১০
“সময়ের ব্যবধান”
.
সময়ের সাথে মানুষ বদলায়
বসন্তে যেমন ডালে ডালে,
গাছে গাছে নতুন পাতা গজায়
মানুষ বদলে মনে মনে।
গাছ পুরানো পাতা হারায়
সাজে নতুন সাজে,
কিছু মানুষ এভাবেই বদলায়
শুধু নতুনত্ব খুজে।
কাউকে ডুবায় শত হতাশায়
সকল মায়া ছেড়ে,
গাছ সাঁজে নতুন আশায়
একেই মানুষকে নতুন কিছু দিতে।
ডাল থাকে ডালের জায়গায়
পাতা শুকিয়ে মরে,
মানুষের থাকে শূন্য দেহ
হৃদয় শুকিয়ে মরে।
০৯।
“না হয় যদি দেখা”
.
দেখা যদি না হয় কোনদিন, হোক তাতে কি?
ভুল যদি হয়ে থাকে , তবুও তো ভালোবেসেছি ...
ভালোবেসে মরুভূমিতে ফুল ফুটিয়েছি।
ফুল তো ফুটে ঝরে যাওয়ার জন্যেই, ঝরুক না একটু।
বুকের মাঝে না হয় একটু স্মৃতি থেকে যাক
চোখের জলে না হয় একটি ঝর্ণা হয়ে থাক,
যে স্মৃতি নিয়ে বেঁচে থাকতে পারি তোমার হৃদয়ে।
হয়তো একদিন সকল স্মৃতি বিলীন হয়ে যাবে
মহাপ্রলয়ের হার না মানা আঘাতে।
আর সেদিন আমি অপেক্ষায় থাকবো
তোমার জন্য, এপার থেকে ওপারে।
০৮।
“হারিয়ে গেছে সে”
.
হারিয়ে গেছে সে কোন এক মেঘলা দিনে
বৃষ্টির সাথে ঝড়ো হাওয়া হয়ে
রোদ্রের সাথে কোন এক ভোরবেলায় কুয়াশা হয়ে
কোন এক শেষ বিকেলে গোধূলি লগনে।
হারিয়ে গেছে সে কোন এক অমাবস্যার রাতে
ভয়ংকর কালো অন্ধকার হয়ে
ঘন কালো মেঘের আড়ালে কোন এক বর্ষা কালে
কোন এক অচেনা নদীর স্রোতের সাথে।
হারিয়ে গেছে সে কোন এক প্রাচীন যুগে
হারিয়ে যাওয়া সভ্যতা হয়ে
মহাকালের সাথে কোন এক ভয়ানক দিনে
গন্তব্যহীন কোন এক পথের সাথে।
হারিয়ে গেছে সে কোন এক জ্যোৎস্না রাতে
কারো হৃদয়ে আলোকিত করে
সঙ্গী হয়ে কোন এক অদ্ভুত মহামানবের সাথে
কোন এক অভাগাকে অন্ধকারে ফেলে।
০৭।
“চোখে এখন আর জল আসেনা”
.
চোখে এখন আর জল আসেনা
কত কাদি, কত একা বসে থাকি
কিন্তু কান্নার আর শেষ হয় না
কাঁদতে কাঁদতে শেষ হয়ে গেছে জলের রাশি
তাইতো এখন আর রোমাল দিয়ে চোখ মুছতে হয় না।।
তোমাকে হারানোর কথা এখন আর মনে করতে হয় না
চোখের সামনে সবসময়ই ভাসে তোমার ছবি
যে ছবি এখন আর রং তুলি দিয়ে আকতে হয় না
হৃদয়ের ঝরানো সে রক্ত দিয়ে আকা
তাই শুধু শুধু এখন আর কাগজ তুলি নিয়ে বসে থাকতে হয় না।।
গাছের ডালে এখন আর পাখি ডাকে না
পৌষ মাসেও পাতার ডগায় নিশি জমে না
নদীর বুকে এখন মরুভূমি বাসা বেধেছে
যা তোমার সাথে এখন বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়েছে
তাইতো নদীর সেই কলকল সূর এখন আর কানে আসেনা।।
শত চেষ্টার পরেও এখন আর গান শুনতে পারি না।
কারন বনের পাখি এখন আর গান গায় না
ফুলের বাগানেও এখন আর গন্ধ পাই না
ভোমরাও নাকি তাই এখন আর ফুলের বাগানে আসে না
তাইতো নাক কান এখন আর খোলা রাখতে হয় না।।
সাগরে নাকি এখন অনেক ঢেউ ওঠে
কিন্তু সেই ঢেউ এখন আর হৃদয়ে দোলা দেয় না
কারন আকাশে এখন অনেক মেঘ জমে আছে
আর সেই মেঘ পৃথিবীটাকে অন্ধকার করে রেখেছে
তাইতো হৃদয়ে এখন আর বৃষ্টির ছোয়া লাগে না।।
চোখের পাতা এখন আর বুজাতে হয় না
সারাক্ষন চেয়ে থাকে
এখন আর বার বার বলতে হয় না
আর একটু জেগে থাক, একটু পরে ঘুমাও
এভাবেই জেগে থাকি।।
কারো সামনে এখন আর কান্না লুকাতে হয় না
ভিতরে কষ্ট থাকলেও বাইরে দেখা যায় না
কি হয়েছে তোর? এ প্রশ্নের উত্তর দিতে হয় না
কারন, চোখে এখন আর জল আসেনা
তাইতো রোমাল দিয়ে এখন আর চোখ মুছতে হয় না।।
০৬।
“নীরবেই কাঁদব”
.
আমি নীরবেই কাঁদব
নীরবেই হাসব,
কখনও বলব না আর
আমার কান্না পাচ্ছে দেখে যাও একবার ।
.
আমি নীরবেই জ্বলব
নীরবেই মরব
কখন বলব না আর
মরার বেলা এই তৃষ্ণার্ত ঠোটে একফোটা জল দাও একবার।
.
আমি নীরবেই সইব
নীরবেই দেখব
কখনও বলব না আর
পোড়া হৃদয়খানি দেখে যাও একবার ।
.
আমি নীরবেই ভালবাসব
নীরবেই হৃদয়ে রাখব
কখনও বলব না আর
কত ভালভালবাসি তোমায় চেয়ে দেখ একবার ।
.
আমি নীরবেই ভাবব
নীরবেই কাছে রাখব
কখনও বলব না আর
একবার কাছে এসে দেখে যাও মুখটি আমার ।
.
আমি নীরবেই অদৃশ্য হব
নীরবেই চলে যাব
কখনও বলব না আর
চির তরে চলে যাচ্ছি বিদায় দাও এবার ।
০৫।
“ভালোবাসি”
.
শুধু একটি বার বল ভালোবাসি
তোমাকে আর কোনদিন ভালবাসতে হবে না।
মরুভূমির তপ্ত বালিতেও পা দিতে হবে না।
আমার জন্য তোমকে নিশি রাতে পা ভিজাতে হবে না।
আকাশ বাতাস শুনুক তোমার প্রতিধ্বনি।
সবাই জানুক কেউ আমাকে ভালোবেসেছিল।
আমার হৃদয়ের ডাকে কেউ সাড়া দিয়েছিলো।
শুধু এতটুকুই আমি চাই, এর চেয়ে বেশি চাই না।
কাছে আস বা না আস, তাতে আমার কোন আপত্তি নেই।
হৃদয়কে না হয় একটি বার হলেও সান্তনা দিতে পারব
কেউতো অন্তত একটি বার হলেও প্রাণের ছোয়া দিয়েছিল।
কয়েক সেকেন্ড এর জন্য হলেও শুকিয়ে যাওয়া নদীতে
আবার ঝড়ের বেগে অশ্রুর বন্যা বয়েছিল।
শুধু এতটুকুই আমি চাই, এর চেয়ে বেশি চাই না।
এর জন্য তুমি কি চাও?
হয়তোবা আমি তোমাকে আকাশের চাঁদটি এনে দিতে পারবোনা
পূর্ব দিকে উঠা সূর্যটিকেও হাতে তুলে দিতে পারবোনা।
কিন্তু পারবো তোমার জন্য আমি রজনীর পর রজনী জেগে থাকতে
পারবো আজীবন তোমার জন্য অপেক্ষা করতে।
হয়তো আমার এই শুন্য হৃদয়ে এক সময় কেউ স্থান করে নিবে
কিন্তু তুমিতো আর আমার হলে না।
কি হবে ভরে এই শুন্য হৃদয় ?
আমি তো চাইনি অন্য কেউ এসে আমার হৃদয়ে গোলাপ ফুটাক
পোড়া মন আবার সতেজ হয়ে উঠুক।
আমি চেয়েছি শুধু তোমার মুখ থেকে একটি বার হলেও
প্রতিধ্বনি হয়ে বেজে উঠুক একটি শব্দ ‘ভালোবাসি’
শুধু এতটুকুই আমি চাই, এর চেয়ে বেশি চাই না।
০৪।
“যদি কখনও হারিয়ে যাই”
.
যদি কখনও হারিয়ে যাই না ফেরার দেশে,
আমার কথা কখনও কি পড়বে তোমার মনে।
যদি কখনও খবর পাও আমার চলে যাওয়ার কথা,
হৃদয়ে জাগবে কি তোমার একটুখানি ব্যাথা?
চলে গেলে দিও বিদায় হাসি ভরা মুখে,
আমার জন্য এক ফোটা জল ফেলোনা ঐ চোখে।
আকাশের দিকে তাকিয়ে বলবে, লক্ষ তারার মাঝে,
এত তাঁরার মাঝে একটি তাঁরার খবর কেউ কি কখনও রাখে?
০৩।
“দুঃখ বিলাসী”
.
দুঃখ আমার জীবন সঙ্গী
দুঃখই আমার সুখ
দুঃখ আমার কাপড়ের ময়লা
দুঃখ আমার হুস
দুঃখ আমার পরশ পাথর
দুঃখ আমার হাসি
দুঃখ আমার জীবনটাকে আজ
করেছে বড্ড খাটি
আমি দুঃখ বিলাসী
তাই দুঃখকে বড় ভালবাসি।।
দুঃখ আমার নিত্য পণ্য
দুঃখ আমার আহার
দুঃখ আমার মনের আয়না
দুঃখ আমার পাহাড়
দুঃখ আমার মনের সুর
দুঃখ আমার বাশি
দুঃখ আমায় করেছে যে আজ
সাত সাগরের মাঝি
আমি দুঃখ বিলাসী
তাই দুঃখকে বড় ভালবাসি।।
দুঃখ আমার মনের সাজ
দুঃখ আমার সখ
দুঃখ আমায় ভাঙ্গিয়েছে যে আজ
মনের যত লাজ
দুঃখ আমায় দিয়েছে আলো
পড়িয়েছে গলায় অঞ্জলী
দুঃখ আমার দেখিয়েছে পথ
দিয়েছে জীবনে নতুন বাণী
আমি দুঃখ বিলাসী
তাই দুঃখকে বড় ভালবাসি।।
দুঃখ আমার বাগানের ফুল
দুঃখ আমার মনের কথা
দুঃখ ছাড়া জীবনটা যে আমার
হতোই শুধু বৃথা
দুঃখ আমার কবিতার ছন্দ
দুঃখে আমি বন্দী
দুঃখ যে আমায় করেছে তাই
হাজার রাতের সাঙ্গী
আমি দুঃখ বিলাসী
তাই দুঃখকে বড় ভালবাসি।।
দুঃখ আমার হাড়ের জোড়া
দুঃখ আমার শ্বাস-প্রশ্বাস
দুঃখ আমার রক্ত কনিকা
দুঃখ আমার তেজ
দুঃখ আমার মনের কথা
দুঃখ আমার প্রেম-প্রিয়াসি
দুঃখ আমার জীবনটাকে করেছে আজ
পদ্মা পাড়ের বাসী ।
আমি দুঃখ বিলাসী
তাই দুঃখকে বড় ভালবাসি।।
দুঃখ আমার মনের বাহার
দুঃখ আমার মনের গর্ব
দুঃখ আমার দূর করেছে আজ
হৃদয়ের যত হর্ষ
দুঃখ আমার চোখের ভাষা
দু;খ আমার কাদিকাদি
দুঃখ আমার কেড়ে নিয়েছে আজ
চাঁদের মত হাঁসি
আমি দুঃখ বিলাসী
তাই দুঃখকে বড় ভালবাসি।।
দুঃখ আমার মনের আকাশ
দুঃখ আমার মনের রঙ
দুঃখ আমায় দিয়েছে যে আজ
কবিতায় যত ঢং
দুঃখ আমার চোখের ধারা
দুঃখ আমার চাওয়ার ভঙ্গি
দুঃখ আমার চিন্তাধারা
দুঃখ আমার সঙ্গী
আমি দুঃখ বিলাসী
তাই দুঃখকে বড় ভালবাসি।।
দুঃখ আমার দক্ষিনা বাতাস
দুঃখ বৃষ্টির জল
দুঃখ আমায় শিখিয়েছে যে আজ
শক্ত হাতে কিভাবে ধরতে হয় হাল
দুঃখ আমার অমাবস্যার রাত
দুঃখ আমার একপশলা শিলা বৃষ্টি
দুঃখ আমায় দিয়েছে যে আজ
তিন পাহাড়ের দৃষ্টি
আমি দুঃখ বিলাসী
তাই দুঃখকে বড় ভালবাসি।।
দুঃখ আমার চোখের জল
দুঃখ আমায় করেছে ছন্নছাড়া
দুঃখ আমার কর্মের ফল
দুঃখ আমার হৃদয়ের ঝর্ণা ধারা
দুঃখ আমার লুকানো কান্না
দুঃখ আমার পথের যাত্রি
দুঃখ আমার মনের ভাবনা
দুঃখ আমার ফুলের পাপড়ি
আমি দুঃখ বিলাসী
তাই দুঃখকে বড় ভালবাসি।।
দুঃখ আমার মুক্তির গান
দুঃখ আমার নতুন বারতা
দুঃখ আমায় দিয়েছে যে আজ
মনে নতুন চেতনা
দুঃখ আমার মনের ঢেউ জাগরুক
দুঃখ আমার কণ্ঠের ধ্বনি
দুঃখ আমায় শিখিয়েছে যে আজ
না হতে নতজানি
আমি দুঃখ বিলাসী
তাই দুঃখকে বড় ভালবাসি।।
০২।
“হতাশা”
.
শত হতাশা ডুবাবে তোমায় হয়ো না নিরাশা
কত কিছু রয়েছে বাকি বুকে বাঁধো আশা।
সূর্য, সে উকি দিচ্ছে মেঘের আড়ালে
ধৈর্য ধর একটু পরে মেঘ কেটে যাবে ।
নদীতে উঠছে ঢেউ মাঝি ধরছে হাল
শক্ত হাতে ধরলে হাল ভাঙ্গবেনা নায়ের পাল ।
পেটের তারনায় ঘর ছেড়েছে তাঁরা গায়ে জড়িয়ে শাল
চেয়ে দেখ তীব্র শীতের মাঝে ফেলছে নদীতে মস্ত জাল।
কত বাধা আসবে সামনে কত থাকবে পিছুটান
সবকিছু তোমার ফেলতে হবে পেছনে যদিও যায় জান ।
আস্তা কুড়ে করে বাস সবই হইবে মিছা
সবকিছু তোমার জয় করতে হবে দূর করতে হতাশা ।
০১।
“প্রিয় জন্মভূমি”
.
আমি না হয় হেরে যাব
তবুও জিতে যাও তুমি ।
আমি না হয় কেঁদে যাব
তবুও হেসে থাক তুমি
আমি না হয় দুঃখে থাকব
তবুও সুখে থাক তুমি ।
আমি না হয় সাগরে ভাসব
তবুও ডাঙ্গায় থাক তুমি ।
আমি না হয় নিভে যাব
তবুও জ্বলে থেকো তুমি ।
আমি না হয় রোদে পুড়ব
তবুও ছায়ায় থাক তুমি ।
আমি না হয় থেমে যাব
তবুও হেটে যাও তুমি ।
আমি না হয় না খেয়ে থাকব
তবুও খেয়ে থাক তুমি ।
আমি না হয় গোলাপ ফুটাব
যদি ঘ্রান নেও তুমি ।
আমি না হয় নৌকা বাইব
যদি যাত্রী হও তুমি ।
আমি না হয় আমার মত থাকব
তবুও তোমার মত থাক তুমি ।
আমি না হয় জীবন দিব
তবুও স্বাধীন থাক তুমি ।
সবই করব তোমার জন্য
যদি ভাল থাক তুমি
ও আমার প্রিয় জন্মভূমি ।