আমি একটা অফিসের আই.টি বিভাগে কাজ করি। চার তলা ভবনের চতুর্থ তলায় দুইটি বিভাগে মোট কর্মরত ১৮ জন। হাসি আনন্দের মাঝে কেটে যায় আমাদের অফিস সময়। আমাদের আই.টি শাখার কাজ গুলো রুটির মাফিক এবং এক ঘিয়েমি টাইপের। তবে কারো ডাটা এন্ট্রি বা প্রসেসিং এ ভুল হলে এর ফলাফল অনেক দুর পর্যন্ত গড়ায়। কাজ করতে করতে ১১টা/ সাড়ে ১১ টার দিকে পেটটা খিদায় একটু মোচড় দিয়ে উঠে। ক্ষুধা পেটে কাজ ঠিক মত আগায় না, পিয়ন বাদে আমরা সবাই মিলে একটা ফান্ড তৈরী করলাম। ফান্ড ম্যনেজমেন্টের দায়িত্বে একজন থাকলেন, আমাদের টেবিলে সময় মত হালকা নাস্তা চলে আসলো। যাক একটা সমস্যার সমাধান হলো। বিভিন্ন অফিসে অফিসিয়ালি নাস্তা দেওয়ার ব্যবস্থা থাকলেও আমাদের অফিসে না থাকায় নিজেদেরই ব্যবস্থা করে নিতে হয়েছে।
এই কথা যখন লিখছি তখন আমার পুরানো অফিসের কথা মনে পড়লো। সেই অফিসের পরিসর অনেক ছোট ছিল, তবে এমন নাস্তার পাশাপাশি কোন কোন দিন বোনাস নাস্তার ও ব্যবস্থা হতো। বিশেষ করে আমাদের আপারা এই বিষয়ে অগ্রগামী ছিল। আমরা ছেলেরা পিছিয়ে থাকতাম।
অনিমা আপা পূজার সময় নাড়ু, বাতাসা, মিষ্টি, দই কত কিছু আনতেন। বেচারা বাসে আসতেন আর বড় টিফিন বাটিতে করে কত কষ্ট করে এসব আনতেন। এখন ভাবলেও কেমন অবাক লাগে। মৌসুমী আপার বাড়ি মেহেরপুর, তিনি আনতেন আম, কাঠাল, মিষ্টি। শায়লা আপা অনেক গুলো পায়েশ রান্না করে আনতেন। আমাদের ভাই থাইল্যান্ড বা চীনে গেলে বিদেশী ফল ও জুটতো। সাহিদা আপা তার এলাকার স্পেশাল রস মালাই নিয়ে আসতেন। এ ছাড়া তার হাতের নুডুলস্ রান্না ছিল অসাধারন। নাস্তার কিছু উদ্ভট এক্সপেরিমেন্ট ও তিনি করতেন। একদিন করলেন কলিজা ভুনা দিয়ে মুড়ি মাখা, সাথে শসা আর টমেটো কুচি। ওহ্ সেই স্বাদ যেন এখনো মুখে লেগে আছে। এর পর তিনি সবাইকে কফি খাওয়ানো শিখালেন। সবার এমন নেশা হলো যে এর জন্য আমরা আলাদা বাজেট রাখতে শুরু করলাম।
এগুলো বেশ কিছুদিন আগের কথা, তার পরও মনে হয় এইতো সেই দিনের ঘটনা। আসলে ছোট ছোট স্মৃতি মানুষের সম্পর্ককে অটুট রাখে। যে আপাদের নাম বললাম তারা এখন বিভিন্ন অফিসে, আমিও বদলী হয়ে গুলশান অফিসে চলে এসেছি। তারা সবাই ভাল আছেন।
বর্তমান গুলশান অফিসের মুন্নী আপা নিহারী, পরটা আর নুডুস্ রান্না করে নিয়ে আসেন। অসাধারন টেস্ট। শরীফুন্নেসা আপা বিভিন্ন ফল নিয়ে আসেন। জেসমিন আপা পায়েস, পিঠা নিয়ে আসেন। এই তো কিছুদিন আগে তার একটা ডি.পি.এস এর মেয়াদ পুর্ন হওয়ার খুশিতে ইগলু আইসক্রিম খাইয়েছেন। এক ঘিয়েমি কাটানর জন্য আমরা এখন জন্মদিন পালন শুরু করেছি।
চল্লিশ এর মধ্য বয়সি থেকে ২৫ বছরের নুতন যুবক সবাই আমরা অফিস টাইমটা এনজয় করছি। একই সাথে লক্ষ্য রাখি যেন কাজের কোন ক্ষতি না হয়। একজনের সাথে অন্য জনের বোঝা-পড়া অনেক চমৎকার। সুখ খোঁজার জন্য আমরা কত দুরই না যাই, কিনবা কত কিছুই না ভাবি, সুখ আনন্দ যে একেবারে আমাদের হাতের নাগালে তার সন্ধান কত জনই বা করি? আমাদের এই পরিবারের জন্য সবাই দোয়া করবেন।
জন্মদিন পালন নিয়ে অভিজ্ঞতা আর একদিন লিখবো।
সালেহ্ ভাই এর জন্মদিনেঃ
তার জন্য সামান্য উপহারঃ