somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

মুম রহমান
শেষ পর্যন্ত লেখাটাই থাকে। টিভি, রেডিও, ওয়েবসাইট, চলচ্চিত্র, মঞ্চ, বিজ্ঞাপণ, ব্লগ - লেখার যতো মাধ্যম সবখানেই লিখতে হবে। পৃথিবী পাল্টে গেছে - এখন আমরা দুহাতের দশ আঙুলেই লিখি।

উত্তম কুমার সম্পর্কে বিখ্যাতদের উক্তি

২৪ শে জুলাই, ২০১০ সন্ধ্যা ৭:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



‘‘এ রকম খাঁটি বাঙালি আমি কম দেখেছি। আমি নিজে ধুতি পাঞ্জাবি, কালোজিরে দিয়ে পারশে মাছের ঝোল, ঘরে পাতা দই, এ সবই পছন্দ করি। তবু বলব উত্তমদার মতো এমন ভাবনাচিন্তায়, হাঁটাচলায়, কথাবার্তায়, খাওয়াপরায় বাঙালি আমি বোধহয় কোনদিন হয়ে উঠতে পারব না।’’
- মিঠুন চক্রবর্তী, বাংলা ছবির উত্তম পরবর্তী নামকরা নায়ক, মৃণাল সেনের মৃগয়া ছবির মাধ্যমে অভিষেক, প্রথম ছবিতেই জাতীয় পুরস্কার। পরবর্তীকালে মুম্বাইয়ের হিন্দি ছবিতে ডিস্কো ডান্সার, রকি, অগ্নিপথের মতো অসংখ্য হিট ছবিতে অভিনয় করেছেন।

‘‘অনেকেই ভাবেন আমি উত্তম কুমারের অভিনয়ের তীক্ষ্ম সমালোচক। ব্যাপারটা আদৌ তা নয়। ওঁর মতো বড় মাপের অভিনেতা আমি জীবনে খুব কম দেখেছি। আমি ওঁর অভিনয়ের ভক্ত, গুণমুগ্ধ। আসলে কিছু ছবিতে ইমেজসর্বস্ব অভিনয়ে দেখে এই ভেবে ব্যথা পেয়েছি, এই হ্যাংওভারটা কাটিয়ে উঠতে পারলে ওঁর অভিনয়ের মাত্রা কোন্ জায়গায় গিয়ে পৌঁছোত। দুঃখটা পেয়েছি একজন গুণমুুগ্ধ হিসেবেই। সমালোচনা করেছি উত্তমকুমারের অভিনয়ের প্রতি অসীম শ্রদ্ধা আছে বলেই।’’
- সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, সত্যজিৎ রায়ের অপুর সংসার, অপরাজিত, গণশত্র“ ইত্যাদি বিখ্যাত ছবির নায়ক। তাকে কলকাতার ফিল্ম সোসাইটি চর্চা করা যুবকরা উত্তমের প্রতিদ্বন্দী হিসাবে দেখতে পছন্দ করতো।

‘‘আমার তো মনে হয় যে-ভাবে গোটা বাঙালি জাতির মুখ দেখা যেত উত্তমকুমারের মধ্যে সে-ভাবে আর কেউ পারবে না নিজের জাতকে তুলে ধরতে। ওভাবে ধুতির কোঁচাই ধরতে পারবে না কেউ।’’
- রাজেশ খান্না
‘‘যদিও আমার সঙ্গে উত্তমদাদার কোনো তুলনা হওয়া উচিত নয় কারণ দুজনে দুই ঘরানার, দুই ভাষার, দুই মেজাজের নায়ক, তবু একই ছবির রিমেক হলে স্বাভাবিকভাবেই তুলনা এসে যায়। অন্তত দর্শক তো করেই। এখানে অবশ্য দায়িত্বটা আমার উপর পড়ায় একটু বেশি কঠিন হয়ে গেল কাজটা। তা কী আর করা যাবে। ‘অমর প্রেম’ সুপারহিট হয়েছিল সবাই জানে, অনেকেই হয়তো বলবে আমি দূর্দান্ত অভিনয় করেছি, কিন্তু আমি নিজে জানি উত্তমকুমার আমার থেকে একশো মাইল এগিয়ে ছিলেন।’’
- রাজেশ খান্না, হিন্দি ছবির কিংবদন্তী অভিনেতা। এখানে উল্লেখ্য, উত্তমকুমারের ‘নিশিপদ্ম’ ছবির রিমেক ‘অমর প্রেম’।

‘‘গৌরীশঙ্কর ও শঙ্কর সিং এই দ্বৈত ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন উত্তমকুমার। উত্তম যে কতটা শক্তিমান অভিনেতা ‘ঝিন্দের বন্দী’ দেখেই আমি উপলব্ধি করতে পারি।’’
- গৌতম ঘোষ, পদ্মা নদীর মাঝি, পার, অন্তর্জলী যাত্রা ইত্যাদি ছবির পরিচালক

‘‘গঙ্গার বুকে আমি ও উত্তম এই রোমান্টিক দৃশ্যটা তখন দর্শকদের মুখে মুখে ফিরত। ‘শঙ্খবেলা’ ছবিটি আমি পরে আর দেখিনি। তবে স¤প্রতি টিভিতে ওই দৃশ্যটা আমি আবার দেখলাম। সেখানে একটা কথা বুঝলাম উত্তম মারাত্মক অভিনয় করেছিলেন। এটা খুবই ঠিক ‘শঙ্খবেলা’ পুরোপুরি রোমান্টিক ছবি। আর রোমান্টিক ছবির ক্ষেত্রে নায়ক হিসেবে উত্তমকুমারের কোন বিকল্প নেই।’’
- মাধবী চক্রবর্তী, সত্যজিৎ রায়ের ঘরেবাইরে দ্বারা বিখ্যাত নায়িকা হয়েছিলেন

‘‘শিল্পীদের মধ্যেই এমন কেউ কেউ থানে যাঁরা অন্যান্য অভিনেতা-অভিনেত্রীদের প্রেরণা হয়ে থাকেন। যাদের মধ্যে কাউকে দেখে সাহস পাওয়া যায়। এক কথায় শিল্পীদের শিল্পী। উত্তমকুমার ছিলেন তাঁদের একজন।’’
- তনুজা, হিন্দী ও বাংলা ছবি নায়িকা। তার কন্যা কাজলও হিন্দী ছবির নায়িকা হয়েছেন

‘‘সত্যজিৎ রায়ের ‘নায়ক’ ছবিতে উত্তমকুমারের অভিনয় তুলনাহীন। আর ওকে ছাড়া যেন কাউকে মানাতও না ওই ভূমিকায়। ‘চিড়িয়াখানা’ ছবিটা আমি বার তিনেক দেখেছি। ভাল অভিনয়ের ওই আরেক নমুনা। প্রায় প্রত্যেকটা চরিত্রই বেশ জটিল মানসিকতার। ‘গোলাপ কলোনি’ নামের আশ্চর্য বাগান-ডেয়ারিতে রহস্যের জট খুলতে ডাক পরে গোয়েন্দার। সেই গোয়েন্দার ভূমিকায় দূর্ধর্ষ অভিনয় করেছেন উত্তমকুমার।’’
‘‘ডিটেকটিভ বলতেই আমাদের চোখে ভাসে ছিপছিপে, ধারালো, শক্তপোক্ত চেহারা। কিন্তু উত্তমকুমার তো ছিলেন এর ঠিক উলটো। নরম-সরম, প্রেমিক-প্রেমিক, আদুরে চেহারা। তাহলে কিভাবে ‘চিড়িয়াখানা’য় সফল হলেন উত্তম? তারথেকেও বড় প্রশ্ন অবশ্য, কেন সত্যজিৎ রায়ের মতো পরিচালক উত্তমকে বাছলেন। এ দুটো প্রশ্নের উত্তর আমার মনে হয় একই। উত্তম ভাল অভিনেতা ছিলেন বলে।’’
‘‘এদেশের সিনেমা বিশেষ করে বাণিজ্যিক সিনেমা, অনেকক্ষেত্রেই সংলাপনির্ভর। সংলাপ বলার কায়দাটা উত্তকুমারের স্টাইলের অন্যতম। আর সেই ঘাড় দোলানো। মন জয় করা হাসি। উত্তমকুমারের গোড়ার দিকের অভিনয়ে হলিউডি ছাপ পাওয়া যায়। পরে একান্ত নিজস্ব একটা স্টাইল তৈরি করে নেন। হাঁটাচলা কথা বলা সবটার মধ্যেই একটি আভিজাত্য ছিল যে কিছুতেই এড়ানো যেত না। একটু মোটার ধাঁচ থাকলেও এক্সপ্রেশন ছোটাতে পারতেন নিখুঁতভাবে।’’
- শত্র“ঘœ সিনহা, হিন্দী ছবির বিখ্যাত অভিনেতা, অন্তর্জলী যাত্রার মতো বাংলা ছবিতেও অভিনয় করেছেন।

‘‘যদিও উত্তমদার আদি অকৃত্রিম পরিচয় রোমান্টিক নায়ক হিসাবে, তবুও আমার মনে হয় ‘অবাক পৃথিবী’ ছবিতে উত্তমদা যে চরিত্রটি চিত্রায়িত করেছিলেন, তারই প্রকাশ আমরা দেখেছি, পরবর্তীকালের বিভিন্ন অ্যান্টি হিরো-র মধ্যে।’’
উত্তমদার অভিনয় মেপে দেখার যন্ত্র আমাদের কেন, বিদেশেও আবি®কৃত হয়নি।’’
- বিপ্লব চট্টোপাধ্যায়, বাংলা ছবির অভিনেতা, মূল অ্যান্টি হিরো বা খল নায়ক চরিত্রে অভিনয় করেছেন।

‘‘লাল পাথর’-এর সেই চিৎকার করে বলা ‘আমাকে মুক্তি দাও’, সংলাপ বলার অনবদ্য সেই কায়দাটা আমি কোনোদিন ভুলতে পারব না। সেই যে উন্মাদ প্রেমিক, যে প্রেমিকার খুন-রাঙা বেদি মুছত আর হাহাকার করনত দিনরাত, উত্তমকুমার কী অপূর্ব ফুটয়েছিলেন! উতেপুর সিক্রির দেয়ালে দেয়ালে ধাক্কা খেয়ে ফেরা, তার আর্তনাদ আজও কানে বাজে। বাংলা আর হিন্দি দুভাষাতেই ছবিটা হয়েছিল। দুটোই দেখেছি আমি। তবে ‘লাল পাথর’-এর উত্তমকুমার আর ‘লাল পাথর’-এর রাজকুমারের কোনো তুলনাই চলে না। রাজকুমারের অভিনয় প্রতিভা সম্পর্কে পুরোপুরি শ্রদ্ধা রেখেই বলতে পারি, উত্তমকুমার অতুলনীয়।’’
- শশী কাপুর, হিন্দি ছবির অভিনেতা এবং রাজকাপুরের ছোট ভাই

‘সংলাপ বলার নিজস্ব কায়দা ছিল উত্তমবাবুর। শঙ্কর সিং আর গৌরীশঙ্কর Ñ ডাবল রোলে, বিশেষ করে গৌরীশঙ্করের ভূমিকায় যেখানে এক শহুরে যুবাকে সাজতে হচ্ছে রাজকুমার, উত্তম এককথায় অতুলনীয়। একজন মদ্যপ, নারীবিলাসী অথচ সাদাসিধে, আরেকজন বুদ্ধিমান, শিক্ষিত। এ-কিন্তু মোটেই সহজ কাজ নয়। উত্তম কতটা বড়ো অভিনেতা ছিলেন প্রতিভার বিচারে, তা মাপার চেয়ে আমার মনে হয় আজকের দিনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য এই যে তিনি ছিলেন নিষ্ঠাবান অভিনেতা। অ্যাক্টিং ছিল তাঁর কাছে উষ্টদেবতার মতো, ফুল বেলপাতা চন্দন ঠিকঠাক সাজিয়ে গুছিয়ে মন এক জায়গায় স্থির রেখে অভিনয় করতেন তিনি। যখন উত্তম দাঁড়াতেন ক্যামেরার সামনে, বাইরের পৃথিবীর সুখ-দুঃখ যেন স্পর্শ করতা না তাঁকে।’’
- শক্তি সামন্ত, হিন্দী ও বাংলা ছবির চলচ্চিত্র পরিচালক। উত্তমকুমারের জন্যেই তিনি ‘অমানুষ’ ছবিটি তৈরি করেছিলেন বাংলায়।
‘‘উত্তম আমার বন্ধু। এক কথায় গ্রেট, গ্রেট আর্টিস্ট। তবু যেন মনে হয় ওকে ঠিকমতো এক্সপ্লয়েট করা হয়নি।’’
-সুচিত্রা সেন, উত্তমের অসংখ্য হিট ছবির জুটি, বাংলা চলচ্চিত্রে উত্তম সুচিত্রা জুটি সবার উপরে


মা : চপলা দেবী
বাবা : সাতকড়ি বাবু



সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে জুলাই, ২০১০ রাত ১১:৪৩
১১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বেফাঁস মন্তব্য করায় সমালোচনার মুখে সমন্বয়ক হাসিবুল ইসলাম !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৩ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১১:৩২



"মেট্রোরেলে আগুন না দিলে, পুলিশ না মারলে বিপ্লব সফল হতো না "- সাম্প্রতিক সময়ে ডিবিসি নিউজে দেয়া সাক্ষাৎকারে এমন মন্তব্য করে সমালোচনার শিকার বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসিবুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমিত্ব বিসর্জন

লিখেছেন আজব লিংকন, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১:৪৮



আমি- আমি- আমি
আমিত্ব বিসর্জন দিতে চাই।
আমি বলতে তুমি; তুমি বলতে আমি।
তবুও, "আমরা" অথবা "আমাদের"
সমঅধিকার- ভালোবাসার জন্ম দেয়।

"সারভাইভাল অব দ্য ফিটেস্ট"
যেখানে লাখ লাখ শুক্রাণুকে পরাজিত করে
আমরা জীবনের দৌড়ে জন্ম... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:৪১


স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×