কারো কারো লেখা পড়ছি। কোরবানির বীভৎসতা দেখে তাদের হৃদয় কাঁদছে। তবে আমার একটুও কাঁদছে না। কারন এই ঈদেই আমি প্রচুর লোককে হাসতে দেখেছি। মাংস আসার আগেই গেটের সামনে ভিড় হত লোকদের। সন্ধ্যে পর্যন্ত সে চলত। আমাদেরও তো আস্ত গরু কুরবানি নয়, ভাগের মাংস, দিয়ে কুলানো যেত না। শেষে তো মা এক পিস করেও দিত, তাতেই কি খুশী সব। আমি ছাদ থেকে, বারান্দা থেকে এই খুশী দেখতাম। রাস্তায় ছুটোছুটি করছে একদল লোক, গায়ে মলিন কাপড়, হাতে একটা ব্যাগ আর মুখে চকচকে হাসি। রোজার ঈদে এরা কই যেত জানি না। সেদিন দেখতাম না এদের। রাস্তায় শুধু সুন্দর জামা পরা ছেলে মেয়েদের দেখতাম। কিছু ছেলে পো করে মোটর সাইকেল ছুটিয়ে নিয়ে যেত। বেশিক্ষন থাকা যেত না বারান্দায়। একটু পর পর কলিং বাজত, মাংস নেবে ওরা। দিব্যি হাসি মুখে চায়ত। কোন সংকোচ নেই, যেন অধিকারের জিনিষ বুঝে নিতে এসেছে। কিন্তু যেদিন ঈদ থাকতো না, সেদিনও তো গরীব মানুষেরা আসত, সেদিন কি অসহায় মুখ থাকত ওদের। মায়ের সাথে নানা গল্প ফাঁদত। গল্পে মুগ্ধ হয়ে মা হয়ত এক পোয়া চাল দিয়ে দিল, ঘরের তরকারী, বাড়ির মুড়ি সেসব তো ছিলই।
ঈদের আগেই কেউ কেউ আবার বুকিং দিয়ে যেত। যেমন বাড়ির কাজের লোক, মায়ের অতি পরিচিত ভিখিরি। মা যদি তাদের সংগ্রহের মাংসটা একটু ফ্রিজে রেখে দেয়। আমরা তো কত রাগতাম, কোথা না কোথার কুড়ানো মাংস কেন রাখবে আমাদের ফ্রিজে। কত কাহিনী করে রাখতে হত মাকে। ফ্রিজের ডোর টোর সব ভরে যেত। তবু রাখবার চেষ্টা করত মা। কারন এই মাংসটা ওরা পরে খেতে পারবে, ওদের আপনজন এলে রান্না করবে। মেহমানদারীর ব্যাপার তো ওদেরও আছে আর তাছাড়া বছরে কবার মাংস কেনে গরীব লোকে।
মাংসের হত তিনভাগ। এক ভাগ ভিখিরি, এক ভাগ আমরা। আর এক ভাগ থাকত আত্মীয় স্বজনদের। অনেক আত্মীয়ের মাংসে গড়াগড়ি যেত। আবার অনেক আত্মীয় ছিল এরা কুরবানি দিতে পারত না আবার ভিখিরিদের মত কারো কাছে চাইতেও পারত না। তবে কি এরা না খেয়ে থাকত। আব্বু কাগজে নামের ট্যাগ দিয়ে দিয়ে এদের জন্য প্যাকেট করত। যার বাড়িতে যেমন লাগে সেই অনুযায়ী। এই দিনে কেউ না খেয়ে থাকত না। সবার বাড়িতেই গরম মসলার ঘ্রান ছুটত। যার মাংস কেনার, কুরবানি দেওয়ার ক্ষমতা নেই, সেও পেঁয়াজ রসুন, এসব আগে থেকে কিনে রাখত। কারন ওরা জানত মাংস আসবে।
না খেয়ে যাতে কেউ না থাকে তাই এই ব্যাবস্থা। আল্লাহ্ অনেক অদ্ভুত নিয়ম বানিয়েছেন বলে সারাদিন মানুষের অভিযোগ। ভালও তো বানিয়েছেন, খারাপ গুলোর নিন্দে করলে ভালগুলোর প্রশংসাও তো করা উচিৎ।