"
যুদ্ধাপরাধ : বিচারের জন্য ৩৯ বছর অপেক্ষা
মোকাররাম হোসেন |
এ কথা সত্য যে, আপস আর সমঝোতার মধ্য দিয়েই সমাজকে এগিয়ে যেতে হয়েছে। তবু প্রশ্ন থেকে যায়, সব বিষয়ে কি আপস করা সম্ভব? না আপস করা উচিত? মানবসভ্যতা আজ যে স্থানে এসে দাঁড়িয়েছে, তা কখনোই সম্ভব হতো না, যদি না বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ব্যক্তিত্ব সত্যকে প্রতিষ্ঠার প্রয়াসে পর্বতপ্রমাণ বাধাকে অগ্রাহ্য করে মিথ্যার সঙ্গে আপস না করতেন এবং জীবনের ঝুঁকি না নিতেন। ইতিহাস বারবার তার সাক্ষ্য দিয়েছে। আর তাই ১৯৭১ সালের যুদ্ধাপরাধের বিচার করার উদ্যোগ যখন নেওয়া হয়েছে, তখন তাকে সেই বিবেচনাতেই দেখতে হবে।
অখণ্ড পাকিস্তানের ২৪ বছরের ইতিহাস হচ্ছে অগণতান্ত্রিক শক্তির সঙ্গে আপসের ইতিহাস এবং সত্যকে অস্বীকার করার ইতিহাস। এই আপসের সঙ্গে খুব কম বাঙালিই হাত মিলিয়েছে। যারা হাত মিলিয়েছিল, তারা সমাজে দালাল বলে পরিচিত। পাকিস্তানিদের মিথ্যার আশ্রয়ের জন্য দেশটির বর্তমান অবস্থা করুণ। পাকিস্তান একটি ব্যর্থ রাষ্ট্র বলে পরিচিত।
বাংলাদেশের অবস্থাও খুব সন্তোষজনক নয়। তবে এর সম্ভাবনা অনেক। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কারণে বহির্বিশ্বে দেশের মর্যাদা বেড়েছে। দু-একটি দেশ গোপনে বিরোধিতা করতে পারে, তাতে কিছু আসে-যায় না। যুদ্ধাপরাধীর বিচারের উদ্দেশ্য হচ্ছে সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠা। এখানে হিংসা বা প্রতিহিংসার কিছু নেই। যারা এখনো মানবতাকে গ্রহণ না করে ব্যক্তিস্বার্থকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে, তাদের হুঁশিয়ার করে দেওয়ার জন্য এ বিচার। সর্বোপরি, যাঁরা ১৯৭১ সালের মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার, তাঁদের আত্মার শান্তির জন্য দরকার এ বিচার। আর এর প্রধান আসামি হলো পাকিস্তান এবং তার এ দেশীয় সহচরেরা।
মানবাধিকার লঙ্ঘনের কোনো স্টেটুুয়ারি লিমিট বা সংবিধিবদ্ধ সীমা নেই। তাই ৩৯ বছর পরও অপরাধীদের বিচার সম্ভব এবং হওয়া বাঞ্ছনীয়। স্বাধীনতার পরপরই কেন বিচার হয়নি, কে বা কারা তার জন্য দায়ী, সেসব প্রশ্ন ন্যায়সংগত হলেও বর্তমানের উদ্যোগকে বিতর্কিত করা উচিত নয়; বরং ৩৯ বছর পরও যে অতীতের ভুল সংশোধনের চেষ্টা হচ্ছে, তাকে সমর্থন করা সবার নৈতিক দায়িত্ব।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ মধ্যরাত থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত পাকিস্তানি বাহিনী ও তার সমর্থকেরা যে মানবাধিকার লঙ্ঘনের কর্মকাণ্ড চালিয়েছে, তার বিচার হওয়া উচিত। এর সমর্থনে সবাইকে এগিয়ে আসা উচিত, বিশেষ করে যাঁরা ১৯৭১ সালের হত্যাযজ্ঞের শিকার হয়েছেন, তাঁদের আপনজন, বন্ধুবান্ধব ও পরিচিত সবার জন্য এই বিচারকে সমর্থন করা নৈতিক কর্তব্য।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের পর অনেক নিরীহ নারী-পুরুষ নিহত হয়েছেন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতে। রাতের অন্ধকারে ঘরে প্রবেশ করে ঘুমন্ত ব্যক্তিকে হত্যা করা কোনো বীরত্বের কাজ নয় এবং কোনো যুক্তি দিয়েই এ রকম ঘৃণ্য কাজকে জায়েজ করা যায় না। রাতের অন্ধকারে আক্রমণ করা অবৈধ এবং সভ্যতার বিরোধী।
পাকিস্তান সরকার এবং তার কিছু তাঁবেদার ১৯৭১ সালের হত্যাযজ্ঞের প্রমাণ মুছে ফেলার চেষ্টা করলেও পুরোপুরি সফল হয়নি। যাঁরা জীবন হারিয়েছেন, যাঁরা লাঞ্ছিত হয়েছেন, যাঁরা অত্যাচারিত হয়েছেন, তাঁদের আপনজনের স্মৃতিতে অপকর্মের প্রমাণ জাগ্রত হয়ে আছে। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর শিকার হয়নি এমন পরিবার খুঁজে পাওয়া কঠিন। তার পরও এ দেশে এমন কিছু লোক আছে, যারা একাত্তরের ঘটনাকে একটি সাধারণ ঘটনায় পরিণত করতে চায়। হত্যাযজ্ঞকে পরিণত করতে চায় রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে। নিরীহ মানুষকে হত্যা করা কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড হতে পারে না।"
সুত্র : যুদ্ধাপরাধ: বিচারের জন্য ৩৯ বছর অপেক্ষা
"'
খোলা চোখে
অসহিষ্ণুতার বলি
হাসান ফেরদৌস
গত সপ্তাহে দুটি খুনের ঘটনা ঘটেছে, একটা পাকিস্তানে, অন্যটি আমেরিকায়। প্রথম ঘটনায় পাঞ্জাবের গভর্নর সালমান তাসির নিহত হয়েছেন তাঁর ব্যক্তিগত দেহরক্ষীর গুলিতে। দ্বিতীয় ঘটনায় অ্যারিজোনা অঙ্গরাজ্যের টুসন শহরে এক ঘাতকের গুলিতে নিহত হয়েছে ছয়জন নিরীহ নাগরিক, তাদের মধ্যে নয় বছরের একটি কিশোরীও আছে।
আক্রমণের লক্ষ্য ছিল ডেমোক্রেটিক কংগ্রেস সদস্য গ্যাবি গিফোর্ডস। তাঁর মাথায় গুলি লেগেছে। জানে বেঁচে গেছেন, কিন্তু সম্পূর্ণ সুস্থ হবেন কি না, তা নিয়ে সন্দেহ আছে।
ভিন্ন ভিন্ন দেশের ঘটনা হলেও উভয় খুনের পেছনেই কারণ একটি—অসহিষ্ণুতা। আমি যা বিশ্বাস করি সেটাই ঠিক, অন্য কারও মত বা বিশ্বাসের সঙ্গে আমার মতের মিল না হলে তাঁকে আক্রমণ করার, এমনকি হত্যা করার পূর্ণ অধিকার আমার আছে—এমন ধারণা থেকেই ঘটনা দুটি ঘটেছে।
.............................................................পাকিস্তানে? আমি নিশ্চিত, সে দেশের সবাই খুনি নয়, সবাই সাম্প্রদায়িকও নয়। যারা ঘৃণার আগুন ছড়ায়, সে দেশে তারা সংখ্যায় সামান্যই। কোনো নির্বাচনেই যে মৌলবাদীরা জিতে ক্ষমতায় আসে না, তা থেকেই এ কথার প্রমাণ মেলে। কিন্তু দেশের অধিকাংশ মানুষ যখন সেই হাতে গোনা অল্প কিছু মানুষের হিংসার হাতে জিম্মি হয়ে পড়ে, প্রতিবাদের সাহস হারায়, তাদের জন্য আশার কোনো আলোই থাকে না।"
এ প্রবন্ধ দুটো আজকের প্রথম আলোতে ছিল একই পাতায় । তখন মনে হল যুদ্ধাপরাধের বিচার যেন কারো অসহিষ্ণুতার বলি না হয় যথার্থ বিচার ই হয় । এ কথা মনে আসার কারন যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের নির্বাচনী ইশেতহার নিয়ে নির্বাচিত মুক্তিযুদে্ধর পক্ষের সরকার যখন বিশ্বকাপের জন্য চিহ্নিত একটি প্রতিষ্ঠান ইসলামি ব্যাংকে স্পনসর করে তখন একই সাথে যুদ্ধাপরাধের বিচার নিয়ে সরকারের সদিচ্ছা নিয়ে প্রশ্ন জাগে এবং ভয় হয় কেউ কেই রাজনৈতিক বিবেচনায় অসহিষ্ণুতার বলি হয় কিনা
(ইসলামি ব্যংক যে জামাতের নেতাদের দ্বারা পরিচালিত , এবং এর কর্মীদের বেশীর ভাগ জামাত , শিবির সমর্থক এব্যাপারে কারো কোন দ্বিমত থাকার অবকাশ নেই , এ ব্যাংকে এক সময় নিয়োগের সময় ২ জন ইসলামি ব্যক্তিত্বের রেফারেন্স লাগত এখন লাগে কিনা জানিনা এ ২ জন রেফারেন্স জামাত বা শিবির নেতা না হলে ভাইবা পাশ করা যায় না
আর জংগি বা মৌলবাদিদের আয়ের উৎস গুলোর প্রধান খাত যে ব্যাংক আর অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান তা আবুল বারাকাত আরো আগেই বলেছেন Economics of Fundamentalism and the Growth of Political Islam in Bangladesh Abul Barkat )