আমার একখানা মোবাইল নাই। অথচ আমাদের গ্রামের ইজ্জত আলী নাকি একখানা মোবাইল কিনিয়াছে। এ কথা শোনা মাত্রই আমার ইজ্জত কিঞ্চিৎ পরিমান কমিয়া গেলা।না না কিঞ্চিৎ পরিমান নয়, মনে হচ্ছে পুরো ইজ্জতটাই আমার চলিয়া গেছে।এখন আমার এই ইজ্জত ফিরিয়া পেতে হলে অবশ্যই অবশ্যই একখানা মোবাইল কিনিতে হইবে।কিন্তু একেমাত্র আমি অতগুলি টাকা কোথায় পাইব।যাই হোক ব্যাবস্থা একখানা হইবে।মাকে বলিলাম সামনে পরীক্ষা সাজেশন আর গাইড মিলিয়া ৫০০ টাকা লাগিবে।আপুকে বলিলাম একখানা কলেজ ব্যাগ কিনিব ৫০০ টাকা দাও।পরীক্ষার কথা বলে বাবার কাছ থেকেও ৫০০ টাকা লইলাম। বড় ভাইকে প্রাইভেট পড়ার কথা বলে ৪০০ টাকা লইলাম। আর বাজার করতে গিয়ে মারিং করা টাকা ও কিছু টু-পাইস ইনকাম করা মোট ৩০০০ হাজার টাকার একটা মোবাইল কিনিলাম। এখন ইজ্জত আমার বেশ বাড়িয়া গিয়াছে।ইজ্জত আলীকে দেখলে মুখ ভাঙিয়ে বলতে পারি, আমাও একখানা মোবাইল আছে।
কিন্তু আমি মধ্যেবিত্ত ঘরের ছেলে হিসেব করে না চলিলে মোবাইল চালানো আমার সাধ্যে কুলাইবে না।এমনিতেই মোবাইল কিনিতে অনেক টাকা খরচ হইল।প্রথমে এক কোম্পানীর সিম নিয়া মোবাইলে ৩০০
টাকা রিজার্জ করিলাম।সবাইকে আমার নাম্বার জানাইতেই প্রথম দিনেই দুই শত টাকা ফুরাইয়া গেল।আর তৃতীয় দিনেই আমার ৩০০ টাকা হাওয়া।পরে আবার ১০০ টাতা রিচার্জ করিয়া ফোন লক করিয়া রাখিলাম।যাতে করে নাম্বার টিপিলেও কোথাও কল না যায়।এদিকে যে কোঃ সিম ব্যাবহার করিতেছিলাম সেই কোঃ চাইতে আরেক কোঃ বেশী সুযোগ সুবিধা প্রদান করিতেছিল।তাই ঝটপট সেই কোম্পানীর একখানা সিম ২০০ টাকায় খরিদ করিয়া ৩০০ টাকা রিচার্জ করিলাম। নতুন নাম্বার সবাইকে জানাইতে প্রথম দিনেই আমার ২২০ টাকা খরচ হইয়া গেল।আর তৃতীয় দিন না আসিতেই আমার পুরা টাকা হাওয়।এদিকে মোবাইলে রিচার্জ করিতে করিতে আমিও কাহিল।মানিব্যাগটা প্রায় শূণ্য হইয়া পড়িয়া থাকে।সে দিন পত্রিকায় দেখিলাম একটা মোবাইল কোম্পানী অফপিক আওয়ারে প্রতি মিনিট কলরেট ২৫ পয়সা করিয়া দিয়াছে।সেই দিনই ওই কোঃ একখানা সিম কিনিয়া ৩০০ টাকা রিচার্জ করিলাম।
রাতে না ঘুমাইয়া অপরিচিত নাম্বারেও কল করিয়া কথা বলিতে ছিলাম মনের সুখে। কোন চিন্তা নাই কলরেট মিনিটে মাত্র পঁচিশ পয়সা। বিন্দু বিন্দু করিয়া যে অতল সাগর সৃষ্টি হয় আমার তাহা জানা ছিল না।কম কল রেটে বেশি বেশি কথা বলিয়া মাত্র চার দিনেই আমার তিন শত টাকা হাওয়া। এক সময় মোবাইলে আমার অনেক গার্লফ্রেন্ড জুটিল। এই সব গার্লফ্রেন্ডরা শুধু মিস কল দেয় কোন সময় এরা মনের ভুলেও কল করে না। তাদের সাথে অফপিক আওয়ারে কথা বলি।
এক সময় সব কোঃ সকল রকমের অফারের মেয়াদ শেষ হইল। আমারও এখন সকল গার্লফ্রেন্ডের সহিত তেমন কথা বলা হয় না।তারা সকলে মিস কল দেয় আমিও মিস কল দেই।
মোবাইল নেওয়া পর্যন্ত যত টাকা খরচ হইয়াছে তা যদি হিসাব করিয়া রাখিতাম তবে নিশ্চিত আমি অজ্ঞান হইয়া যাইতাম।
মোবাইল কিনিবার সময় কে যেন একজন আমাকে বলিয়াছিল মোবাইল কিনিও না, উহা হইল টাকা খাওয়ার কল।সত্যি আজ আমি হাড়ে হাড়ে বুঝিতে পারিতেছি মোবাইল হইল একখানা টাকা খাওয়ার কল।
**লেখাটা অনেক আগে লেখা।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে নভেম্বর, ২০১৬ সকাল ১০:৪৬