(১)
আজ সুমাইয়ার বিয়ে!
ছেলে অনেক ভালো! পাশাপাশি ভালো একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে ভালো একটা পদে আছে। এত ভালোর মাঝেও সুমাইয়ার মন ভালো নেই! সাধারণত বিয়ের দিন মেয়েদের মন একটু খারাপ থাকতেই পারে! বিষয়টাকে স্বাভাবিক ভেবেই সেদিকে আর তেমন করে নজর পড়েনি কারো।
মন খারাপের একটাই কারণ ছিলো সুমাইয়ার। আর সেটা হচ্ছে জুবায়ের!
ছেলেটা বড্ড পাগল! বলে বলে তিন বেলার খাবার খাওয়াইতে হয়! ওর খাওয়ার পর ওকে মিসড কল দিতে হয়, ওর খেতে বলার সিগন্যাল হিসেবে! সুমাইয়া একবেলা মিসড কল দিতে ভুলে গেলে রাগ করেই হোক কিংবা ভুলেই হোক সে বেলা আর জুবায়েরের খাওয়া হয় না! অসুস্থ হলে ঔষধটা পর্যন্ত বলে খাওয়াইতে হয়!
ছেলে হিসেবে জুবায়েরকে সুমাইয়ার পাশে মানাতো কিনা সুমাইয়া জানে না কিন্তু ওর জন্য যে জুবায়ের অযোগ্য ছিলো না সেটা হলপ করে বলা যেতে পারে।
অন্যান্য আর-দশটা রক্ষণশীল পরিবারের মতো পরিবারের মেয়ে হওয়ায় নিজের পছন্দের কথাটা পরিবারের কাউকে বলার সাহস হয়নি।
না! ওদের মাঝে ঠিক বর্তমান সময় আমরা যেটাকে প্রেম বলি সে রকম কোনো প্রেমের সম্পর্ক ছিলো না! তবে হ্যা, দুজন দুজনকে পছন্দ করত! নিজেদের ভালো লাগা, মন্দ লাগা পরষ্পর শেয়ার করত এবং সেটা শুধুই সেলফোনে! একজনের জন্য তারা আরেকজনকে খুবই জরুরী ভাবতো ! যে ভাবনার হয়ত আজই শেষ দিন।
দুই ভাই দুই বোনের মাঝে সবার ছোট সুমাইয়া।
ভাইদের অতি আদরের না হলেও নেহাতই দায়িত্ব পালন হিসেবে রুশাদের সাথে বিয়েটা ঠিক করা! প্রথম দিকের বিয়ের প্রস্তাবগুলো ফিরিয়ে দিতে পারলেও মা-বাবা, বোন, ভাইদের চাপাচাপি আর ভাবীদের বাঁকা কথার খোঁচায় শেষ অবধি রাজি না হয়ে আর উপায় ছিলো না সুমাইয়ার!
পৃথিবীতে নিজের সুখ চাইতে গেলে কিংবা নিজের দিকটা দেখতে গেলে অন্যের সুখ কিংবা তার দিকে তাকানোর সময় পাওয়া যায় না। কিন্তু সুমাইয়াদের নিজের দিকে তাকালে চলে না। তাদের দেখতে হয় পরিবার, পরিবারের সম্মান, সমাজ, সমাজে তাদের পরিবারের অবস্থান ইত্যাদি বিষয়গুলো। আর মেয়েদের জন্মগত একটা স্বভাবই হচ্ছে এরা এদের না বলা কষ্টগুলো বুকের ভিতর ছাঁইচাপা দিয়ে রাখতে পারে।
(২)
মা কে কথা দিয়ে এসেছে জুবায়ের- কোনোদিন সিগারেট কিংবা নেশা জাতীয় কিছু ধরবে না, রাজনীতির ধারে কাছেও ঘেষবে না।
'আদরের দুলাল' বলতে যা বোঝায় ঠিক সেটাই ও, ওর পরিবারের কাছে। বিশেষ করে ওর মায়ের কাছে ও 'যক্ষের ধন'। বাবা কাজের সুবাদে থাকেন বাড়ি থেকে একটু দূরে। নিত্যদিনই ফোনে কথা হয়। বাবারও ঐ একই কথা "সাবধানে থাকবা" "দিন-কাল ভালো না" "নেশা-টেশা তো তুমি করবা না জানি" ইত্যাদি নীতি কথাই বেশী হয় বাবার সাথে কথা হলে।
ছেলে হিসেবে জুবায়ের কোন কালেই খারাপ ছিলো না। বিভাগীয় পর্যায়ের একটা সাপ্তাহিক পত্রিকার বিজ্ঞাপন বিভাগের চাকরিটা পেয়েছে কিছুদিন হলো। তবুও সেটা সুমাইয়ার চাপাচাপিতে। ওর দূর্বল পয়েন্ট ওই একটাই 'সুমাইয়া'!
মাসিক ইনকাম জুবায়েরের যাই হোক, সুমাইয়ার চলে যেত কিন্তু সুমাইয়ার পরিবারের হয়তবা চলত না। তারপরও সুমাইয়া ভেবেছিলো চাকরিটাতে একটু থিতু হতে পারলেই জুবায়েরের কথা পরিবারে জানাবে। কিন্তু ঘরে বিবাহ উপযুক্ত একটা ছোট বোন থাকলে ভাইদের কান ভারী করার লোকের যেমন অভাব হয় না ঠিক তেমনি লেখাপড়া জানা একটা মেয়ের জন্য ভালো ভালো প্রস্তাব আসাটাও অভাবনীয় কিছু না।
সুমাইয়ার ইচ্ছাতে ভালো ভালো বেশ কয়েকটা প্রস্তাব ফিরিয়ে দেয়ার পর রুশাদকে ওর পরিবারের ভালো লেগে যায়। তাই এই ছেলেকে আর হাতছাড়া করতে চায়নি কেউ। অবস্থা এমন পর্যায়ে গিয়ে ঠেকে যে, কোন রকমে বিয়েটা অন্তত রেজিস্ট্রি করে নিলেই বাঁচে ওর পুরো পরিবার। মা বুঝায়, "দেখ মা, আমার আর তোর বাবার বয়স হয়ে গেছে। কখন যে দু' চোখ বন্ধ হয়ে যায় ঠিক নেই। তখন তোকে আর কে দেখবে বল? ভাইদের কাঁধে বোঝা হয়ে থাকবি? তার থেকে আমরা থাকতে ভালোয় ভালোয় তোর একটা ব্যবস্থা করে যেতে পারলেই নিশ্চিন্ত।"
সুমাইয়া চুপ করে থেকে শোনে সে সব কথা। কিই বা বলার আছে আর ওর চুপ করে শোনা ছাড়া! সুমাইয়া ভাবে ওর ভাগ্যটা এমন কেনো! কিন্তু সুমাইয়া জানে না, মেয়েদের ভাগ্যগুলো এমনই হয়ে থাকে। নিজেদের ইচ্ছাগুলোকে গলা টিপে মেরে ফেলতে হয় অন্যের ইচ্ছের সফল প্রতিফলন ঘটাতে!
(তৃতীয় অংশ পোষ্টের অপেক্ষায়..)
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে মে, ২০১৬ সকাল ৭:৫৯