somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কি ভবিষ্যৎ তাদের? কেউ কি বলতে পারেন?

২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ফরিদ আলম নিজের নামটুকু শুধু জানে। বয়স বলতে পারে না। দু-তিনটে দাঁত পড়ে সবে নতুন করে গজাতে শুরু করেছে। হাঁটু পর্যন্ত কাদা। উষ্কখুষ্ক চুল। গায়ে বেখাপ্পা বড় টি-শার্ট। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মংডুর তোলাতুলি থেকে পাহাড় ডিঙিয়ে জনস্রোতে মিশে বাংলাদেশে এসেছে। ওর বাবা-মা, একমাত্র বড় ভাই কেউ আর বেঁচে নেই।

কক্সবাজারের উখিয়ার থাইংখালীর হাকিমপাড়ার শরণার্থী শিবিরে ফরিদ আলমের মতো শিশু আছে আরও। হাকিমপাড়ার ‘মাজি’রা (দলনেতা) তাই বলছেন। তবে সংখ্যাটা যে ঠিক কতটা বড়, সে সম্পর্কে নিশ্চিতভাবে বলতে পারছে না সরকারি বা বেসরকারি কোনো সংস্থা। শুধু এটুকুই জানা যাচ্ছে, ২৫ আগস্ট থেকে গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত যে ৪ লাখ ২৯ হাজার শরণার্থী বাংলাদেশে এসেছে, তাদের অর্ধেক শিশু। শিশুদের কারও বাবা-মা দুজনেই নিহত হয়েছেন, কেউ বাবা-মাকে হারিয়ে ফেলেছে। তবে বেশির ভাগ শিশুরই বাবা নেই। গত সপ্তাহে সেভ দ্য চিলড্রেনের এদেশীয় পরিচালক মার্ক পিয়ার্সকে উদ্ধৃত করে প্রকাশিত এক সংবাদে বলা হয়, এখন পর্যন্ত যত শিশু এসেছে, তাদের মধ্যে ১ হাজার ১০০ শিশুর বাবা-মা নেই, বা তারা বাবা-মাকে হারিয়ে ফেলেছে। এ বছরের শেষ নাগাদ বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গার সংখ্যা হবে ৬ লাখ।

ফরিদ আলম বলে, কোরবানি ঈদের আগে কোনো একদিন ‘মেলেটারি’রা তাদের গ্রামে ঢুকে ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিতে শুরু করে। তারপর এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়তে থাকে। একটা গুলি একদম ওর কানের পাশ দিয়ে যায়। ফরিদ ছুটতে শুরু করে। ছুটতে ছুটতে একসময় তার সঙ্গে দেখা হয় গ্রামের লোকজনের। তাদের কাছেই খবর পায় ওর বাবা মো. তৈয়ব, মা আয়েশা খাতুন ও বড় ভাই কেউ আর বেঁচে নেই। জবাই করে হত্যা করা হয়েছে সবাইকে। শুরু হয় ফরিদের অনিশ্চিত যাত্রা। একটা পর একটা পাহাড় ডিঙিয়ে, কখনো গাছ, লতা-পাতা খেয়ে, কখনো শিমের বিচি খেয়ে সে ১০ দিন কাটিয়ে বাংলাদেশ সীমান্তে এসে পৌঁছায়। গ্রামের লোকজনের সঙ্গেই এসে ওঠে হাকিমপাড়ায়। কী করবে এখন, কোথায় যাবে এমন প্রশ্নে ফরিদ বলে, সবাই যদি ফিরে যায়, সেও যাবে। মা নেই, আর কোনো দিন আসবেন না, তবু মায়ের জন্য ‘পেট পুড়ে’ বলে জানায় শিশুটি।

বাবা কামাল হোসেন, মা মাহমুদা খাতুন, চার বোন, বোনজামাই, ভাগনি, ভাইসহ পরিবারের ১০ জনকে হারিয়ে একই শরণার্থী শিবিরে এসেছে মো. ওসমান। ঈদের ঠিক কদিন আগে ওদের গ্রামে হামলা হয়েছিল, ওসমান মনে করতে পারে না। সে তখন পাশের গ্রামের মাদ্রাসায় ছিল। হঠাৎ গ্রামের মানুষকে ছুটতে দেখে জানতে চায় কী হয়েছে। তাদের মুখে শোনে, রাখাইনের লোকজন পুরো গ্রাম ঘিরে ফেলেছে। সেনাবাহিনী গুলি ছুড়ে, কুপিয়ে সবাইকে খুন করেছে। ওসমান এখন তার এক দূরসম্পর্কের মামার ছাপরায় উঠেছে।

গত বুধ ও বৃহস্পতিবার টেকনাফের লেদা, উখিয়ার উইন ছি প্রং, বালুখালী অস্থায়ী শরণার্থী শিবির, থাইংখালীর হাকিমপাড়ায় ঘুরে হাজারো শিশুর সঙ্গে দেখা হয়। শিশুরা কোদাল হাতে পাহাড় কাটছে, নলকূপ থেকে পানি ভরে পাহাড়ের ছাপরা ঘরে বয়ে নিয়ে যাচ্ছে, ত্রাণ সংগ্রহ করছে, ছোট ভাইবোনদের দেখাশোনা করছে। শুধু যে শরণার্থী শিবিরের ভেতরেই শিশুরা রয়েছে তা নয়; উখিয়া, টেকনাফের রাস্তায় রাস্তায় শিশু-কিশোরেরা ত্রাণের আশায় বসে থাকছে দিনভর। বৃহস্পতিবার লেদা ক্যাম্প থেকে টেকনাফ পর্যন্ত ১৩ কিলোমিটার রাস্তায় ১৯৮টি দলকে বসে থাকতে দেখা যায়। প্রতিটি দলেই শিশু, মায়েরা মাসখানেকের শিশু নিয়ে যেমন বসেছেন, তেমনি আছে ১০-১২ বছর বয়সীরাও। কোনো কোনো দলে সর্বোচ্চ সাতটি করে শিশু আছে।
সরকারি-বেসরকারি সংস্থাগুলো বলছে, প্রাথমিকভাবে শিশুদের খাদ্য ও স্বাস্থ্যসেবাটা জরুরি। কক্সবাজারের সিভিল সার্জন আবদুস সালাম বৃহস্পতিবার প্রথম আলোকে বলেন, মিয়ানমার থেকে আসা শিশুরা জ্বর, সর্দি-কাশি, নিউমোনিয়া ও চর্মরোগে ভুগছে। তারা টিকাও পায়নি। এখন পর্যন্ত ৫২ হাজার শিশুকে হামের ও ২৫ হাজার শিশুকে পোলিও টিকা খাওয়ানো হয়েছে। এখন ১৮ হাজার নারী অন্তঃসত্ত্বা। অ্যাকশন অ্যাগেইনস্ট হাঙ্গার নামের একটি বেসরকারি সংস্থার হিসাবে প্রায় ৫৫ হাজার শিশু অপুষ্টিতে এবং ৬ হাজার ৭৭৫ শিশু মারাত্মক অপুষ্টিতে ভুগছে। অন্তঃসত্ত্বা নারীরাও ভুগছেন অপুষ্টিতে। প্রতিদিন ২ লাখ ৫৭ হাজার ৬২ জনকে খিচুড়ি ও হাই এনার্জি বিস্কুট দেওয়া হচ্ছে। তবে প্রথম ধাক্কাটা কাটিয়ে ওঠার পর শিশুদের সুরক্ষা দেওয়াটা কঠিন হয়ে উঠবে। সেভ দ্য চিলড্রেন বলছে, এই শিশুরা শোষণ, অপব্যবহার এমনকি পাচারের ঝুঁকিতে পড়বে।
শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নেওয়া বাবা-মায়েদের কাছে এখন পর্যন্ত ছেলেমেয়ে বেঁচে আছে এটাই বড় খবর। লেদা ক্যাম্পে আট দিনের শিশুসন্তান নিয়ে অ্যাকশন অ্যাগেইনস্ট হাঙ্গারে খিচুড়ি খেতে যাচ্ছিলেন আয়েশা খাতুন। তাঁর আরও চারটি সন্তান আছে। সবাইকে নিয়ে বাংলাদেশে এসেছেন। প্রশ্নের জবাবে বলেন, কী করবেন জানেন না। মিয়ানমারে ফেরত যেতে পারবেন কি না, তা-ও জানা নেই। এ বছরের মার্চ থেকে ইউনিসেফ শুধু লেদা ক্যাম্পে ৬৭টি লার্নিং সেন্টার খুলেছে। শিশুরা সেখানে অক্ষরজ্ঞান, বর্মি ও বাংলায় লেখাপড়া শিখছে কয়েক স্তর পর্যন্ত। কিন্তু এই লেখাপড়া দিয়েই বা তারা কী করবে জানে না। বেশ কয়েকটি শিশুকে বড় হলে কী হতে চায় এমন প্রশ্ন করা হলে তারাও কোনো জবাব দিতে পারেনি।

সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:০২
৬টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শীঘ্রই হাসিনার ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৩৮


পেক্ষার প্রহর শেষ। আর দুই থেকে তিন মাস বাকি। বিশ্ব মানবতার কন্যা, বিশ্ব নেত্রী, মমতাময়ী জননী, শেখ মুজিবের সুয়োগ্য কন্যা, আপোসহীন নেত্রী হযরত শেখ হাসিনা শীগ্রই ক্ষমতার নরম তুলতুলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাছে থেকে আমির হোসেন আমুকে দেখা একদিন....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৪৬

আমির হোসেন আমুকে দেখা একদিন....

২০০১ সালের কথা। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের একটা আন্তর্জাতিক দরপত্রে অংশ গ্রহণ করে আমার কোম্পানি টেকনিক্যাল অফারে উত্তীর্ণ হয়ে কমার্শিয়াল অফারেও লোয়েস্ট হয়েছে। সেকেন্ড লোয়েস্টের সাথে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সংস্কারের জন্য টাকার অভাব হবে না, ড. ইউনূসকে ইইউ

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:২৪



বুধবার (৬ নভেম্বর) দুপুরে ঢাকার তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ঢাকায় নিযুক্ত ইইউর রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার এবং সফররত এক্সটার্নাল অ্যাকশন সার্ভিসের এশিয়া ও প্যাসিফিক বিভাগের পরিচালক পাওলা... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নারী বুকের খাতায় লিখে রাখে তার জয়ী হওয়ার গল্প (জীবন গদ্য)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৩২



বুকে উচ্ছাস নিয়ে বাঁচতে গিয়ে দেখি! চারদিকে কাঁটায় ঘেরা পথ, হাঁটতে গেলেই বাঁধা, চলতে গেলেই হোঁচট, নারীদের ইচ্ছেগুলো ডিমের ভিতর কুসুম যেমন! কেউ ভেঙ্গে দিয়ে স্বপ্ন, মন ঢেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিশ্রী ও কুশ্রী পদাবলির ব্লগারদের টার্গেট আমি

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:০৫



আমাকে জেনারেল করা হয়েছে ১টি কমেন্টের জন্য; আমার ষ্টেটাস অনুযায়ী, আমি কমেন্ট করতে পারার কথা; সেটাও বন্ধ করে রাখা হয়েছে; এখন বসে বসে ব্লগের গার্বেজ পড়ছি।

সম্প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×