দশ তলা বিল্ডিংয়ের সপ্তমতম তলার পুরোটাই জুড়ে রেস্টুরেন্ট। পরিষ্কার পরিছন্ন ছিমছাম নিরিবিলি পরিবেশ। খাবারের মানও বেশ ভাল। সময় সুযোগ পেলেই নওশাদ এখানে আসে। এখানে আসলে তার খাবারের রুচিও অনেক বেড়ে যায়। খেতে খেতে ক্লান্ত না হওয়া পর্যন্ত এখান থেকে সে নড়ে না।
এক বিঘত সাইজের কই মাছ আর প্রায় এক ফুট লম্বা পাঙ্গাস মাছের পেটি, চিতল মাছের কুপ্তা তার সাথে খাসীর মাংসের রেজালা, গরুর মাংসের কাবাব আর সবশেষে সুগন্ধী চালের ফিরনি দিয়ে দুপুরের ভুরিভোজ করে সে। খাবার শেষে বিরান্নবই কেজি ওজনের শরীর নিয়ে লিফ্ট থেকে নেমে পার্কিং লটে রাখা গাড়ী পর্যন্ত হেটে আসতে তার বেশ কষ্ট হয়। গাড়ীর কাছে আসলে সে দেখতে পায় বয়স্কমত এক লোক দাড়িয়ে আছে। গাড়ীর ডোর আনলক করতে যাবে এমন সময় লোকটি বলে উঠে, 'বাবা! চারট্যা খাইতে দে।'
সে শুনেও না শুনার ভান করে। এড়িয়ে যেতে চায়। কোনমতে গাড়ীতে উঠাই তার একমাত্র লক্ষ্য। লোকটি মনে হয় তার মনোভাব বুঝতে পারে। মরিয়া হয়ে শেষ চেষ্টা হিসেবে সর্বশক্তি দিয়ে গলার স্বর বাড়িয়ে বলে, 'চারট্যা খাইতে দে বাবাআআ...!'
এতে খুব বিরক্ত হয় নওশাদ। লোকটির দিকে ঘুরে গিয়ে রাগী গলায় বলে, 'বেহুদা ক্যান জ্বালা-যন্ত্রনা করতেছেন? দূরে গিয়া মরতে পারেন না?'
নওশাদের এ জবাবে লোকটি বুঝে যায় তার সামনে দাড়ানো বিশালাকৃতির পোষাকী বড়লোক শুধু বাহ্যিকদিক দিয়েই বিশাল। অন্তরের দিক দিয়ে অত্যন্ত ক্ষুদ্র এবং দরিদ্র। মনের ক্ষেদ মিটানোর জন্য তাই সেও আঘাত করতে পিছুপা হয় না। ক্ষিপ্ত গলায় বলে,
'হ ! মরতেই-তো আছি। খ্যাওন দাওন নাই। কতদিন ধইরা উপাস। আর তুই তো খাইতে খাইতে পাহাড় হইছস। রাক্ষস! কোনহানকার।'
এমন অপ্রত্যাশিত জবাবে নওশাদ তথমত খেয়ে যায়। সে চোখ বড় বড় করে মুখ হা করে লোকটির দিকে তাকিয়ে থাকে। কি করবে বুঝে উঠতে পারে না। এমন সময় লোকটি হঠাৎ তার দিকে একদলা থু থু ছুড়ে মারে। মুখ সরানোর সময় পায় না সে। শুধু টের পায় তার নাকে-মুখে-চোখে এমন কি মুখের ভেতরেও থু থু'র স্পর্শ। জিহবায় তেথো স্বাদ।
'ওয়্যাক থু' বলে সে ককিয়ে উঠে। সেই সাথে কিছুক্ষন আগে খেয়ে আসা কই আর পাঙ্গাস মাছ যেন পেটের ভেতরে জীবন্ত হয়ে দুমড়ে মুচড়ে গলা দিয়ে বের হয়ে আসতে চায়। একসময় বেরিয়েও আসে। বেরিয়ে আসার শব্দ আর বেগে তার ঘুম ভেঙ্গে যায়। শুনতে পায় তমার ঝাঝালো কন্ঠস্বর....'কতবার বলেছি এই সব ছাইপাশ গেলা বন্ধ কর। কে শুনে কার কথা....।'
আর তার মনে পড়ে যায় আজকে দুপুরবেলা পছন্দের রেস্টুরেন্টে ভরপেট খেয়ে সন্ধায় সে গিয়েছিল পল্লবের আস্তানায়। পল্লবের ঐখানে কি সে একটু বেশী পান করে ফেলেছিল- টিক মনে করতে পারে না।