আমার রেজিস্টার্ড বান্ধবিটি কইলো, কফি খাওয়াও! চাইছিলাম ছুটির দিনে একটু হাঁটাহাটি করবো। বাসায় কফির যাবতিয় এন্তেজাম থাকা সত্ত্বেও এই আবদার! অবশ্য কারণ আছে। একটি কফি শপ সম্প্রতি বেশ নাম করেছে। ওরা নিজেরাই কফি এনে গুঁড়ো করে এবং রোস্ট করে। কফির আসল গন্ধে যে কারও কফি খাবার আবদার জাগে। ওদের একটি আউটলেট আমাদের বাড়ির বগলে আইছে!
কী আর করা, অগত্যা সিদ্ধান্ত বদল। গেলাম কফি খেতে (মতান্তরে পান করতে)। সেখানে গিয়া দেহি এলাহি কাজকারবার। সেই কফির দোকানটি বেশ কয়েকমাস ধইরা শুরু হইছে। দারুণ পসার জমাইছে। তাদের দেখাদেখি আরেকটা ক্যাফে। আরেকটা কফি শপ। ওপর তলায় একটি রেস্টুরেন্ট ‘বাই ডিফল্ট’ আগেই ছিল। বলা বাহুল্য, এইটা একটা হাসপাতাল। বিখ্যাত একটি প্রাইভেট হাসপাতাল। অনেক হাঁকডাক তাদের। কিন্তু বছরখানেক আগেও বেইজমেন্টে এত বাণিজ্যিক ব্যস্ততা ছিল না। প্রশ্ন জাগে, ‘হাসপাতাল তাইলে কিতার লাগি?’ এই হাসপাতালের মূল উদ্দেশ্য কি চিকিৎসা, নাকি অন্য কিছু?
২.
একটি ইনস্টাগ্রাম আইডি থাকা খুব দরকার মনে হচ্ছে। ছবি দিয়ে অখ্যাত মানুষ বিখ্যাত হচ্ছে, বিখ্যাত মানুষ ... হচ্ছে এই ইনস্টাগ্রাম দিয়ে। মাঝে মাঝে ফেইসবুকের সংবাদ কলামে ইনস্টাগ্রাম ব্যবহারকারী বন্ধুদের ছবি ভেসে ওঠে। কিন্তু আজও আমার একটি ইনস্টাগ্রাম আইডি হলো না!
দেশে কিছুদিন ফেইসবুক বন্ধ থাকার বড় শিক্ষা হইলো, ফেইসবুক ছাড়া জীবন থেমে থাকে নি। খালি পোলাপাইনের পিনিকটুকু বাধা পাইছে। ব্যক্তিগতভাবে এটি না থাকলে খুব একটা ক্ষতি নেই। বরং ব্যক্তিগত সময়টুকু বেড়ে যায়, ভালো কাজে ডিসট্রাকশন নেই। নেই মেসেজের টিংটং! মনে মনে ভাবছি, দিমু নি এইডারে বন্ধ কইরা! ইনস্টাগ্রাম আইডি যে নেই, তাতে কিন্তু আমার জীবন অসার হয়ে যায় নি। সব বন্ধ করে দিয়ে ব্যাগেজ-লাগেজ লইয়া ব্লগে চইলা আসি। কেমুন?
৩.
আসতেছে আরেকটি বইমেলা। নাহ, লেখক হতে পারলাম কই! নিজের একটি যথার্থ গম্ভীরতাপূর্ণ ফটো তুলতে না পারার কারণেই হয়তো লেখক হওয়া গেলো না শেষ পর্যন্ত। আমার অতি চঞ্চল বন্ধুটিও যখন গতবার বই বের করলেন, তার নিজের ‘লেখক ছবিটি’ দেখে আমি চমৎকৃত হই। আকাশের দিকে আড়াআড়ি বেঁকে গালে হাত দিয়ে একটি ‘সুকান্ত ছবি’। ব্যাপারটি কিন্তু কম ঝক্কির নয়।
দুষ্টমনের কারণে আজও গম্ভীর হতে পারলাম না। আমার নিবন্ধিত বান্ধবিটি যতবার একটি লেখক ফটো তুলতে গেলেন, ততবারই এন/জি হয়ে গেলো। শুধু দুষ্টুমনের মুচকি হাসির কারণে। সবসময় যে হাসি তা নয়, শুধু ফটো তুলার সময় তিনি যখন বলেন, ‘গম্ভীর হও’ তখনই হাসিটা পায়। ছোটকাল থেকেই এই হাসি আমার শত্রু হয়ে আছে।
৪.
ব্লগে এসে দুষ্টমন শিষ্ট হয় নি, আর হবেও না। লেখা না পড়েই মন্তব্য দেন, অথবা অন্যের মন্তব্য থেকে ধারণা নিয়ে (অথবা সরাসরি কপি করে) মন্তব্য দেন, এরকম পাঠকের সংখ্যা নেহায়েত কম না। আজকাল পরিচিত ফাঁকিবাজরা আগেই ‘আপনার লেখাটি পড়েছি’ অথবা ‘পুরো লেখাটি পড়েছি’ বলে নিশ্চয়তা দেন। যা হোক, আমার লেখায় তাদের সংখ্যাটি সৌভাগ্যজনকভাবে কম হলেও বুঝতে তো পারি! দুঃখের পোস্টে ‘মজা পেলাম’ অথবা প্রবন্ধ পোস্টে ‘গল্পটি ভালো হয়েছে’ এরকম মন্তব্য যখন পাই, তখন দুষ্টু মন চাড়া দিয়ে ওঠে। আমার নাম ‘আবুল’ কিন্তু আমার মন্তব্যের উত্তরে কেউ হয়তো বললেন, ‘মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ কাবুল ভাই’ তখন ভালো মানুষের মাথা ছান্তা দিতে বাধ্য। দুষ্টু মনের দুষ্টু আঙ্গুলগুলো অনেককিছু বলে দিতে চায়, কিন্তু নবীন ভাইবোনেরা বিভ্রান্ত হতে পারেন এই ভয়ে আই-কন্ঠোল-মাই-আঙ্গুল মোডে থাকি।
বলছি কী.... না পড়লে মন্তব্য দেবার কী দরকার? এবং, পড়লে একটি মন্তব্য/লাইক দিলে কী ক্ষতি? তারচেয়েও বড় কথা হলো, সময় না থাকলে ব্লগে আসার কী দরকার। চাপাচাপি করে কি ব্লগিং করা যায়? ব্লগ লেখা এবং ব্লগ পড়ার জন্য চাপের মধ্যে না থেকে, মনের ইচ্ছায় চললে, আমি মনে করি সেটি হবে সেরা ব্লগিং।
যা হোক... দুষ্টমনকে কীভাবে সোজা করতে হয়, তা বোধহয় আমার কর্তৃপক্ষ টের পেয়েছেন। কর্মস্থলে এসেছে বিভাগীয়/অবস্থানিক পরিবর্তন। খুব বেশি ব্লগিং করার মউক্কা পাবো না এবার। (রেন্ডিয়ার মউক্কা গানের মতো বুমেরাং!) সুখ নাইরে পাগলা!
৫.
নতুন বছরটি ব্লগারদের মনের আনন্দে শুরু হয়েছে। সামু মামু এইবার ব্লগের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষ্যে দারুণ এক আয়োজন করেছিল। লেখালেখির আয়োজন। তাতে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে সেরা লেখকদেরকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। আবার আলাদা পোস্ট দিয়ে জানিয়েও দেওয়া হয়েছে।
কবি ও ব্লগার নেক্সাস একটি মহৎ কাজ সাধন করেছেন, ২০১৫ সালের সালতামামি দিয়ে। সাম্প্রতিককালে এত পরিপূর্ণ ও সর্বব্যাপী ব্লগ সংকলন চোখে পড়ে নি। পুরাতন ও নতুন সকল ঘরানার ব্লগারদের নানা রকমের পোস্ট নিয়ে একটি মেগাপোস্ট। ব্লগাররা তাতে অনেক আনন্দ লাভ করেছেন। অনিয়মিত ব্লগাররা সহজেই গুরুত্বপূর্ণ পোস্টগুলোতে দৃষ্টি দেবার সুযোগ পাবেন। আবারও ধন্যবাদ, কবি নেক্সাস!
তরুণ গল্পকার এবং ব্লগের ‘ভালো পুলা’ অপু তানভীর তার ‘হিট সমাচার’ অব্যাহত রেখেছেন। তাতে ‘হিটাকাঙ্ক্ষী’ ব্লগারদের পরান জুড়িয়েছে। কোন বিষয় শুরু করে চালিয়ে যাওয়া একটি কঠিন কর্ম। তাই চলছি, ‘অপু ভাই সামনে থাহেন, আমরা আছি আফনের ঠিক পিছে’!
ব্লগার কোবিদের কথা খেয়াল আছে নি? ওই যে বিশিষ্ট ব্যক্তিদের জন্মমৃত্যু এবং বিশেষ দিন বিষয়ক পোস্ট যিনি দিতেন। আর কি কেউ এ কাজটি এমন একনিষ্ঠভাবে করতে পেরেছেন? ও হ্যাঁ... আমাদের নূরু ভাই (ব্লগার নূর মোহাম্মদ নূরু) আসার পর কিন্তু কোবিদকে খুব একটা দেখা যায় নাই! যা হোক হয়তো তাদের মধ্যে একটা বোঝাপড়া আছে! কীর্তিমানদের অবদান এবং বিশেষ দিনের তাৎপর্য সম্পর্কে নিয়মিত হালনাগাদ করার জন্য নূরু ভাইকে পর্যাপ্ত ধন্যবাদ দেবার সুযোগ হয় না। কিন্তু ব্লগাররা তো কোন প্রাপ্তির জন্য ব্লগিং করেন না। তবু ধন্যবাদ, নূরু ভাই!
কেউ বলে অপ্সরা, কেউ বলে পরী। তিনি মূলত, শায়মা। ব্লগার শায়মাকে সামনে পেলেই আমি একটি লম্বা সেলাম দেবো, কারণ তিনি তার মোহময় ব্লগিং দিয়ে ব্লগটিকে মাতিয়ে রেখেছেন। বিশেষত নতুন ব্লগারদের উৎসাহ প্রদানে তার কোন বিকল্প নেই।
এরকম আলোচনায় সর্বপ্রথমে থাকা উচিত গল্পকার এবং ব্লগের একনিষ্ঠ প্রদায়ক হাসান মাহবুব। এমুহূর্তে আমার দু’কানের পাশে হাত রেখে বলছি, তিনি সামুর সম্পদ। তার গল্পগুলো যেমন পাঠককে চমকে দেয়, তেমনি নতুন-পুরাতন পোস্টদাতারা তার মন্তব্য পেয়ে অনুপ্রাণিত হয়ে আসছেন। আমিও যখন নতুন ব্লগার, তখনও তিনি অনেক জৈষ্ঠ একজন ব্লগার। দায়িত্বশীল ব্লগিংয়ের মাধ্যমে তিনি নিজের জৈষ্ট্যতাকে গৌরবান্বিত করেছেন।
এ তালিকা শেষ হবার নয়। বলা বাহুল্য, তাদের জন্যই সামহোয়্যার ইন আজকের এই পর্যায়ে আসতে পেরেছে।
এবার সামুর ব্যবস্থাপনা নিয়ে বলছি। বিগত বছরে ব্লগের সার্বিক ইন্টারফেইসে পরিবর্তনের হাত ধরে মডারেশনে এসেছে বিশাল অগ্রগতি। বছরের শেষের দিকে সকলেরই চোখে পড়েছে, কারণ ব্লগারদের উপস্থিতি এবং তাদের আন্তঃযোগাযোগ উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। আশা করছি আরও উন্নতি আসবে!
৬.
২০১৬ সালকে ধরা হয়েছে পর্যটন বর্ষ হিসেবে। দুঃখের বিষয় হলো, বিদেশি পর্যটকদেরকে আকর্ষণ করার মতো পর্যাপ্ত অবকাঠামো দেশে এখনও গড়ে ওঠে নি। তবু কর্তাব্যক্তিরা চেষ্টা করছেন বলে আমাদেরকে বুঝাতে চাচ্ছেন। সুজলা সুফলা শস্য-শ্যামলা নদীময় ও সৈকতময় বাংলাদেশে পর্যটন শিল্পের রয়েছে অভাবনীয় সম্ভাবনা। শুধু দরকার পৃষ্ঠপোষকতা ও তদারকি। নিরাপত্তা ও পরিচ্ছন্নতা। কিন্তু প্রচার ও সচেতনতা না থাকলে সবই ব্যর্থ। আমাদের ব্লগাররা এখানেও পিছিয়ে নেই।
আমাদের পরিব্রাজক ব্লগাররা যথা, সাদা মনের মানুষ ও কামাল উদ্দিন, পাগলা জগাই ও মরুভূমির জলদস্যু, বোকা মানুষ বলতে চায়, সাজিল, জুন, কামরুন নাহার বিথী... প্রমুখেরা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছেন।
বোকা মানুষ বলতে চায়... একজন গুণী ব্লগারের আইডি। তিনি মোটেই বোকা নন। ভ্রমণ পোস্টের সংকলন করে তিনি ভ্রমণ পোস্টগুলোকে একসাথে রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। সেই সাথে ভ্রমণ-পিপাসু পাঠক ও ব্লগারদের তৃষ্ণা মিটিয়ে যাচ্ছেন। কাজটি কঠিন হলেও তিনি করে যাচ্ছেন স্বেচ্ছায় এবং আমার মনে হয়, পরম আনন্দেই। সংকলকদেরকে আমি বরাবরই শ্রদ্ধার চোখে দেখি, কারণ তারা ব্লগের গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ এবং নতুন-পুরাতনের মধ্যে সন্ধিস্থাপনকারী।
নতুন বছরের পরথম পোস্টটি একটু আউলা-ঝাউলা হইয়া গেলো। পাঠকবৃন্দ কিছু মনে করবেন না। মনের কথা যদি বলতে না পারি, তবে ব্লগিং কইরা কী লাভ! আপনারা সকলে ভালো থাকবেন এবং মনের কথা বলে যাবেন। হ্যাপি নিউ ইয়ার! [আনএডিটেড: ৮/১/২০১৬]
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই জানুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৫১