আখেরী মুনাজাত!
!
উপমহাদেশীয় মুসলীম সমাজে আখেরী মুনাজাতের অভাব নাই! রমাদান মাসের শেষ জুম’আর আখেরী মুনাজাত, খতম তারাবীর দিনের মুনাজাত, তাফসীর মাহফিলের শেষ দিনের মুনাজাত... ইত্যাদি...।
আহ! আখেরী মুনাজাতের ছড়াছড়ি।
-
আখেরী মুনাজাতকে মনে করা হয় গুনাহ মাফের উসিলা। তাই তো যারা সারা মাস তারাবীতে ১ দিনও উপস্থিত হয় না, তাদেরও দেখা যায় খতম তারাবীর দিন মসজিদের সামনের কাতারে উপস্থিত। সারা বছর যারা বেনাযী থাকে তারাও থাকে আখেরী জুমায় মসজিদের প্রথম কাতারে। মজলিশ-সমাবেশের শেষদিনও একই ঘটনা, শেষদিন থাকে উপচেপড়া ভীড়।
কারন ঐ আখেরী মুনাজাত-ই। গুনাহ মাফের উসিলা বলে কথা! এই আখেরী সেই মুনাজাত আর শেষ হয় না, “আখেরী মুনাজাত” মানে “শেষ মুনাজাত” হলেও ঘুরে ঘুরে সেই মুনাজত চলে আসছে; আখের আর হয় না!
-
উপরের এই সকল আখেরী মুনাজাতকে ছাড়িয়ে গিয়েছে টংগী ইস্তিমার আখেরী মুনাজাত। মুলত ইজতেমার বিশেষ আকর্ষণ-ই হল এই আখেরী মুনাজাত!
মানুষ এখন ফরয ছালাত আদায়ের চাইতে আখেরী মুনাজাতে যোগদান করাকেই অধিক গুরুত্ব দেয়। আখেরী মুনাজাতে শরীক হবার জন্য নামাজী, বে-নামাজী, ঘুষখোর, সন্ত্রাসী, বিদ‘আতী, দুস্কৃতিকারী দলে দলে ময়দানের দিকে ধাবিত হয়। কেউ ট্রেনের ছাদে, কেউ বাসের হ্যান্ডেল ধরে, নৌকা, পিকআপ প্রভৃতির মাধ্যমে ইজতেমায় যোগদান করে।
-
স্বয়ং রাষ্ট্রপতি বঙ্গভবনে, প্রধানমন্ত্রী গণভবনে, বিরোধীদলিয় নেত্রী ও অন্যান্য মন্ত্রীগণও সেখানে গিয়ে আঁচল পেতে প্রার্থনা করেন। টিভিতে সরাসরি মুনাজাত সম্প্রচার করা হয়। রেডিও শুনে রাস্তার ট্রাফিকগণও হাত তুলে আমিন.. আমিন.. বলতে থাকে।
-
এ যেন সাওয়াবের ছড়াছড়ি, যে যতো কুড়ায়ে থলে ভরতে পারবে তার ততোই লাভ। ট্রেনের ছাদের উপর মানুষের ঢল দেখে টিভিতে সাংবাদিক ভাইবোনগণ মাথায় কাপড় দিয়ে বার বার বলেন ধর্মপ্রাণ মুসলমানগণ আজ তাদের পাপের প্রাশ্চিত্ত করতে ছুটে চলছেন তুরাগের পাড়ে! পরের দিন বড় হেডিং দেখে যারা এবার যেতে পারেননি তারা মনে মনে ওয়াদা করে বসবেন যে আগামীতে যেতেই হবে। তা না হলে পাপীদের তালিকায় নাম থেকেই যাবে, থেকেই যাবে...!
-
মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাদের পাপ মোচনের (!) জন্য কি অপূর্ব সুযোগ করে দিলেন (!)
আফসোস হয় নিজেদের বাপ দাদাদের জন্য। আফসোস হয় আজ হতে ৫০-৬০ বৎসর আগে জন্ম নেয়া ঐ মানুষগুলোর জন্য যারা এমন সুযোগ হতে বন্ঞিত হলেন। এমনকি আখেরি মুনাজাত থেকে আল্লাহর রাসুল ﷺ এবং তার সাহাবাগণ, তাবেঈ, তাবে-তাবেঈগণ এবং ইমাম আবু হানিফা (রহ.) সহ অনেক বড় বড় আলেমগণ বঞ্চিত হয়েছেন গুনাহ মাফের এমন সুবর্ণ সুযোগ হতে!
-
মন্তব্যঃ
====
কি সর্বনাশা বিদ‘আত আমাদের কুরে কুরে গ্রাস করছে তা আমরাও জানি না! আরাফার মাঠে হজ্জ এর সময় লক্ষ লক্ষ লোক সমাগম হয়। সেখানে কেন সম্মিলিত আখেরী মুনাজাত হয় না? যেখানে আল্লাহ নিজে হাযির হতে বলেছেন, যেখানে তিনি অগণিত মানুষকে ক্ষমা করে দেন। এই প্রশ্নের জবাব যারা বুঝতে চেষ্টা করেছে তারাই বুঝতে পারবে কেন বিশ্ব ইজতেমা বিদ‘আত? সম্মিলিত মুনাজাত এর কারণেই বিশ্ব ইজতেমা বিদ‘আত। যদি আখেরী মুনাজাত না হত তবে অন্তত বলা যেত ইসলামিক আলোচনার জন্য বিশ্ব ইজতেমা!
-
যদি পারেন, বিদ’আতী আখেরী মুনাজাত বিহীন ইস্তেমা করুন, বিদ’আতী বই নয়, কোরআন ও হাদীস হতে বয়ান করুন!