somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মুখারী হাদীস !

২৮ শে এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১২:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



হাদীস গ্রন্থ সমূহের মধ্যে “সহীহ বুখারী” সবচেয়ে বেশি পরিচিত।
এর মর্যাদা সম্পর্কে বলা হয় যে,
-আসমানের নিচে এবং আল্লাহর কিতাব (অর্থাৎ কোরানের) পরে মুসলিমদের জন্য সবচেয়ে বেশি নির্ভরযোগ্য কিতাব।
-
আপনি কি জানেন যে বুখারীর বিপরীতে অন্য একটি হাদীস গ্রন্থ মুসলিমদের মাঝে বহুল প্রচলিত। আর তা হচ্ছে “মুখারী হাদীস”। এই গ্রন্থের হাদীসগুলো কোনো হাদীসের কিতাবে পাওয়া যায়না, খালি কিছু মূর্খ মুসলমানের মুখে মুখে প্রচলিত, আর পাওয়া যাবে ফাযায়েলের বিভিন্ন কিতাব সমূহে, বিভিন্ন ওযীফার কিতাব যেমন- বারোচান্দের ফজিলত, নেয়ামুল কোরআন, বেহেশতী জেওর ইত্যাদি নামে কিছু বেদাতী মাওলানাদের বই পুস্তকে।

উদাহরণ হিসেবে নিচে কয়েকটি ‘মুখারী হাদীস’ পেশ করা হলো -
■ কেউ যদি ৭০ হাজার বার কালিমা লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ পড়ে বা পড়ে মৃত ব্যক্তির জন্য উৎসর্গ করে তাহলে সে বা ঐ মৃত ব্যক্তি জান্নাতে যাবে। [ফাজায়েলে তাবলীগ পৃঃ ৪৪১]
→এটা একটা জাল হাদীস। তবে হ্যাঁ কালেমা তাইয়েবা পড়ার অনেক ফযীলত আছে কিন্তু ঠিক এই কথাটি রাসূলুল্লাহ ﷺ হতে প্রমানীত নয়। শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়্যা বলেন, এটি সহীহ বা জয়ীফ কোনো সনদেই বর্ণিত নেই। [মাজমুয়ায়ে ফাতাওয়া ইবনে তাইমিয়্যা ২৪/৩২৩, প্রচলিত জাল হাদীস ১৯৩]

■ নামাজ মুমিনের মেরাজ স্বরূপ।

জাল হাদীস, এর কোন নির্ভরযোগ্য সনদ নেই (প্রচলিত জাল হাদীস, হযরত মাওলানা মুহাম্মদ জুনাইদ বাবুনগরী, পৃঃ১৯৫)
ইসলামের প্রথম দিকে সাহাবীরা হাতের নিচে মূর্তি নিয়ে নামায পড়তো, আর এই জন্য রাসুল ﷺ রুকুর আগে ও পরে রউফুল ইয়াদাইন করতেন।
সাহাবীদের সম্পর্কে মিথ্যা অপবাদ দেয়া এই কথাটি জাল, কোনো হাদীস গ্রন্থে নেই।

সাদ্দাদ দুনিয়াতে জান্নাত বানিয়েছিলো।
জাল গল্প, বিষাধসিন্ধু ছাড়া অন্য কোন হাদীসের পুস্তকে এমন কোন কথার অস্তিত্বই নেই।

এক ওয়াক্ত নামায কাজা করলে ৮০ হোকবা বছর আগুনে পুড়তে হবে।
ফাজায়লে নামাজ ও আরও কিছু বিত’আতী কিতাব ছাড়া কোন হাদীস গ্রন্থে এই হাদীস দেখা যায় না।

চিল্লায় গিয়ে ১ টাকা দান করলে ৪৯ কোটি টাকার নেকী পাওয়া যায়।
তাবলীগ জামায়াতের উদ্ভাদিত ভিত্তিহীন ও সনদবিহীন জাল কথা। তবে ২টি জেইফ হাদীসের ফজিলতকে গুনে করে যারা এই হিসাবকে জায়েজ বানানোর চেষ্টা করেন; তাদেরকে কাল কেয়ামতের দিন জবাব দিতে হবে যে, এই গুন করার অধিকার তারা কোন ওহীর মারফত পেলো ?

যার কোন পীর নাই তার পীর শয়তান।
এটা পীর সূফীদের বানানো এটা একটা জাল হাদীস। (খাইরুল ফাতওয়া, খন্ড ১, পৃঃ৩৬১; ইমদাদুল ফতাওয়া খন্ড-৫, পৃ:২৩৬-২৩৮; প্রচলিত জাল হাদীস পৃ: ১৯১)

মুমিনের কলব আল্লাহর আরশ।
পীর সূফীদের বানানো এটা একটা জাল হাদীস।

দোলনা থেকে কবর পর্যন্ত জ্ঞান অর্জন করো।
এটাও একটা জাল হাদীস। এটা মূলত আরবী ভাষার একটা প্রবাদ।

আমার উম্মতের আলেমগনের মর্যাদা বনী ইসরাইলের নবীগণের তুল্য।
এটাও একটা জাল হাদীস। তবে এমন একটি সহীহ হাদীস হচ্ছে, আলেমরা হল নবীগণের ওয়ারীশ।

আলেমদের সাথে এক মুহুর্ত কাটানো ৬০ বছরের নফল ইবাদত থেকে উত্তম, কোন আলেমের পিছনে ১ রাকাত নামায পড়া নিজে নিজে ১০০০ রাকাত নফল নামায পড়া থেকে উত্তম।
এগুলি সব জাল হাদীস। রাসূলুল্লাহ ﷺ নেককার লোকদের সাথে উঠাবসা করতে বলেছেন কিন্তু এই জাতীয় কথা উনি বলেছেন এমন কোন সহীহ হাদীস নাই!

স্বামীর পায়ের নিচে স্ত্রীর বেহেশত!
এটাও একটা জাল হাদীস। মূল হাদীস টা হল মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশত।

মসজিদে দুনিয়াবী কথা বলা হারাম, মসজিদে দুনিয়াবী কথা বললে ৪০ বছরের নেকী নষ্ট হয়ে যায়!
এটাও বহুল প্রচারিত একটি জাল হাদীস। রাসূলুল্লাহ ﷺ মসজিদে নব্বীর ভিতরেই বিচার কার্য, জিহাদ সংক্রান্ত অনেক আলোচনা করেছেন।

বিবাহিত ব্যক্তির ২ রাকাত নামাজ অবিবাহিত ব্যক্তির ৭০ রাকাত নামাজ অপেক্ষা উত্তম!
এটাও একটা জাল হাদীস।

যে নিজেকে চিনল সে তার রব কে চিনল।
কেউ কেউ এটাকে হযরত আলীর (রাঃ) এর উক্তি হিসাবে প্রচার করে থাকেন। যদিও ঐ সনদটি জাল।

যে ব্যক্তি বরকতের জন্য সন্তানের নাম মুহাম্মদ রাখবে, ঐ সন্তান ও তার পিতা উভয়েই জান্নাতে যাবে।
এটাও একটা জাল হাদীস। বরং রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন তোমরা নবীদের নামে নাম রাখ এবং আল্লাহ তায়ালার নিকট সবচেয়ে প্রিয় নাম হল আব্দুল্লাহ ও আব্দুর রহমান।

রাসূলুল্লাহ ﷺ সৃষ্টি না করলে জান্নাত জাহান্নাম দুনিয়া সৃষ্টি করতেন না।
প্রচলিত মিলাদে পঠিত সবচাইতে প্রসিদ্ধ জাল হাদীস।

সর্বপ্রথম আল্লাহ সুবহানাতায়ালা রাসূলুল্লাহ ﷺ এর নূর তৈরী করেছেন তারপর ঐ নূর থেকে দুনিয়ার সকল কিছু সৃষ্টি করেছেন, যখন আদম সৃষ্টি হয়নি তখনও আমার নূর ছিল।
এই জাতীয় সকল বর্ণনা গুলি জাল হাদীস।

মন্তব্য_____
সর্বশেষ, যারা এমন মিথ্যা হাদীস মানুষের মাঝে প্রচার করে বেড়ায় তাদের শাস্তি সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেন,
-যে ব্যক্তি আমার উপর মিথ্যা আরোপ করবে, সে যেন জাহান্নামে তার ঠিকানা খুজে নেয়। [বুখারী হা/৩৪৬১]

আল্লাহ সুবহানাতায়ালা আমাদের সকলকে জাল হাদীস বর্জন করে সহীহ হাদীস বুঝে জীবন চলার তৌফিক দান করুক।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১২:১২
৩টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কোরআন পড়বেন, ফিকাহ জানবেন ও মানবেন

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:০০



সূরাঃ ৯৬ আলাক, ১ নং থেকে ৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
১। পাঠ কর, তোমার রবের নামে যিনি সৃষ্টি করেছেন
২।সৃষ্টি করেছেন মানুষকে ‘আলাক’ হতে
৩। পাঠ কর, তোমার রব মহামহিমাম্বিত
৪। যিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

মত প্রকাশ মানে সহমত।

লিখেছেন অনুপম বলছি, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:২৭

আওয়ামী লীগ আমলে সমাজের একটা অংশের অভিযোগ ছিলো, তাদের নাকি মত প্রকাশের স্বাধীনতা নাই। যদিও, এই কথাটাও তারা প্রকাশ্যে বলতে পারতেন, লিখে অথবা টকশো তে।

এখন রা জা কারের আমলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্নমর্যাদা!

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৩

রেহমান সোবহান একজন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। তার বাড়ি থেকে বিদ্যালয়ের দূরত্ব প্রায় ৬ কিলোমিটার। রেহমান সাহেব এমন একটি বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতেন যা খুব নির্জন এলাকায় অবস্থিত এবং সেখানে যাওয়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাঁঠালের আমসত্ত্ব

লিখেছেন বিষাদ সময়, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

কাঁঠালের কি আমসত্ত্ব হয় ? হয় ভাই এ দেশে সবই হয়। কুটিল বুদ্ধি , বাগ্মিতা আর কিছু জারি জুরি জানলে আপনি সহজেই কাঁঠালের আমসত্ত্ব বানাতে পারবেন।
কাঁঠালের আমসত্ত্ব বানানের জন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। অ্যাকসিডেন্ট আরও বাড়বে

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৫৯



এরকম সুন্দরী বালিকাকে ট্র্যাফিক দায়িত্বে দিলে চালকদের মাথা ঘুরে আরেক গাড়ির সাথে লাগিয়ে দিয়ে পুরো রাস্তাই বন্দ হয়ে যাবে ।
...বাকিটুকু পড়ুন

×