শফিক রেহমানকে গ্রেপ্তার করে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। সাধারণভাবে কম-বেশি প্রতিটি ঘটনা নিয়ে যেমন হয়ে থাকে, তেমনি এই গ্রেপ্তার নিয়েও পক্ষে-বিপক্ষে কথা উঠেছে। প্রসঙ্গত, শফিক রেহমান সাংবাদিক, টিভি উপস্থাপক ও ডেমোক্রেসি ওয়াচ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের অন্যতম কর্ণধারই কেবল নন, সব কিছু ছাপিয়ে তিনি বিএনপির থিংক ট্যাংক হিসেবে সুপরিচিত। জানা যায়, তিনি বিএনপি-জামায়াত ঐক্যের পক্ষে, মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিরুদ্ধে এবং নির্বাচন বয়কট করে দেশকে অসংবিধানিক পথে ঠেলে দেয়ার হীন উদ্দেশ্যে পেট্রলবোমা দিয়ে নিরীহ মানুষ ও জাতীয় সম্পদ ধ্বংস করা বিষয়ে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের পরামর্শদাতা। একটু খেয়াল করলেই দেখা যাবে, সাংবাদিকতা, টিভিতে কিছু উপস্থাপনা, উল্লিখিত প্রতিষ্ঠান সম্পর্কিত কোনো কারণ কিংবা বিএনপির থিংক ট্রাংক হিসেবে পরামর্শক হওয়ার কারণে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। গ্রেপ্তার করা হয়েছে খুবই গুরুতর সুনির্দিষ্ট এক অভিযোগে।
অভিযোগ দেশবাসী সবারই জানা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দৌহিত্র, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে ও আইটি উপদেষ্টা এবং ক্রমে আওয়ামী লীগ রাজনীতি-সংগঠনে সম্পৃক্ত হতে থাকা তরুণ ব্যক্তিত্ব সজীব ওয়াজেদ জয়কে আমেরিকায় অপহরণ ও হত্যা করার পরিকল্পনায় যুক্ত থাকার সুনির্দিষ্ট অভিযোগে গ্রেপ্তার করে তাকে রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। প্রসঙ্গত, জয়কে যে হত্যা করার প্রচেষ্টা বিএনপি মহল থেকে নেয়া হয়েছিল, তা বোধকরি প্রমাণের অপেক্ষা রাখে না এ জন্য যে, ইতোমধ্যে আমেরিকায় এই মামলার বিচারে অভিযুক্ত হয়ে বিএনপি নেতার ছেলে রিজভী আহমদ সিজারের ৪২ মাসের এবং ঘুষ লেনদেনের জন্য এক এফবিআই এজেন্টের ৩০ মাস কারাদণ্ড হয়েছে।
সহজেই ধারণা করা যায়, আমেরিকার জেলে বিএনপি নেতার যে ছেলে আছেন, তিনি একা একা হত্যার পরিকল্পনা, অর্থ সংগ্রহ ইত্যাদি সব করেননি। দেশ-বিদেশে পর্দার অন্তরালে নিঃসন্দেহে আরো অনেকেই ওই যড়যন্ত্রে জড়িত ছিলেন। এ কারণে ২০১৫ সালে পল্টন থানায় পুলিশ একটি মামলাও প্রদান করেছিল। প্রসঙ্গত এটা ঠিক, গুরুতর অনেক ঘটনায় তদন্ত কাজে কর্মকর্তারা অনেক ক্ষেত্রে অগ্রসর হতে পারেন না কিংবা নানা কারণে হতেও চান না। কিন্তু এ ক্ষেত্রে তা হয়নি। তদন্ত হয়েছে এবং অভিযোগের ভিত্তি পেয়েই শফিক রেহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্য মামলার তদন্ত মাঝ পথে আটকে যায়, অগ্রসর হয় না প্রভৃতি সব যুক্তি উপস্থাপন করে কেউ যদি বলেন, এই মামলার তদন্ত করে গ্রেপ্তার করা ঠিক হয়নি, প্রধানমন্ত্রীর ছেলে বলে তদন্ত হবে অন্য কারো হলে হবে না প্রভৃতি তবে ওই যুক্তিকে কি বলা যাবে! আইনে একটার বিচার হয় না বলে অন্যটার হবে না, এই যুক্তি অচল ও নিন্দনীয়। বস্তুতপক্ষে তা দোষীর পক্ষে অবস্থান নেয়ারই নামান্তর। তাই অপরাধও বটে।
ইতোমধ্যে জানা গেছে, শফিক রেহমানকে হত্যার পরিকল্পকদের অন্যতম হিসেবে গ্রেপ্তার করার পর রিমান্ডে নিলে তিনি পরিকল্পনা, বিশেষত পরিকল্পনার সঙ্গে কারা কারা যুক্ত, কোথায় কি হয়েছে প্রভৃতি সম্পর্কে নানা কথা বলছেন। মামলা চালু হলে এবং রায় বের হলেই কেবল বোঝা যাবে তিনি ওই পরিকল্পনার সঙ্গে আদৌ ছিলেন কি না? তাই এখনই বলার সময় আদৌ আসেনি যে, ভিন্ন মত দমন কিংবা বিএনপিকে দমনের জন্য এই গ্রেপ্তার করা হয়েছে। যারা এটা বলছেন তারা গণতন্ত্র বা গণতান্ত্রিক পরিবেশের নামে কার্যত সজীব ওয়াজেদ জয়কে হত্যার পরিকল্পনাকারী কুশীলবদের আড়াল করতে চাইছেন। ওই হত্যা মামলার অপরাধী শনাক্তকরণে রাষ্ট্রীয় কর্মকাণ্ডে বাধা সৃষ্টি করতে তৎপর থাকছেন।
বলাই বাহুল্য, আমাদের রাষ্ট্র ও সমাজে কেউ গ্রেপ্তার হলেই যদি এমন মতপ্রকাশ করা হয় যে, ভিন্নমত দমনের জন্য তা করা হচ্ছে, তবে বিরোধী দল-মত পরিগণিত হবে অপরাধীদের অপরাধ করে পার পেয়ে যাওয়ার ছাতা হিসেবে। দেশবাসী যেমন অপরাধীরা পার পাওয়ার ছাতা হিসেবে সরকারি দলকে দেখতে চায় না, তেমনি বিরোধী দলকেও নয়। প্রসঙ্গত বলতেই হয় যে, প্রকৃতির মতোই রাষ্ট্র ও সমাজ জীবনে অসামঞ্জস্যতা যেমন স্বাভাবিক বিষয় তেমনি ওই অসামঞ্জস্যতা ক্রমে ভারসাম্যতার দিকে যাওয়াটাও অনিবার্য বিষয়। বিরোধী দল যদি অপরাধীদের ছাতা হিসেবে ব্যবহৃত হতে না পারে, তবে এমন জনমত দানা বাধতে বাধ্য যে, সরকারি দলও অপরাধীদের ছাতা হতে পারবে না এবং দল নির্বিশেষে অপরাধীদের শাস্তি অবশ্যই পেতে হবে।
ভারসাম্য গড়ে ওঠার এই প্রক্রিয়াই ক্রমে আইনকে স্বাভাবিক পথে চলা ও মানবাধিকার রক্ষার গ্যারান্টি দিবে এবং দেশকে ক্রমে সুশাসনের দিকে নিয়ে যাবে। এই দিকটি বিবেচনায় নিয়ে বলতেই হয় যে, এদিক ওদিক ছাতা থাকায় ক্রমবর্ধমান অপরাধ নিয়ে দেশ বিশেষত রাজনীতি আজ যে অবস্থায় নিপতিত হয়েছে, তাতে শফিক রেহমানের গ্রেপ্তার একটা সম্ভাবনার বার্তা হিসেবে কাজ করতে পারে। দেশি-বিদেশি কোনো চাপের কাছে নতি স্বীকার না করে এই মামলার এস্পার-ওস্পার হোক, এটা তাই গণতন্ত্র ও সুশাসনকামী সব নাগরিকেরই কাম্য হওয়া প্রয়োজন। নিতান্ত অন্ধ ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ব্যক্তি গোষ্ঠী মহল দল ছাড়া দেশবাসী এখন নিঃসন্দেহে চাইবে প্রবাসে জয় হত্যা পরিকল্পনা মামলার যথাযথ ও পূর্ণাঙ্গ তদন্ত এবং ষড়যন্ত্র উদঘাটিত হোক। মাস্টারমাইন্ড দোষীদের মুখোশ উন্মোচন এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক।
দেশবাসী এটা চাইবে কেবল ছাতি নামক যে ভূত দুটি রয়েছে তা জাতির ঘাড় থেকে নামানো এবং দল নির্বিশেষে অপরাধীদের বিচার ও শাস্তি হওয়ার জন্যই কেবল নয়, হত্যা-ক্যুয়ের রাজনীতি থেকে দেশকে সম্পূর্ণরূপে মুক্ত করার জন্যও। একটু খেয়াল করলেই দেখা যাবে, জাতির পিতা ও জাতীয় চার নেতাই কেবল নয়, দুই বড় রাজনৈতিক দলই হত্যা ও ক্যুর শিকার। হত্যা-খুন-ক্যু আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে আগুন নিয়ে খেলারই মতো। যিনি খেলবেন তিনিও আগুনে দগ্ধ হতে বাধ্য। স্বাধীন দেশে হত্যা-ক্যুর রাজনীতির প্রকৃত বেনিফিসিয়ারি এবং এর ভেতর দিয়ে ক্ষমতা দখল ও কুক্ষিগত করার নায়ক বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ওই রাজনীতির কোপানলেই বলি হয়েছিলেন। বলাই বাহুল্য, ক্ষমতা ফিরে পাওয়ার লক্ষের সঙ্গে জিয়া হত্যা বিষয় যুক্ত হওয়ার কারণেই এরশাদ আমলে বিএনপি দলটি ৭ দল গঠন করে ১৫ দলের সঙ্গে স্বৈরাচার ও হত্যা-ক্যু বিরোধী আন্দোলনে শামিল হয়েছিল।
কিন্তু ওই আন্দোলনে বিজয়ের প্রেক্ষাপটে ক্ষমতায় যাওয়া বিশেষত ক্ষমতায় এসে বিএনপি আবার জিয়াউর রহমানের ওই ভ্রান্ত পথই গ্রহণ করে। আবার শুরু হয় আগুন নিয়ে খেলা। এর কারণ মূলত পাকিস্তানি আমলের তিন ভূত। প্রথমত দলটির জন্ম ও বিকাশ পাকিস্তানি আমলের কনভেনশন লীগের মতো সামরিক ছাউনিতে হয়েছে বিধায় দলটি ক্ষমতা কুক্ষিগত ও চিরস্থায়ী করতে জনতার ওপর ভরসা নয়, সামরিক কর্তাদের ওপরেই ভরসা করে। দ্বিতীয়ত জামায়াতকে নেয় ক্ষমতায় যাওয়া ও থাকার সাথী হিসেবে। ঠিক পকিস্তানি আমলের ইয়াহিয়ার মতো। তৃতীয়ত দলটি পাকিস্তানপন্থী অবস্থান নিয়ে অন্ধ ভারত বিরোধীতার নীতি গ্রহণ করে। যে নীতির ধারাবাহিকতায়ই পরবর্তী সময়ে ক্ষমতায় এসে বিএনপি ১০ ট্রাক অস্ত্র পাচারের মতো ঘটনায় পর্যন্ত দেশকে জড়িয়ে ফেলে। ক্ষুদ্র এ কলামে এই তিন ভূতের উদাহরণ না টেনে বলা যায়, আশির দশকের শেষ দিকে স্বৈরাচারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলন এবং নব্বইয়ের দশকের সূচনায় ওই আন্দোলনের বিজয় দেশের সামনে হত্যা-ক্যু বিরোধী গণতান্ত্রিক-অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক পথ উন্মোচনে যে সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছিল, তা বিনষ্ট করে দেয় বিএনপি।
এককথায় বলা যায়, উল্লিখিত তিন নীতি-কৌশল নিয়ে বিএনপি দলটি চলে যায় স্বস্থানে, যেন মাতৃকোলে। আমাদের এই মানচিত্রের ইতিহাস দেখিয়ে দেয়, এই তিন ভূত নীতিগতভাবে থাকবে যে রাজনৈতিক দল-শক্তির ঘাড়ে বহাল তবিয়তে, সেই রাজনীতি ও সংগঠন হত্যা-ক্যুর রাজনীতি থেকে নিজকে বের করে নিয়ে আসতে পারবে না। বিএনপি ঠিক সেই তিন ভূতের কারণেই বাধা পড়ে গেছে আক্টোপাসের জালে। হত্যা-খুন-ক্যুর ওই রাজনীতি থেকে বিএনপি বের হয়ে আসতে পারছে না। পারবেও না। আগুন নিয়ে খেলছে তো খেলছেই এবং ক্রমেই বেশি বেশি করে যাচ্ছে জড়িয়ে।
পাকিস্তান আমল থেকে বর্তমান সময়ের ইতিহাস স্মরণ ও পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে, ওই তিন ভূত ঘাড়ে থাকবে আর হত্যা-খুন-ক্যু ওই রাজনীতির মাস্টারমাইন্ডদের মাথায় থাকবে না, এটা হতে পারে না। এই হত্যা-খুন-ক্যুর টার্গেট পাকিস্তানি আমল থেকে এখনো হয়ে আছে ভাষা আন্দোলনের ভেতর দিয়ে গড়ে ওঠা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। পূর্বাপর ঘটনাবলি দেখিয়ে দেয়, মানুষের চেতনা ও মনস্তত্ত্বের ঘাতপ্রতিঘাত ও উঠতি-পড়তি সত্ত্বেও অবিনাশী ও চলমান এই চেতনার ধারক-বাহক-রক্ষক রাজনীতিক ও বুদ্ধিজীবীরাই ওই মাস্টারমাইন্ডদের টার্গেট। রক্ত ঝড়ে তাদেরই। হত্যা-খুন ওই অপশক্তি মাস্টারমাইন্ডদের কাছে ছেলের হাতের মোয়াবিশেষ। পাকিস্তানি আমলে সোহরাওয়ার্দীকে বিদেশে হত্যা করা হয়েছিল বলে অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছিল। সত্যতা ছিল কি না তা তদন্ত হয়নি বরং পল্টন ময়দানে শোক সমাবেশে এ অভিযোগ তোলার জন্য শেখ মুজিবকে মামলায় পড়তে হয়েছিল।
পরবর্তীতে ৬-দফার সময় আগরতলা মামলা দিয়ে, মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানের কারাগারে নিয়ে, পঁচাত্তরে সপরিবারে বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করে, শেখ হাসিনার ওপর বারবার বিশেষত কোটালীপাড়ায় বোমা পুঁতে রাখা আর ২১ আগস্ট গ্রেনেড মারা দিয়ে এটা মাস্টারমাইন্ডরা প্রমাণ করেছে, বঙ্গবন্ধুর পরিবার ও সহযোগীরা হচ্ছেন ওদের প্রধান টার্গেট। এরই ধারাবাহিকতায় বঙ্গবন্ধুর নাতি ও শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় হচ্ছেন ওদের টার্গেট। বিদ্যমান জাতীয়, উপমহাদেশীয় ও আন্তর্জাতিক অবস্থা ও বাস্তবতায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে টার্গেট করা যত কঠিন, ঠিক ততটুকুই কিন্তু সহজ বিদেশে সজীব ওয়াজেদ জয়কে গুম ও হত্যার জন্য টার্গেট করা। করা হয়েছিলও তা-ই। জয়কে হত্যার এই টার্গেট ও স্থান নির্বাচন এবং পন্থা নির্ধারণের অভিজ্ঞতা দেখিয়ে দেয়, ওই মাস্টরমাইন্ডরা যতটা সুদূরপ্রসারী ও হিসেবি, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষের নেতৃত্ব ততটাই যেন উদাসীন ও নির্লিপ্ত। যদি আমেরিকানরা ঘটনা না ধরতে পারতো, তবে কি হতো কে জানে! বলাই বাহুল্য উদাসীন ও নির্লিপ্ত ভাব দূর করার সঙ্গে সঙ্গে সর্বশক্তি দিয়ে তদন্ত করে বের করা দরকার শফিক রেহমান ওই মাস্টারমাইন্ডদের সাথী কি না কিংবা ন্যূনতমভাবে এর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন কি না? আর কারা কারা যুক্ত তথা পুরো নেটওয়ার্ক শনাক্ত করা আজ দেশপ্রেমিক কর্তব্য। যদি প্রমাণ পাওয়া যায়, তবে আইনকে নিজস্ব গতিতে চলতে দেয়া ভিন্ন বিকল্প আর কিছু নেই। এ ক্ষেত্রে কে কত বড় রাজনীতিক, কে কত বড় সাংবাদিক কিংবা ইত্যাদি ইত্যাদি তা দেখার প্রয়োজন আছে বলে জনগণ মনে করে না।
প্রসঙ্গত বিগত সময়ে বঙ্গবন্ধু হত্যাকারীদের বিচার ও শাস্তি যখন প্রদান করা হয়, তখনই এমন কথা হয়েছিল যে, কোনো হত্যা যে-ই করুক না কেন বাংলার মাটিতে বিচার ও শাস্তি হবেই। মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও শাস্তি চলার সময়েও একই অঙ্গীকার উচ্চারিত হয়। জাতির ওপর লেপ্টে থাকা কলঙ্ক মোচনের পথে যখন আমরা বড় বড় পদক্ষেপ নিচ্ছি এবং জয় হত্যা পরিকল্পনার তদন্ত ও বিচার করতে যাচ্ছি, তখন কিন্তু বিচ্ছিন্নভাবে বা সুপরিকল্পিতভাবে অন্য যেসব হত্যা-খুন হচ্ছে, তারও সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার হওয়া জরুরি। নিঃসন্দেহে উল্লিখিত দুইয়ের একটা যোগসূত্র আছে। প্রথমটা দ্বিতীয়টা করার দায় সৃষ্টি ও বৃদ্ধি করে। বিচারের বাণী নীরবে-নিভৃতে কাঁদবে, এটা হতে পারে না। হতে দেয়া যায় না। সার্বিক বিচারে জাতির ওপর চেপে বসা কলঙ্কের দাগ মোচনের জন্য বিচার ও শাস্তির ব্যবস্থা নেয়া আর অন্যান্য সব অপকর্মের বিচার ও শাস্তি হওয়া একই সূত্রে গাঁথা।
এটা সর্বৈব সত্য হলেও জাতীয় চেতনার সাক্ষাৎ শত্রু মাস্টারমাইন্ডদের ইতিহাসের ধারাবাহিক হত্যা-খুন-ক্যুর পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সঙ্গে সমাজজীবনের অন্যান্য অনভিপ্রেত, ঘৃণিত ও হৃদয়বিদারক সব হত্যাকাণ্ড এক করে একই গুরুত্ব দিয়ে দেখার কোনো অবকাশ নেই। তাই বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে জয় হত্যা পরিকল্পনার তদন্ত ও দোষীদের শাস্তি প্রদান ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় বর্তমানের অতি জরুরি ও গুরুত্বপূর্ণ কর্তব্য। এই কর্তব্য পালনের ভেতর দিয়েই অন্যান্য হত্যা ও অপকর্মের তদন্ত, বিচার, শাস্তি তরান্বিত হওয়ার পথ প্রশস্ত হবে। তবে বলাই বাহুল্য, শফিক রেহমান তদন্ত ও বিচারে দোষী সাব্যস্ত না হোক, প্রাথমিক প্রমাণ ও তিনি রিমান্ডে যা বলছেন, তা মিথ্যা প্রমাণিত হোক, এটাই দেশবাসী চাইবে। দেশবাসী যদি প্রমাণ পায় আমেরিকায় জেলে থাকা বিএনপি নেতার শাস্তি পাওয়া ছেলেই কেবল হত্যা পরিকল্পনায় জড়িত ছিল আর কেউ তাতে জড়িত নন, তবে স্বস্তিই পাবে। কিন্তু শফিক রেহমান যদি ঐতিহাসিক ধারাবাহিকতার ভেতর দিয়ে সৃষ্ট মাস্টারমাইন্ডদের পরিকল্পনার সঙ্গে যুক্ত থাকেন এবং কেঁচো খুঁজতে গিয়ে সাপ বের হয়ে আসে, তবে যথা কর্তব্য কাজটি করতে জাতি যেন অপারগ না হয়, এটাই আজ জনগণের একান্ত প্রত্যাশা।
শেখর দত্ত : রাজনীতিক, কলাম লেখক।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে এপ্রিল, ২০১৬ সকাল ১০:৪৭