অভিশাপে লাভ ক্ষতি পর্ব ০১ Click This Link
অভিশাপে লাভ ক্ষতি পর্ব ০২ Click This Link
নেয়ামুলের কাম বা অকাম যাই বলা হোক তা হল পুরা জেলা ঘুইরা এর কথা ওর কানে লাগানো। এই জন্যে লকেরা ওকে বলে বিবিসি। নেয়ামুলকে ডেকে পাঠায় হাজী কলিম। ভালো মন্দ কিছু খাইয়ে বলেঃ
ঐ আজাদের খবর কিরে? শরিফ যে এই গেরামে কত কি করতাছে হে জানে? মসজিদের সভাপতিও হইবো। মাটি দিবো রহিম টাকা দিবো শরিফ। আজাদের টাকা না দিয়া শরিফ মসজিদের পিছনে টাকা দেয় ক্যামনে? আগে মাইনসের হক পরে আল্লাহর। আল্লাহ তার নিজের হক ছাইড়া দিবো কিন্তু মাইনসের হক ছারব না।
নেয়ামুলের যা কাজ নেয়ামুল তা করে। আজাদ ওর মাকে কিছু বলে না। ও নিজে শরিফের সাথে দেখা করে। আজাদকে দেখে যা বুঝার বুঝে যায়। ও দ্রুত ওর অফিসের ভিতরের কামরায় নিয়ে যায়। প্রথমে মাফ চায় তারপর বলেঃ
তোর টাকা না দিয়া আমি আল্লাহর ঘরে হাত দিমু না।
আজাদ বলেঃ
চোরের মত এই ঘরের কোনাই কইলে হবে না। সাক্ষি রাইখা কথা দিতে হবে।
আমি তোরে অমুক তারিখের আগে চার ভাগের এক ভাগ দিমু। তো তার আগে সাক্ষি দিয়া কি করবি?
আজাদ বুঝে সবই। শরিফ এবার যাবে কোথায়? এই এলাকায় তো শরিফের খালুর জন্যই ও আসতে পারে নায় এতো দিন। এবার তো সব অনুকুলে।
আজাদ চলে যায়। নেয়ামুল হাজী কলিমের কথায় আবার আজাদের বাড়ী যায়।
নেয়ামুল বলেঃ
খালি আসল নিবা কেন? সুদ চাইবানা? সুদ বাদ দাও আসলের সাথে ক্ষতিপুরন? মিয়া তুমি খালি শরিফের কাছে চাও। আমরা সবায় তোমার লগে আছি।
আজাদ মনে মনে বলে শরিফ আইজ দুই বছর ধইরা তোমাগোর গেরামে এতো দিন পর কও আমরা তোমার লগে আছি!!!
শরিফ ওর যেই মার্কেট তার থেকে আরও বড় কিছু করতে পারতো কিন্তু করে নাই।
সামনে ওর ইলেকশন করার খায়েশ। খালুরে কইতে হইবো খালু আপনে আর আমি ইলেকশনে দাড়াই। দুই জনে মিল্লা বাকি গুলানরে বহাইয়া দেই। ইলেকশন থিকা এরপর যেই জিতুক, আপনে আর আমি।
খালু শরিফের কথা শুইনা কাইত। এই দিকে নেয়ামুল আর আজাদের সাথে দেখা করে না। আজাদ শরিফের সাথে দেখা করতে গেলে শরিফ জানায় ও ওর খালু হাজী কলিমের সাথে ইলেকশন নিয়া ব্যাস্ত। আজাদ যা বুঝার বুঝে যায়।
আজাদ ভাবতে থাকে ওর মা যদি জানতো এই কয় মাসে কত কি হয়ে গেল তাহলে ওর মা কি বলতো-
আমার পোলা! আহারে আমার পোলা! কেয়ামত আইয়া গেছে! হজ কইরাও মানুষ মানুষ হয় না! চোরেরে কয় চুরি কর গিরিহস্তরে কয় ধর ধর! হাজির লিগাই আমার পোলায় ঐ পাড়ায় শরিফের কাছে টাকার লিগা যাইতে পারত না। হেই হাজী লোক পাঠাইয়া কয় 'হায় রে কয়' আজাদ তুমি তোমার টাকা চাও শরিফের কাছে, আমরা তোমার লগে আছি। হেই হাজী এহন আবার সেই শরিফের লগে ইলেকশন করে। হায়রে মজলুমের লিগা কেউ নাই। মজলুমের লিগা কেউ নাই। আমার পোলা কত কষ্ট করে আর মাইন্সে চুরি বাটপারি কইরা কি আরামে সাহেব বাবু হইয়া বহে।
কল্পনায় মায়ের নাকি সুরের কান্না হটাত মাথায় বোঝা বোঝা লাগে আজাদের। তাড়াতাড়ি সে মায়ের নাকি সুরের কান্না রেডিওর মত সুইচ টিপে বন্ধ করে দেয়।
আজাদের মায়ের দোয়া বদ দোয়ার আছর প্রভাব কারও উপর পরুক আর না পরুক মনে হয় হাজী কলিমের উপর পড়েছে। শরিফ আর হাজী কলিম মিলে যারা যারা নির্বাচন করতে চায় তাদের কাউকে টাকা দিয়ে কিনে নেই, যাকে বা যাদের কিনতে কষ্ট হয় তাদেরকে শাবানার শশুরের শক্তি দিয়ে ঠাণ্ডা করে দেয়। সব ঠাণ্ডা কিন্তু বেয়াইকে দিয়ে ভায়রার ছেলেকে ঠাণ্ডা করে কি করে! এতে বদনাম হতে পারে। কিন্তু এখন শরিফকে ঠাণ্ডা করার আসল সময়।
নেয়ামুল সিট খোজা বাদ দিয়ে বাস থেকে নেমে যায়। নেয়ামুলের নেমে যাওয়া দেখে কেউ চমকে যায়, কেউ হতাশ হয়, কেউ হাফ ছেড়ে বাঁচে।
ঐ রিক্সা যাবি ভাই? না করিস না ভাই,চল। এই বলেই রিক্সায় চেপে বসে,রিক্সা ওয়ালাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে। রিক্সাওয়ালা প্যাডেল দেয়া শুরু করতেই নেয়ামুল বলে ভাই শুন দ্রুত প্যাডেল মার। আমি আছিলাম বাসে। বাস হালায় চলতাছে পোয়াতির মত। খুব সাবধানে। চরম আস্তে।আর এদিকে মাথায় হালায় এতোগুলান কাম সিন্দাবাদের ভুতের মত চাইপা বইছে। তুই সরাসরি হাজী মোহাররমের ভিটার সামনে থাম্বি।
রিক্সাওয়ালা জিজ্ঞাস করেঃ
মামু কি হইছে? এতো তাড়াহুড়া কিয়ের?
হাজী মোহাররমের ভিটার লগেই তো আজাদ গো বাড়ী। আজাদ মেলা টাকা পায় পোলায় শরিফের কাছে। হেয় শরিফের বেশ্যা ঘরটা আছে না? ঐ যে কয় ছনঘর রেস্তোরা, হেইডাত আগুন লাগছে। আগুন ছড়াইয়া নিচ তলার কাপড়ের দোকান দর্জির দোকান সব আগুনের ভিতর। হেই আগুন মনেহয় কোন পুকুরের পানি নদীর পানিতে নিববো না কারন ঐ আগুন তো আজাদ আর আজাদের মায়ের চোখের পানিতে জইলা উঠা আগুন।
রিক্সা ওয়ালা এবার বলে উঠেঃ
আগুন থামলেই কি আর না থামলেই কি আজাদ আর আজাদের মায়ের চোখের পানিতে জইলা উঠা আগুন কি আজাদের হকের টাকা আদায় কইরা দিবার পারবো? হালায় আগুন! জালেম মজলুম কাউরেই ছারেনা! কাউরেই হে চোক্ষে দেহেনা!