এক বাটপার একবার একটা বুদ্ধি আঁটলো। বলল, আমি এমন একটা দালান বানাবো, যার ছাদ থেকে চাঁদের বুড়িকে দেখা যাবে। দালান বানানোর আগে থেকেই ব্যাপক হারে এর প্রচারণা চললো। সাহায্য করলো, তার মতো আরো কিছু বাটপার। তত্ত্বটা যেহেতু "নতুন", তাই সাধারণ মানুষের মাঝে ব্যাপক কৌতুহল সৃষ্টি হলো। নির্দিষ্ট দিনে দালান বানানো শেষ হলে, সর্বপ্রথম বাটপার গুলি ছাদ থেকে নেমে জানালো, তারা চাঁদের বুড়ি দেখেছে।
এরপর চাঁদের বুড়ি দেখবার জন্যে রাজাকে আমন্ত্রণ জানানো হলো। হাসিমুখে ছাদ থেকে ফিরে রাজা জানালেন, হ্যাঁ, তিনি চাঁদের বুড়ি দেখেছেন। তারপর একে একে মন্ত্রী, উজির, নাজির, কোটাল, সবাই।
যেহেতু সমাজের উচ্চশ্রেণীর লোকেরা দেখেছে, তাই নিম্নশ্রেণীর লোকেরাও পজিটিভ উত্তর দিলো। অত:পর এক রাখাল ছেলে বলল, আমি দেখি নি। কারণ শর্তটা বোধহয় উলটো, "একমাত্র জারজরাই চাঁদের বুড়ি দেখবে, অন্যরা দেখতে পারবে না!" (তখন সবার বোধোদয় হলো। কেউই তো দেখে নি। কিন্তু বাটপাররা জারজ বলবে, তাই না দেখেও স্বীকার করেছে)
২. আয়নাবাজি নিয়ে এত বেশি প্রচারণা হয়েছে, কেউ যদি এটার কোনো ভুল ধরে, তাহলে সবাই তাকে বাঁকা চোখে দেখবে। সে সিনেমা বুঝে না, দেশপ্রেম নেই। অবস্থা এমন যে, কেউ সিনেমা খারাপ লাগলেও বলতে পারছে না! এমন একটা ভাব যে, এই সিনেমা না দেখলে সে বাঙালি ধর্মের মুরতাদ!
আপনার কী মনে হয়, সিনেমা ভালো হওয়ার কারণে এত প্রচারণা? তাহলে আপনি মায়ের কোলে গিয়ে দুধ খেয়ে আসেন। এটা গতানুগতিক এভারেজ সিনেমাই। অত্যন্ত স্লো গল্প, ঢাকা শহরের অলিগলি দেখিয়ে আধাঘন্টা কাটিয়ে দেওয়া হয়েছে। ট্রল পেইজগুলোতে এর চেয়ে ভালো কাহিনীর ভিডিও পাওয়া যায়। তাহলে একে ঘিরে এত প্রচারণা কেন?
ট্রেইলার রিলিজের আগেই এত প্রচারণা দেখে সন্দেহ হলো, "এর পেছনের কারণটা কী! মিডিয়া তাদের এত হেল্প করছে কেন? আর ফেসবুকে সিন্ডিকেট প্রচারণাই বা কেন?" চোখে পড়লো, পরিচালকের অমিতাভ রেজা চৌধুরীর নাম। এই সেই অমিতাভ যিনি সুপরিচিত নাস্তিক, এরাই কুরবানিকে সতীদাহ প্রথার সাথে তুলনা করে একে "বর্বর" হিশাবে আখ্যায়িত করেন!
আর অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী সেই ব্যাক্তি, যিনি খালেদা জিয়াকে "আগুন সন্ত্রাসী" আখ্যা দিয়ে খালেদার বাড়ির সামনে প্লে কার্ড নিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। এরা মিডিয়ার হেল্প পাবে না তো, কারা পাবে? প্রতিটা শাহবাগির টাইমলাইনে যান, জীবনে কোনোদিন সিনেমা নিয়ে টু শব্দ করে নি, কিন্তু এটা নিয়ে তিন চারটা পজিটিভ রিভিউ আছে তাদের টাইমলাইনে।
অনেকে বলবেন,শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি পলিটিক্সের বাইরে। আপনি হয় মাথামোটা নতুবা শিশু। যদি সাহিত্য পলিটিক্সের বাইরেই হয়, জীবিতদের মধ্যে বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ কবি আল মাহমুদকে কেন একঘরে করে রাখা হয়েছে? কোন কিছুই পলিটিক্সের বাইরে নয়। ক্রিকেট নিয়ে চারদিকে এত উন্মাদনা। ক্রিকেটের সেরা গানটি যে আসিফ গেয়েছেন তিনি আজ উপেক্ষিত কেন?
ক্রিকেট নিয়ে অনুষ্ঠান গুলোতে তিনি দাওয়াত পান না। তার সেই গান টিভিতে প্রচার হয় না। ফেসবুকে ক্রিকেটের কোনো গ্রুপেও কখনও আসিফ নিয়ে আলোচনা হতে দেখি না। ব্যান্ড তারকা হামিন-শাফিন বিএসএফের হামলার প্রতিবাদ করায় হয়ে যায় রাজাকার! যারা আজ আয়নাবাজির ভুল ধরায় দেশের শত্রু আখ্যা দিচ্ছে, তারাই আসিফকে ছাগু আখ্যা দেয়, হামিন শাফিন তাদের চোখে পাকি দালাল। ইজিন্ট ইট পলিটিক্স?
বাংলাদেশ এমন এক দেশ, যেদেশে কোনো ব্যাক্তি যদি একটা সুন্দর প্যাকেটে কিছু কেঁচো নিয়ে রাতদিন টিভিতে বিজ্ঞাপন দেয়, কেঁচো স্বাস্থ্যের জন্যে খুবই উপকারী, পুষ্টিকর। একমাস পর কেঁচো কেনার জন্যে লাইন পড়ে যাবে। কেউ প্রশ্নও করবে না, কেঁচো উপকারী, কিন্তু তাই বলে হঠাৎ কেঁচো নিয়ে এত প্রচারণা কেন? পুষ্টিকর আর কোনো কিছু কী নেই? তারা কখনোই বুঝবে না, তার বাড়ির পাশের ক্ষেতের কেঁচোগুলো বিক্রি করার জন্যে এসব বিজ্ঞাপন ধান্দাবাজি!
যারা মিডিয়ার প্রচারণায় বিভ্রান্ত হয়ে প্রশ্ন করতে ভয় পান, তারা কেঁচোর মতোই মেরুদণ্ডহীন। সেই রাজার মতোই কাপুরুষ। আপনি যদি সেই রাখাল ছেলেটার মতো পালটা প্রশ্ন না করতে পারেন, আপনি অমেরুদন্ডী কেঁচো। কালোকে কালো বলতে না পারেন, অন্তত শাদা বলে বিভ্রান্ত করবেন না। চঞ্চলের মতো একটা দলীয় দালালকে বর্জন করার সাহস আপনার নেই, নীরব থাকুন। কিন্তু একটা এভারেজ সিনেমাকে ফার্স্ট ক্লাস বলে মানুষের সাথে প্রতারণা করবেন না!
"চাঁদের বুড়ি" দেখা গেলো কী, গেলো না, সেটা পরের ব্যাপার, বাটপারদের প্রচারণায় বিভ্রান্ত হয়ে, ছাদে চাঁদের বুড়ি দেখতে যাওয়াটাই তো বোকামি!
এমেনিতেই সিনেমা খুব একটা দেখা হয় না। কিন্তু অফিসের কলিগদের অনুরোধে ঢেকি গিলতে গিয়েছিলাম প্রায় অর্থাৎ আয়নাবাজি ছবিটা দেখার সুযোগ তৈরী হয়েছিল। কিন্তু অমিতাভ রেজা আর চঞ্চল চৌ: এর নাম দেখে আরো ইচ্ছে হয় নি। উপরোক্ত লেখাটি যখন ফেসবুকে দেখলাম তখন চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে এই ছবি আর দেখবোনা।
লেখা = রাষ্টপুত্র
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে অক্টোবর, ২০১৬ সকাল ১০:৩২