১
তালেবান আক্রমনের, এবং ব্যাপকভাবে ইসলামিক চরমপন্থীদের আক্রমণের কিছু দিক আমাকে বেশ ভাবিত করে। যেমন ধরেন - পেশোয়ারে দ্বিতীয় আক্রমনটা করেছিল ১৩ না ১৪ বছরের একটা ছেলে। আবার ইরাকে ডাউন্স সিনড্রোমে আক্রান্ত মহিলাদের দিয়েও আক্রমন চালানো হয়েছিল (খুব সম্ভবত বাগদাদে)। ডাউন্স সিনড্রোমের এক পর্যায়ে মানুষ তো আর ঠিক 'সেনটিয়েন্ট' থাকে না, সুতরাং এটাকে জোম্বি এ্যাটাকও বলা যায়।
এই জিনিসটা একদিক দিয়ে তীব্র খারাপ লাগার মত একটা ব্যাপার, আরেকদিক দিয়ে চরমপন্থার তীব্রতা উপলব্ধির আরেকটা ব্যাপার। অনেকটাই 'নো হোল্ডস বারড' ব্যাপার।
খারাপ লাগবে কেন সেটা তো জানাই - মনুষ্যত্ব ইত্যাদি চলক। মজার ব্যাপার হল, এ ধরনের চরমপন্থীদের ধাক্কায় যখন আমেরিকা কান্দে, তখন বাকিরা একরকম মজার আমেজ পায় (অনেকটা উপরের সংসপ্তক ভাইয়ের মত)।
আমি ব্যক্তিগতভাবে এরকম আক্রমনে খুবই হতাশ হই। এদের চরমপন্থার প্রতি একটা পারভার্স এ্যাডমায়ারেশন থাকে (যুদ্ধ যখন করবিই তখন টোটাল ওয়ার কর!), কিন্তু জিনিসটা যে কতটা সেল্ফ-ডিফিটিং, সেই দূরদর্শীতার অভাব এদের মধ্যে দেখি বড় বেশি।
২
এভাবে দেখলে তালেবান মূলত গাধা। বড় গাধা।
পাকিস্তান এমনিতেই রাডিকালাইজড হচ্ছে। ওয়াজিরিস্তান থিকা বাইর হইয়া শহরে আক্রমনের কি দরকার। আস্তে আস্তে রাডিকালাইজ কইরা পাওয়ার নিয়া নে! অলরেডি তো বেশ কিছু ধর্মীয় পার্টি আছে, তোরা ওগুলিতে যা-গা বা ওগুলির মত কিছু একটা কর!
তালেবানের একটা বিশাল সুবিধা হচ্ছে নিজেদের স্ট্রংহোল্ড - দক্ষিণ ওয়াজিরিস্তান, উত্তর ওয়াজিরিস্তান, এমনকি মালাকান্দও। কুররাম-ও হইতো, কিন্তু কুররাম-এ প্রচুর শিয়া। শিয়ারা দেওবন্দী তালেবানগো দেখতারেনা।
এই স্ট্রংহোল্ড থাকাই হয়তো এদের এত আক্রমনাত্মক করসে। আফ-পাক সীমান্তের এসব পান্ডববর্জিত জায়গায় ব্রিটিশ, আমেরিকান, রাশিয়ান, মুঘলরা অভিযান চালাইলেও জীবনেও থাকতে চাবে না। কিন্তু ওয়াজির বা মেহসুদদের বাসাই ওখানে। এরা বারে বারেই এদের পেইন দিসে। উইকিপিডিয়ায় গেলে দেখবেন যে এরা ৪৭-এ কাশ্মীররে এ্যাটাক করসিল, কিন্তু যুদ্ধ করতে এতই মজা পাইছে (লুট, ধর্ষণ) যে কিসের কি এলাকা দখল, ডানে বামে ফালতু স্কারমিশে নিয়োজিত হয়ে গেছে। যুদ্ধ এদের জন্য রীতিমত একস্ট্যাসি - ঠিক এ কারণেই এদের হারানো এত কঠিন। এটা নতুন কিছু না - যতদিন এরা মুঘলদের সাপোর্ট করসে, মুঘল সাম্রাজ্য টিকে ছিল, যখন গেছে গা, তখন মুঘলরাও বলছে টা টা!
আরেকটা জিনিস মনে রাখা দরকার, পাকিস্তান আর্মিতেই বহু ওয়াজির সাব-ট্রাইব, মেহসুদ, আফ্রিদি ইত্যাদি আছে। সকল ট্রাইবালই তালিবান না, তবে এদের সমাজব্যবস্থা বেশ, বেশ conducive to that।
৩
এখন কথা হইল, আমেরিকার তালেবানরে সামলানোর কি দরকার পড়ছে? সেভাবে দেখলে, পাকিস্তানেরই বা কি দরকার পড়ছে?
আমার মোটা বুদ্ধিতে যা আসে তা কই।
তালেবানের উদ্দেশ্য আঞ্চলিক। আমেরিকার দুই পয়সার ঠ্যাকা নাই এদের কামড়ানোর।
সমস্যা তখন যখন তালেবান আল-কায়েদার সাথে মক্সো করে। এবং তালেবান তা করসে, করতেসে, (করবে?)। আল-কায়েদা বড়ই উপকারী তালেবানের জন্য। তালেবানের অস্তিত্বের জন্য। এটা ওদের 'আদর্শের' একদম বেসিকে। আল কায়েদারে হঠাৎ টা-টা কওয়া ওদের স্বার্থের বিপরীতে - বেসিক ভেঙ্গে যাবে যে! তাছাড়া, এই যে উজবেক, চেচেন, অন্যান্য নানা ককেশিয়ান, উইঘুর - এরা আসে, আল-কায়েদার মত একটা ইন্টারন্যাশনাল আমেজ না থাকলে এরা কি আসতো?
আল-কায়েদার জন্য আমেরিকার ঠ্যাকা আছে। কেবল আমেরিকার 'আদর্শের' জন্য হইলেও। সুতরাং পাক আর্মিরে মাথায় হাত বুলায়, লাইত্থায়-গুঁতায় আমেরিকা পাঠাইলো দক্ষিণ ওয়াজিরিস্তানে।
মজার ব্যাপার হল, এই ৫০,০০০ মেহসুদ কিসুই না। ফালতু। ডানে বামে লাখে লাখে ওয়াজির - এরা সব হাক্কানি নেটওয়ার্কের অংশ। হাক্কানি যারে বলে এক্সপ্লিসিটলি আল-কায়েদা।
আমেরিকা জানে হাক্কানিরে এক টানে আপরুট করা অসম্ভব। কিন্তু বায়তুল্লাহ-হাকিমুল্লাহরে সম্ভব। হাক্কানিরা পাক আর্মির সাথে রীতিমত চুক্তি করসে - আমরা আফগানিস্তানে এ্যাটাক করুম, তোমরা আরামে থাকো। বায়তুল্লাহর জিল বেশি, ওর ভাল্লাগে নাই, ও বলে না, আমি পাকিস্তানরেও এ্যাটাকামু! ভাবলে অবশ্য সেই দূরদর্শী বেশি, তবে ইন দ্য ভেরি লং রান। এত লম্বা সময় কোন কামে লাগবো না। মিলিট্যান্ট আইডিয়লজিগুলি ওই সময়ে হয় মূলধারায় মার্জ করবো, নাইলে এক্সটিংক্ট।
তো, বায়তুল্লাহ বা ওর সাইডের মেহসুদদের মোটামুটি ধ্বংস করা যায়। এরা মূলত যাযাবর টাইপ, ভেড়া-মহিষ চড়ায়, জনসংখ্যা ওয়াজিরদের মত আউট-অফ-কন্ট্রোল না। চারপাশের তালেবান আর হাক্কানিরাও এদের উপর কিছুটা ক্ষ্যাপা - ব্যাটা, কইলাম একটু সামলায় কর! সুতরাং যদি তা করাই যায়, হোয়াই নট? পাকিস্তানরা সাড়ে সাত বিলিয়ান দেও, রিমোট কন্ট্রোলে উপজাতীয়দের সবচেয়ে ফ্যানাটিক এলিমেন্টটারে মারো।
প্লসিবল মনে হয়? আমার নিজেরই পুরাপুরি মনে হয় না। কিন্তু আমি চেষ্টা করতেসি ফিগার আউট করার। পুরা ঘটনায় মাঝখানে বিশাল কিছু গ্যাপ রয়ে গেসে। ওগুলি চাপার উপর রাখতেসি।
৪
এখানে বিশাল একটা ভূরাজনৈতিক ব্যাপার আপনি আপনার পোস্টে অলরেডি কইসেন - চীন-ভারত। এই কয়দিন আগেও জিলানি, তার আগে জারদারি চীনে গেল। চীনের ভারতরে কখনোই ভাল্লাগে নাই, লাগবেও না। এখন চীনের গ্রেট পাওয়ার হওয়া মোটামুটি শেষ, সুপারপাওয়ার হইতে হইলে ভারতের সাথে একটা দফারফা দরকার। এল্লাইগ্যা পাকিস্তানরে খুব, খুব দরকার চীনের। পাকিস্তানের ভূরাজনৈতিক পজিশনটা খুবই মজার। শালারা এক্সপ্লয়েট করতে পারলো না।
৫
ইরানে রেভ্যুলুশনারি গার্ডের পিশিনে যে আত্মঘাতী বোমা হামলায় মারা হইসে, সেটার জন্য ইরান দুষছে পাকিস্তানরে। (আর কি বাকি ছিল কন!) এইটা খুব মজার একটা ব্যাপার। জুন্দুল্লাহরে যে পাকিস্তানের সুন্নীরা বড়ই পছন্দ করে এটা জানা কথা - রাফিদি শিয়াদের বিরুদ্ধে দরকার এরকম (লস্কর ই তাইয়েবা আর লস্কর ই জাংভির অফিশিয়াল মতামতেই, বিশেষত দ্বিতীয়টার! সিপাহ-ই-সাহাবা তো মনে হয় লস্করেরই 'সেনাবাহিনী')।
এখন তো আমেরিকান হকদের নড়ে-চড়ে বসার কথা। আরি, পাকি চরমপন্থীগুলিরে তো আমরাও ব্যবহার করতে পারি!
ভূরাজনীতি বড়ই মজার ব্যাপার।
৬
আমি আপনার সব উপসংহারের সঙ্গে একমত না, তবে কারণ ছাড়া না বললে তো লাভ নাই। তবে, লেখার জন্য ধন্যবাদ। এরকম আরো লেখেন। সচলায়তনে এরকম লেখা কমই আসে। (চলুক)
((সচলায়তনে এই পোস্টের জবাবে - http://www.sachalayatan.com/guest_writer/28127)