তুমি আছো তবু তুমি নেই! পরিস্থিতি ঠিক এরকমই। শিক্ষক উপস্থিত, প্রতিদিন পড়াচ্ছেন, পরীক্ষা নিচ্ছেন, উত্তরপত্র মূল্যায়ন করছেন -তবুও যেন তিনি নেই। ঘাটতি কাটছে না। এই ঘাটতি প্রজন্মের পর প্রজন্মকে খুঁড়ে খুঁড়ে খাচ্ছে। শিশুদের বিকাশকে করছে বাধাগ্রস্ত। কয়েকটি বিষয় নিয়ে বর্তমান লেখাটি।
আমাদের দেশে প্রাথমিক পর্যায়ে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষকের হার মাত্র ৫৭.৭৩ শতাংশ। অর্থাৎ ৪২ শতাংশ শিক্ষক কোন প্রায়োগিক ধারণা ছাড়াই আমাদের শিশুদের মুখোমুখি হচ্ছেন। এই প্রশিক্ষণপ্রাপ্তরা চাকরির আগেই প্রশিক্ষণ নিয়েছেন, নাকি পরে নিয়েছেন, সেটি অবশ্য স্পষ্ট নয়।
তবে বাস্তব চিত্রটি আরও বিপদজনক, কারণ ব্যক্তিগতভাবে বেড়ে ওঠা বিদ্যালয়গুলো এই প্রতিবেদনে নেই। পৌর এলাকায় ছত্রাকের মতো বেড়ে ওঠা ইংরেজি মাধ্যম এবং কেজি স্কুলগুলোও এখানে নেই। কিছু সুপরিচিত বিদ্যালয় বিষয়ভিত্তিক পাঠদানের ওপর তাদের শিক্ষকদেরকে প্রশিক্ষণ দিলেও, শিশু মনস্তত্ত্ব বা শিশুর অন্যন্য চাহিদাকে কেন্দ্র করে কোন প্রশিক্ষণ প্রায় নেই। এটি কেবল প্রাতিষ্ঠানিক (বিএড অথবা এমএড পর্যায়ে) শিক্ষায়ই থাকে।
শিশুর বয়স অনুপাতে পাঠদান এবং পাঠ মূল্যায়ন করতে পারা একটি বিশেষায়িত জ্ঞান। প্রশিক্ষণ অথবা বাস্তব অভিজ্ঞতা কোন কিছুই নেই, এমন শিক্ষকই বেশি থাকায় শিশুর চাহিদার বিষয়টি উপেক্ষিত থাকছে।
শিশুর মনমানসিকতা এবং তাদের বৈচিত্রময় চাহিদাকে না বুঝে আমাদের অধিকাংশ শিক্ষক প্রায় জোর করেই পাঠ্যপুস্তককে গলাধকরণ করাচ্ছেন। ফলে শিশুরা তাদের উপযুক্ত পাঠ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এবং বিদ্যালয় হয়ে যাচ্ছে পরীক্ষা পাশ করানোর এজেন্সি।
এমন একটি পরিস্থিতি যে, এসব ভয়ংকর পরিস্থিতি নিয়ে তাত্ত্বিকভাবে অনেক কিছুই বলার সুযোগ আছে। অনেক প্রায়োগিক ত্রুটি হচ্ছে, যা স্থায়ি প্রভাব ফেলছে শিশুদের প্রতিভা বিকাশে। এবিষয়ে বিস্তারিত বললে পাঠকের ধৈর্য্যচ্যুতি ঘটবে।
কিন্তু কিছু মৌলিক বিষয়ে আমাদের মতো আমজনতার সচেতনতার প্রয়োজন। তা না হলে পারস্পরিক জবাবদিহিতা গড়ে ওঠবে না। তাতে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে ওঠতে পারে। তাই শুধু মৌলিক কিছু বিষয় নিয়ে বর্তমান লেখাটি।
শিশু মনস্তত্ত্ব বিষয়ে প্রায়োগিক জ্ঞান না থাকায় অনেক শিক্ষক ‘ঠিক এভাবে’ শিশুদের প্রতিভার বিনাশ করছেন:
১) অপ্রয়োজনীয় শব্দ/বিষয়/পরিভাষাকে পাঠের মূল বিষয় হিসেবে পরিচিত করিয়ে
বাঁশের তেল মাখার পর এটি কেন অথবা কীভাবে পিচ্ছিল হয় শিশুকে এসব বুঝার আগেই, তৈলাক্ত বাঁশ দিয়ে বানরের ওঠানামাকে পাটিগণিতের মূল বিষয় হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে।
নীলনদ মিশরের আশির্বাদ, পক্ষান্তরে হুয়াংহু চিনের দুঃখ; অথবা হাওয়াই রাজ্যের রাজধানী হনুলুলু এসব বিষয় মুখস্থ করানোর জন্য এদেশে শিশুদের ওপর শারীরিক নির্যাতন হয়েছে। অথচ নিজের দেশের তিনটি প্রধান নদীর অবস্থানকে সেভাবে শেখানো হয় নি। নিজের গ্রামের পাশের শাখা নদীটি কোথা থেকে এলো, অথবা এটি আদৌ নদী নাকি নদ, সেটিও সেভাবে বুঝানো হয় নি।
‘ডাক্তার আসিবার আগেই রোগী মারা গেলো’ এর ইংরেজি অনুবাদ করতে পারাকে ইংরেজির জ্ঞান বলে তুলে ধরা হয়েছে। কথা বলা নয়, অনুবাদ আর শব্দার্থ শিখতে পারাকেই ভাষাজ্ঞান বলে বিশ্বাস করানো হয়েছে। ফলে তারা অনুবাদ শিখলেও ভাষাগত জ্ঞান থেকেছে অধরা।
আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থাটিই এমন। যখন যা প্রয়োজন, তখন সেটি শেখানো হয় নি। কিন্তু অপ্রয়োজনীয় পরিভাষা, বয়সের অনুপযুক্ত ইতিহাস ও ভূগোল শেখানোর জন্য শিশুর মনস্তত্ত্বে স্থায়িভাবে আঘাত হানা হয়েছে।
২) অনুপযুক্ত বিষয় চাপিয়ে দিয়ে
পাঠদানকে সহজ করা অথবা বোধগম্য অংশে ভাগ করা শিক্ষকের প্রাথমিক দায়িত্ব। প্রশিক্ষণের অভাবে হোক, অথবা প্রতিশ্রুতিশীলতার অভাবে, অধিকাংশ শিক্ষক সেটি করেন না।
উপরন্তু, শিশুদের জন্য যা উপযুক্ত নয়, সেসব বিষয় চাপিয়ে দেন: যা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা প্রয়োজন, সেটি দেওয়া হয় মুখস্ত করার জন্য। যে বিষয় দেওয়া হয় শুধুই প্রাথমিক ধারণা দেবার জন্য, সেটি প্রয়োগ করতে বাধ্য করা হয়।
লেখা থেকে শোনা, তারপর পড়া, তারপর শেখা। তারপর হয় প্রয়োগ। শব্দ রচনা থেকে বাক্য রচনা। বাক্য থেকে অনুচ্ছেদ। তারপর রচনা বা চিঠি। এসব পারম্পরিক প্রক্রিয়া আমাদের বিদ্যালয়গুলোতে অনুপস্থিত।
রচনা, চিঠি, ভাবসম্প্রসারণ, অনুচ্ছেদ – এসব বিষয় শিশুদের স্বাভাবিক চিন্তা থেকে আসা উচিত। এখানে শুদ্ধতা নয়, চর্চাকেই গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। কিন্তু একটি শুদ্ধ রচনা পরীক্ষার খাতায় লেখার জন্য শিশুদেরকে মুখস্ত করতে বাধ্য করা হয়।
রোট লানিং বা বোধহীন মুখস্ত করার প্রবণতা শিশুদের স্বাভাবিক বিচার শক্তিকে নষ্ট করে দেয়।
আমাদের শিশুরা সৃজনশীল কোনকিছু লেখতে পারে না। ইংরেজি কী লেখবে, বাংলাই তো লেখতে শিখে নি! (প্রতিটি শিশুকে ব্লগার বানিয়ে দেওয়া যায় কিনা, ভাবছি!)
৩) নিজেই সবকিছু করে দিয়ে
পাঠ্যবইয়ে লেখাই থাকে ‘নিজে করো’। কিন্তু দয়ার্দ্র্য শিক্ষক সেটি শিশুকে দিয়ে করাতে চান না!
পাঠ্যবইয়ের অনেক বিষয়ই শিশুরা হয় ‘একা অথবা দল’ হিসেবে করে ফেলতে পারে। তাতে শিক্ষকেরও শ্রম কমে যায়। কিন্তু শিক্ষক সেটি না বুঝার কারণে, অথবা নিজের প্রয়োজনীয়তা অটুট রাখার জন্য, শিক্ষার্থীদেরকে নিজে থেকে কিছু করাতে চান না।
শিশুরা চ্যালেন্জ নিতে এবং নিজেই কিছু করে দেখাতে পছন্দ করে। কিন্তু অনেক শিক্ষক শিশুদের এই স্বাভাবিক প্রবণতাকে শিক্ষাদানের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করতে ব্যর্থ হয়েছেন।
ফলে শিশুরা পরনির্ভশীলতা থেকে ওঠে আসতে পারে না। পাঠ্যবইয়ের বাইরে তারা কিছুই করতে বা লেখতে বা সৃষ্টি করতে পারে না।
বড় ক্ষতি হলো, তারা নিজে থেকে কিছুই করার সাহস পায় না, কারণ শিক্ষাজীবনে এই অভ্যাসটি তাদের গঠিত হয় নি।
৪) নিজের দায়িত্ব পালন না করে
পাঠপরিকল্পনা না করা। এই অভ্যাসটি প্রায় নেই বললেই চলে। আমাদের শিক্ষকেরা ক্লাসের আগে পাঠপরিকল্পনা (লেসন প্লান) তৈরি করাকে অতিরিক্ত কাজ বলে মনে করেন। অথচ এটি তাদেরই পেশাগত দক্ষতাকে শানিত করে। পরিকল্পনা ছাড়া কার্যকর এবং অংশগ্রহণমূলক পাঠদান অসম্ভব।
পরীক্ষা এবং শ্রেণীকক্ষ ভিত্তিক পাঠদানের জন্য উপযুক্ত প্রস্ততি না নেওয়া। যেহেতু দৈনন্দিন পাঠদানের জন্য কোন পূর্বপ্রস্তুতি নেই, একই কারণে পরীক্ষা বা গুরুত্বপূর্ণ কোন মূল্যায়নের জন্য শিশুরা কার্যকর দিকনির্দেশনা থেকে বঞ্চিত হয়।
কোন্ বিষয়টি শিশুদের বৈচিত্রময় সামর্থ্যের সাথে সাংঘর্ষিক, শিক্ষক এসব বিষয়ে ধারণা রাখেন না। ফলে কঠিন বিষয়টি তাদের দায়িত্বহীনতার কারণে আরও কঠিন হয়ে আবির্ভূত হয় শিশুদের মাঝে।
নিয়মিত শিক্ষার্থীদের সাথে না থাকা। কিছু বিশেষ সময় শিশুদের দরকার হয় শিক্ষকের সঙ্গ – মাবাবার কার্যকারিতা কম। শিক্ষক শ্রেণীকক্ষে থেকেও শিশুদের থেকে অনেক দূরে থাকেন। সেটি মনস্তাত্ত্বিক অথবা ভৌগলিক উভয়ই হতে পারে।
একটি কঠিন বিষয়ের সমাধানের সময়, শিক্ষকের সাহচর্য্য প্রয়োজন। শিক্ষক তার ব্যক্তিত্ব ও বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ দিয়ে নিজেকে শিশুদের মধ্যে ‘এভেইলেবল’ রাখবেন, এটিই প্রত্যাশিত। এই প্রত্যাশিত আচরণটি শিক্ষকদের মধ্যে পাওয়া যায় না।
অভিভাবকদেরকে যথাযথভাবে সম্পৃক্ত না করা। শিশুর বুদ্ধিবৃত্তিক উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন বিদ্যালয় এবং অভিভাবকের সমন্বিত প্রচেষ্টা। অভিভাবককে যথাসময়ে যথাযথভাবে সম্পৃক্ত করা একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব, যা অনেক শিক্ষক পালন করেন না, অথবা এর গুরুত্ব মূল্যায়ন করেন না।
৫) শুধুই পাঠ্যপুস্তকের অনুশীলনী মোতাবেক পাঠদান করে
পাঠ্যপুস্তকে দেওয়া অনুশীলনী মোতাবেক পাঠদান করা সহজ, তার প্রধান কারণ সেটি বাজারের নোটে সমাধান করা আছে। দ্বিতীয় কারণ হলো, এতটুকুতেই শিক্ষক অভ্যস্ত।
পাঠ্যপুস্তকের বাইরে যাওয়া কঠিন, কারণ তাতে শিক্ষকের অতিরিক্ত চিন্তা করতে হয়। ভালোমতো ভাবতে না পারলে শিক্ষার্থীদের কাছে বিব্রত হবার সম্ভাবনা। বিব্রত হবার ভয় আছে, কারণ আমাদের শিক্ষকেরা ‘সবজান্তা’ হিসেবেই নিজেকে প্রদর্শন করতে চান।
কিছু বিষয়ে ঘাটতি থাকতে পারে, কিছু বিষয় শিক্ষার্থীদের সমবেত চেষ্টা থেকে বের হয়ে আসতে পারে। এটি আমাদের অধিকাংশ শিক্ষক বিশ্বাস করতে নারাজ।
পাঠ্যবইয়ের বিষয় নিয়েই অতিরিক্ত প্রশ্নপত্র সৃষ্টি করা যায় এবং তাতে শিশুদের মধ্যে আগ্রহ ও কৌতূহল বৃদ্ধি পায়। নতুন বিষয়কে সমাধান করে তারা আনন্দ পায়। বড় সুফল হলো, তাদের দক্ষতার বিস্তৃতি ঘটে।
পাঠ্যপুস্তকে সীমাবদ্ধ থাকার এই প্রবণতার ভয়ংকর দিকটি হলো, শিশুরা পাঠ্যবিষয়কে জীবনের সাথে মেলাতে পারে না। পাঠ্যবইয়ে গুরুজনকে সালাম জানাবার বিষয়টি শিখে পরীক্ষার খাতায় লেখে আসলেও, সামনে কোন বয়স্ক ব্যক্তিকে পেলে তারা সম্মান জানাতে ভুলে যায়।
জীবন আটকে যায় পাঠ্যপুস্তকের পাতায়।
৬) পরীক্ষা/গাইডবুকমুখী পাঠদান করে
প্রাথমিক, মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের প্রতিটি আবশ্যিক বিষয়ে ‘শিক্ষক সহায়িকা’ আছে। প্রায় ৯০ শতাংশ শিক্ষক সেটি অনুসরণ করেন না।
অপ্রত্যাশিত হলেও, এটি প্রচলিত সত্য যে, পরীক্ষার লক্ষ্যেই তারা পাঠদান করেন। আমাদের সমাজে শিক্ষক এবং অভিভাবকের যৌথ প্রয়াসটি হলো: বিদ্যাদান নয়, পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি প্রদান করা।
যেহেতু পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতেই হবে, সেহেতু গাইড বই পড়ো। গাইড পরীক্ষায় পাশ করালেও, এটি সবসময়ই জীবনের দিকনির্দেশনায় ‘মিসগাইড’ করে।
ফলে শিশুরা বিদ্যার জন্য পড়ার সুযোগ বা স্বাধীনতা কিছুই পায় না। এমনকি নিজের চেষ্টায় ‘স্বাভাবিক সামর্থ্য দিয়ে পাশ’ করার সুযোগ থেকেও তারা বঞ্চিত। কৃত্রিম উপায়ে জিপিএ ফাইভ পাওয়াতে পারলেই আমাদের শিক্ষকগণ খুশি।
অধিকাংশ শিশুদের তাদের ঐকান্তিক চাওয়া ও স্বপ্নের সাথে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাকে যুক্ত করতে পারে না।
৭) পাঠ্যপুস্তকই জীবনের সবকিছু, বাকি সব অপাঠ্য - এমন ধারণা দিয়ে
“আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে, স্বশিক্ষাই একমাত্র শিক্ষা।” বলেছেন আইজাক আসিমভ। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা হয়তো পরীক্ষায় পাশ করায়, কিন্তু প্রতিষ্ঠিত সত্য হলো, কর্মসংস্থানের পরীক্ষায় এসে সকলেই একবার করে হাবুডুবু খেতে হয়।
পরিতাপের বিষয় হলো, আমাদের শিক্ষক (এবং অভিভাবকেরা) পাঠ্যপুস্তকের জ্ঞানকেই বেঁচে থাকার একমাত্র উপায় মনে করেন। তাদের এই অপবিশ্বাস তারা শিশু এবং সন্তানদের মধ্যেও ইনজেক্ট করেন। অবুঝ শিশুরা তখন কিছুই বুঝতে পারে না, যে পর্যন্ত না জীবনের প্রধান পরীক্ষা অর্থাৎ কর্মসংস্থানের মুখোমুখি হচ্ছে।
পরিণতি হলো ঘরকুনো হয়ে শুধুই পাঠ্যপুস্তকের বিষয় গলাধকরণ করা। পরীক্ষা, শিক্ষক আর অভিভাবকের সমবেত চাপের কারণে নিজেদের পছন্দের বইটিও তারা পড়তে পারে না। বরং ‘আউট বই’ পড়াকে তারা অপরাধ হিসেবেই বিশ্বাস করতে বাধ্য হয়েছে।
নজরুলের মতো উড়নচণ্ডেরাই প্রতিভাবান হয়। মাটির সাথে যুক্ত না থাকলে যেমন তরু বাঁচে না, প্রকৃতি থেকে বিযুক্ত শিক্ষা কখনও ফলদায়ক হতে পারে না।
এরকম একমুখী চাপের কারণে শিশুরা তাদের স্বাভাবিক জ্ঞানার্জন ও প্রাকৃতিক শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হয়।
আমাদের শিক্ষানীতিতে অনেক ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে, কিন্তু শ্রেণীকক্ষের পাঠদানকে উন্নয়ন করার জন্য বিশেষ কোন ব্যবস্থা আজও নেওয়া হয় নি। শিক্ষাদান সম্পর্কে মৌলিক প্রশিক্ষণ ছাড়াই এদেশে চাকরি পাওয়া যায়।
আমাদের প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থাকে ঘিরে বিস্তর গবেষণা হচ্ছে। অনেক উন্নয়নও হচ্ছে। কিন্তু উন্নয়নের নামে যখন শিশুদের স্বাভাবিক বিকাশকে বাধাগ্রস্ত করা হয়, তখন ধরেই নেওয়া যায় যে, প্রাথমিক শিক্ষার কোন ভবিষ্যত নেই। (প্রথম খসড়া, ৮/এপ্রিল/২০১৬)
সামুতে প্রকাশিত কয়েকটি প্রাসঙ্গিক পোস্ট:
▶ বিদ্যালয় আমারে শিক্ষিত হতে দিলো না
▶ স্বশিক্ষিত ক্ষণজীবীরা - বলছিলাম সাউথ পোলারদের কথা
------------------------------------------------------
টীকা:
১) ব্যতিক্রম কি নেই: ইচ্ছাকৃতভাবেই কিছু বিষয়কে সরলিকরণ করা হয়েছে, যেন প্রচলিত শিক্ষাদান পদ্ধতিতে পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরা যায়। আমার জানামতেই অনেক শিক্ষক এবং অভিভাবক আছেন, যারা শিশুদের সৃজনশীলতাকে প্রেরণা দেবার জন্য নিজেদের ব্যক্তিগত চাওয়া-পাওয়াকে বিসর্জন দিয়েছেন। এমন রত্নগর্ভা মাতা আমাদের মধ্যে আছে। দুঃখের বিষয় হলো, তাদের সংখ্যাটি খুবই নগণ্য।
২) শিক্ষানীতিও কি দায়ি নয়: প্রজাতন্ত্র হোক কিংবা রাজতন্ত্র, রাষ্ট্রই সবকিছু নির্ধারণ করে দেয়। যার ক্ষমতা, তারই দায় থাকে। শিক্ষানীতিই সবকিছুর জন্য দায়ি। এবিষয়ে আলাদাভাবে লেখার খায়েশ আছে।
৩) দৃষ্টান্তগুলো কি পর্যাপ্ত: দৃষ্টান্তগুলো কেবলই একেকটি প্রতীক। এগুলোর যথার্থতার চেয়ে প্রাসঙ্গিকতাকে বেশি বিবেচনা করা হয়েছে।
৪) সৃষ্টিহীন শিক্ষা কি স্রষ্টাহীন দেশের জন্য দায়ি: পশ্চিমারা শিক্ষায় আবিষ্কারে অভিযানে এগিয়ে থাকে, এটিই যেন স্বাভাবিক। গুটি কয়েক জগদীশ, রবীন্দ্রনাথ আর ফজলুর রহমান ছাড়া এদেশে আর কোন প্রতিভাবান নেই বা ছিল না। কেন নেই, কেন ছিল না সেটি নিয়ে মাঝে মাঝে ভাবিত হই। দেশের সৃষ্টিহীন শিক্ষা ব্যবস্থা কি এর জন্য দায়ি?
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই এপ্রিল, ২০১৬ রাত ৯:৪৮