গত ১৯ এপ্রিল (২০১৬) শফিক রেহমানের স্বীকারোক্তি এবং তাঁর বাসা থেকে নানা রকমের তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহের পর ষড়যন্ত্রের আলামত পরিষ্কার হয়েছে। এর আগে ১৭ এপ্রিল (২০১৬) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণ চক্রান্তে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যক্তিদের সঙ্গে বাংলাদেশের তিনজন জড়িত থাকার প্রমাণ মিলেছে বলে জানিয়েছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। ‘বাংলাদেশি রাজনীতিকে’র তথ্য পেতে এফবিআইকে ঘুষ দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী এক বিএনপি নেতার ছেলে তিন বছরের কারাদণ্ড ভোগ করছে। এ ঘটনায় ঘুষের বিনিময়ে তথ্য সরবরাহের অপরাধে এফবিআই এজেন্ট রবার্ট লাস্টিকেরও পাঁচ বছর কারাদণ্ড হয়েছে। একই সূত্রে জয়কে অপহরণের ষড়যন্ত্রে বিএনপির হাই কমান্ড জড়িত বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে। এ জন্য অপহরণ চক্রান্তের মামলায় বিএনপিঘনিষ্ঠ সাংবাদিক শফিক রেহমানকে গ্রেফাতার কোনো অস্বাভাবিক ঘটনা নয়। এমনকি জয় অপহরণ চক্রান্তের মামলায় আমার দেশের সাবেক সম্পাদক কারাবন্দি মাহমুদুর রহমানও সম্পৃক্ত বলে জানা গেছে। উল্লেখ্য, জয়ের ব্যক্তিগত তথ্য পেতে ওই দেশে থাকা রিজভী আহমেদ সিজার এফবিআইর এক কর্মকর্তাকে ঘুষ দিয়েছিল বলে দেশটির আদালতে প্রমাণিত হয়েছে। ২০১৫ সালে সিজারকে দণ্ড দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের আদালতের দেয়া রায়ে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর ছেলের ক্ষতি করার লক্ষ্যে তার ব্যক্তিগত তথ্য পেতে চেয়েছিল আসামি। তথ্য পাওয়ার পর তা বাংলাদেশি ‘একজন সাংবাদিককে’ সরবরাহ করেছিল। ওই রায়ের পর জয়কে অপহরণের চক্রান্তের অভিযোগ তুলে ঢাকার পল্টন থানায় পুলিশ একটি মামলা করে, সেই মামলায় সাংবাদিক শফিক রেহমানকে গ্রেফতার করা হয়েছে। জয়ের প্রাণনাশে যুক্তরাষ্ট্রের চক্রান্তকারীদের সঙ্গে শফিক রেহমানসহ দুই-তিনজনের যোগাযোগ ছিল জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। ‘ভিকটিম’ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে সিজারের মামলায় সাক্ষ্য দিয়ে আসা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় বলেছেন, শফিক রেহমানের বিরুদ্ধে তথ্য-প্রমাণ রয়েছে। অন্যদিকে শফিক রেহমানকে গ্রেফতারের নিন্দা জানানোয় গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকারকে ‘সুবিধাবাদী’ আখ্যায়িত করে তাকে ফেসবুকের বন্ধু তালিকা থেকে বাদ দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন সজীব ওয়াজেদ জয়। বক্তব্যের জন্য ইমরানকে ক্ষমা চাইতে হবে কারণ সে একজন অপরাধীর হয়ে কথা বলছে যে তাঁকে হত্যার চেষ্টা করেছিল। এ জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৮ এপ্রিল একটি অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দেয়ার সময় অপরাধীর জন্য মায়াকান্না না করার আহ্বান জানিয়েছেন।
২. সজীব ওয়াজেদ জয় বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি অনিবার্য নাম। ভবিষ্যৎ একজন আদর্শ ব্যক্তিত্ব হিসেবেও তিনি ইতোমধ্যে তরুণদের মনোযোগ আকর্ষণ করেছেন। তাছাড়া বাংলাদেশে যে গণতান্ত্রিক ধারা বহমান তা বঙ্গবন্ধুর পরিবারকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তাঁরই যোগ্য উত্তরসূরি হিসেবে সজীব ওয়াজেদ জয় এই তৃতীয় প্রজšে§র নতুন নেতৃত্বের প্রতি আমাদের সব আকর্ষণ এখন কেন্দ্রীভূত। বঙ্গবন্ধুকে নির্মমভাবে হত্যার পর বাংলাদেশে নেতৃত্বের বিরাট শূন্যতার সৃষ্টি হয়েছিল। উপমহাদেশের রাজনীতিতে পারিবারিক ঐতিহ্য একটি ব্যাপক প্রসঙ্গ। ভারতের দিকে তাকালে বর্তমান রাজনীতির পারিবারিক ধারা সবচেয়ে বেশি লক্ষ্য করা যায়। জওহরলাল নেহরু, গান্ধীর কন্যা ইন্দিরা গান্ধী তাঁর পিতার যোগ্য উত্তরসূরি ছিলেন। ইন্দিরা গান্ধীর সময় মোরালি দেশাইয়ের মতো অনেক যোগ্য নেতা থাকলেও ইন্দিরা গান্ধীই হয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। জুলফিকার আলী ভুট্টো, তাঁর কন্যা বেনজীর ভুট্টো, বেনজীরের স্বামী ও ছেলের রাজনীতিতে সম্পৃক্ততা যেমন সত্য তেমনি শ্রীলঙ্কার বন্দরনায়েক পরিবারের রাজনৈতিক পরিচয় লক্ষণীয়। ঠিক একইভাবে আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতারা ১৯৮১ সালে শেখ হাসিনাকেই রাজনৈতিক মঞ্চে নিয়ে এসেছিলেন। পঁচাত্তর পরবর্তী তোফায়েল আহমেদ, প্রয়াত আবদুল জলিল, আবদুর রাজ্জাক, কামাল হোসেন প্রমুখ বড় বড় নেতা দেশ পরিচালনায় শেখ হাসিনাকেই জনগণের সামনে দাঁড় করান। খালেদা জিয়া যেভাবে তারেক জিয়াকে রাজনীতিতে এনে দলের পদে সমাসীন করেছেন জয়ের জীবনে তেমনটি ঘটেনি। বরং জয় রাজনীতিতে যুক্ত হতে পারেন ধরে নিয়ে ২০০৪ সালে ‘হাওয়া ভবনে’র মালিক তারেক জিয়াকে বিএনপি লুফে নিয়েছিল। জয় বাংলাদেশের মৃত্তিকার সন্তান। তাঁর রাজনীতিতে আসাটা আকস্মিক হলেও দলকে সংগঠিত করা, দলের কোন্দল মেটানো, দলকে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে ঐক্যবদ্ধ রাখা প্রধান কাজ হিসেবে গণ্য হচ্ছে। বিগত মহাজোট সরকারের সময় পাঁচ সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে পরাজয়ের পর আওয়ামী লীগের সামনে নতুন নেতৃত্বের দরকার ছিল। তাই তাঁর মতো কোনো যোগ্য ব্যক্তিকে সামনে আনা আমাদের জন্য মঙ্গলজনক। ১৯৭১ সালের ২৭ জুলাই ঢাকায় করা জয় ভারত থেকে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারে বিএসসি ডিগ্রি এবং যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লোক-প্রশাসনে এমএ ডিগ্রি অর্জন করেন। ২০০৭ সালে তিনি ২৫০ জন তরুণ বিশ্ব নেতার মধ্যে একজন হিসেবে সম্মানিত হন। আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার উপদেষ্টা হিসেবে তিনি অনেক আগে থেকেই রাজনীতি সচেতন। ২০০৮ সালের জুন মাসে শেখ হাসিনাকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কারাগার থেকে মুক্ত করার ক্ষেত্রে তাঁর অবদান ছিল গুরুত্বপূর্ণ। জয়ের ভেতর রয়েছে বঙ্গবন্ধুর মতো প্রচণ্ডতা। রয়েছে পরিশ্রমী ও তারুণ্যের প্রাণময়তা। এ জন্য আমেরিকা থেকে তাঁর ফিরে আসা, রাজনীতিতে যোগ দেয়া আমাদের জন্য শুভ সূচনা। সজীব ওয়াজেদ জয় এর আগে বলেছিলেন, উন্নয়নের অসমাপ্ত বিপ্লব শেষ করতে হলে আওয়ামী লীগকে সুযোগ দিতে হবে। তিনি বলেন, নতুন ও আধুনিক একটি বাংলাদেশের জন্য উন্নয়নের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে হবে। বাংলাদেশের জন্য এখন একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়। কারণ ৫ জানুয়ারি (২০১৪) নির্বাচন ইতিহাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন ছিল। সজীব ওয়াজেদ জয়ের প্রাণবন্ত উপস্থিতি আমাদের তরুণদের সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যাশায় উজ্জীবিত করেছে। একাধিক বেসরকারি টেলিভিশনে প্রচারিত অনুষ্ঠানে দর্শকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে তিনি নানা প্রসঙ্গে গঠনমূলক রাজনৈতিক কথা বলেছেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং পিতা-মাতা ড. ওয়াজেদ ও শেখ হাসিনার মতো আন্তরিক সাধারণ মানুষকে কাছে টানার অসাধারণ ক্ষমতা রয়েছে তাঁর। এর আগে তিনি দেশের মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। বিভিন্ন সময়ে দেয়া তাঁর বক্তব্য আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের মাঝে উদ্দীপনার সঞ্চার করে। জয়ের মতো নতুন নেতৃত্ব আমাদের রাজনীতিতে ইতিবাচক পরিবর্তনের সূচনা ঘটিয়েছে। মোট ভোটারের প্রায় ৪০ শতাংশ নতুন তাদের জন্য নতুন নেতা অনিবার্য। সজীব ওয়াজেদ জয় এসব নতুন ভোটারদের প্রত্যাশার ভাষাকে ঠিকই বুঝতে পারেন। ভবিষ্যতে সংসদ নির্বাচনে রংপুর-৬ (পীরগঞ্জ) আসন থেকে তিনি প্রার্থী হবেন বলে রংপুর জেলা আওয়ামী লীগ থেকে ঘোষণা দেয়া হয়েছে। এটা ঠিক যে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে আওয়ামী লীগ এখনো রাজনৈতিকভাবে শক্তিশালী দল। এখানে অন্য কোনো দলের এত শক্তি নেই যে তারা রাজনৈতিকভাবে আওয়ামী লীগের সমান হতে পারে। তাছাড়া আওয়ামী লীগের যে গৌরবময় ইতিহাস-ঐতিহ্য রয়েছে তা অন্য কোনো দলের নেই। সজীব ওয়াজেদ জয় সেই গৌরবকে কাজে লাগিয়ে সামনে এগিয়ে যাবেন।
৩. রাজনৈতিক নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় এগিয়ে এসেছেন মানুষের আকর্ষণে। মাতার সান্নিধ্য তাঁকে রাজনীতির শিক্ষায় শিক্ষিত করেছে। তাঁর নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় আওয়ামী সমর্থক সবাই খুশি। কারণ তিনি মানুষকে স্বপ্ন দেখাতে পারেন। আওয়ামী লীগকে লক্ষ্যে পৌঁছাতে হলে নেতৃত্ব ও উন্নয়নকে একই সঙ্গে আলিঙ্গন করতে হবে। জয় হঠাৎ আবির্ভূত নেতা নন। তিনি রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান। তাঁর আছে দৃঢ়চেতা অভিভাবক।
ড. মিল্টন বিশ্বাস লেখক : অধ্যাপক এবং পরিচালক, জনসংযোগ, তথ্য ও প্রকাশনা দফতর
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা মে, ২০১৬ সকাল ১০:০৫