somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

'পরিণয়' ; ধারাবাহিকে পোষ্টানো গল্প। পর্ব ১ ও ২।

২৬ শে মে, ২০১৬ সকাল ৭:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

(১)
আজ সুমাইয়ার বিয়ে!
ছেলে অনেক ভালো! পাশাপাশি ভালো একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে ভালো একটা পদে আছে। এত ভালোর মাঝেও সুমাইয়ার মন ভালো নেই! সাধারণত বিয়ের দিন মেয়েদের মন একটু খারাপ থাকতেই পারে! বিষয়টাকে স্বাভাবিক ভেবেই সেদিকে আর তেমন করে নজর পড়েনি কারো।

মন খারাপের একটাই কারণ ছিলো সুমাইয়ার। আর সেটা হচ্ছে জুবায়ের!
ছেলেটা বড্ড পাগল! বলে বলে তিন বেলার খাবার খাওয়াইতে হয়! ওর খাওয়ার পর ওকে মিসড কল দিতে হয়, ওর খেতে বলার সিগন্যাল হিসেবে! সুমাইয়া একবেলা মিসড কল দিতে ভুলে গেলে রাগ করেই হোক কিংবা ভুলেই হোক সে বেলা আর জুবায়েরের খাওয়া হয় না! অসুস্থ হলে ঔষধটা পর্যন্ত বলে খাওয়াইতে হয়!

ছেলে হিসেবে জুবায়েরকে সুমাইয়ার পাশে মানাতো কিনা সুমাইয়া জানে না কিন্তু ওর জন্য যে জুবায়ের অযোগ্য ছিলো না সেটা হলপ করে বলা যেতে পারে।
অন্যান্য আর-দশটা রক্ষণশীল পরিবারের মতো পরিবারের মেয়ে হওয়ায় নিজের পছন্দের কথাটা পরিবারের কাউকে বলার সাহস হয়নি।

না! ওদের মাঝে ঠিক বর্তমান সময় আমরা যেটাকে প্রেম বলি সে রকম কোনো প্রেমের সম্পর্ক ছিলো না! তবে হ্যা, দুজন দুজনকে পছন্দ করত! নিজেদের ভালো লাগা, মন্দ লাগা পরষ্পর শেয়ার করত এবং সেটা শুধুই সেলফোনে! একজনের জন্য তারা আরেকজনকে খুবই জরুরী ভাবতো ! যে ভাবনার হয়ত আজই শেষ দিন।

দুই ভাই দুই বোনের মাঝে সবার ছোট সুমাইয়া।
ভাইদের অতি আদরের না হলেও নেহাতই দায়িত্ব পালন হিসেবে রুশাদের সাথে বিয়েটা ঠিক করা! প্রথম দিকের বিয়ের প্রস্তাবগুলো ফিরিয়ে দিতে পারলেও মা-বাবা, বোন, ভাইদের চাপাচাপি আর ভাবীদের বাঁকা কথার খোঁচায় শেষ অবধি রাজি না হয়ে আর উপায় ছিলো না সুমাইয়ার!

পৃথিবীতে নিজের সুখ চাইতে গেলে কিংবা নিজের দিকটা দেখতে গেলে অন্যের সুখ কিংবা তার দিকে তাকানোর সময় পাওয়া যায় না। কিন্তু সুমাইয়াদের নিজের দিকে তাকালে চলে না। তাদের দেখতে হয় পরিবার, পরিবারের সম্মান, সমাজ, সমাজে তাদের পরিবারের অবস্থান ইত্যাদি বিষয়গুলো। আর মেয়েদের জন্মগত একটা স্বভাবই হচ্ছে এরা এদের না বলা কষ্টগুলো বুকের ভিতর ছাঁইচাপা দিয়ে রাখতে পারে।

(২)

মা কে কথা দিয়ে এসেছে জুবায়ের- কোনোদিন সিগারেট কিংবা নেশা জাতীয় কিছু ধরবে না, রাজনীতির ধারে কাছেও ঘেষবে না।
'আদরের দুলাল' বলতে যা বোঝায় ঠিক সেটাই ও, ওর পরিবারের কাছে। বিশেষ করে ওর মায়ের কাছে ও 'যক্ষের ধন'। বাবা কাজের সুবাদে থাকেন বাড়ি থেকে একটু দূরে। নিত্যদিনই ফোনে কথা হয়। বাবারও ঐ একই কথা "সাবধানে থাকবা" "দিন-কাল ভালো না" "নেশা-টেশা তো তুমি করবা না জানি" ইত্যাদি নীতি কথাই বেশী হয় বাবার সাথে কথা হলে।

ছেলে হিসেবে জুবায়ের কোন কালেই খারাপ ছিলো না। বিভাগীয় পর্যায়ের একটা সাপ্তাহিক পত্রিকার বিজ্ঞাপন বিভাগের চাকরিটা পেয়েছে কিছুদিন হলো। তবুও সেটা সুমাইয়ার চাপাচাপিতে। ওর দূর্বল পয়েন্ট ওই একটাই 'সুমাইয়া'!

মাসিক ইনকাম জুবায়েরের যাই হোক, সুমাইয়ার চলে যেত কিন্তু সুমাইয়ার পরিবারের হয়তবা চলত না। তারপরও সুমাইয়া ভেবেছিলো চাকরিটাতে একটু থিতু হতে পারলেই জুবায়েরের কথা পরিবারে জানাবে। কিন্তু ঘরে বিবাহ উপযুক্ত একটা ছোট বোন থাকলে ভাইদের কান ভারী করার লোকের যেমন অভাব হয় না ঠিক তেমনি লেখাপড়া জানা একটা মেয়ের জন্য ভালো ভালো প্রস্তাব আসাটাও অভাবনীয় কিছু না।

সুমাইয়ার ইচ্ছাতে ভালো ভালো বেশ কয়েকটা প্রস্তাব ফিরিয়ে দেয়ার পর রুশাদকে ওর পরিবারের ভালো লেগে যায়। তাই এই ছেলেকে আর হাতছাড়া করতে চায়নি কেউ। অবস্থা এমন পর্যায়ে গিয়ে ঠেকে যে, কোন রকমে বিয়েটা অন্তত রেজিস্ট্রি করে নিলেই বাঁচে ওর পুরো পরিবার। মা বুঝায়, "দেখ মা, আমার আর তোর বাবার বয়স হয়ে গেছে। কখন যে দু' চোখ বন্ধ হয়ে যায় ঠিক নেই। তখন তোকে আর কে দেখবে বল? ভাইদের কাঁধে বোঝা হয়ে থাকবি? তার থেকে আমরা থাকতে ভালোয় ভালোয় তোর একটা ব্যবস্থা করে যেতে পারলেই নিশ্চিন্ত।"

সুমাইয়া চুপ করে থেকে শোনে সে সব কথা। কিই বা বলার আছে আর ওর চুপ করে শোনা ছাড়া! সুমাইয়া ভাবে ওর ভাগ্যটা এমন কেনো! কিন্তু সুমাইয়া জানে না, মেয়েদের ভাগ্যগুলো এমনই হয়ে থাকে। নিজেদের ইচ্ছাগুলোকে গলা টিপে মেরে ফেলতে হয় অন্যের ইচ্ছের সফল প্রতিফলন ঘটাতে!

(তৃতীয় অংশ পোষ্টের অপেক্ষায়..)
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে মে, ২০১৬ সকাল ৭:৫৯
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

একটি ছবি হাজার কথা বলে

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ০৮ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৩:৫৩

আগস্টের ৩ তারিখ আমি বাসা থেকে বের হয়ে প্রগতি স্মরণী গিয়ে আন্দোলনে শরিক হই। সন্ধ্যের নাগাদ পরিবারকে নিয়ে আমার শ্বশুর বাড়ি রেখে এসে পরদিনই দুপুরের মধ্যেই রওনা হয়ে যাই। আগস্টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

অদ্ভুতত্ব.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৮ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪৩

অদ্ভুতত্ব.....

আমরা অনিয়ম করতে করতে এমন অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি যে, অনিয়মকেই নিয়ম আর নিয়মকে অনিয়ম মনে হয়। নিয়মকে কারো কাছে ভালো লাগে না, অনিয়মকেই ভালো লাগে। তাই কেউ নিয়ম মাফিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের কালো রাজনীতির উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত অধ্যাপক ইউসুফ আলী !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৮ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৫৮




অধ্যাপক ইউসুফ আলী মুজিবনগর সরকারের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠ করেন।

উনি ছিলেন বাংলার অধ্যাপক। ৬২ সালে পূর্ব পাকিস্তান আইনসভার সদস্য হন। ৬৫ সালে পাকিস্তান গণপরিষদের সদস্য,... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। নিজের বানানো টেলিস্কোপ দিয়ে কালপুরুষ নীহারিকার ছবি

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৮ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯






ঢাকায় নিজের বাসার ছাদ থেকে কালপুরুষ নীহারিকার ছবি তুলেছেন বাংলাদেশি অ্যাস্ট্রোফটোগ্রাফার জুবায়ের কাওলিন। যে টেলিস্কোপ দিয়ে তিনি এই ছবি তুলেছেন, সেটিও স্থানীয় উপকরণ ব্যবহার... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার দশটা ইচ্ছে

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৮ ই নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৩:৩১



প্রত্যেক রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে মনে হয়-
যদি সকালটাকে দেখতে না পাই। কেউ যদি জিজ্ঞেস করেন, পৃথিবীর সবচেয়ে বিস্ময়কর জিনিস কি? তাহলে বলব মানুষের বেচে থাকা। মরে গেলেই তো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×