প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজের ব্যক্তিগত ইচ্ছা পূরণের জন্য, ক্ষমতাকে জনগনের ইচ্ছার বিরুদ্ধে প্রলম্বিত করার জন্য স্বৈরাচারে পরিণত হয়েছেন। শুরু করেছিলেন সংবিধান পরিবর্তনের মাধ্যমে। আওয়ামীলীগসহ সব দলের মতামতকে উপেক্ষা করে নিজের ইচ্ছায় যাচ্ছেতাই ভাবে সংবিধান পরিবর্তন করেছেন। সেই সংবিধান অনুসারে মৃত্যু ব্যতীত ওনাকে ক্ষমতা থেকে সরানোর কোন উপায় নেই। কারণ, ক্ষমতাসীন বাংলাদেশী প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা এত বেশি যে, তিনি যা ইচ্ছা তাই করতে পারেন। সংবিধান তাকে বাঁধা দেবে না বরং সাহায্য করবে। নির্বাচন নিয়ে শুধু নয় ছয় নয়, তিনি নয় নিরানব্বইও করতে পারবেন (তিনি তা করে চলেছেন)। অবশ্য প্রধানমন্ত্রীর ভাষ্য থেকেই জানা গেছে, তিনি নির্বাচন ব্যাপারটাই পছন্দ করেন না। বলেছেন, বিএনপি নির্বাচনে আসলে সমঝোতার মাধ্যমে তাদেরকে কিছু আসন দিয়ে দিতেন, নির্বাচনের প্রয়োজন হতো না। নেহাত বিএনপি নির্বাচনে আসেনি বলে কয়েকটি আসনে সংবিধান রক্ষার জন্য নিয়ম রক্ষার নির্বাচন করতে হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রীর কৌশল দেখে অবাক হতে হয়। জাতির সাথে নির্বাচন নিয়ে এতবড় প্রতারণা করলেন তারপরও মিডিয়াকে বলতে গেলে তিনি কব্জা করে রেখেছেন। তথাকথিত বুদ্ধিজীবীরা সমানে তাকে তোষণ করে চলেছেন। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারটাকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে এমনভাবে ব্যবহার করছেন, তাতে যে কারো কাছে মনে হবে, আওয়ামী স্বৈরাচারের বিরোধীতা করা মানে সে রাজাকার, যুদ্ধাপরাধী।
লজ্জা নামক একটা শব্দ আছে, সেটা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কবেই ভুলে গেছেন। ছোট বেলায় সাথীদের সাথে খেলার সময় কারো সাথে ঝগড়া হলে তাকে ছোট করার জন্য বলা হতো, তোর সাথে খেলব না। কারো সাথে খেলতে না চাওয়াটা ছিল তাকে চূড়ান্ততম অপমান করা। যাকে এটা বলা হতো সে বহু চেষ্টা করতো অন্যদেরকে বুঝিয়ে খেলায় ফিরিয়ে আনতে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আর ছোটটি নেই। একটা দলও যদি ওনার সাথে নির্বাচনে না আসে, আমার ধারণা লজ্জিত হওয়ার বদলে উনি খুশি হবেন। লজ্জা বোকাদের ব্যাপার, সভ্যতা অন্যরা দেখাক, সেটা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বিষয় নয়। বিরোধীদল নির্বাচনে আসেনি, বিদেশীরা নির্বাচন পর্যবেক্ষণ বয়কট করেছেন। জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করার জন্যে এমনভাবে সংবিধান পরিবর্তন করেছেন যাতে ৫২% জনগণের ভোট নৌকার বাক্সে পড়ে গেছে নির্বাচনের আগেই। তবে এসব কিছু না, এতে কোন লজ্জা নেই, এতে কিছু যায় আসে না। জনগনের ভোটাধিকারের কথা বলতে যান, আমার আসনে ভোট হচ্ছে না - ইতোমধ্যে নির্বাচিত হয়ে গেছে, আমি যদি আমার ভোটের অধিকারের কথা বলতে যাই, তাহলেই আমি রাজাকার, যুদ্ধাপরাধী।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এমন অবস্থা তৈরি করেছেন যাতে রাজাকার, যুদ্ধাপরাধীদের ঘৃণা করেও কেউ যে ভোটাধিকার চাইতে পারে, গনতন্ত্র চাইতে পারে, তা আর কাউকে বিশ্বাস করানো যাচ্ছে না। অনেকেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রতিদান হিসেবে স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগকে সমর্থন করছেন, গণতন্ত্রের দাবিকে পাত্তা দিচ্ছেন না।
নিজের পছন্দমত পরিবর্তন করা সংবিধান রক্ষা করতে গিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জনগণের কথা ভুলে গেছেন। উনি কখনও বলেন না যে, জনগনের পছন্দমত নির্বাচন করছি, বরং বলেন যে সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন করছি। প্রধানমন্ত্রীর কাছে সংবিধানের দাম আছে, কারণ সংবিধান ওনাকে ক্ষমতায় রাখবে, ওনার কাছে জনগনের দাম নেই কারণ জনগন ওনাকে ক্ষমতায় রাখতে চায় না। প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতা বেশিক্ষণ শোনা ধৈর্য্যের পরীক্ষা। তারপরও ওনার কথা শুনি, অপেক্ষা করি কোন এক সময় যদি উনি বলেন যে, 'জনগনের ভোটাধিকার বাস্তবায়নের জন্য নির্দলীয় সরকারের দাবি মেনে নিলাম। তারপরও দেশে গণতন্ত্র অব্যাহত থাকুক।' আমি ভুল করেই এই আশা করি। এ ছাড়া আর কী করার আছে?
যেটা করার আছে সেটা নুরুল কবীর বলেছেন। তার মতে, রাজপথে আওয়ামীলীগকে মেরে হারাতে না পারলে আওয়ামীলীগ কখনও গণতন্ত্রের পথে আসবে না। এরশাদকে মেরে নামাতে নয় বছর লেগেছে। যা অবস্থা তাতে আওয়ামীলীগকে মেরে ক্ষমতা থেকে নামিয়ে দেশে গনতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্টা করতে কত বছর লাগবে, তা মহান আল্লাহতায়ালাই ভাল জানেন। এটা পরিষ্কার যে, প্রধানমন্ত্রী জনগনের বিশ্বাসের সাথে প্রতারনা করেছেন, তাদেরকে ব্ল্যাকমেইল করেছেন। দেখার বিষয় জনগন কতদিন প্রতারিত হয়ে থাকতে চায়।
জন সমর্থন না থাকার পরও যদি কেউ ক্ষমতা থেকে না নামতে চায়, যদি তাকে রাজপথে পরাজিত করে ক্ষমতা থেকে মেরে নামাতে হয়, তাহলে বিরোধী দলের আন্দোলন যে সহিংস হবে তাতে সন্দেহ কী? অবশ্যই সহিংস আন্দোলন চাই না, কিন্তু তারচেয়েও বেশি করে চাই দেশে গনতন্ত্র টিকে থাকুক।
হে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, হে আওয়ামীলীগ, দেশটাকে মারামারির জনপদে পরিণত কইরেন না। তাতে ক্ষমতায় হয়তো কিছুদিন বেশি থাকতে পারলেও পারতে পারেন, তবে তাতে লাভবান হতে পারবেন না।