বাংলাদেশের মত একটি স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে আমাদের সবার উচিৎ/কর্তব্য এ দেশের সব নিয়ম কানুন মেনে চলা। সব না পারলেও অন্তত মূল জিনিস গুলো ঠিক রাখা। বিশেষ করে ঐ সব জিনিস যেগুলোর সাথে আমাদের জাতীয় সত্তা , জাতির সম্মান জড়িত। পাশাপাশি ঐ সব জিনিস থেকে বিরত থাকা যা দেশের আইনে বারণ। বিশেষ করে ঐ সব জিনিস যেগুলোর সাথে আমাদের জাতীয় সত্তা, জাতির সম্মান জড়িত।
"জাতীয় পতাকা"র কথাই ধরেন
একটি গণতান্ত্রিক দেশের জন্য সে দেশের জাতীয় পতাকা যে কত খানি গুরুত্ব বহন করে তা কারো অজানা নয়। পাশাপাশি একটি স্বাধীন গণতান্ত্রিক দেশে সে দেশের পতাকা ছাড়া অন্য কোন দেশের পতাকা লাগানো যে কত বড় অপরাধ তাও কারো অজানা থাকার কথা নয়। কিন্তু এরপরও আমরা এই পতাকা কেন্দ্রিক যেই ভুল গুলো করে থাকি তা চোখে পড়ার মত। বিশেষ করে বিশ্বকাপ আসলে। প্রতিবার বিশ্বকাপ আসলে দেখা যায় অনেক ক্রীড়া প্রেমী তাঁদের পছন্দের দেশের পতাকা উত্তোলন করে থাকেন, যা কিনা সম্পুর্ণ সংবিধান বিরোধী।
PEOPLE’S REPUBLIC OF BANGLADESH FLAG RULES, 1972 (Revised up to May, 2010) অনুযায়ী,
[ ‘বাংলাদেশের পতাকার’ উপরে অন্য কোন পতাকা বা রঙিন পতাকা উত্তোলন করা যাইবে না'।]
শুধু তাই নয়! অন্য কোন দেশের পতাকা উড়াতে হলে কি কি যোগ্যতার অধিকারী হতে হবে, অথবা কারা কারা কখন এই পতাকা উত্তোলন করতে পারবেন সবই সংবিধানে বলা আছে।
যার সার সংক্ষেপ নিচে দেয়া হলঃ
(১) বাংলাদেশে অবস্থিত কূটনৈতিক মিশনসমূহের চ্যান্সারী ভবন এবং কনস্যুলার অফিসসমূহে বিদেশের ‘জাতীয় পতাকা’ উত্তোলন করা যাইতে পারে। অধিকন্তু, কূটনৈতিক মিশনসমূহের প্রধানগণ তাঁহাদের সরকারী ভবন এবং মোটর গাড়ীতে তাঁহাদের ‘জাতীয় পতাকা’ উত্তোলন করিতে পারিবেন।
(২) বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয় ভ্রমণকালীন সময়ে নিম্নবর্ণিত শ্রেণীর সম্মানিত বিদেশী ব্যক্তিগণ তাঁহাদের নিজস্ব পতাকা (Personal Standards) অথবা নিজস্ব পতাকা না থাকিলে তাঁহাদের দেশের জাতীয় পতাকা তাঁহাদের অফিসিয়াল বাসভবনে এবং মোটর গাড়ীতে উত্তোলন করিতে পারিবেন:
(ক) রাষ্ট্রপ্রধান;
(খ) ভ্রমণরত প্রধানমন্ত্রী;
(গ) বিদেশী সরকারের মন্ত্রীবর্গ।
(৩) বাংলাদেশে অবস্থিত কূটনৈতিক মিশনসমূহ কোন উপলক্ষে, যেমন-জাতীয় দিবসসমূহে কূটনৈতিক মিশন প্রধানের বাসভবন বা চ্যান্সারী ব্যতীত, যে স্থানে সামাজিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হইবে, সেইস্থানে তাঁহাদের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করিতে পারিবে, তবে শর্ত থাকে যে, সেইক্ষেত্রে বাংলাদেশের ‘পতাকা’ও সম্মানজনক স্থানে পাশাপাশি উত্তোলন করিতে হইবে।
নোটঃ উপরিউক্ত বিধিতে উল্লিখিত সুবিধাদি কেবলমাত্র সেই সকল দেশের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হইবে যাহারা পারস্পরিক আলোচনার ভিত্তিতে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশকেও অনুরূপ সুবিধা প্রদান করিবে।
(৪) উপরিউক্ত বিধিসমূহের বর্ণনা ব্যতীত, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সুনির্দিষ্ট অনুমোদন ব্যতীত, বিদেশী রাষ্ট্রের পতাকা কোন গাড়ীতে বা ভবনে উত্তোলন করা যাইবে না।
এতসব কিছু জানা সত্তেও আমাদের দেশের কিছু সচেতন মানুষ আছেন যাঁরা হরদম অন্য দেশের পতাকা উড়িয়ে যাচ্ছেন। অসচেতন যারা তাদের কথা না হয় নাই বা বললাম। তারা একবারের জন্যও ভাবেন না মানুষ পতাকা উত্তোলন করে কেন! ভাবতে অবাক লাগে পতাকা উত্তোলনের মত এমন একটা সেনসিটিভ বিষয়কে অনেকেই খেলার অংশ হিসেবে ধরে নিয়েছে। তাঁরা একবারও বুঝার চেষ্টা করেন না যে ‘কোন দেশকে সাপোর্ট করা আর সেই দেশের পতাকা ঝুলিয়ে রাখা এক জিনিষ নয়। মজার বিষয় কি জানেন? যাদের পতাকা তাঁরা উড়িয়ে দেশের রঙ চেইঞ্জ করে ফেলছেন তারা [ঐসব দেশগুলোর অনেকে] আদৌ বাংলাদেশ নামে যে একটি দেশ আছে তাও জানে না!
এই প্রসঙ্গে ছোট্ট একটা ঘটনা না বললেই নয়,
আমার আব্বু গত বছর দুয়েক আগে লন্ডন গিয়েছিলেন ভাইয়ার কাছে। সেখানে এক ব্রিটিশ নাগরিকের সাথে কথোপকথনের এক পর্যায়ে ঐ ভদ্রলোক আব্বুকে জিজ্ঞেস করলেন
“Where are you from?
আব্বুঃ I am from Bangladesh.
ব্রিটিশ নাগরিক: Bangladesh?!! Is it a part of India?
চিন্তা করেন সে ভদ্রলোক এখনো জানেই না যে বাংলাদেশ নামে একটা দেশ আছে। আর আমরা?
বলতে পারেন ভাই সব জায়গায় দেশ প্রেম খাটায়েন না। কিছু জায়গা আছে যেখানে একটু ছাড় দিতে হয়। মানে মাঝে মধ্যে একটু স্পোর্টসশীপ মেন্টালিটি নিয়ে চলতে হয়। তাদের সাথে আমার বিন্দু মাত্র দ্বিমত নেই। স্পোর্টসশীপ মেন্টালিটি নিয়ে চলতে হয় চলেন আমার কোন সমস্যা নাই। তবে আমার একটাই অনুরোধ “ খেয়াল রাখবেন খালাকে সম্মান দিতে গিয়ে যেন “মা”র অপমান না হয়।“
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে মে, ২০১৪ রাত ১০:৪০