সামনের দোকানটা তে ছোটখাট ভিড়।একটা মানুষকে দোকনে ঢুকতে দিচ্ছেনা নিরাপত্তা রোবট। নিশাত দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কিছু ক্ষন দেখল,তারপর আবার হাঁটা শুরু করল।
কিছু দিন আগেই রোবটের দুনিয়ায় ডুবে থাকত নিশাত,আর এখন রোবট দেখলেই বিরক্ত লাগে।
মাঝে মাঝে এই রোবটগুলো মজার মজার কান্ড করে। আসলে আর্টিফেশিয়াল ইন্টিলিন্জেন্সি এখনো পরিপূর্নতা পায়নি। পাবেও না। রোবট কি মানুষের সমান হতে পারবে?
অবশ্য সাধারণ মানুষরা এই সব বোঝে না ।
বুঝলে রোবট সমাজের বিশাল ক্ষতি হয়ে যেত।একটা রোবটকে হ্যাক করে দোকানে ঢুকা এমন কোন কঠিন ব্যাপার নয়,শুধু মাএ এমন কিছু বলতে হত যার সাথে রোবটি পরিচিত নয়।তার বদলে লোকটা রোবটির সাথে তর্ক শুরু করে দিল!
নিশাত রোবটের কপোট্রন হ্যাক করে বেশ মজা পায়।আজ সেই রকম কিছু করার জন্য ইচ্ছে হচ্ছে তার।তবে এইসবে ঝামেলাও কম নয়,রোবট গুলা ছবি রেকর্ড করে রাখে,পরে এলগরিদম অটো চেন্জকরে নেয়।আর রিপোর্ট পাঠিয়ে দেয় বিজ্ঞান পরিষদে।ওরা এসে হাবিজাবি বলে কিন্তু কিছু করতে পারে না,কারন পরোক্ষভাবে এতে তাদের উপকার হয় আর কি...
ভয়ংকর অপরাধীরা এই সব চিটের খবর পেলে বারোটা বেজে যেত বিজ্ঞান পরিষদের।
এই নিশাত,দাঁড়াও!
কে যেন ডেকে উঠল পেছন থেকে।
সম্ভবত ইমা....হুম, ইমাই তো।
ইমাকে দেখলে নিশাতের মন কেমন যেন করে উঠে।জীবনের ভালো সময় গুলোর বেশির ভাগই তার সাথে কাটানো।কত বার যে ভালো লাগার কথা বুঝাতে চেয়েছে নিশাত, কিন্তু ইমা এড়িয়ে যেত বার বার।
অনেক বার মনে হয়েছে ইমা তাকে পছন্দ করে, কিন্তু কোথায় যেন সমস্যা আছে...
নিশাত বুঝেছে নিজের সমস্যা কি।এজন্য এখন আর চেষ্টা করে না।
"নিশাত তোমার যোগাযোগ মডিউল বন্ধ কেন?"
"তুমি এখানে আমাকে খুঁজে পেলে কিভাবে?"
"সেটা পরে বলব।তুমি কি জানো কি হয়েছে?"
"কি হয়েছে?"
" মডিউল টা চালু কর তাহলেই বুঝতে পারবে।"
মহাকাশে জেমিনি অঞ্চলে অদ্ভুত ব্যাপার লক্ষ্য করা গেছে।ওখান থেকে নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে অ্যন্টিপার্টিকেল এর স্রোত বয়ে যাচ্ছে।
জায়গাটাতে কিছুই নেই অথচ প্রচন্ড শক্তি নিয়ে কনা গুলো বের হচ্ছে।
এরই মধ্যে স্যাটেলাইট গুলো ম্যাল-ফাংশন করা শুরু করেছে।যদিও এখনো তেমন কিছু হয়নি,তবে পৃথিবীর যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়তে পারে।
সাধারন মানুষ এখনো তেমন কিছু জানে না, কারন তাদের জানানো হয়নি।
ল্যাবে গেলে তুমি বুঝতে পারতে ব্যাপারটা।
নিশাত আনমনে কিছু একটা বলে থেমে গেল।
ও, হ্যাঁ এই মেমোরি কার্ডটা রাখ,একটা ফাইল আছে রিডারে পড়ে নিও। পরে তোমার সাথে যোগাযোগ করব।
ইমা যেমন দ্রুত এসেছিল তেমন করেই চলে গেল।
নিশাত রুমে ফিরে এসে কমিউনিকেশন মডিউল টা চালু করল।
এতক্ষন পরিবেশটা স্বাভাবিক মনে হলেও এখন তা মনে হচ্ছে না।
নিরাপত্তা পরিষদ থেকে আসা একটা তড়িৎবার্তা পড়া শুরু করল নিশাত
"............মহাকাশের জেমেনি এলাকায় অ্যান্টিপার্টিকেল স্রোতের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে।আমরা নিশ্চিত হতে পারছিনা উৎস সম্পর্কে।পার্টিকেল গুলোর গতিবেগ ও কোন ভাবে ব্যাখ্যা করা যাচ্ছেনা।শূন্য থেকে কনা গুলো তৈরী হয়ে আলোর চেয়ে বেশী বেগে বেরিয়ে যাচ্ছে....
এখনো কনাগুলোর অভিমুখ আমাদের দিকে না, তবে যে কোন মূহুর্তে কনাগুলো দিক পরিবর্তন করতে পারে।তাছাড় এন্টিপার্টিকেলগুলো মহাকাশ দূষন ঘটাচ্ছে যেটা আমাদের জন্য বিশাল হুমকি।
ব্যাপারটা পর্যবেক্ষন করার জন্য মহাশূন্যে এক দল বিজ্ঞানী পাঠানো হবে।
আপনাকে সেই দলে প্রাথমিক ভাবে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। আপনি যদি রাজি থাকেন তাহলে নিরাপত্তা পরিষদের সাথে যোগাযোগ করতে অনুরোধ করা হচ্ছে... "
নিশাত ভাবল তার অনুমানটা শেষ পর্যন্ত সত্য হতে চলেছে।
অ্যান্টিপার্টিকেলের বেগ নিয়ে একটা গবেষণাপত্র আছে তার।
সে মনে মনে ব্যাপারটা সাজাতে শুরু কারল;
"....ঘটনাটার ব্যাখ্যা দেওয়া যায় যদি মানে করা হ্য় কনা গুলো প্রতি বিশ্ব থেকে আসছে..."
অ্যান্টিপার্টিকেল গুলোর বেগ সত্যিকার অর্থে আলোর বেগের সমান।কিন্তু A-ট্রান্সফর্মের জন্য আপাত বেগ বেশী মনে হচ্ছে।
নিশাত দ্রুত হিসাব করতে থাকল;
অ্যান্টিপার্টিকেল গুলোর গতি বিশ্লেষন করে সে প্রতিবিশ্বের কোঅর্ডিনেট বের করল।
একটি নক্ষত্রের বিস্ফোরন ঘটেছে প্রতিবিশ্বে।
এমনভাবে বিস্ফোরন টা হয়েছে যে ,তার অ্যান্টি-অর্ডিনেট আমাদের কাছাকাছি।
প্রচন্ড শক্তি ক্ষয়ের ফলে স্পেস ফুটা হয়ে জেমেনি অঞ্চলে সৃষ্টি হয়েছে একটা স্টার গেইটের।এই গেইট দিয়ে কনা গুলো আমাদের বিশ্বে চলে আসছে।
অ্যান্টিপার্টিকেল পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসেলে কি হবে তা ভেবে শিউরে উঠল নিশাত। কনা ও প্রতিকনা মিলে ভয়ংকর শক্তিতে মিলিয়ে যাবে।
পৃথিবী নামক গ্রহটি মুছে যাবে মহাবিশ্বের ইতিহাস থেকে।
অভিযাত্রিক দলে নাম লিখিয়ে ফেলে সে।
সেটা ইমাকে জানালো নিশাত।
"ইমা বলল তুমি যাবে কেন?তুমিতো এস্ট্রোনট নও।"
"ব্যাপারটা তুমি বুঝছনা,কেন? পৃথিবী থেকে এই কাজ করা কঠিন হবে।তাছাড়া এই ব্যাপারটা পৃথিবীর অস্তত্ব নিয়ে। "
"তুমি কি কার্ডটা রিডারে দেখছ?"
"না,কি আছে ওতে" বলল নিশাত।
ওটা তোমার সাথে রেখো।
মহাকাশযান অ্যান্টি-অবর্জাভার যাত্রা শুরু করে মহাকাশের জেমেনির দিকে।বিজ্ঞানীরা নিখুত ভাবে পর্যবেক্ষন করতে লাগল জেমেনির অ্যান্টিপার্টেকেল সোর্সকে।তারা অবাক বিস্ময়ে আবিস্কার করল নিশাতের পেপারটা পুরোপুরি নির্ভুল।
স্টার গেইটির এরিয়া বাড়ছে ধীরে ধীরে,খুব তাড়াতাড়ি ওটাকে ব্লক না করলে পৃথিবীর জন্য ভয়ানক পরিনিতি অপেক্ষা করছে সামনে।
অ্যান্টি-অবর্জাভারে ক্রুদের নিয়ে একটা মিটিং ডাকা হয়।ক্যাপ্টেন রিওন বলল, স্টার গেইটটি বন্ধ করার সমাধান আমাদের সবার ই জানা, ওখানে ভয়ংকর বিস্ফোরন ঘাটাতে হবে ।কিন্তু বিস্ফোরক গুলোকে কাউকে না কাউকে নিয়ে যেতে হবে ঐ জায়গাতে, কারন ওখানে রোবট মডিউল পাঠালে সেটা যে কোন সময় নিয়ন্ত্রন হারাতে পারে।
নিশাত বুঝে গেল তাকে কি করতে হবে।সে রাজি হয়ে গেল বিস্ফোরক গুলো নিয়ে যেতে।
এই মূহুর্তে ইমার কথা মনে পড়ল নিশাতের।জীবন আসলে বিচ্ছিন্ন কিছু নয়।ভালোবাসাকে তখনই অনুভব করা যায় যখন একে রক্ষা করার সময় চলে আসে।
মিটিং এ সবাই দাঁড়িয়ে শ্রদ্ধা জানালো নিশাতের প্রতি।
একটা স্কাউটশীপ আলাদা হয়ে পড়েছে মহাকাশযান অ্যান্টি-অবর্জাভার থেকে।স্কাউটশিপে নিশাত ছুটে যাচ্ছে জেমিনির দিকে।ইমার দেয়া কার্ডটির কথা মনে পড়ল নিশাতের।
রিডারে কার্ডটি ঢুকাতেই স্ক্রিনে ইমার মুখটি ভেসে উঠল,নিশাতের চোখ ভারী হয়ে উঠল।
নিশাত তোমার কি মনে আছে? কবে আমাদের দেখা হয়েছিল প্রথম?
তুমি হয়তবা সব ভুলে যাও,কিন্তু আমার মনে আছে।
(ঐদিনের কথা মনেপড়ল নিশাতের, টিশার্ট উল্টা করে পড়েছিল সেইদিন।
কেউ বলে দেইনি ওটা,অথচ ঐ ইউনিটে প্রথমদিন ছিল ইমার।)
তোমার টিশার্ট ঠিক করার জন্য বললাম,আর তুমি কেমন চমকে উঠলে।
তারপর থেকে আমাদের পরিচয়,তুমি কি জানো?
তোমার সাথে সময় কাটানো কত টা উপভোগ করতাম আমি!
ল্যাবের ক্যাফেতে কাটানো সময় গুলো?
পরের দিকে হয়তবা ভুল বুঝাবুঝি হয়েছে,
হটাৎ তুমি অন্যরকম হয়েগেলে, ল্যাব ছেড়ে দিলে।আমার সাথে যোগাযোগও কমিয়ে দিলে...কেন এমন করলে?
তোমাকে এড়িয়ে চলতাম বলে? তুমি কি কখনো সরাসরি আমাকে বলেছ তোমার ভালো লাগার কথা?
তুমি কি জান কতটা ভালোবাসি তোমাকে!
নিশাত কান্না থামিয়ে রাখতে পারলনা...
ক্যাপ্টেন রিওন বলছি"আমার যদি ভুল না হয়ে থাকে, তুমি আমার কথা শুনতে পাচ্ছ নিশাত।তুমি ২০ মিনিটের মধ্যে জেমিনি রেডিয়েশন কোরে ঢুকে পড়বে।তোমার কিছু বলার থাকলে বলতে পার"
নিশাত কোন জবাব দিল না...
অদ্ভুত এক মায়া গ্রাস করে ফেলে নিশাতকে ।তারপর
প্রচন্ড বিস্ফোরনে নিশাত মিলিয়ে গেল মহাশূন্যের অসীমতায়।
পৃথিবী থেকে দেখা গিয়েছিল
সেই বিস্ফোরনটি।ইমা অপলক চোখে শুধু চেয়েছিল।পৃথিবীতে নেমে এল বৃষ্টি,প্রচন্ড বৃষ্টিতে ইমার বিন্দু বিন্দু চোখের জ্বল চলে গেল সাগর থেকে মহাসাগরে....
আচ্ছা ব্যাপারটাকে এভাবে চিন্তা করা যায় না?
:প্রকৃতি মানুষের মত বুদ্ধিমান সত্ত্বার জন্ম দিয়েছে কারন পৃথিবীর ঠিকে থাকাটা মানুষের বুদ্ধিমত্তার উপর নির্ভর করছে।
................................................................................................
বিদ্র. পরিবর্তিত লেখাটা এখানে পেস্ট করে দিলাম....আর এই লেখাটা ড্রাফট করলাম না মন্তব্য গুলোর জন্য। পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই জুলাই, ২০১০ বিকাল ৩:১৪