আমিনুল করিম মজুমদার খোকা মিয়া - নোয়াখালী অঞ্চলের প্রবাদ পুরুষ।
ব্যক্তি হিসেবে মুজিব আদর্শে বিশ্বাসী, কিন্তু নেতা হিসেবে তিনি সার্বজনীন।
একাধারে তিনি ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা,ফেনী জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক,পরশুরাম উপজেলা পরিষদের নির্বাচিত চেয়ারম্যান।
জননেতা হিসেবে ফেনীর উত্তরাঞ্চলের শিক্ষার আলোবঞ্চিত জনগণের জন্য নিজ উদ্যোগে প্রতিষ্ঠা করেন 'পরশুরাম কলেজ',যা বর্তমানে ফেনী-পরশুরামের মানুষের জন্য 'বাতিঘর' হিসেবে সমাদৃত। আর একজন আধুনিক চিন্তাধারার রাজনৈতিক হিসেবে তিনি এই জনপদকে দিয়ে গেছেন আধুনিকতার ছোঁয়া,যা এই অঞ্চলে উন্নয়নের ভিত্তিপ্রস্তর হিসবে বিবেচিত হয়।
'৭৫ পরবর্তী বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের চরম দুঃসময়ে সারা বাংলাদেশে যে কয়েকজন নেতা আওয়ামীলীগকে আঁকড়ে ধরে রেখেছিলেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম এই আমিনুল করিম মজুমদার,বঙ্গবন্ধুর 'খোকা মিয়া'।
মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক,তথাকথিত নয় সত্যিকারের জনগণের নেতা,ব্যক্তি সততা,কর্মদক্ষতা - আসলে কোন বিশেষণই উনাকে এককভাবে বিশ্লেষণ করতে ব্যর্থ।কারণ,উনি যে এই সব কিছুরই সমন্বয়।
গতকাল ২৬ জুন ছিল উনার মৃত্যুবার্ষিকী,১৯৯৪ সালের ঐ দিনে উনি সাধারণের মায়া ত্যাগ করে পাড়ি জমিয়েছেন সেই জগতে,যেখান থেকে কেউ কখনো ফিরে না।কিন্তু,উনার কর্মই উনাকে জনগণের কাছে স্মরণীয় করে রেখেছে।
ফেনীতে 'পোস্টধারী' নেতার অভাব কখনো হয়নি-হবেও বলে মনে হয় না,কিন্তু খোকা মিয়া একজনই-মাস্টারপিস।
একজন বঙ্গবন্ধুর একজনই খোকা মিয়া হয় - নিঃস্বার্থ কর্মী।।
------------------------------------------
আজিজুল হক চেয়ারম্যান - ফেনীর ফুলগাজী উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক,আমার শ্রদ্ধেয় নানা।
ফুলগাজী উপজেলা - প্রায় বছরখানেক আগে যেই উপজেলার চেয়ারম্যান এবং উপজেলা আওয়ামীলীগ সাধারণ সম্পাদক একরামুল হককে প্রকাশ্য দিবালোকে কুপিয়ে,গুলি করে,গাড়িতে আগুন দিয়ে হত্যা করা হয়।আমার নানা ছিলেন এই একরামুল হকেরই পূর্বসূরি।
এখানে আওয়ামীলীগ করা মানে নিজের জীবনকে নিশ্চিত অপমৃত্যুর কাছে সঁপে দেওয়া।যারাই ইতিপূর্বে এই এলাকায় আওয়ামীলীগের দায়িত্বশীল পদে ছিলেন তাদেরকেই নানাভাবে নির্মম নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে।
১৯ বছর আগের ১৯৯৬ সালের আজকের এই দিনটি,আমাদের পরিবারের ইতিহাসের কালো দিন। ১২ জুনের নির্বাচনে ৩০০ আসনের মধ্যে ১৪৬ আসন পেয়ে জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসে।
সেই খুশিতে ফেনী জেলা আওয়ামীলীগের উদীয়মান প্রতিষ্ঠিত নেতা আজিজুল হক চেয়ারম্যান ঢাকায় আসেন বঙ্গবন্ধু কন্যার সাথে দেখা করে শুভেচ্ছা জানাতে।কিন্তু,তাঁর সেই যাত্রাই যে পরিবারের সাথে জাগতিক পৃথিবীতে বিচ্ছিনতার দেয়াল হয়ে দাঁড়াবে তা কে জানত!
ফেনী জেলা আওয়ামীলীগের কিছু মাথামোটা নেতার আজিজুল হকে যথেষ্ট সমস্যা ছিল।কারণ,আজিজুল ছিলেন শেখ হাসিনার একান্ত আস্থাভাজন,ফেনী জেলা আওয়ামীলীগে ধারাবাহিকভাবে তাঁর প্রভাববলয় বাড়ছিল,জনগণের সম্পদকে তিনি জনগণের করে রেখেছিলেন।ঘর-ভিটে-সম্বলহীন অনেক পরিবার আজিজুল হকেই নির্ভর ছিলেন। ব্যক্তি আজিজুল হক কি ছিলেন সেটার যোগ্য মূল্যায়ন শুধু এই এলাকার প্রকৃত মেহনতি মানুষেরাই করতে পারবেন।
কিন্তু,এমন নেতা বেঁচে থাকলে জনগণের টাকায় নিজেদের হালুয়া-রুটির স্বপ্ন দেখা যায় না,তাই তৈরি করা হয়েছিল ভয়াবহ এক ষড়যন্ত্র।
সেই ষড়যন্ত্রের মোতাবেক আজিজুল হকের সরলতার সুযোগ নিয়ে বিষ প্রয়োগে তাঁকে হত্যা করা হয়।পুরো ব্যাপারটাতে আরও কিছু অন্ধকার অংশ আছে। কিন্তু, ষড়যন্ত্রীদের মূল অনেক ভিতরে গ্রোথিত,তাই জেনেও অনেক কিছু জানানো যায় না!
আজিজুল হকের মৃত্যু পরবর্তী পরিবারের করুন দশা এখনো বলবৎ।কারণ, তিনি জনগণের রাজনীতি করেছিলেন;নিজের পকেট ভারী করার রাজনীতি না।
আজও বীরমুক্তিযোদ্ধা আজিজুল হকের পারিবারিক উত্তরসূরিরা পদে পদে বঞ্চিত,কোন যোগ্য মূল্যায়নই তাঁদের ভাগ্যে জুটে না!
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে জুন, ২০১৫ রাত ১:৫৪