১১০০ খ্রিস্টাব্দ।ক্রসেডরের একটি দল এশিয়া মাইনরের এক গ্রামের কাছে থামলো। দলনেতা চারপাশে তাকিয়ে ভাবলো এটা সেই স্থান নয় যা তারা আশা করেছিল।পুরাকালে লিখিত এক পুস্তকে সে পড়েছিল যে এখানে এক বন্দরনগরী সাথে উপসাগরের তীরে অনেক জলযান থাকার কথা।তারও আগে এখানে ছিল দেবী আর্টেমিসের মন্দির। গ্রাম থেকে ২ মাইল দূরে উপসাগর দেখা যায় ঠিকই কিন্তু কোথাও সেই সমৃদ্ধ বন্দরনগরী কিংবা আর্টেমিসের মন্দিরের অস্তিত্ব নেই।দলনেতা স্থানীয় এক ব্যাক্তিকে জিজ্ঞাসা করল,
“এটা কি এফিয়াস শহর নয়?”
“এই নামে একসময় ডাকা হতো। এখন আয়সালউক (Ayasalouk) নামে পরিচিত”
“তাহলে কোথায় সেই সমুদ্রমন্দর? কোথায় সেই গ্রীক মন্দির যার কথা আমরা শুনেছি?”
এবার ঐ ব্যাক্তি দ্বিধার সাথে বলল,”মন্দির? কোথায়? এখানে তো কোনো মন্দির ছিল না!”
এবং এভাবেই ধ্বংসের ৮০০ বছর পর স্থানীয়রাও ভুলে গেলো এককালের সেই সুবিস্তীর্ণ মন্দিরের কথা যা একসময় তাদের কাছে ছিল গর্বের বিষয়।সুতরাং, কিভাবে গড়ে উঠেছিল এই মন্দির? কিভাবে প্রাচীন ঐতিহাসিকদের সপ্তমাচার্যের তালিকায় নাম লেখালো? এবং কিভাবেই আর বা পরিপূর্ণভাবে ধ্বংসীভূত হলো??
গ্রীকদের কাছে আর্টেমিস(ডায়ানা নামেও পরিচিত) ছিল শিকারের দেবী।আর এফিসিয়ানদের কাছে আর্টেমিস ছিল উর্বরতার দেবী।এফিয়াসে আর্টেমিসের প্রথম মঠ নির্মিত হয় ৮০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে।প্রাথমিক অবস্থায় মঠটিতে একটি পবিত্র পাথর ছিল যাকে ভাবা হত জুপিটার থেকে পতিত(fallen from Jupiter)।পরবর্তী কয়েক বছরে এটি বেশ কয়েকবার ধ্বংস হয় এবং পুনর্নির্মিত করা হয়। ৬০০ বিসিতে চারসিফেরন (Chersiphron) নামক এক স্থাপতি একই স্থানে আগের চেয়ে বড়,নতুন এক মন্দির নির্মাণ করেন।কিন্তু এবারও মন্দিরটি বেশিদিন টেকেনি। ধারনা করা হয় ৫৫০ বিসিতে লিডিয়ার রাজা ক্রোসাস এফিয়ানসহ এশিয়া মাইনরের অনেক শহর দখল করে এবং এ যুদ্ধের সময়ে মন্দিরটি ধ্বংস হয়। আরেকজন আর্কেওলজিস্টের মতে, একই সময়ে এক মারাত্নক বন্যা আঘাত হানে এবং এটিই টেম্পলটি ধ্বংসের প্রকৃত কারন।পরবর্তীতে থিওডোরাস (Theodorus) আগের স্থানেই এটি পুননির্মিত করেন যা দৈর্ঘ্যে ছিল ৩০০ ফিট ও প্রস্থে ১৫০ ফিট।৩৫৬ বিসি পর্যন্ত এটাই ছিল এফিয়াসদের গর্ব।মূল ট্রাজেডী তখনই ঘটল।হেরোসট্রাটাস (Herostratus) নামক এক স্থানীয় যুবক মন্দিরের কাঠনির্মিত ছাদে আগুন ধরিয়ে দেয়।এফিসিয়ানরা এই ঘটনায় হতভম্বিত হয়ে গেলো। তারা এই যুবককে মৃতু্র আগ পর্যন্ত শাস্তি দিল এবং ঘোষনা করা হল যে এই যুবকের নাম পর্যন্ত যে মুখে উচ্চারণ করবে তাকে মৃতু্দন্ড দেয়া হবে।
কিংবদন্তী অনুসারে একটা ধারনা প্রচলিত ছিল, যে রাতে মন্দিরটি আগুনে পুড়ানো হয় সেই একই রাতে আলেকজান্ডার দ্যা গ্রেটের জন্ম।দেবী আর্টেমিস আলেকজান্ডারের পৃথিবী আগমন নিয়ে এতটাই আচ্ছন্ন হয়েছিল যে সে তার নিজের মন্দিরটাকেই আগ্নি থেকে রক্ষা করতে পারলো না।
বরাবরের মত আবারও এটি পুনরায় তৈরি করা হই তবে এবার তখনকার বিখ্যাত স্থাপতি স্কোপাসের (scopas) দ্বারা যা ছিল দৈর্ঘ্যে ৪২৫ ফিট, প্রস্থে ২২৫ ফিট ও ৬০ ফুট উচ্চতাবিশিষ্ট।(যেখানে বর্তমানে এসেন্সে টিকে থাকা আক্রোপলিসের দৈর্ঘ্য মাত্র ২৩০ ফিট ও প্রস্থ ১০০ ফিট) ধারনা করা হয় এটাই সর্বপ্রথম ব্রোঞ্জের নির্মিত স্থাপত্য। মন্দিরটিতে ছিল নানা ধরনের আর্কের সমাহার।মন্দিরের চারপাশে চারটি আমাজন নারীমূর্তি ছিল।
রোমান ঐতিহাসিক প্লিনির (Pliny) মতে এই নির্মানে সময় লেগেছিল ১২০ বছর, কারো কারো মতে এর অর্ধেক। মন্দির নির্মাণাধীন অবস্থায় ৩৩৩ বিসিতে আলেকজান্ডার এফিয়াসে আসে,এবং মন্দির নির্মাণ সম্পন্ন করার জন্য প্রয়োজনীয় আর্থিক সাহায্য ও মূলধন দেবার প্রস্তাব দেয় পরিবর্তে তার নাম নির্মাণকারীর নাম হিসেবে থাকবে। শহরপ্রধানেরা আলেকজান্ডারকে স্বীকৃ্তি দিতে চেয়েছিল না এজন্য তারা একটু ঘুরিয়ে বলল -“It is not fitting that one god should build a temple for another god”
পরবর্তী কয়েকবছরে এফিয়ান নগরের অনেক উন্নতি হল এবং মন্দিরটি পরিনত হল এক তীর্থস্থানে। নিকটবর্তী উপসাগরে এক সমুদ্রবন্দর গড়ে উঠলো এবং মন্দিরটিকে ঘিরে ব্যবসা-বানিজ্য শুরু হল।
৫৭ খ্রিস্টাব্দে সেন্ট পল এফিয়াসে এসেছিল ধর্মপ্রচারে।স্থানীয় শাসকশ্রেণীরা তার ধর্মপ্রচারে বাধা দিল এবং ঘোষনা করল ‘এফিসিয়ানদের দেবী আর্টেমিসেসই সর্বশ্রেষ্ঠ’। তারা সেন্ট পলের দুই সহকারীকে বন্দি করল ও তাকে এফিয়াস ছাড়তে বাধ্য করল।
অবশেষে খ্রিস্টানিটিরই জয় ঘটল।৩৯১ খ্রিস্টাব্দে রোমান খ্রিস্টান শাসক থিওডিসিয়াসের হাতে মন্দিরটির শেষ পরিনতি ঘটে।
অবশেষে এখন মন্দিরের ভাস্কর্যের কিছু টুকরা আর নিকটবর্তী এক নদীসদৃশ জলা্ভূমিই অবশিষ্ট আছে।এফিয়ান নগরী বর্তমানে তুরস্ক নামে পরিচিত।
(মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ)
"I have seen the walls and Hanging Gardens of ancient Babylon, the statue of Olympian Zeus, the Colossus of Rhodes, the mighty work of the high Pyramids and the tomb of Mausolus. But when I saw the temple at Ephesus rising to the clouds, all these other wonders were put in the shade"-Antipater, Greek Anthology (IX.58)
পরবর্তীতে প্রাচীন পৃথিবীর অন্যান্য সপ্তমাচার্যগুলোর সম্পর্কে লেখার চেষ্টা করব।
উৎস: http://en.wikipedia.org/wiki/Temple_of_Artemis
Click This Link
Click This Link
Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে জুন, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:২০