ছুটির দিনে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লোহিত সাগর সৈকতের রূপ দেখতে ভিড় করেন জেদ্দায় বসবাসকারী অনেক মানুষ। জেদ্দা শহরের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা এসব মানুষের অন্যতম আকর্ষণ বিশ্বের বৃত্ততম জল ফোয়ারা।
শুক্রবার লোকে লোকারণ্য হয়ে পড়ে সাগর পাড় এলাকা। বিশেষত, আসর নামাজের পরে সাগর পাড়ের দিকে রওনা হয় সবাই। সে জন্য রাস্তায় অনেক যানজট লেগে থাকে। জেদ্দা সাগর পাড়ে আমি আগেও অনেকবার গিয়েছি। সাগরের ঢেউ আমাকে টানে। আজ আমার সাগর পাড়ে যাওয়ার উদ্দেশ্য প্রবাস কথা’র জন্য কিছু ছবি তোলা এবং ছুটির দিনে আমার মত ঘুরতে আসা প্রবাসী ভাইদের অনুভূতি জানার চেষ্টা করা।রাস্তার যানজট কাটিয়ে লোহিত সাগরের পাড়ে পৌঁছাতেই মানুষের উপচে পরা ভিড় চোখে পড়লো।
একটু পরেই দেখা হলো ফেনী জেলার সোনাগাজী থানার মতিগঞ্জ ইউনিয়নের পালগিরি গ্রামের আব্দুস সালামের সাথে। ১৭ বৎসর ধরে তিনি সৌদি মডার্ণ ফ্যাক্টরি নামের প্রতিষ্ঠানে শো-রুম ইনচার্জ হিসেবে কর্মরত আছেন। শুক্র,শনি এই ছুটির দুই দিন কিভাবে কাটে জানতে চাইলে তিনি কিছুটা রসিকতা করলেন,
‘ছুটির দিনগুলি আমার জন্য আনন্দের হলেও আমার স্ত্রীর জন্য এই দিনগুলি দুঃখের। ছুটির দিনগুলিতে আমি বাসায় থাকি খুব কম। বন্ধুদের বাসায় গিয়ে রান্না করে খাওয়া শেষে গল্প করতে করতে রাত পার হয়ে যায়। সাগর পাড়ে সব সময় আসা না হলেও মাসে এক দুইবার আসা হয়। ছুটির দিনগুলিতে স্ত্রীর সাথে কথা বলার তেমন সময় হয় না। এই জন্য আমার স্ত্রী আক্ষেপ করে বলে, ছুটির দিনে বেশী কথা বলবো বলে পুরো সপ্তাহ অপেক্ষায় থাকি। কিন্তু তোমাকে পাওয়া যায় না। ছুটি না হলেই ভালো’।
হয়তো ছুটির দিনে পরিবারের কথা আরও বেশী করে মনে পড়ে আব্দুস সালামের। তার সাথে কথা বলতে বলতে নামাজের সময় হয়ে গেলো। লোহিত সাগরের পাড়ে ঘুরতে যাওয়া মানুষেরা নামাজে দাঁড়িয়ে গেলো।
নামাজ শেষে কথা হলো আমুদি এক্সচেঞ্জের প্রতিনিধি ফটিকছড়ির ধুরুং ইউনিয়নের রবিউল আলমের সাথে। তিনি ১৩ বছর ধরে সৌদিপ্রবাসী। ছুটির দিনে সাগর পাড়ে কি নিয়মিত আসেন- এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানালেন,
‘পুরো সপ্তাহ কাজ করে একদিন ছুটি পাই। সাগর পাড়ে’র বিকেলটা খুবই স্নিগ্ধ ও পবিত্রতায় ভরা। এখানে আসলে আমার মনের মধ্যে জমে থাকা কষ্ট গুলি নিমেষই দূর হয়ে যায়’।
এরই মধ্যে সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসতে লাগলো। মেঘমুক্ত আকাশে টকটকে লাল সূর্যটা ডুবে যেতে দেখা যাচ্ছে সমুদ্রের বুকে।
ওদিকে আমার ডাক পড়েছে, বন্ধুদের সাথে মার্কেটে যেতে হবে। লোহিত সাগরের পাড় থেকে একটু দূরেই সিটি সেন্টার মার্কেট। মার্কেটের ভেতরে দুইজন প্রবাসী বাংলাদেশীকে পাওয়া গেলো। ‘প্রবাস কথা’র কথা জানালাম তাদের।
বরিশালের জুয়েল নামে একজনের সাথে দেখা হলো। ৯ বছর হলো তার প্রবাস জীবনের। জুয়েল জেদ্দায় একটা কফি শপে কাজ করে। তার সাথে কথা বলে জানা গেলো, সৌদি সময় ভোর ৫ টায় তার দেশের ফ্লাইট। তাই টুকিটাকি কিছু বাজার করতে এসেছে। ৯ বছরের মধ্যে এই প্রথম দেশে যাচ্ছে জুয়েল। পরিবারে সবার ছোট জুয়েল ৮০ দিনের ছুটিতে দেশে যাচ্ছে। দেশে গিয়ে বিয়ের কথা জানিয়ে ‘প্রবাস কথা’ বন্ধুদের কাছে দোয়া চেয়ে বিদায় নিলো জুয়েল।
এভাবেই একটা ছুটির দিন শেষ হলো। রবীন্দ্রনাথ আউরাতে আউরাতে আমিও ঘরের পথ ধরলাম।
“কোনদিন কর্মহীন পূর্ণ অবকাশে বসন্ত বাতাসে
অতীতের তীর হতে যে রাত্রি বহিবে দীর্ঘশ্বাস
ঝরা বকুলের কান্না ব্যথিবে আকাশ
সেইক্ষণে খুঁজে দেখো, কিছু মোর পিছু রইলো
সেই তোমার প্রাণের প্রান্তে
যে স্মৃতি প্রদোষে হয়তো দিবে সে জ্যোতি
হয়তো ধরিবে কভু নামহারা স্বপ্নের মুরতি।”
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৪:৫৩