
সিলেটে আছি ছয় বছর পার হয়ে গেছে। এই সময়ের মধ্যে কম ঘুরাঘুরি হয়নি। সম্ভব অসম্ভব অনেক যায়গায় ঘুরে বেড়িয়েছি। একটা সময়ে মনে হয়েছিল আর বুঝি কিছু বাকি নেই। সব দেখা শেষ



লালাখাল যাওয়ার রাস্তাটা পরিষ্কার জানা ছিলনা। তাই প্রথমবার জায়গাটা চেনার পর একটু বোকা বনে গিয়েছিলাম। লালাখাল যেতে হলে জাফলং যাওয়ার পথে সারীঘাট নামে একটা জায়গা আছে সেখানে নামতে হয়। আমি সারীঘাট হয়ে অসংখ্য বার জাফলং গিয়েছি। অথচ কখনও এখানে নামা হয়নি! এটা ভেবেই একটু বোকাবোকা লাগছিল


সারীঘাট টু লালাখাল - সেটালাইট ভিউ

সারীঘাট - একচুয়েল ভিউ
যাই হোক, লালাখাল সারীঘাট থেকে আরো অনেকটা ভিতরে। অনেকগুলো ইন্জিন চালিত নৌকা বাধা আছে দেখলাম ঘাটে । বুঝলাম এভাবেই যেতে হবে। একজন গেলাম মাঝিদের সাথে কথা বলার জন্য। আসা আর যাওয়া মিলে ১৪০০ টাকা দাম হাঁকালো বেটারা! বুঝলাম ঠকানোর মতলব


নৌকা চলতে শুরু করার পর প্রথম যে জিনিসটা দৃষ্টি আকর্ষণ করলো সেটা হলো সারী নদীর পানি। খুব সুন্দর মিষ্টি একটা সবুজ বর্ণ। খুব অবাক লাগলো। বাংলাদেশে কোন নদীতে এই বর্ণের পানি দেখিনি। এটা নিশ্চিত ছিলাম রঙটা আকাশের রিফ্লেকশন থেকে আসেনি। তাহলে নীল হতো। কয়েকজনকে জিজ্ঞেস করেও কোন সদুত্তর পেলাম না। এখনও জানিনা কারনটা



আমরা এগিয়ে চললাম। মে মাস। বেশ গরম পড়ছে। তার উপর নৌকার ভিতরে বেশ হাসফাস লাগছিল। তাই শেষ পর্যন্ত ছাদে উঠে বোসলাম। ফুরফুরে বাতাসে একটু স্বস্তি লাগলো। আর এখান থেকে ছবি তুলতেও সুবিধা

এই সময়টাতে সারী নদীতে মোটামুটি পানি আছে। হিমালয় হতে বয়ে আসা পানি। সচ্ছ টলটলে আর একটু ঠান্ডা। হাত দিলে শান্তির একটা পরশ অনুভব হয়। বেশ ভাল লাগে। নদীর দুই পাশে উচু উচু টিলা আর সাজানো সুন্দর চা বাগান। স্থানিয়রা নদীতে গোসল আর নিত্য প্রয়োজনীয় কাজে ব্যস্ত। তারা এই নদীটার উপর অনেকটাই নির্ভরশীল। উজান হতে বয়ে আসা পাথর আর কয়লা সংগ্রহ করে অনেকেই তাদের জীবিকা নির্বাহ করে। কিন্তু ভেবে খারাপ লাগলো এই নদী আর নদী পাড়ের মানুষগুলোর ভবিষ্যত সম্ভবত হুমকির মুখে। কারন কিছুদিন আগে সারী নদীর ইন্ডিয়া অংশে একটা ডেম নির্মান করা হয়েছে। খবরটা যদিও আমি প্রথম বিশ্বাস করিনি কিন্তু পরে গুগল আর্থের সাহয্যে এর সত্যতার প্রমান পেয়েছি। বাংলাদেশ থেকে সামান্য উজানে গেলেই এই নদীতে একটা ডেম এর অস্তিত্ব ধরা পড়ে। ডেমটির নাম লেখা আছে "লেসকা ডেম"। বেশ অবাক হয়েছিলাম। কারন টিপাইমুখে বাঁধ করা নিয়ে অনেকদিন ধরেই লেখালেখি হচ্ছে। আর এখানে ইতিমধ্যেই একটা বাঁধ তৈরি হয়ে আছে অথচ কেউ জানেই না ! অবশ্য ইন্ডিয়ানরা বাংলাদেশকে এই ব্যপারে কিছু জানিয়েছে কিনা তা সরকারই ভাল বলতে পারবে। ইন্ডিয়া এখনপর্যন্ত সতর্কতার সাথে পানি ব্যবস্থাপনার কাজ করছে বলেই মনে হচ্ছে। কারন এখনও এখানে খুব একটা বিরুপ প্রভাব পড়তে শুরু করেনি। কিন্তু কতদিন তারা এই সতর্কতা জারি রাখবে সেটা বলটা মুশকিল।

লেসকা ডেম। বাংলাদেশ হতে সামান্য উজানে

লেসকা ডেম। জুম ভিউ
যাইহোক, লালাখাল পৌছাতে ৪৫ মি: এর মত লাগলো। নামটা লালাখাল হলেও মজার ব্যপার হলো এখানে আসলে কোন খাল নেই



ফটোগ্রাফি

চা বাগান ঘেঁসে রাস্তা

চা পাতা জড়ো করা হচ্ছে

চা
সন্ধ্যা হয়ে গেছে প্রায়। আমরা লালাখাল ঘাটে এসে জড়ো হোলাম। নৌকায় উঠতে হবে আবার। শেষ বারের মত ভালভাবে তাকালাম চারদিকে। সবুজ পাহাড়ের সারি আর এর ভাঁজ ধরে একেবেকে বাংলাদেশে ঢুকে পড়া নদীটিকে সন্ধ্যার অল্প আলোতে অপূর্ব দেখাচ্ছিল। ক্যামেরা টা সেট করে নিয়ে দিনের শেষ ছবিটি তুলে ফেললাম (নিচের ছবিটা)।

সারী নদী
তারপর নৌকায় চড়ে বোসলাম। মনের মধ্যে একটা আক্ষেপ কাজ করছিল তখনও। তাই সিদ্ধান্ত নিলাম, আবার আসতে হবে। আপাতত বিদায় লালাখাল ।।