শিরোনাম দেখে অনেকে মনে করতে পারেন বন্ধু বানানর জন্য আরার নিয়ম কি? স্কুল কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় এ পড়ার সময় যত সহজে বন্ধুত্ব গড়ে উঠে, পরবর্তীতে কর্ম জীবনে ব্যাপারটা এতটা সহজ নয়। আবার আপনি হয়তো কোন নতুন শহরে গেলেন সম্পূর্ন অপরিচিত পরিবেশ, তখন হয়তো এই টিপস্ গুলো কাজে লাগতে পারে।
১. মানুষের সহচার্যে সময় কাটানঃ আপনি যদি বন্ধু বানাতে চান তবে প্রথমত আপনাকে মানুষের মাঝে আসতে হবে। ঘরে বসে থেকে, কম্পিউটারে গেম খেলে একা একা সময় কাটালে মানুষের মাঝে আসতে পারবেন না।
২. কোন সংগঠন যুক্ত হউনঃ কিছু সংগঠন আছে যারা সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে কাজ করে যেমন শীত বস্ত্র বিতরন, রক্তদান কর্মসুচি, বন্যার্তদের সাহায্য ইত্যাদি। এই সব সংগঠন গুলিতে স্বেচ্ছা-সেবকরা সংগঠিত হয়ে কাজ করেন। একজন নতুন সদস্য হিসাবে পুরাতন স্বেচ্ছা সেবকরা আপনাকে আন্তরিকতার সাথে বরন করে নিবেন। তাদের সাথে কাজ করতে গিয়ে বুঝতে পারবেন আপনারা একে অন্যের বন্ধু হয়ে গেছেন।
৩. পাড়ার কোন খেলার দলে যুক্ত হতে পারেনঃ আপনি ব্যাডমিন্টন খেলতে পারেন? অথবা ক্রিকেট? একটু আগ্রহ দেখিয়ে যান না পাড়ায় খেলতে থাকা দলটির কাছে! যুক্ত হয়ে যান আর অনাবিল আনন্দে মেতে উঠুন। ছোট-বড় মিলে গড়া দলে আপনিও হয়ে উঠতে পারেন একজন সদস্য।
৪. মানুষের সাথে কথা বলুনঃ আপনি সংগঠনের, ক্লাবে বা পাড়ার কোন দলের সাথে যুক্ত হতে পারেন তবে আপনি যদি কথা না বলে চুপচাপ থাকেন তবে হয়তো বন্ধু বানানর সুযোগ গুলি মিস করবেন। আপনি হয়তো একটু লাজুক টাইপের। মানুষের সাথে ঠিক মত কথা বলতে পারেন না। কি বলতে কি বলে ফেলবেন বা মানুষ আপনার কথা শুনে কি মনে করবে, এসব নিয়ে ভাববেন না। আপনার নিজের ভিতরে সামান্য পরিবর্তন আনুন আপনি কথা বলতে শুরু করুন। যে মানুষটার সাথে হয়তো প্রতিদিন দেখা হয়, পাশ দিয়ে কিছু না বলেই হেটে যান, তাকে একটা সালাম দিন। কিনবা বলুন ’আপনি ভাল আছেন?’ আপনার এই পরিবর্তনের সাথে সাথে তিনি ও হয়তো আপনার দিকে এক কদম এগিয়ে আসবে। কথা বলুন পাড়ার মুদির দোকানীর সাথে। শুধু তাই কেন? কথা বলুন বাসে আপনার পাশে বসে থাকা যাত্রীটির সাথে। অপরিচিত ব্যক্তির সাথে হয়তো বেশিক্ষন কথা চালিয়ে যেতে পারবেন না তবে যতক্ষন আপনারা একসাথে থাকবেন একটা অদৃশ্য বন্ধন অবশ্যই তৈরী হবে। একটা সময় নিজেকে পরিচয় করিয়ে দিন যে, ” আমার নাম .......... আমি ....... কোম্পানীতে জব করি”। স্বাভাবিক ভাবে অপর ব্যক্তি ও তার নাম বলবেন, আপনি নামটি মনে রাখুন এবং কথার এক পর্যায়ে তার নামটি উচ্চারন করুন। আপনার মুখে নিজের নাম শুনে আপনার প্রতি আরও উৎসাহিত হবে আর সেই সাথে আপনাদের মাঝে জড়তা অনেকটাই কেটে যাবে।
৫. চোখের দিকে তাকান এবং হাসুনঃ পরিচিত বা অল্প-পরিচিতদের চোখের দিকে তাকান একটু সুন্দর করে হাসুন। হাসির চেয়ে বড় যাদু কি আছে? বিশেষ কোন সমস্যা না থাকলে চোখের সানগ্লাসটি খুলে রাখুন, অথবা হাত এমন ভাবে ভাঁজ করে বসে থাকবেন না যেটা ইঙ্গিত করে ”আমি কারো সাথে কথা বলব না”। মুখে আলাদা করে গম্ভীর ভাব নিয়ে আসবেন না। এই ধরনের ভাব নিজে থেকে একটা দুরত্ব তৈরী করে দেয়।
বর্ণনা দিলে পোস্টটি অনেক বড় হয়ে যাবে শুধু কয়েকটি পয়েন্ট উল্লেখ করা করছি, আপনার পরিবেশেরর সাথে মিলিয়ে নিয়েন।
৬. গেট টুগেদার এর আয়োজন করুনঃ পিকনিক, নববর্ষ, ঈদ ইত্যাদি উপলক্ষ্যে একত্রিত হউন।
৭. বন্ধুর প্রতি বিশ্বস্ত থাকুনঃ সু-সময়ে সবাই বন্ধু, অসময়ে কেউ কারো নয়- এই ধারনা থেকে বেরিয়ে এসে বন্ধুর জন্য সময়, শ্রম ও অর্থ ব্যবহারের জন্য কিছুটা বরাদ্দ রাখুন। অন্তত বিপদের সময় ক্লান্ত বন্ধু যেন হাত রাখার জন্য আপনার কাঁধটা যেন পায়। বন্ধুর কোন গোপন কথা/ দুর্বলতা সকলের সামনে প্রকাশ করবেন না।
৮. মনে রাখুনঃ বন্ধুদের জন্মদিন, বিবাহ-বার্ষিকী ইত্যাদি মনে রাখুন ও ছোট একটা সারপ্রাইজ গিফট দিন।
৯. নির্ভরশীল হউনঃ যদি কোন বন্ধুর সাথে দেখা করার কথা থাকে, তবে তাকে অযথা অপেক্ষা করাবেন না।
১০. যোগাযোগ রক্ষা করুনঃ বন্ধুদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করুন। ফোনে, ফেসবুকে বা মেসেজ পাঠিয়ে ও তাদের সাথে যুক্ত থাকুন।
সতর্কতাঃ
১. নতুন বন্ধুদের জন্য পুরাতন বন্ধুদের ত্যাগ করবেন না। এই ভুলটা আমরা অনেকেই করে ফেলি। "Make new friends, but keep the old. One is silver and the other gold".
২. বন্ধুদের প্রতি কর্তৃত পরায়ন আচরন করবেন না।
৩. আড়ালে তাদের বদনাম করবেন না।
৪. আত্মউন্ননের জন্য নিজেকে পরিবর্তন করতে পারেন, তবে নতুন বন্ধু তৈরীর উদ্দেশ্য তাদের মাঝে আপনাকে মানিয়ে নেওয়ার জন্য তাদের মত হওয়ার দরকার নাই।
মানুষের জীবনে প্রকৃত বন্ধু এক রকম আর্শীবাদ। একটা বয়সে এসে উপনিত হলে বুঝবেন আপনার সমস্ত জীবনের অর্জন আপনার বন্ধুরা। যারা আপনার আনন্দ ও দুঃখকে আপন করে নিবে। শত প্রতিকুল পরিস্থিতিতে আপনার সাথে থাকবে।