দিগন্ত বিস্তৃত সবুজ আর সবুজ, আকাশ কী ঘন নীল! পূর্ণিমার রাতে আকাশ জোড়া ফিনিক ফাটা চাঁদের আলো। অন্ধকার রাতে আকাশ জুড়ে অনন্ত নক্ষত্র বীথি! অসম্ভব সুন্দর এই পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে মন চায় না; কিন্তু তারপরও চলে যেতে হয়। প্রচন্ড না চাওয়ার মধ্যেও দুয়ারে পালকি এসে দাঁড়ায়। মাটির মানুষ মাটির দেশে চলে যায়।
বুকের মধ্যে ডেকে ওঠে নাম না জানা পাখি;
চমকে উঠে ভাবি, যাবার সময় হয়ে গেল নাকি?[/sb
ঠিক ঠিক মনে নেই লাইনগুলো। তবে প্রিয় হুমায়ুন স্যার এরকমই লিখেছিলেন কোন এক বইতে। আহ্হারে... হুমায়ুন স্যার, আপনি কোথায় চলে গেলেন? অসংখ্য পাঠক, ভক্তকে রেখে কোন সুখের দেশে যেতে সাধ হল হল আপনার? আপনি যে অসংখ্য পাঠক ভক্ত রেখে গেলেন, তাদের জন্যে আর কে লিখবে অমন সতেজ বই? কে আর আমাদেরকে জ্যোসনায়, বৃষ্টিতে, রৌদ্রে ভেজাবে? কে আর অসম্ভব রুপবতীর খোঁজ দেবে? চোখের পানিতে কীবোর্ড ভিজে যাচ্ছে। কষ্ট আর কষ্ট।
স্যারের অসুস্থতার খবর শুনে সারাদিন মনে কু ডাকছিল। সন্ধ্যায় 'কোথাও কেউ নেই' নাটক দেখতে বসলাম। কী অসাধারণ শক্তিশালী একজন লেখক, নির্মাতা তিনি! হুমায়ুন আহমেদ নেই তা কীভাবে মেনে নেই? নাটকের শুরুর দৃশ্যে মুনা (সুবর্ণা) একাকী হেঁটে হেঁটে নি:সঙ্গ এক প্রান্তরে একাকী বসে থাকে। কোথাও কেউ নেই তার। সারা বুক শূন্যতায় ভরে যায়। স্যার, আপনি তো মুনা বা বাকেরের মত নি:সঙ্গ নন। আমরা কোটি কোটি পাঠক আছি আপনার। আপনার জন্য আমরা হেসেছি, কেঁদেছি, ভালবেসেছি। আপনি আমাদের আত্নার আত্নীয়।
মহান আল্লাহতায়ালার কাছে প্রার্থনা করি, হুমায়ুন স্যারকে আপনি মাফ করে কাছে টেনে নিন। কোন এক বইতে স্যার পবিত্র কোরআন শরীফের একটি আয়াতের কথা উল্লেখ করেছেন। সে আয়াতে মহান আল্লাহতায়ালা বলেছেন, যার অর্থ এরকম, "তোমাদের মধ্যে কারোও যখন মৃত্যুকাল উপস্থিত হয়, তখন তোমরা তাকে ঘিরে কান্না করতে থাকো। কিন্তু তোমরা জানোনা, আমি (আল্লাহ) তোমাদের চেয়েও তার (মৃত্যু পথযাত্রীর) অধিক নিকটবর্তী থাকি।"
হে মহান রাব্বুল আলামিন, আমি বিশ্বাস করি, আপনি হুমায়ুন স্যারের সাথে আছেন। আপনি তাকে আপনার রহমতের হাত দিয়ে পরম মমতায় ঢেকে রাখুন। আমিন।