আম্মাজান আয়েশা (রাঃ) হুজুরেপাক ﷺ এর এরশাদ বর্ণনা করিয়াছেন যে, জিকিরে খফি যাহা ফেরেস্তারাও শুনিতে পায় না, তাহা সত্তর গুণ বর্ধিত হইয়া যায়। কেয়ামতের দিবস সমস্ত হিসাব নিকাশ যখন শেষ হইয়া যাইবে তখন আল্লাহ পাক বলিবেন,
-অমুক বান্দার কোন আমল বাঁকী রহিয়াছে কি? তখন কেরামান কাতেবীন বলিবেন,
-আমাদের লিখিত সমস্ত আমলই আমরা পেশ করিয়াছি। তখন আল্লাহ তায়ালা বলিবেন,
-আমার নিকট তাহার এমন আমল রহিয়াছে যাহা তোমাদের জানা নাই । উহা হইল “জিকিরে খফি” অন্য রেওয়ায়েতে আছে, যেই জিকির ফেরেস্তাগণ শুনিতে পায় না উহা জিকিরে জলির উপর সত্তর গুণ বেশী ফজীলত রাখে ।
-
জিকিরে খফির ব্যাখ্যা করিতে গিয়ে কবি বলিলেন,
-অর্থাৎ “প্রেমিক প্রেমিকার মধ্যে এমন সব রহস্য রহিয়াছে যাহা ফেরেস্তাগণও জানিতে পারে না। [ফাজায়েলে আমাল, ফাজায়েলে জিকির অধ্যায়, ৩০৫পৃঃ]
■পর্যালোচনাঃ
=============
►কবিতায় যে প্রেমিক-প্রেমিকার কথা বলা হয়ে থাকে, তা আল্লাহর শানে ব্যবহৃত হইতে পারে না, কারন আল্লাহ পুরুষ নন এবং স্ত্রীও নন। তিনি প্রেমিক/প্রেমিকা হবেন কিভাবে? আল্লাহর শানে স্ত্রী বা পুংলিঙ্গ সূচক শব্দ ব্যবহার কি অজ্ঞতা ও বাতিল আক্বীদার বহিঃপ্রকাশ নয়? আল্লাহর সঙ্গে বান্দার মুহাব্বাত হতে পারে, কিন্তু ইশক হতে পারে না। কারন ইশকের মধ্যে পাগলামী আছে যা সৃষ্টি বা মাখলুকের সঙ্গে চলে। খালিক অর্থাৎ স্রষ্টার সাথে ইশক চলে না।
►দূর্বল হাদীস! পৃথিবীর কোন সহীহ হাদীসে এ বর্ননা পাওয়া যায় না।
►কোরআনের আয়াতের সাথে সাংঘর্ষিক। যেমন মহান আল্লাহ কিরামান কাতিবীন (সম্মানিত লেখকদ্বয়) সম্পর্কে বলেন,
وَإِنَّ عَلَيْكُمْ لَحَافِظِينَ ۞ كِرَامًا كَاتِبِينَ ۞ يَعْلَمُونَ مَا تَفْعَلُونَ
-অথচ তোমাদের ওপর পরিদর্শক নিযুক্ত রয়েছে। এমন কিরামান কাতিবীন (সম্মানিত লেখকবৃন্দ)। যারা তোমাদের প্রত্যেকটি কাজ জানে৷ [সূরা ইনফিতার ১০১২]
→আয়াতটি ভাল করে পড়ুন এবং বুঝুন। এখানে মহান আল্লাহ বলেছেন যে, বান্দা যেসব ‘আমল করে কিরামান কাতিবীন ফেরেস্তাদ্বয় তা সবই জানেন। আর লিখক সনদবিহীন হাদীস আর কবিতা বর্ণনার ভিত্তিতে বলেছেন ‘জিকিরে খফি’ নাকি ফেরেস্তারা জানে না।
.
মহান আল্লাহ কোরআনের অনত্র বলেন,
وَوُضِعَ الْكِتَابُ فَتَرَى الْمُجْرِمِينَ مُشْفِقِينَ مِمَّا فِيهِ وَيَقُولُونَ يَا وَيْلَتَنَا مَالِ هَٰذَا الْكِتَابِ لَا يُغَادِرُ صَغِيرَةً وَلَا كَبِيرَةً إِلَّا أَحْصَاهَا ۚ وَوَجَدُوا مَا عَمِلُوا حَاضِرًا ۗ وَلَا يَظْلِمُ رَبُّكَ أَحَدًا
-আর সেদিন আমলনামা সামনে রেখে দেয়া হবে৷ সে সময় তোমরা দেখবে অপরাধীরা নিজেদের জীবন খাতায় যা লেখা আছে সে জন্য ভীত হচ্ছে এবং তারা বলছে, হায়! আমাদের দুর্ভাগ্য, এটা কেমন খাতা, আমাদের ছোট বড় এমন কোনো কিছুই এখানে লেখা থেকে বাদ পড়েনি৷ তাদের যে যা কিছু করেছিল সবই নিজের সামনে উপস্থিত পাবে এবং তোমার রব কারোর প্রতি জুলুম করবেন না৷ [সূরা কাহাফ ৪৯]
→ আয়তাটি আবার পড়ুন এবং বুঝুন। কোরআন বলছে বান্দাগণ স্বীকার করবে যে, তাদের আমলনামা ছোট-বড় কিছুই বাদ পড়েনি, সবই তাতে আছে। আরও একটি আয়াত দেখুন।
-পড় তোমার কিতাব (আমলনামা) । আজ তোমার হিসাব গ্রহণের জন্য তুমি নিজেই যথেষ্ট। [সূরা বনী-ইসরাঈল ১৪]
→ এই আয়াতের বর্ণনামতে যদি একজন ব্যক্তি তার আমলনামার ভিত্তিতেই নিজের হিসাব করতে পারে যে সে জান্নাতী নাকি জাহান্নামী। তাহলে বলুন একজনের কিছু নেক আমল যদি আমলনামার বাহিরে থেকে যায় তাহলে সে কি তার হিসাব গ্রহণের জন্য যথেষ্ট হবে?
!
_____________________
►►এখন আপনারাই বলুন,
১। আমরা ঐ কবির(!) প্রমাণবিহীন লেখকের কথা বিশ্বাস করবো নাকি, আল্লাহর বাণী কুরআনের কথা বিশ্বাস করবো?
২। এসব কথা লেখার আগে উল্লিখিত আয়াত গুলোর কথা একবারও কি লেখকের মন পড়েনি কেন?
৩। কিতাবখানি প্রকাশের পর এত বছর যাবৎ তাবলীগী জামায়াতের কোন আমীরের নজরে তা পড়েনি কেন?
৪। যদি চোখে না দেখেই থকেন, তাহলে একমাত্র এই কিতাব তারা কেমন পড়া পড়েন ? নাকি গোঁড়ামীর কারণে তা দেখেও সংশোধন করতে পারেননি।
অতএব আপনারাই ঠিক করুন, তালিমী বৈঠকে বসে কুরআন এবং সহীহ হাদীস বিরোধী এই সমস্ত বর্ণনা শুনলে আমাদের ঈমান ভেজাল মুক্ত হবে নাকি ভেজাল যুক্ত?