১৯৯৪-৯৫ সালের কথা। ইন্দিরা রোডে দি সেইফওয়র্ক্স নামে একটি সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠানে মাঝেমধ্যেই ঢাউস আকারের একটি কম্পিউটার নিয়ে হাজির হতো গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি স্কুলের এক ছাত্র। কোনো গেম বা মজার কোনো সফটওয়্যার নয়, সে আসত প্রোগ্রাম লেখার সফটওয়্যার কম্পিউটারে ভরে নিতে বা কোনো সমস্যা নিয়ে কথা বলতে। কিশোর বয়সেই সে এক বাঘা কম্পিউটার প্রোগ্রামার। সেই স্কুলছাত্র ওমর আল জাবির এখন ব্রিটিশ টেলিকমের (বিটি) সফটওয়্যার-অ্যাজ-আ-সার্ভিসের (স্যাস) চিফ আর্কিটেক্ট। খুব রাশভারী পদ, কিন্তু ওমরের বয়স এখন মাত্র ৩১ বছর। তিন বছর আগে ব্রিটিশ টেলিকমে যোগ দিয়েছেন ওমর আল জাবির। এর অঙ্গপ্রতিষ্ঠান বিটি রিটেইলের মাধ্যমে বিটি ইংল্যান্ডে ইন্টারনেট, টিভি, ফোন, সফটওয়্যার ও তথ্যপ্রযুক্তি সেবা দেয়। এই সেবা দেওয়ার জন্য যত কম্পিউটার সিস্টেম রয়েছে সেগুলোর স্থাপত্যশৈলী তৈরি, দেখাশোনা, রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব ওমর আল জাবিরের ওপর। নিজের কাজ সম্পর্কে বলেন, ‘সফটওয়্যার আর্কিটেক্টরা সফটওয়্যারের প্রতিটি খুঁটিনাটি ডিজাইন করে প্রোগ্রামার বা সফটওয়্যার নির্মাতাকে বলে দেয় কীভাবে সেটি বানিয়ে, পরীক্ষা করে গ্রাহককে দিতে হবে। আমার কাজ হচ্ছে, এই প্রতিষ্ঠানের সফটওয়্যার আর্কিটেক্টদের প্রধান হিসেবে তাদের দলটাকে চালানো।’ ২০০৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রকাশনা সংস্থা ও’র্যালি বিল্ডিং আ ওয়েব ২.০ পোর্টাল উইথ এএসপি ডট নেট ৩.৫ নামে ওমরের লেখা বই প্রকাশ করে। এই বই পড়ে ব্রিটিশ টেলিকমের একজন পরিচালক ওমরকে আমন্ত্রণ জানান কিছু সফটওয়্যার সিস্টেম তৈরি করে দিতে। ওমর বলেন, ‘তিন মাসে একটি সিস্টেম তৈরি করে দিই, যার জন্য বিটি একটি বিরাট কাজে জিতে যায়। তারপর আমাকে চিফ আর্কিটেক্ট বানানো হয়।’ বেশ কয়েক বছর আগে ‘পেইজ ফ্লেক্স’ নামে একটা বিশেষ ওয়েবসাইট (যা স্টার্ট-আপ পেইজ নামে পরিচিত) প্রযুক্তি দুনিয়ায় ঝড় তোলে। এর নির্মাতা ওমর আল জাবির। স্টার্ট-আপ পেইজ হচ্ছে একধরনের ওয়েবসাইট, যেখানে ব্যবহারকারী নিজেই ঠিক করে দিতে পারবেন কোন ওয়েবসাইট থেকে কী তথ্য নিয়ে এই সাইটের কোথায়, কখন, কীভাবে দেখাতে হবে। প্রতি ১০ মিনিট পর পর ব্যবহারকারীর ওয়েবসাইটকে হালনাগাদ তথ্য দিয়ে সাজিয়ে দেয় এই পেইজ ফ্লেক্স। একজন জার্মান বিনিয়োগকারীর সহায়তায় ২০০৫ সালে পেইজ ফ্লেক্স চালু করেন ওমর। বললেন, ‘২০০৬ সালে গুগল, ইয়াহুকে হারিয়ে দিয়ে এক নম্বর “স্টার্ট পেইজ” ওয়েবসাইটের পুরস্কার পাই আমরা। দুই বছরের মধ্যে আমরা প্রায় ২০ জন বাংলাদেশি, দুজন জার্মান ও পাঁচজন মার্কিন নাগরিকের একটি কোম্পানিতে পরিণত হই। ইংল্যান্ডের বিখ্যাত বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান বেঞ্চমার্ক ক্যাপিটাল এতে ৫০ লাখ ডলার বিনিয়োগ করে।’ ২০০৮ সালে ই-ইউনিভার্স এই সাইট কিনে নেয়। পরে নিউজ করপের কাছে এটি ৬৪ কোটি ডলারে বিক্রি করে ওই প্রতিষ্ঠান। ওমর আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ (এআইইউবি) থেকে কম্পিউটার বিজ্ঞানে স্নাতক ডিগ্রি নেন। এখন অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে সফটওয়্যার প্রকৌশলে স্নাতকোত্তর পর্যায়ে পড়ছেন। একই সঙ্গে ডিগ্রি নিচ্ছেন ইসলামি শিক্ষা বিষয়েও। তাঁর স্ত্রী সাকীও একজন তথ্যপ্রযুক্তিবিদ। তিনি সফটওয়্যারের মাননিয়ন্ত্রণ প্রকৌশলী হিসেবে কাজ করেন। কম্পিউটার প্রোগ্রামিংয়ের শুরুটা নিয়ে ওমর আল জাবির বললেন, ‘তখন আমার বয়স ছিল নয় বছর। সে সময় মাসিক কম্পিউটার জগৎ পড়ে আমার মাথা ঘুরে যায়। তার পর থেকে কম্পিউটার নিয়ে পড়াশোনা শুরু করি।’ ১০ বছর বয়সে বাংলাদেশের প্রথম প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতায় ছোটদের মধ্যে তিনি শ্রেষ্ঠ প্রতিযোগীর পুরস্কার পান। এরপর নটর ডেম কলেজের বার্ষিক সফটওয়্যার মেলায় ওমরের তৈরি সফটওয়্যারগুলো পর পর তিন বছর প্রথম পুরস্কার পায়। সেই সময় সম্পূর্ণ বাংলায় চারটি সফটওয়্যার নিয়ে একটি সিডি বানিয়ে (অবসর সিডি) বিক্রি করেন ওমর, সেটা ছিল তাঁর প্রথম ব্যবসা। মাত্র ১৫ বছর বয়সে প্রোগ্রামার হিসেবে ঢাকার একটি প্রতিষ্ঠানে যোগ দেন। তাঁর নিজের নয়টি ওপেন সোর্স প্রকল্পও আছে (http://www.omaralzabir.com)। ওমর বলেন, ‘বাংলাদেশে প্রতিভার কোনো অভাব নেই। এত বাধা, এত সমস্যার পরও বাংলাদেশ থেকে যে বড় বড় সব সাফল্যের কথা শোনা যায়, তা অবাক করার মতো। ব্যক্তিগতভাবে আমি চেষ্টা করি অন্য দেশে কাজ না পাঠিয়ে বাংলাদেশে আউটসোর্সিংয়ের কাজ পাঠাতে। বাংলাদেশে কাজ করার নানা সমস্যা। তার পরও মানুষের চেষ্টার কোনো অভাব নেই।’
লেখাটি প্রথম প্রকাশিত হয় প্রথম আলো
২৯ জানুয়ারি, ২০১৩
ইসলামের জন্য উনার কিছু কাজ-
১। http://quranerkotha.com/
২। http://alquranu.com/