাঁড়ালো এই যে, রোমানদের সঙ্গে এন্টনি’র বিশ্বস্ততা, নির্ভরতা, সহযোগিতা ইত্যাদি সবকিছুরই পরিসমাপ্তি ঘটলো। অক্টাভিয়ান ঘটনার প্রেক্ষিতে এন্টনি’র ‘উইল’ প্রকাশের উদ্যোগ গ্রহণ নেন আর সেইসাথে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্লিওপেট্রার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণাও করলেন।
অক্টাভিয়ান
এন্টনির নাম রাজকীয় সর্বপ্রকার ডকুমেন্টগুলোতেই ব্যবহৃত হয়ে আসছিল তখন। ক্লিওপেট্রার বিরুদ্ধে এমন ভিত্তিহীন সব অভিয়োগ আনা হচ্ছিল যে, তিনি মদ্যপ শ্রেনীর এবং একজন আস্ত পতিতা। ক্লিওপেট্রার বিরুদ্ধে এধরণের অভিযোগ ছড়ানোর ফলে তাঁর আর এন্টনি’র জন্য বেশ ভয়ের কারণ হয়ে দাঁড়ালো। অন্য অনেকের মনে এটাও ধারণা হলো যে, এর ফলে নতুন দেবী হিসেবে ক্লিওপেট্রাই টিকে থাকবেন, এন্টনিও সম্মিলিত শক্তিতে আলেকজান্দ্রিয়া থেকেই বিশ্ব জয়ের সূচনা করবেন। কিন্তু দেখা গেলো, অক্টাভিয়ান নৌবাহিনীর কাছে অক্টিয়াম (গ্রীস)’র যুদ্ধে এন্টনি’র মর্মান্তিক পরাজয় ঘটলো (সেপ্টেম্বর ২, ৩১ খ্রিস্টপূর্বাব্দ)।
প্রাচীন রোম নগরী
একবছরেরও কম সময়ের মধ্যে (৩০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ) দ্বিতীয়বারের মত আলেকজান্দ্রিয়া অভিমুখে অগ্রসরমান অক্টাভিয়ান বাহিনীর মুখোমুখি হলেন এন্টনি। পরাজয় যেন নির্ধারিতই ছিল। আর পরাজিত এন্টনি নিজের তরবারি দিয়েই আত্মহত্যা করলেন। পেছনে পড়ে রইলো তারঁ বিশাল রোম সাম্রাজ্য, প্রেয়সী ক্লিওপেট্রা ও তাঁর আলেকজান্দ্রিয়া।
মার্ক এন্টনি'র আত্মহত্যা
(ক্রমশ)
----------------------------
আরও দেখুনঃ
প্রথম পর্ব | দ্বিতীয় পর্ব | তৃতীয় পর্ব | চতুর্থ(শেষ) পর্ব
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে মে, ২০১০ রাত ৩:২৯