কর্মসংস্থান বাড়াতে আগামী ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেটে বিনিয়োগ আকর্ষণে নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে। আসছে বিনিয়োগবান্ধব বাজেট। চলতি বাজেটেও কিছু সুবিধা দিয়ে উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগমুখী করার চেষ্টা করেছিল সরকার। এই উদ্যোগের কিছুটা সুফল পাওয়া গেছে। শুধু দেশী উদ্যোক্তা নন, এবার বিদেশী বিনিয়োগকারীরাও বাংলাদেশ নিয়ে নতুন করে ভাবতে শুরু করেছেন। বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষণে তৎপর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। এদেশে বিদেশী বিনিয়োগ আকৃষ্টে আবারও চতুর্থ বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট সম্মেলন শুরু হয়েছে হংকংয়ে। এই সম্মেলনে যোগ দিতে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এখন হংকংয়ে রয়েছেন। সম্মেলনে আজ মঙ্গলবার ‘পারস্পেক্টিভ : ইনভেস্টমেন্ট ফর বাংলাদেশ ফিউচার’ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন তিনি।
এদিকে, বিনিয়োগ বাড়াতে সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকেও ৩০ দফা নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। হাইটেক পার্কে বিনিয়োগকারীদের কর অব্যাহতি, হ্রাসকৃত মূল্যে গ্যাস, বিদ্যুত ও পানি সরবরাহসহ বিভিন্ন বিষয়ে নির্দেশ দেয়া হয়। পাশাপাশি উৎপাদিত পণ্য ভ্যাটমুক্ত সুবিধায় দেশের বাজারে বিক্রি ও সরবরাহের ব্যবস্থা করতে সংশ্লিষ্ট বিধিমালা সংশোধনের উদ্যোগ নিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর)। একই সঙ্গে বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষণে দেশে-বিদেশে রোডশো, বড় আকারে আইটি পার্ক স্থাপন ও সেখানে নারী উদ্যোক্তাদের জমি বরাদ্দের কোটা সংরক্ষণ, জি-টু-জি ভিত্তিতে অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা এবং ১২ জেলায় আইটি ভিলেজ স্থাপনের নির্দেশনা রয়েছে। আর এসব নির্দেশ বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে ১২ মন্ত্রণালয় ও সংস্থাকে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকের নির্দেশ বাস্তবায়নের জন্য পৃথকভাবে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও সংস্থাকে জানানো হয়েছে। আগামী বাজেটে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের এসব নির্দেশনা বাস্তবায়নে তাগিদ দেয়া হবে।
জানা গেছে, ইনভেস্টমেন্ট প্রমোশন এ্যান্ড প্রটেকশন এ্যাক্ট-১৯৮০’এর মাধ্যমে দেশী ও বিদেশী বিনিয়োগকারীগণের বিনিয়োগের প্রতি সম-আচরণের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এলাকাভেদে কর অবকাশ সুবিধা প্রদান করা হচ্ছে। অনিবাসী বাংলাদেশীদের (এনআরবি) বিনিয়োগকে বিদেশী বিনিয়োগ হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে। অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত খাতের অধীনে রফতানিমুখী শিল্পের ক্ষেত্রে বিশেষ সুবিধা ও ঝুঁকি তহবিল সহায়তা প্রদানের সুযোগ রয়েছে। দ্বৈত কর পরিহারের চুক্তি মতে কর অব্যাহতির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। বিনিয়োগ বাড়াতে ওয়ান স্টপ সার্ভিস সেলের মাধ্যমে বিনিয়োগে অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা গ্যাস, বিদ্যুত, পানি, টেলিফোন সংযোগের সুবিধা প্রদানের জন্য সুপারিশ সংশ্লিষ্ট দফতর-কর্তৃপক্ষের কাছে উদ্যোক্তাদের চাহিদা মতো প্রেরণ করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।
বিদেশী বিনিয়োগে আরও যেসব সুবিধা ॥ ১০০ ভাগ সরাসরি বিদেশী বিনিয়োগ (ডিএফআই) অথবা রফতানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকাতে (ইপিজেড) যৌথ বিনিয়োগ অথবা এ এলাকার বাইরের বিনিয়োগ করার সুযোগ রয়েছে। স্টক এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে পাবলিক কোম্পানির শেয়ার ক্রয়ের দ্বারা তালিকাভুক্ত বিনিয়োগ, অবকাঠামোগত প্রকল্পে বিনিয়োগ যেমন বিদ্যুত খাত, তেল, গ্যাস ও খনিজ অনুসন্ধান, টেলিযোগাযোগ, বন্দর, সড়ক ও জনপথ। সরাসরি প্রত্যক্ষ ক্রয় অথবা সরকারী প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ক্রয় করা, বেসরকারী ইপিজেড বিনিয়োগের সুযোগ। এছাড়া বেসরকারী উদ্যোগে রফতানিমুখী ও প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প প্রতিষ্ঠায় দেশী ও বিদেশী বিনিয়োগকারীদের সব ধরনের সেবা প্রদানের জন্য বিনিয়োগ বোর্ড দায়িত্বপ্রাপ্ত। সব ধরনের বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ ও ব্যবসা সহায়তা প্রদান করা এই বোর্ডের মূল লক্ষ্য।
দেশের শীর্ষ অর্থনীতিবিদ এবং গবেষকদের সঙ্গে সম্প্রতি রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় প্রাক-বাজেট আলোচনায় অংশ নেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। ওই আলোচনায় কর্মসংস্থান বাড়াতে বিনিয়োগ বাড়ানোর তাগিদ দিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা। আলোচনায় অংশ নিয়ে অর্থনীতিবিদ মামুন রশীদ বলেন, এনবিআর, বাংলাদেশ ব্যাংক এবং বিনিয়োগ বোর্ড এক সঙ্গে কাজ করছে না বলে দেশে বিনিয়োগ বাড়ছে না। বিনিয়োগ বাড়াতে হলে এই তিন সংস্থার কাজের সমন্বয় থাকা প্রয়োজন। বাংলাদেশে এ মুহূর্তে বিদেশী বিনিয়োগ প্রয়োজন। আগামী বাজেটে বিনিয়োগ বাড়ানোর কৌশল থাকতে হবে। তিনি বলেন, বিদেশী বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে ট্যাক্স ইন্টারভেনশনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এবং এই বার্তা যাচ্ছে যে, এদেশে বিনিয়োগ না করাই উত্তম। বিদেশী বিনিয়োগকারীরা স্বস্তি না পেলে তাঁরা আসবেন না। তাই বাজেটে বিনিয়োগ বাড়ানোর উপায় নিয়ে আলোচনা করতে হবে।
হংকংয়ে বিনিয়োগ সম্মেলন ॥ চতুর্থ বাংলাদেশ বিনিয়োগ সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের সুযোগ দেয়ার লক্ষ্যে হংকংয়ে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। মূল পর্বের শুরুতে পার্সপেক্টিভ : ইনভেস্টমেন্ট ফর বাংলাদেশ ফিউচার শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন অর্থমন্ত্রী। এরপর মনিটারি পলিসি ফর টুমোরোস বাংলাদেশ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ বিরুপাক্ষ পাল।
এছাড়া ওই সম্মেলনে এনার্জি আউটলুক ফর বাংলাদেশ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী এবং ইনভেস্টিং ইন দ্য ইকোনমিক জোনস শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন বাংলাদেশ অর্থনৈতিক জোন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মোঃ শাহরিয়ার আলম, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এবং চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান মোঃ আব্দুল মজিদের পৃথক প্যানেল আলোচনায় সভাপতিত্ব করবেন বলে জানা গেছে। সম্মেলন শেষে আগামীকাল বুধবার দেশে ফিরবেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে এপ্রিল, ২০১৬ সকাল ১০:৪৭