ঐ রিক্সা যাইবা?
ঐ কতা কওনা কে?
মনু মিয়া রিক্সার উপর বসে বিড়িতে টান দিতে দিতে ভাবতে থাকে।
নাহ!বেলিরে এম্নি না মারলেও হইতো, ধুর! ওকি বেলিরে কম ভালবাসে। বেলিও তো জানে মনু মিয়া ওরে কত ভালোবাসে। এই ছেমড়িডার মাথায় ছিট আছে নইলে মনু মিয়া যদি এক দুই মাসে একবার বন্ধুবান্ধবদের সাথে একটু খাইতে খুইতে যায় ওর এমন কি ক্ষতি! বেলিডা যে কি! খাইয়া মাস্তি কইরা গেলে, এমনিতেই যেন মনু মিয়ার মাথাদা আউলা থাকে আর মনু মিয়া আউলা হইলেই বেলিডারও ডাবল আউলা হইতে হয়। ওর চিল্লাচিল্লি থামাইতেই, মনু মিয়ারে ধমাধম পিডাইতে হয়। আর ছেমরিডাও তহন কইয়া বহে…………।
তারপর আর কি কোন ছাড়ন আছে। ছাড়ন দেয়াডাও তহন পাপ ঠেহে মনু মিয়ার মনে। সকাল হইতেই বেলি যাইবোগা। বাপের বাড়ি যাবি ভালোভাবে যা, প্রতিবারই একই কাহিনী।
শালা রিক্সাওয়ালা নিজেরে মান্না মনে করে।
মান্নার নামটা শুনে মনু মিয়া তাকায়। উপর থেকে নিচ পর্যন্ত দেখে বুঝে, যে কতা কইতাছে হের লেভেল আর ওর রিক্সাওয়ালা লেভেল থেকে তেমন বেশী ফারাক নাই।
মনু মিয়া বলেঃ
যামনা মিয়া হাইটা যাও।
আবুল মিয়ার মহাজন এম্নে খারাপ না। একটু ঢিলা বা পিছলা। হের বেতন দেয়ার সিস্টেম আজিব। এইবার যদি ৫ তারিখে দেয় তো সামনের বার দিবো ১০ তারিখ তার পরের বার দিবো ১৫ এম্নিতে ২০, ২৫,৩০।
আবুল মিয়ার মনে হয়, আসলে মহাজন বছরে ১১ মাসের বেতন দিয়া কারখানা চালাইতে চায়। আর কেউ চাকরি ছাইড়া দিলে মহাজন তারে কয়, টাকা নিবা চাকরি কইরা, চাকরিতে থাইকা, চাকরিতে না থাকলে আমি তোমাগোর কি বাপ লাগি যে পয়সা দিমু। মহাজনরে দেখতে একটু বেকুব বেকুব লাগলেও হে একখান ‘জিনিস’। সেই ‘জিনিসে’ মাসের ১০ তারিখে আবুল মিয়ারে বেতন দিছে। আবুল মিয়ায় ভয় কম কারন আবুল মিয়ার বাড়ী ওর বইনে কাম করে। যদি মহাজন উল্টাপাল্টা করে, তাইলে বইনরে কইলে, বইনে মহাজনের বউরে কইবো আর মহাজনের বউ তো নওয়াবের ঘরের বেটি, নওয়াবের ঘরের বউ। কোন কাম হে নিজ হাতে করবার চায়না। বইনে ছুটি চাইলে কয় ছুটি নাই। কিন্তু ছুটি চাওয়ার পর, বইনের আদর বাইরা যায়গা, হেই ফল দেয় তো বাসায় নিয়া যাওয়ার লিগা ভাত মাছ মাংসও ভি মাঝে মাঝে দিয়া দেয়।
এহন বইনে ছুটি দরকার হইলে পাশের ঘরের কাউলার মারে দিয়া নিজে ছুটিতে যায়। তয় ছুটি শেষে বইনে মহাজনের বারীতে আইলে আইজকাল মহাজনের বউ কয় এম্নিতে কাম করলে চলবো? কাম না করলে লোকের অভাব নাই, কইবা খালি। আরকি কাউলার মারে দেইখা গরম দেহায় কিন্তু বইনে কয়ঃ হ আমারে বাদ দিয়া কাউলার মারে নিবো! কাউলার মায়ের কাম আর আমার অকাম সমান। এই কইয়া বইনে দেয় হাইসা আমি না বুইযা কাউলার মারে দেই?
আজকে বেতনটা হাতে নিয়া দেখি সব নোট নতুন ১০০ টাকার। মহাজন মনে হয় আইজকা ব্যাঙ্কে গেছিল। মেজাজ টা পুরাই ফুরফুরে হইয়া গেল। টাকা নিয়া কারখানা থিকা বাইর হইয়া প্রথমে ঢুকলো বিড়ীর দোকানে। দোকানে ঢুইকাই কয় মামা ৩ টা বেনসন ৩ টা গোল লিফ দাও। বেনসনের প্যাকেটে দিও। দাড়াও মামা এক কাপ গরম গরম চা দিও।আউজকা চায়ের ধুয়ার লগে সিগারেটের ধুয়ায় প্যাচ লাগামু।
দোকানদার বলেঃ
মামা আউজকা বেতন পাইছো? পুরাই ভাবে আছো।
চা আর সিগারেটের ধুয়ায় প্যাচ লাগানো শেষে আবুল মিয়া প্রতি দিনের মত হাটা ধরে। হাটার পথ প্রায় পনে এক ঘণ্টা সময়। আজকে ১০ মিনিট হাটার পর আবুল মিয়ার পায়ে যেন জং ধরে যায়। এই জং কোন গিরিজ বা মবিলে দূর হবার নয়। এখনো প্যাকেটে ৫ টা সিগারেট শাহেনশাহ্র মত শুইয়া আছে। একটা রিক্সায় উইথা পায়ের উপর ঠেঙ তুইলা বেনসন বা গোল লিফের হগায় চুমু দিতে দিতে কইব ঐ রিক্সা ডাইনে যাও মামা রিক্সা ডা ভি এহনো সামলাইতে পার না আজিব।
এবার আবুল মিয়া ক্ষেপে উঠে
ঃ শালা শুয়োরের বাচ্চা। নবাব রেস্ট লয়। রেস্ট লইলে গেরেজে রিক্সা রাইখ্যা বাইত্তে গিয়া নে।
মনু মিয়া আবুলের কথা শুনে তারপরও সে আর কিছু বলে না বা মনু মিয়া কিছু বলার আগেই আবুল পাশের গলিতে ঢুকে পড়ে।
মনু মিয়া হাতের বিড়িটাতে একটা আখেরি টান মেরেই রিক্সা নিয়ে সামনের গলিতে মোড় নিতে যেয়েই একটা মাইক্রো বাসের গায়ে নিজের রিক্সাটা লাগিয়ে দেয়। মনু মিয়া দেখে মাইক্রো ভর্তি মানুষ। এর মাঝে বেডা মানুষই বেশী।
মাইক্রোর ড্রাইভার এবার মনে হয় গাড়ী থেকে বাইর হইয়া চড় থাপ্পড় কিছু একটা দিবো। মনু মিয়া ভাবে দিক কিছু কেয়ার করিনা বেলিডার চোখের পানির দাম আছেনা।
এই মুহূর্তেও বেলি মনু মিয়ার মাথায় আউলা করেই আছে।কিন্তু মাইক্রোর ক্ষেত্রে অন্য একটা ব্যাপার ঘটলো। মাইক্রোতে এতো বেডা মানুষ লগে এক দুইডা মাইয়া লোক মাত্র তারপরেও ড্রাইভার বাইর হইয়া গরিবের ঝাল গরিবের উপর ঝারলো না। মনে হয় গাড়িতে ঝামেলা আছে কোন।
ড্রাইভারের পিছনের সিটে বসা আজম মিয়া মাইক্রোর সবাইকে গল্প বলতে থাকে তার ভাষা বেশ ভদ্র।
এই পুরনো টাউনের মধ্যে আমি এই এলাকাটায় ঢুকতে চাই না। দুই মহিলার একজন হাসতে হাসতে জীজ্ঞাস করেঃ
ঝামেলা কি নিয়ে পানি মাল নাকি মেয়ে মানুষ?
আজম বলে ঃ
এই তো সামনে সোহাগের দোকান। সোহাগ আমি আরও কয়েকজন রাতে এক সাথে বোতল নিয়া বসছি। আমি প্লান করে পাশের রুমে মুনাকে নিয়ে ব্যাস্ত হয়ে পড়লাম। আমার ইচ্ছা ওরা মাতাল হওয়ার পরে যা করার করুক আমি কন্ট্রোলে থাকি। আমি সোহাগ আর অন্যদের মাতলামির আওয়াজে বাড় হলাম। সবারে বললাম ধোলাই খালের অমুক ম্যাসে বেইলি রোডের ‘জিন্স টিসার্ট’ আছে।
কোন শালায় বলে উঠে ঐ রুমে মুনা আছে। আমি বললাম মুনা পুরান মাল ধোলায় খালে নতুন ঝকঝকে।
সোহাগ বলে ঐ আমার বাড়ীতো সামনেই। ধোলাই খালে সব লক্কড় ঝক্কর নতুন কোন পার্টস নাই। চোরেরা সব তাবলীগে গেছেগা।চুরি করবো এহন কেডা? আমি তো বুঝই সব গুলা এখন পুরো মাতাল। এখন মজা হবে।
আমি মুনাকে রেখে ওদের নিয়ে গাড়ীতে করে বাড় হলাম। গরমের সময় ধোলাই খালে পানি হাঁটু পর্যন্ত।
পানি সব ময়লায় কারনে জমে আলকাতরার মত হয়ে আছে। আমি নাক বুজে মাতালদের নিয়ে দাঁড়ালাম খালের এক পাশে। ঐ পারে মনে হয় ‘অন্য কোম্পানির’ কোন ‘পার্টস’ দাড়িয়ে ছিল। আমি মজা নেয়া শুরু করলাম সোহাগকে দিয়ে কারণ সোহাগের বাসা সামনে আর সোহাগের সব গরম এই পুরনো টাউনেই।
সোহাগ ঐ যে বেইলি রোডের ‘পার্টস’। সোহাগ আবার ডায়ালগ দেয় হাঃ হাঃ হাঃ আজম নিজেই হাসে তার কথায় সোহাগ বলে ধোলাই খালের চোরেরা সব তাবলীগে গেছে সব পার্টস এখন লক্কড় ঝক্কর। গিরিজ লাগবো মবিল ভি লাগবো। গরম লাগে মামা গরম লাগে।
আজম বলে মামা সামনে সুইমিং পুল। পুলের ওপাড়েই বেইলি রোড। তুমি প্যান্ট আর সার্ট খুলে সুইমিং পুলে সাতার কেটে তারপর বেইলি রোডের ‘পার্টসের’ দোকানে যাও। সোহাগ ওর প্যান্ট খুলে আগে এরপর পর খুলে সার্ট। সোহাগ পুরাই মাতাল। মাতাল শুধু একটা হলুদ হাঃ হাঃ হাঃ হলুদ আন্ডারপ্যান্ট একটা কালো মশারী স্যান্ডো গ্যাঞ্জি পরেই দিলো ঝাপ ধোলাই খালের আলকাতরায়।
মাইক্রোর সবায় দেয় হেসে। হাঃ হাঃ হাঃ
আমি সোহাগের প্যান্ট চ্যাক করে দেখি ‘বাবা’ গড়াগড়ি খাচ্ছে ওর পকেটের একটা প্লাস্টিক প্যাকেটে।
আমি তো সরিয়ে দিলাম পুরা ৫০এর উপর দাম। আমি মাতালদের মাঝে যারা কম মাতাল তাদের দুইজনকে নিয়ে ভেগে আসলাম। হাঃ হাঃ হাঃ সোহাগের সাথে আমার কোন খারাপ সম্পর্ক ছিল না কিন্তু সেদিন কেন যেন কাউকে অপমান করতে মন চাইছিল। তবে সোহাগ পুরনো টাউনের ছেলে ও কি সেই সব ভুলতে পারে। সকাল ৭ টা পর্যন্ত নাকি ধোলাই খালের পাড়ে ঘইন্না বা সিলভার কার্প মাছের শুঁটকির মত পড়ে থাকলো। পরে শুনেছি এই নিয়ে ওর সংসারেও হাঃ হাঃ হাঃ তো বল এখন ও যদি আমাকে দেখে কি বলবে, কি করবে?
মেয়েদের অন্যজন বলে
ঃ আজম ভাই আপনাকে এবার সোহাগ ঘইন্না বা সিলভার কার্প মাছের শুঁটকির মত শুকাতে দিবে বা ঝুলিয়ে রাখবে গরমের দুপুরে, পুরনো টাউনের কোন ছাদে। সেখানে আপনার বাঁচাও বাঁচাও আওয়াজ কাকেদের কা কা শব্দের মাঝেই হারিয়ে যাবে। মেয়েটা শুদ্ধ ভাষায় কথা বলেনা কিন্তু সে আজমের সাথে কয়েক দিন কয়েক রাত কাটিয়ে কথা বলার ঢঙে বেশ পরিবর্তন এনেছে বা আনতে পেড়েছে বুঝা যায়।
এবার ড্রাইভার মাইক্রোটাকে একটা টান দিয়ে একটি গালি ছুরে দেয় মনু মিয়া জন্য।
ঐ গালিটা শুধু মনু মিয়ার কান দিয়ে নয় সারা শরীর দিয়ে শরীরের প্রতিটা রোমকোষ দিয়ে সূয়ের মত ফুটো করে ঢুকে।
খাঙ্কির পোলা!
এবার আর মনু মিয়া নিজেকে ধরে রাখতে পারেনা।নায়ক মান্নার মত রিক্সা নিয়ে মাইক্রোর পিছু নেই আর চিল্লাতে থাকে।
হ আমার মায় খাঙ্কি। হ আমি খাঙ্কির পোলা। আমার মায়তো খাঙ্কি হইয়াও আমারে রাইখ্যা যায়নাই, আমারে বড় করছে। আর যারা আমার বাপ হেই ভদ্রলোকেরা কই? তোর ভদ্রলোকের বাচ্চা! গাড়ী থিকা নাম!