অনেকদিন আগে জাপানি কদজুকি প্রদেশে তাতেবায়াসি নামে একটি শহরে মরিঞ্জি দেবতার মন্দির ছিল।
মন্দিরে জিনি প্রধান পুরহিত ছিলেন তিনি জাপানের রীতি অনুযায়ী চা- পর্বের ব্যাপারে খুব উৎসাহী ছিলেন। প্রতিদিন মরিঞ্জি মন্দিরে চা পর্ব চলত।
একদিন প্রধান পুরুত মশাই একটি নতুন চা এর কেতলি কিনলেন। কেতলিটার গড়ন ও যেমন চমতকার,তার রঙ টাও তেমনি সুন্দর। পুরুত মশাই হাতে নিয়ে সেটা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখতে লাগলেন আর ভাব্লেন, ভালই হল, পাঁচ জন কে ডেকে একটি বড় করে চা পর্ব করা যাবে আর তখন কেতলিটা দেখিয়ে সকলকে অবাক করে দেওয়া যাবে।
ভাবতে ভাবতে কেমন করে যেন তার তন্দ্রা এসে গেলো। তিনি তার সামনের জল চৌকির উপর মাথা রেখে ঘুমালেন।
পুরুত মশাই ঘুমাবার সঙ্গে সঙ্গে একটা অদ্ভুত ব্যাপার ঘটলো। তার পাশে একটা ছোট টুলে রাখা ছিল কেতলিটা, সেটা যেন একটু নড়ে উঠলো। তারপর, আরও আশ্চর্যের ব্যাপার, কেতলিটার চারটা পা, লেজ আর বেজির মত একটি মুখ দেখা গেলো। পা অলা কেতলিটা টুল থেকে নেমে মাদুর পাতা সাড়া ঘরে ঘুরে বেড়াতে লাগলো।
কেতলি নড়ে চড়ে বেড়াতে তার ঢাকনায় শব্দ হল। পাশের ঘরে ছিল পুরুত মশাই এর দু জন শিস্য। তারা পুরুতের ঘরে টুং টাং শব্দ শুনে এসে দেখে অদ্ভুত কাণ্ড। নতুন কেতলিটা পায়ে হেটে ঘুরে বেরাচ্ছে।
একজন ভয় পেয়ে বলল, কেতলি কে ভুতে পেয়েছে। আর একজনের খুব মজা লাগলো, বারে মজার কেতলি! দিব্যি ঘুরে বেরাচ্ছে।!
ভুত!ভুত! প্রথম শিস্য বলে উঠলো কেতলিকে ভুতে পেয়েছে। দূর বোকা! দ্বিতীয় জন তাকে ধমক দিল,-দেবতার মন্দিরে কখনো ভুত আসতে পারে? থাক, পুরুত মশাই কে দাকা যাক।
দুজনেই তখন ডাকতে লাগলো, ও পুরুত মশাই শীগগির উঠুন। দেখুন আপনার কেতলি কেমন ঘুরে বেরাচ্ছে!
পুরুত জেগে উঠে জিজ্ঞেস করলো কি ব্যাপার?
ততক্ষণে কেতলিটা আবার আগের জায়গায় গিয়ে বসে আছে। দেখে শিস্য রাও অবাক হল। অরা অবাক হয়ে বলল একটু আগে কেতলিটা ঘর ময় ঘুরছিল।
শুনে পুরুত বেটা রেগে গেলো। তোমাদের কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে? নাকি নেশা করেছ? যাও বেরিয়ে যাও ঘর থেকে।
সন্ধ্যায় পুরুত কেতলি তে পানি ভরে চা চাপালেন চুলায়। সঙ্গে সঙ্গে লাফ দিয়ে নেমে কেতলি চেঁচাতে লাগলো, উঃ পুড়ে গেলাম, মরে গেলাম!
কেতলির কাণ্ড দেখে পুরুত এবার সত্যি অবাক হল। ভাবল তাই তো! কেতলিকে তো ভুতে পেয়েছে। আওয়াজ শুনে শিস্য দুজন ছুটে এলো। কিন্তু তারা এবার কিছুই দেখতে পেলো না। তারা কেতলি হাতে নিয়ে নেড়ে চেড়ে দেখতে লাগলো।
পুরুত বলল, নাহ! ভুতে পাওয়া কেতলি বিদায় করতে হবে। কাল ই তোমরা পুরানো মালপত্র ক্রেতা দের ডেকে আনবে। তাই হল। ক্রেতা এসে কেতলি দেখে জিজ্ঞেস করল-এত সুন্দর কেতলি বিক্রি করবেন কেন?
পুরুত বলল আমি ভাল একটা কিনেছি,তাই এটা বিক্রি করবো।
ক্রেতা চল্লিশ সেন (জাপানি মুদ্রা) দিয়ে কেতলি কিনে বাড়ি ফিরল।
ক্রেতা রাতে মাথার কাছে কেতলি রেখে চোখ বুজেছে, এমন সময় মনে হল তার বালিশের তলা থেকে কেও বলছে, ওঠো আমার কথা শোন।
ক্রেতা উঠে দেখে নতুন কেতলিটা লেজ,পা,মুখ বের করে বলছে, তুমি তো আজ আমাকে মন্দির থেকে কিনে এনেছ।ভালই করেছ।আমি খুব পয়মন্ত। তুমি আমাকে জত্ন করে রাখ,ভাল খেতে দাও,তবে আমি তোমার উপকার করবো।
ক্রেতা তো তাজ্জব। বলল, তুমি তা হলে আসলে কেতলি না?
না, কেতলি টা বলল। আমি ভাল নাচতে পারি। তা ছাড়া জিমন্যাসটিক ও পারি। তুমি এক কাজ করো। টিকিট বিক্রি করে আমার নাচ দেখাও,খেলা দেখাও,তমার অনেক টাকা হবে।
ক্রেতা খুশি হয়ে বল্ল,তাই হবে! আমি গরীব লোক। তবু যথাসাদ্ধ আপনার সেবা করবো।
সেদিন থেকে সে পুরানো জিনিস কেনা বেচা বন্ধ করে বাড়ির সামনে স্টেজ বানিয়ে খেলা দেখাতে লাগলো।
পথ চলতি মানুষেরা তার কেতলির খেলা দেখতে টিকিট কেটে ঢুকতে লাগলো। তারা কেতলির সব কাণ্ড কারখানা দেখল। দেশে বিদেশে নাম ছরিয়ে পড়লো। বহু লোক ভির করতে লাগলো।
ক্রেতা কয়েকদিনের ভেতর বড়লোক হয়ে গেলো। পাকা বাড়ি হল, টাকা হল সিন্ধুক ভর্তি।
ক্রেতা একদিন কেতলিকে বলল, আপনি আসলেই পয়মন্ত। আপনার দয়া তে আমি টাকা পেয়েছি। আর আমি টাকা চাই না।আমি এখন খেলা দেখান বন্ধ করতে চাই।আপ্নার কি ইচ্ছা?
বেশ! তাই হোক- কেতলি বলল।
তোমার লোভ নেই দেখে আমি খুশি হয়েছি।তুমি তাহলে আমাকে আবার পুরুত মশাই এর কাছে রেখে আস।আর তাকে বল আমার যত্ন করতে।আমাকে যেন আগুনে না পোড়ায়।
তাই হবে। ক্রেতা তখন তাকে সজত্নে পুরুতের কাছে নিয়ে গেলো। আর বলল, পুরুত মশাই,এই কেতলির জন্য আপনার কাছে আমি কৃতজ্ঞ। তাই আমার টাকা পয়সার অর্ধেক আপনাকে দিতে চাই।
পুরুত সব শুনে চমকালেন আর ক্রেতার সততায় মুগ্ধ হলেন। তিনি ক্রেতাকে আশীর্বাদ করলেন।
কেতলিটা সেই থেকে মরিঞ্জি মন্দিরে সযত্নে তোলা ।আর এখনো সেখানেই আছে।