somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মিসির আলী। আপনি কে? ( চার পর্বের ১ম পোস্ট)

১১ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দরজা খুলতেই তিনি হাসি দিলেন। মিসির আলি!!! একপাশ ফিরে দাড়িয়েছেন। মিসির আলীকে আমি দেখিনি। তার সম্পর্কে বইতে পড়েছি। কিন্তু মিসির আলীকে আমি চিনতে পারছি। কোন অসুবিধা হচ্ছে না। তিনি আমার দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসলেন। সম্ভবত আমার হ্যালুসিনেশন হচ্ছে। আমি কিছুটা দ্বিধায় আছি। লোকটা আসলে কে? ঘোর কাটাতে বললাম- আপনি?
- আমি মিসির আলী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খন্ডকালীন শিক্ষক।
তিনি যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং তার নাম যে মিসির আলী সেটা আমি জানি। কিভাবে জানি সেটা বুঝতে পারছি না। তিনি যে আমার কাছে এসেছেন সেটা বুঝতে পারছি। তবু বললাম- কাকে চাচ্ছেন?
কাকে চাচ্ছেন বলার সময় ভুরুটা কুচকে দিলাম। ভান করছি, আমি তাকে চিনতে পারিনি। এসব উপস্থিত অভিনয়ে আমার দক্ষতা প্রশ্নাতীত। আগেও এমন হয়েছে। আমার স্কুল জীবনের বন্ধু ফাতেমা, আমরা তাকে ডাকতাম ফাতু। একদিন নিউমার্কেটের মোড়ে ফাতুর সাথে দেখা।
ফাতু গলা ফাটিয়ে ফখরুল ফখরুল বলে চিৎকার করছে। দৌড়ে আমার কাছে এল। পেছন পেছন দৌড়াচ্ছে ফাতুর স্বামী। সে আমার দিকে তাকিয়ে বলল- পাগলা কেমন আছিস? ফাতু স্বামীর বাহু ঝুলগ্না।
- দেখলা এই হচ্ছে আমাদের পাগলা।
আমি তার দিকে তাকিয়ে বললাম আমি তাকে চিনি নাই। আমি খুব বিনয়ের সাথে বললাম- আপনি বোধহয় ভুল করছেন। আমি ফখরুল না। ফাতুর স্বামী তার দিকে বিব্রত চোখে তাকিয়ে আছে।
-তুই ফখরুল না?
আমি আরো দক্ষতায় বলি- আমি আমজাদ।
সত্যিই আপনি ফখরুল না?
তুই থেকে ফাতু আপনিতে উঠে এসেছেন। আমার অভিনয় ভালো হচ্ছে। ফাতু কেঁদে ফেলে অবস্থা। তার নেত্রনালী দুটো হচ্ছে ঢাকা ওয়াসার লাইন। ড্রেনেজ ব্যবস্থা ভালো। অল্পতেই গলগল করে পানি বেরোয়। তার চোখের দিকে না তাকিয়ে হাটলাম। ওয়াসার চোঙ্গার দিকে তাকিয়ে থাকার মানে হয় না।

মিসির আলী একগাল হাসলেন। বিভ্রান্ত করা হাসি। এটা তার বিনয় নয় অভিনয়। সংলাপহীন অভিনয়। এক হাসিতে অনেক কিছু বোঝানো যায়। আমাকে পাশ কাটিয়ে তিনি দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকলেন।

মিসির আলী কিভাবে এলেন, কেন এলেন ওটাই বুঝতে পারছি না। মিসির আলীকে ব্যাপারটি জিজ্ঞেস করলে কেমন হয়? সেটাও কী ঠিক হবে? মিসির আলী নিজেই এখন একটা সমস্যা আমার জন্য। সমস্যাকে সমস্যার কথা জিজ্ঞেস করাটা ঠিক হবে?

- স্যার আমি একটু দ্বিধায় আছি। আপনি কি বুঝতে পারছেন? নিশ্চয়ই বুঝতে পারার কথা। আপনি মিসির আলী। মিসির আলী সমস্যা আগে থেকেই বুঝে ফেলবে এটাই স্বাভাবিক।
মিসির আলী হাসলেন। হা হা হা হাসি। সম্ভবত এটাই তার জীবনের প্রথম হা হা টাইপ হাসি। এই ধরনের লোকেরা হাসে কম। ভাবে বেশী। ভাবনায় কিছু না থাকলেও কঠিন ভাব নেন তারা। সাধারনের মতো হাসাহাসি মহাপুরুষদের মানায় না। তাদের কাজ হচ্ছে কুম্ভ ধারন করা। মিসির আলী হাসছেন।
তুমি ভাবছো আমি তোমার মনের সৃষ্টি কি না? উত্তর হচ্ছে হ্যা। আমি তোমার মনে সৃষ্টি। তুমি ইচ্ছে করলে আমাকে সব্যসাচীর রুপ দিতে পার। সব্যসাচীকে চেন তো? নজরুল পুত্র সব্যসাচী না, সত্যজিতের ফেলুদা সব্যসাচী। তোমার এখন সমস্যা তাই তুমি আমাকে তোমার সামনে নিয়ে এসেছো। কারন আমাকে তোমার দরকার তাই। ঠিক বললাম?
- জানি না।
- সব জেনে যাবে। তার আগে আমার জন্য খাওয়া দাওয়ার ব্যবস্থা করো। ঢাকা থেকে সরাসরি বাসে এখানে এলাম। দুপুরে কিছু খাইনি। কিছু খেতে হবে। দুজনে মিলে হোটেলে খাওয়া যায় । তবে তুমি তো আবার হোটেলের খাবার খেতে পারো না। আমি একা হোটেলে খেয়ে ফেলাও ভদ্র দেখায় না। কি বলো?

মিসির আলী সাহেবের কথা শুনে মনে হচ্ছে আমি জানি তিনি আসবেন। কিন্তু আসলেই তা না। তিনি মেন্টাল গেম খেলছেন আমার সাথে? হতে পারে। লোকটা কে?
- স্যার আমি যে, হোটেলে খাইনা আপনাকে কে বলল?
- তুমি ব্যাচেলর থাকো । একা । এখান থেকে কিচেন রুম দেখা যাচ্ছে। হাড়ি পাতিল দেখে মনে হচ্ছে নিয়মিত রান্না হয় এবং তুমি নিজেই রেধে খাও। সম্ভবত হোটেলের খাবার পছন্দ করো না তাই নিজে রান্না করো। তোমাকে তুমি বলে বলছি কিছু মনে করো না।
- না স্যার।
- এখন যাও দুটো ডিম নিয়ে এসো। আমি ভাত চড়িয়ে দেই। ভাত রান্না করতে করতে কথা বলবো।
- স্যার আপনি তো আমার মনের সৃষ্টি। তাহলে ভাত রান্না ব্যাপারটা কিভাবে হবে? আমি অল্প বেতনের চাকুরী করি। দুজনের ভাত রাঁধলে নস্ট হয়ে যাবে । আপনার অস্তিত্ব নেই। আপনিতো খেতে পারবেন না।
- আমার সব কথা তোমাকে বিশ্বাস করতে বলেছে কে? আমি মোস্তাককে টাকা দিয়ে এসেছি। ডিম নিয়ে এসো। আমি এই ফাকে তোমার সমস্যাটা নিয়ে একটু ভাবি।

(চলবে)
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের সেকাল এবং একালের ঈদ

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ৩১ শে মার্চ, ২০২৫ ভোর ৪:১৩



কানাডার আকাশে ঈদের চাঁদ উঠেছে কিনা সেটা খুঁজতে গতকাল সন্ধ্যায় বাসার ছাদে বা খোলা মাঠে ছুটে যাইনি। শৈশবে সরু এই চাঁদটা আকাশে দেখতে পেলেই দেহকোষের সবখানে একটা আনন্দধারা বয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাঁটুতে ব্যথা, তাই সুঁই এ সুতা লাগানো যাচ্ছে না

লিখেছেন অপলক , ৩১ শে মার্চ, ২০২৫ ভোর ৪:৩৭

শুরুতেই একটা কৌতুক বলি। হাজার হলেও আজ ঈদের দিন। হেসে মনটা একটু হালকা করে নেই।

"কোন এক জায়গায় স্বামী স্ত্রী ঘুরতে বেরিয়ে বাইক এক্সিডেন্ট করে। জ্ঞান ফিরলে স্বামী নিজেকে হাত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঈদ মোবারক!

লিখেছেন নাহল তরকারি, ৩১ শে মার্চ, ২০২৫ দুপুর ২:০৪



ঈদ মোবারক!

ঈদ উল ফিতরের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন! এক মাসের সংযম ও আত্মশুদ্ধির পর এসেছে খুশির ঈদ। ঈদ মানেই আনন্দ, ভালোবাসা ও একসঙ্গে থাকার মুহূর্ত। আসুন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

গ্লোবাল ব্রান্ডঃ ডক্টর ইউনুস....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ৩১ শে মার্চ, ২০২৫ বিকাল ৪:৫৯

গ্লোবাল ব্রান্ডঃ ডক্টর ইউনুস....

রাজনৈতিক নেতাদের সাথে, ক্ষমতাসীনদের সাথে তাদের কর্মী সমর্থক, অনুগতরা ছবি তুলতে, কোলাকুলি করতে, হাত মেলাতে যায় পদ-পদবী, আনুকূল্য লাভের জন্য, নিজেকে নেতার নজরে আনার জন্য। আজ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছবির ব্যক্তিটি কোন আমলের সুলতান ছিলেন ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ৩১ শে মার্চ, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪১



বাংলাদেশে এবার অভিনব উপায়ে ঈদ উৎসব উদযাপন করা হয়েছে। ঈদ মিছিল, ঈদ মেলা, ঈদ র‍্যালী সহ নানা রকম আয়োজনে ঈদ উৎসব পালন করেছে ঢাকাবাসী। যারা বিভিন্ন কারণে ঢাকা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×