‘Democracies die in darkness.’’ উল্লিখিত জনপ্রিয় ইংরেজি প্রবাদটি মনে পড়ে গেল বাংলাদেশ ব্যাংকের ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার অবৈধভাবে ফিলিপাইনে স্থানান্তরের অভিযোগে ফিলিপাইনের সিনেট কমিটির শুনানির একটি ছবি দেখে। ফিলিপাইন বাংলাদেশের চেয়ে অর্থনৈতিকভাবে খুব বেশি এগিয়ে থাকা দেশ নয়। দেশটি বাংলাদেশের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করে। সৌদি শেখদের কুকীর্তির কথা শোনার পরেও বাংলাদেশ সরকার যেমন জেনে-বুঝে সৌদি আরবে নারী শ্রমিক পাঠাতে বাধ্য হয় ডলারের লোভে, একইভাবে ফিলিপাইনও তাদের দেশের নারীদের সৌদি আরবে পাঠায় ডলারের লোভে। অভাবে স্বভাব নষ্ট— কথাটা দুই দেশের ক্ষেত্রেই একইভাবে প্রযোজ্য।
যে কারণে উপরের প্রবাদ বাক্যটি লেখা। ফিলিপাইনের সিনেটে সাংবাদিক, সে দেশের জনগণ, আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ও সংস্থা, ওই দেশের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতিতে প্রকাশ্য শুনানি হচ্ছে। এটি এমন একটি স্পর্শকাতর ঘটনা, যার বিস্তারিত সারা বিশ্বের মিডিয়ার প্রধান আকর্ষণ বর্তমানে। ওই দেশের ব্যাংক, ক্যাসিনো ও হ্যাকাররা এ চুরির কাজ করেছে, যা সারা বিশ্বে দেশটির সম্মানহানি করেছে এবং ঘটনার বিস্তারিত জানার পরে আরো সম্মানহানি হচ্ছে। অবাক করা ব্যাপার যে, ওই দেশের সরকার ইচ্ছা করলে অভিযুক্ত ব্যক্তিদেরকে রাত ১২টায় ঘরের দরজা ভেঙে তুলে নিয়ে গিয়ে পরের দিনে তা অস্বীকার করতে পারত। এর পর এক মাস ধরে গোপন স্থানে শারীরিক নির্যাতন করে ও ক্রসফায়ারে মৃত্যুর ভয় দেখিয়ে মিডিয়ার সামনে উপস্থিত করে কোনো গরিব নিরীহ ব্যক্তিকে দিয়ে বলাত— সে-ই সব ঘটনার জন্য দায়ী।
অথচ ফিলিপাইন সরকার ও সে দেশের সিনেট নিজ দেশের সম্মানহানির কথা মেনে নিয়েও এ ঘটনার প্রকাশ্য ও স্বচ্ছ বিচারের উদ্যোগ নিয়েছে অস্বাভাবিক তড়িত্গতিতে, এমনকি ঘটনাটি বাংলাদেশের মিডিয়ায় প্রকাশ হওয়ার আগেই। কারণ কী? কারণ হলো, ওই দেশের সরকার ও সিনেটের বিচক্ষণ ব্যক্তিরা খুব ভালো করে বিশ্বাস করেন যে এ চুরির সঙ্গে ওই দেশের ব্যাংক, ক্যাসিনো ও হ্যাকাররা জড়িত থাকার কারণে দেশটির যে সম্মানহানি হয়েছে, তারা যদি স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় এ অপরাধের উপযুক্ত বিচার করেন, তবে তাদের দেশের সম্মান যে পরিমাণ হারিয়েছে, তার চেয়ে শতগুণ বৃদ্ধি পাবে। ঠিক এ কারণেই ফিলিপাইনের সিনেট ও সরকারের এ সক্রিয়তা।
পক্ষান্তরে আমাদের দেশে কী দেখলাম। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর পুরো ব্যাপারটা গোপন রাখলেন এক মাস। শুধু দেশের মানুষের কাছেই নয়, তিনি যার কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য— অর্থ মন্ত্রণালয় ও সরকারের কাছেও।
আবারো ফিরে আসি ফিলিপাইনের সিনেটের শুনানির বিষয়ে। পত্রিকায় জানতে পারলাম যে ওই শুনানির সময় ফিলিপাইনের বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন। ফিলিপাইনের যে প্রতিষ্ঠানটির মাধ্যমে চুরি হওয়া অর্থের একটি বড় অংশ স্থানীয় মুদ্রায় পরিবর্তিত হয়ে হংকংয়ে পাচার করা হয়, সেই প্রতিষ্ঠান ফিলরেমের সভাপতি ওই কাজে যে কমিশন পেয়েছেন, তার মধ্যে থেকে চারশ ভাগের এক ভাগ বাংলাদেশে ফেরত দিতে চায়— টাকার অঙ্কে যা ১ কোটি ৭০ লাখ টাকা। এ কথা শুনে সিনেট কমিটির সদস্যরা ফিলরেমের সভাপতিকে নির্দেশ দিয়েছেন শুনানিতে উপস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তাদের দিকে তাকিয়ে ওই কথা বলার জন্য।
এ শুনানির ফলে বাংলাদেশের চুরি যাওয়া ডলার ফেরত দিতে পারবে কিনা, তা জানার জন্য অপেক্ষায় থাকতে হবে আমাদের। কিন্তু এর ফলে সিনেট ওই দেশের মানুষের মধ্যে পরিষ্কার একটি মেসেজ পাঠাতে পারবে যে অপরাধ করলে রক্ষা নেই। এবার ফিলিপাইন থেকে বাংলাদেশে ফিরি। গত চার বছরে নিম্নোক্ত কোন ঘটনার জন্য কয়জনের বিচার হয়েছে প্রকাশ্যে বা গোপনে?
১. শেয়ারবাজারের ৮৬ হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়া; ২. এমএলএম কোম্পানি ডেসটিনি, নিউওয়ের ৫ হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়া; ৩. হল-মার্কের ৪ হাজার কোটি টাকা ঋণ কেলেঙ্কারি; ৪. বিসমিল্লাহ গ্রুপের ৪০০ কোটি টাকা ঋণ কেলেঙ্কারি; ৫. থার্মেক্স গ্রুপের ১ হাজার ২০০ কোটি টাকার কেলেঙ্কারি এবং ৬. বেসিক ব্যাংকের সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা লোপাট।
সবচেয়ে দুঃখজনক ব্যাপার হলো, ১৮ মার্চ দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকাকে দেয়া সাক্ষাত্কারে অর্থমন্ত্রী বলেছেন— সরকার খুব ভালো করেই জানে বেসিক ব্যাংকের চুরি কীভাবে হয়েছে, কে জড়িত, কী তার ক্ষমতার উত্স?
‘প্রথম আলো: আপনি কিন্তু বলেছিলেন বেসিক ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল হাই বাচ্চুর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন, পরে আর নেননি।
অর্থমন্ত্রী: হ্যাঁ, বলেছিলাম। ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। এখনো হয়নি। যা-ই হোক, রাজনৈতিক ব্যাপার-স্যাপার সব আলাপ করা যায় না। তবে ব্যবস্থা ঠিকই নেওয়া হবে। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বিষয়টা ঠিকভাবে দেখভাল করতে পারেনি। যখন আদালতে যাবে, আদালত ঠিকই সব জানতে চাইবে এবং তখন ওই লোকটার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা হবে।’
সম্প্রতি একটি আন্তর্জাতিক সংস্থার গবেষণায় প্রকাশ হয়েছে, সারা বিশ্বে সবচেয়ে সুখী মানুষের বসবাস ডেনমার্কে The World Happiness Index 2016 just ranked the happiest countries on Earth। প্রথম ১০টি দেশের মধ্যে অবস্থান ডেনমার্কের পাশের দুটি দেশ— নরওয়ে ও সুইডেনের। এবার ফিরে দেখি জার্মানির বার্লিনভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল (টিআই) নামক সংস্থাটি সারা বিশ্বে বিভিন্ন দেশের দুর্নীতি পর্যবেক্ষণপূর্বক সাধারণের কাছে তুলে ধরে যে রিপোর্ট প্রকাশ করে, সেই রিপোর্টের র্যাংকিংয়ের দিকে। গত ২৬ জানুয়ারি টিআই বিশ্বজুড়ে দুর্নীতির ধারণা সূচক (সিপিআই) ২০১৫-এর প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, তাতে সবচেয়ে কম দুর্নীতির দেশের মর্যাদা পেয়েছে ডেনমার্ক। বিশ্বে সবচেয়ে কম অপরাধ সংঘটিত হয় স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশগুলোয়। CORRUPTION PERCEPTIONS INDEX 2015
দুর্নীতিতে বিশ্বের ১৬৮টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান পেছন দিক থেকে ১৩ নম্বর। অর্থাত্ বিশ্বের ১৩তম সেরা দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ আমাদের বাংলাদেশ। বাংলাদেশের স্থান ছিল ২০১৫ সালে ১৪তম; এবার হয়েছে ১৩তম। তবে এক ধাপ এগিয়ে যাওয়ায় আমাদের কোনো কৃতিত্ব নেই। ২০১৪ সালের তুলনায় ২০১৫ সালে দুর্নীতি কমেনি। ২০১৪ সালে ১৭৫টি দেশের মধ্যে উচ্চক্রম অনুযায়ী বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৪৫তম। ২০১৫ সালে ১৬৮টি দেশের মধ্যে উচ্চক্রম (ভালো থেকে খারাপের দিকে) অনুযায়ী, বাংলাদেশের অবস্থান ১৩৯তম। সূচকের ১০০ মানদণ্ডের মধ্যে ২০১৫ সালে বাংলাদেশের স্কোর বা নম্বর ২৫। ২০১৪ সালেও বাংলাদেশ ২৫ নম্বর পেয়েছিল ১০০-এর মধ্যে।
উল্লিখিত দুটি পরিসংখ্যান কী নির্দেশ করে? খুব সোজা উত্তর: যে দেশে সবচেয়ে কম দুর্নীতি হয়, সে দেশের মানুষরা সবচেয়ে সুখী হয়। এবার যদি প্রশ্ন করা হয়, কেন বা কীভাবে দুর্নীতি হয়? খুবই সোজা উত্তর— যে দেশে কোনো কাজ স্বচ্ছ প্রক্রিয়া ও নিয়মতান্ত্রিকভাবে সংঘটিত হয় না।
গত বছর একটি সংবাদ পড়ে পিলে চমকে গিয়েছিল। সেটি হলো, ২০১৪ সালে ডেনমার্কের পুলিশ সারা বছরে মাত্র দুবার পিস্তলের গুলি ব্যবহার করেছে, কিন্তু সেই দুটি ঘটনায়ও কোনো মানুষ নিহত বা আহত হয়নি। অপরাধীকে ভয় দেখাতে ওই দুবার গুলি ব্যবহার করা হয়েছে। ১৯৯৬ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত ১১ বছরে ডেনমার্কের পুলিশের গুলিতে মারা গেছে মাত্র ১১ জন; অর্থাত্ বছরে একজন করে। অথচ ঘুম থেকে উঠে বিদেশে বসে বাংলাদেশের পত্রিকাগুলোর অনলাইন ভার্সন খুলে আমরা কী দেখতে পাই? সরকারি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী অস্ত্র উদ্ধারে গিয়ে ‘বন্দুকযুদ্ধে’র গল্প শুনিয়ে যাচ্ছে ১০ বছর ধরে। পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের প্রকাশ্য দম্ভোক্তি— ‘মাছের রাজা ইলিশ, দেশের রাজা পুলিশ’। অথচ আমেরিকা, কানাডা, ব্রিটেনের মতো পরাক্রমশালী দেশের পুলিশ কোনো প্রয়োজনে জনগণের সঙ্গে কথা বলার সময় নিজের পরিচয় দেয় জনগণের চাকর বা সেবক হিসেবে। কারো সঙ্গে কথা বলার সময় সম্বোধন করে ‘স্যার’ বলে।
২০১৫ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম প্রধান দৈনিক ওয়াশিংটন পোস্টে প্রকাশিত একটি রিপোর্টে 5 countries where police officers do not carry firearms — and it works well প্রকাশ— ব্রিটেন, আয়ারল্যান্ড, নরওয়ে, আইসল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ডে পুলিশ পেট্রল ডিউটিতে থাকাকালীন কোনো মারণাস্ত্র বহন করতে পারে না। অস্ত্র বহন করা ওইসব দেশে আইনত দণ্ডনীয়— বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া। অবাক করা ব্যাপার হলো, আইসল্যান্ডের সাধারণ জনগণের প্রতি তিনজনে একজনের মারণাস্ত্র আছে এবং এটি বিশ্বের অন্যতম কম অপরাধপ্রবণ দেশ। রিপোর্টে উল্লেখ করা আরেকটি পরিসংখ্যান দেখে অবাক হয়েছি: ব্রিটেনের শতকরা ৮২ জন পুলিশ সদস্য নিজেরাই মারণাস্ত্র বহন করতে চায় না। ব্রিটেনের পুলিশ ২০০৩ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত মোট ৫১ বার অস্ত্র ব্যবহার করেছে। জাপানের পুলিশ সর্বশেষ মারণাস্ত্র ব্যবহার করেছে ২০১২ সালে।
In Many Countries, Police Rarely Use Their Guns
পুলিশের মারণাস্ত্র ব্যবহারের পরিসংখ্যান দেখে একটা বিষয় স্পষ্ট— যে দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা যত শক্তিশালী, সেই দেশের মানুষ তত বেশি শৃঙ্খলাপ্রিয় এবং সে দেশের পুলিশকে তত কম মারণাস্ত্র ব্যবহার করতে হয়।
স্বাধীনতার ৪৫ বছর পরেও বাংলাদেশের সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো শক্তিশালী হিসেবে গড়ে ওঠেনি এমনিতেই। গত কয়েক বছর থেকে দেখা যাচ্ছে, সরকারি সব প্রতিষ্ঠানে একের পর এক চেইন অব কমান্ড ভেঙে পড়ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর যখন পদত্যাগপত্র দেয়ার কথা অর্থমন্ত্রীর কাছে, তিনি পদত্যাগপত্র দেন প্রধানমন্ত্রীর কাছে। অর্থমন্ত্রী দৈনিক প্রথম আলোর সঙ্গে সাক্ষাত্কারে আরেকটা গুরুতর বিষয় স্বীকার করেছেন যে, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যানও ঠিকমতো চেইন অব কমান্ড মানেন না। ২০০৮-১৩ সাল পর্যন্ত আওয়ামী জোটের সরকারের সময় প্রায়ই পত্রিকায় দেখা গেছে, বাংলাদেশ বিমানের চেয়ারম্যান ওই মন্ত্রণালয়ের শুরুর দিকের মন্ত্রী জিমএম কাদেরের কোনো কথা আমলে নিতেন না। তিনি প্রধানমন্ত্রী ছাড়া আর কারো কথা শুনতেন না। ঠিক একই ঘটনা ঘটেছিল বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের সময়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলতাফ হোসেন চৌধুরী ও স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুত্ফুজ্জামান বাবরের দ্ব্বন্দ্ব।
১৯৯৬ সালে শেয়ার মার্কেট কেলেঙ্কারি হওয়ার পরে বাংলাদেশে যদি একইভাবে প্রকাশ্য শুনানি করা হতো, তবে ২০১০ সালে আবারো শেয়ার কেলেঙ্কারি করার দুঃসাহস দেখাত না কেউ। একই রকমভাবে হল-মার্ক কোম্পানির পক্ষে লবিং করা কিছু ব্যক্তি কোরবানির জন্য হল-মার্কের দেয়া লাখ টাকা দামের গরু উপহার নিয়েছিলেন, তাদের প্রকাশ্য শুনানি করা হতো তবে বেসিক ব্যাংকের সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা চুরি করতে বিভিন্ন কোম্পানিকে সাহায্য করতে সাহস পেতেন না বেসিক ব্যাংকের তত্কালীন চেয়ারম্যান।
একই কথা প্রযোজ্য সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে। যেখানেই সুশাসনের অভাব থাকবে, সেখানেই দুর্নীতি বিস্তার করবে ঠিক যেমন করে মানবশরীরে প্রাণঘাতী ক্যান্সারে আক্রান্ত টিস্যু বংশবিস্তার করে। ক্যান্সারে আক্রান্ত টিস্যুকে সময়মতো কেমোথেরাপি চিকিত্সা দিয়ে মেরে ফেলা না গেলে মৃত্যু হয়ে ওঠে অপরিহার্য। দুর্নীতি ও সুশাসনের অভাব রাষ্ট্রের জন্য তেমনি দুটি ক্যান্সারে আক্রান্ত টিস্যু হিসেবে কাজ করে। এমনিতেই অনেক সময়ক্ষেপণ হয়ে গেছে। এখনো যদি এ ক্যান্সার টিস্যু দুটি থেকে বাঁচার চেষ্টা না করা হয় তবে বাংলাদেশ আর্থিকভাবে সচ্ছল কিন্তু জনগণের জানমাল রক্ষা করতে ব্যর্থ একটি রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত হবে— সেটি নিশ্চিত করেই বলা যায়।
মাথাপিছু আয় ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ যদি সফল রাষ্ট্র হিসেবে বিবেচনার মূল নির্দেশক হয়, তবে বলতে হবে বিশ্বের অন্যতম সফল রাষ্ট্র আমেরিকার প্রতিবেশী দেশ মেক্সিকো। কারণ তাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাংলাদেশের প্রায় ১০ গুণ; মাথাপিছু আয়ও বাংলাদেশের প্রায় আট গুণ। কিন্তু দুঃখের সঙ্গে বলতে হচ্ছে, সারা বিশ্বে মেক্সিকো পরিচিত মাফিয়া নিয়ন্ত্রিত রাষ্ট্র হিসেবে। বাংলাদেশ এমন রাষ্ট্র হোক, সেটা কেউ চায় না। মেক্সিকোতে মাদক চোরাচালানিদের বিরুদ্ধে কথা বললে কারো রক্ষা নেই। সেটা মন্ত্রী, এমপি, পুলিশপ্রধান— যে-ই হোক না কেন। গুম ও খুন হতেই হবে। ২০১৫ সালের শেষের দিকে এক শহরের মেয়র নির্বাচিত হওয়ার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে খুন হয়েছেন মাদক চোরাচালানিদের হাতে।
দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে নিজের দেশকে দেখা অনেক লজ্জাকর। বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহর হিসেবে নিজ দেশের রাজধানীর নাম দেখাটা খুবই লজ্জাকর। বিশ্বে বসবাস অযোগ্য দেশের তালিকার শীর্ষে নিজ দেশের রাজধানীর নাম দেখাটা আরো লজ্জাকর। অথচ বিশ্বের সবচেয়ে নামকরা চিকিত্সা সাময়িকী The Lancet এ প্রকাশিত গবেষণা প্রবন্ধ বলছে, সারা বিশ্বে সবচেয়ে বেশি কায়িক পরিশ্রম করা মানুষ হলো বাংলাদেশীরা।
কৃতজ্ঞতা: লেখাটি দৈনিক বণিক বার্তা পত্রিকা আজকে তাদের পত্রিকায় উপসম্পাদকী হিসাবে প্রকাশ করেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ হ্যাকড ফিলিপাইন পারলে বাংলাদেশ কেন পারবে না?
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে মার্চ, ২০১৬ সকাল ১১:১১