somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পান্তা ইলিশ কি আসলেই আমাদের সংস্কৃতির অংশ?!

০৮ ই মার্চ, ২০২৩ রাত ১:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


একটা সময় এদেশের অর্থনীতি ছিলো পুরোপুরি কৃষিভিত্তিক এবং জিডিপির পুরোটাই প্রায় কৃষি থেকে আসত। তখন এদেশের শ্রমবাজার বলতে কৃষক-ক্ষেতমজুর-বর্গাচাষীই ছিলো, আজকের মত শিল্প শ্রমিক কিংবা গার্মেন্টস শ্রমিক ছিলো না। আর এদের নিয়ন্ত্রক ছিলো জমিদার, জোতদার যাদের কুকর্মে সন্তুষ্ট হয়ে ইংরেজরা তাদেরকে আদর স্নেহ করে মাঝে মাঝে স্যার,নাইটহুড, নওয়াব, খানবাহাদুর, রায়বাহাদুর উপাধিও দিত কারন শোষণ ব্যবস্থা টিকিয়ে রাখার স্বার্থে এদের খুব দরকার।

এবার আসি মূল কথায় তখনকার দিনে এসব শ্রমিক মজুরদের সারাদিন খাটিয়ে সন্ধা হলে কিছু পয়সা দিত যা দিয়ে বাজার থেকে মোটা চাল কেনার পর কিছু থাকলে ঐটা দিয়ে অন্যান্য আনুসঙ্গিক জিনিসপাতি কিনে চাষাভূষারা রাতের বেলায় বাড়ি ফিরত। কারণ পুঁজিবাদীরা আপনাকে কোনদিন এতোটা মজুরি দিবে না যে ভাত কাপড় কেনার পর রিক্রিয়েশন করতে পারেন কিংবা দু’মাস বসে খেতে পারেন। বরং শোষন, নিপিড়ন টিকিয়ে রাখতে হলে আপনাকে কুশিক্ষার অন্ধকারে নিমজ্জিত রাখতে হবে, আর বিনোদন তো বহু পরের হিসেব। যদিও বা কিছু এলাকায় বিনোদনের ব্যবস্থা করতো সেটা হতো তাদের স্বার্থে, যেমনটা দেখবেন চা বাগন এলাকাগুলোতে, চা শ্রমিকদের জন্য সস্তায় মদ গেলবার ব্যবস্থা রেখেছে মালিকরা কারন পৃথিবীর সবচেয়ে সস্তা শ্রমিকদের অমানুষিক পরিশ্রম করাতে হলে সস্তা মদের গুরুত্ব অনেক। সারাদিন পরিশ্রমের পর সস্তায় মদ গেলার পর দুনিয়ার সব শোসন নিপীড়ন ভুলে যাবে, তাদের চিন্তা করবার অবসরটুকু পাবে না। মদ খেয়ে বাসায় এসে বউয়ের সঙ্গে ঝগড়া করবে, বাচ্চাদের পড়াশোনার খরচ যোগাতে পারবে না। ফলে আজীবন অন্ধকারেই থেকে যাবে আর সস্তা শ্রমের উৎস হয়েই থাকবে। কোথাওবা সস্তায় যৌন পল্লীর ব্যবস্থা করে রেখেছে। থাকগে ঐসব কথা, মূল কথায় আসি। সারাদিনের হাড়ভাঙা খাটুনির পর যে বাজার নিশে আসতো তা দিয়ে চাষাদের বউরা(মানে আমাদের দাদী/নানীরা) তাদের রাতের বেলা রান্না করে খাওয়াতো এবং কিছুটা পরেরদিন খাওয়ার জন্য রেখে দিত কারন সকাল ভোরে উঠে যখন মাঠে(ক্ষেতে) যাবে তখন তো কিছু খেয়ে যেতে হবে। আর তখনকার দিনে যেহেতু ফ্রিজ ছিলো না তাই ভাতে পানি দিয়ে সংরক্ষণ করা ছাড়া আর কোন উপায় ছিলো না, যেটাকে আমরা পান্তা ভাত বলে উৎসব করি!!! আর সকালে ফজরের আগে উঠে একজন মজুর পোড়া মরিচ আর পেঁয়াজ দিয়ে খাওয়াদাওয়া করে যখন কাজে যেতেন তখন সেটা উৎসবও ছিলো না কিংবা আবহমান বাঙালীর সংস্কৃতিও ছিলোনা। পান্তা খাওয়াকে বাঙালির সংস্কৃতি না বলে শোষণের চিহ্ন বলা উত্তম।

ইলিশের ব্যাপারটা আসছে অনেক পরে, বিষয়টা পুরোপুরি বানিজ্যিক হিসেবনিকেশ দ্বারা চালিত। পহেলা বৈশাখে কোন গরিবকে কিংবা নিম্ম-মধ্যবিত্তকে কোনদিন ইলিশ কিনে খেতে দেখেছেন?? আমি বলব না!! কারন পহেলা বৈশাখে ইলিশের বাজার আগুন থাকে যেখানে মধ্যবিত্তদের প্রবেশাধিকার অসম্ভব হয়ে ওঠে তাছাড়া ব্যাংক ডাকাতি কিংবা লুটপাটের টাকা যখন ইলিশের বাজারে অনুপ্রবেশ করে তখন বিষয়টা সাধারণের সংস্কৃতির নাগালের বাইরে চলে যায়। ইলিশের সংস্কৃতি এলিটদের সংস্কৃতি এটা কোনভাবেই বাঙালির সংস্কৃতি না। আমার বাড়ি মেঘনার কোলঘেষেই, আমি জানি ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু করে মার্চ কিংবা এপ্রিল পর্যন্ত ইলিশ ধরার উপর নিষেধাজ্ঞা চলে যেটাকে আমরা বলি অভিযান !! কারণ এসময় নদীতে প্রায় অধিকাংশ ইলিশের সাইজ ২৩ সে.মি. এর নিচে থাকে যা ঝাটকা বলে পরিচিত আর এখন যেহেতু সংরক্ষণ এর সুযোগ আছে তাই ফ্রিজিং করে পহেলা বৈশাখ পর্যন্ত খাওয়া যায় কিন্তু যে আবহমান বাংলার সংস্কৃতি বলে পান্তা ইলিশ খাওয়ানো হচ্ছে ঐ আবহমান বাংলায় ত কোন ফ্রিজ ছিলো না তখন, তাহলে পহেলা বৈশাখে বাঙালি এতো ইলিশ কই পেতো!!!?

সকাল বেলা যারা পান্তা ইলিশ দিয়ে দিন শুরু করে তাদের অনেকেরই সন্ধা হলে লালপানি লাগে পান্তা ইলিশ হজম করতে!!!! কারণ সারাবছর বাঙালি সংস্কৃতির বাইরে থেকে হঠাৎ করে একদিন বাঙালি সংস্কৃতি সোদাইলে তো ডাইজেস্ট সমস্যা হওয়াটা অস্বাভাবিক নয়!!!সারাদিন বাঙালি সংস্কৃতি পালন করে ক্লান্ত শ্রান্ত হয়ে সন্ধা বেলা রিফ্রেশমেন্ট এর জন্য ৫ স্টার হোটেলে লালনীল বাতির নিচে আইটেম গানের তালে শরীরটা না দোলাতে পারলে পহেলা বৈশাখ বড্ড বেশি পানসে হয়ে যায়,ওহ্ ডিজগাস্টিং ব্লাডি বেঙ্গলি কালচার ! একটু পর যখন নাচতে নাচতে ক্লান্ত তখন একটু ভোদকা, শ্যাম্পেইন, রেডওয়াইন, কিংবা হোইস্কি হলে সংস্কৃতিটা আরেকটু ভালোভাবে পালন করা যায়!!!
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই মার্চ, ২০২৩ রাত ১:৫৫
৬টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

টোকাইদের রফিকুন নবীর ক্যানভাসেই মানায়, শিল্প-সাহিত্য সৃষ্টিতে কিংবা রাষ্ট্রক্ষমতায় নয়

লিখেছেন মিশু মিলন, ১২ ই এপ্রিল, ২০২৫ ভোর ৫:১১

সাহিত্য, নাটক, সিনেমা, সংগীতকে আমি দেখি সিরিয়াস ধরনের কাজ হিসেবে। কারণ, এসব শিল্প মানুষের মানসপটে খুব প্রভাব ফেলে, একটা সমাজের চরিত্র গঠনে প্রভাব ফেলে। ফলে এসব শিল্পের সঙ্গে তাদেরই যুক্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বর্ণচোখ

লিখেছেন শাম্মী নূর-এ-আলম রাজু, ১২ ই এপ্রিল, ২০২৫ ভোর ৬:৩৮


(ষড়ঋপু সিরিজের তৃতীয় কাহিনি — লোভ)

⸻ সতর্কীকরণ: ছায়া পড়লে আলোও কাঁপে ⸻

এই কাহিনি কেবল একটি গল্প নয়। এটি এক মানসিক প্রতিচ্ছবি, যেখানে লুকিয়ে আছে মানব আত্মার... ...বাকিটুকু পড়ুন

এসব লুটপাটের শেষ কোথায়!

লিখেছেন আবদুর রব শরীফ, ১২ ই এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ১২:১৮

আধা লিটারের পানির বোতল দোকানদার কেনে সর্বোচ্চ ১২.৫০ টাকায় আর ভোক্তার কাছে বিক্রি করে ২০ টাকা। এগুলো কি ডাকাতি না?

গোপন সূত্রে যতটুকু জানা যায়,
প্রাণ ৮.৫ টাকা কেনা
ফ্রেশ ১০... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। চারুকলায় আগুনে পুড়ে গেল ‘ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি’ ও ‘শান্তির পায়রা’ মোটিফ

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১২ ই এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ১:৪৭

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে নববর্ষের শোভাযাত্রা উদ্‌যাপনের জন্য বানানো দুটি মোটিফ আগুনে পুড়ে গেছে। এর মধ্যে একটি ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি ও আরেকটি শান্তির পায়রা।



আজ শনিবার সকালে চারুকলা অনুষদে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘোষণাপত্র ও অঙ্গীকারনামা....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ১২ ই এপ্রিল, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:২৬

ঘোষণাপত্র ও অঙ্গীকারনামা
March for Gaza | ঢাকা | ২০২৫

বিসমিল্লাহির রাহমানীর রাহীম
আল্লাহর নামে শুরু করছি
যিনি পরাক্রমশালী, যিনি ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠাকারী,
যিনি মজলুমের পাশে থাকেন, আর জালেমের পরিণতি নির্ধারণ করেন।

আজ আমরা, বাংলাদেশের জনতা—যারা জুলুমের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×