আমাদের সমাজে দেশে এইটাই নিয়ম – বড়দের সম্মান কর, বড়দের দেখো, শেখ। আমি বেশির ভাগ নৈতিকতা, আদর্শ কিংবা আর যা কিছু গুন সবই বাবা, মা বড় ভাই বোনদের কাছ থেকেই শিখেছি। কখনো পাড়া’র, স্কুল বা কলেজের কোন বড় ভাইকে আদর্শ মেনেছি, তার কাছ থেকেও শিখেছি। এটাই নিয়ম, যুগ যুগ ধরে, শতাব্দী জুড়ে। সংস্কৃতি এমনভাবেই তো গড়ে ওঠে, সমৃদ্ধ হয়। আমি বা আমরা আমাদের সংস্কৃতি নিয়ে তো সত্যি গর্বিত; হাজার বছরের অভ্যাস ঐতিহ্যে গড়ে ওঠা এই সংস্কৃতি।
আমাদের সন্তানরাও এই দেশেই বেড়ে উঠছে, পড়াশোনা শিখছে, দেখছে তাদের পরিবারের সবাইকে, বাবা মা দাদা দাদি, নানা নানি কিংবা কাকা মামাদেরকে। আমাদের পরিবারের কাউকে কোন ভুল কিছু বলতে বা করতে দেখলেই আরেকজন বলে উঠি, এটা শিখিও না, ওটা শিখিও না ইত্যাদি। কিন্তু সময়টা এখন ‘open source’ এর। তথ্য এখন সব জায়গায়। ঘুরে বেড়াচ্ছে সবার জন্য। যে যখন খুশী নিতে পারছে। বারণ করার আগেই তা চলে যাচ্ছে সন্তানের কাছে। দেশেই এখন অগুন্তি টেলিভিশন চ্যানেল, খবর চলে রাতদিন। নাগরিক জীবনে বিনোদনহীন সময় কাটানোর জন্য একমাত্র ভরসাও এই টেলিভিশন। ‘doraemon’ নামের উদ্ভট কার্টুন দেখা বন্ধ করলেও খবর দেখার সময়টা কিভাবে বন্ধ করা যাবে!
আমার ছেলেটা নার্সারির ছাত্র। সপ্তাহে দুদিন তার বন্ধ। তা ছাড়াও ইদানিং সে জানে হরতাল হলে স্কুলে যেতে হয় না। কারন হরতাল মানে লাঠি দিয়ে মানুষকে পুলিশের পেটানো আর গাড়িতে আগুন দেয়া। তাই স্কুলও বন্ধ থাকে।
শিশুরা আমাদেরই ভবিষ্যৎ, তা-ই যদি আমরা মানি তাহলে আমরা সবাই মিলে কী শেখাচ্ছি আমাদের ‘ভবিষৎ’দের! এই শিশুরাই তো এই দেশের হাল ধরবে, না কি? এগুলো শিখে তারাই বা কি শেখাবে তাদের সন্তানদের! অথবা আমরাই বা তাদের কাছে কোন আদর্শের নেতা নেত্রী হব! কিংবা তারা কি আদৌ আমাদের নেতা নেত্রী হিসাবে আদর্শ মানবে?
ছেলেটা নার্সারির ছাত্র। সে অনেক ভাষা, অনেক কথার মানে এখনও বোঝে না জানে না - আমি ভয়ে আছি, আমাদের নেতা নেত্রিরা যে ভাষায় কথা বলেন আর যে সব শব্দ চয়ন করেন... সেগুলোর ব্যাখ্যা যদি সে জিজ্ঞেস করে আমার উত্তর টা কি হবে?
নার্সারির ছাত্র। সে এখনও শিখছে বাসার বড়দের কাছ থেকেই, সেটাই তো উচিৎ, এমন চলতে থাকলে আমি কি তখনও বলে যাব – বড়দের কাছ থেকেই শেখ? কি ভরসায়? কি শিখবে সে?
রাজনৈতিক শিষ্টাচার কিংবা রাজনৈতিক সংস্কৃতি বাদ দিলেও আমরা যদি এই বিষয়টি নিয়ে ভাবি, তা হলেও কি একটু অন্যরকম কাজ করা উচিৎ বলে মনে হয় না? রাজনীতিতে কথার মারপ্যাঁচ থাকবেই, কিন্তু তা যেন এমন পর্যায় না যায় যে সন্তানকে নিয়ে শোনা বা দেখা না যায়। অনুরোধ আপনাদের কাছে।
আসুন না, দিন বদলের ডাক যখন দিয়েইছি তখন নতুন কিছু শেখাই, এখান থেকেই শুরু হোক; যেন বড় হয়ে তারা গর্ব করে বলতে পারে, সত্যি তাঁরা মহান ছিলেন। সত্যিকারের শিক্ষিত মানুষের মত তাঁরা নিজেরা শিখতেন আবার শেখাতেনও।