৬ জানুয়ারী বিকেল ৩ ঘটিকা। অফিসিয়াল কাজে খুব ব্যস্ত। অনেক্ষন ধরে মোবাইল বেজে চলছে। বিরক্ত হয়েই মোবাইল রিসিভ করলাম।
- হ্যালো, কে বলছেন?
- আমি দূর্ণীতি দমন কমিশনের ঢাকা অফিস থেকে এডি বলছি। আপনি কি মনিরুল ইসলাম, সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা, রাঙ্গামাটি সদর বলছেন?
- কিছুটা বিস্মিত হয়ে বললাম, বলছি।
- আপনিতো ২৫ বিসিএস, নীজ জেলা মুন্সিগঞ্জ?
- জ্বি।
- আপনার বিরুদ্ধে আমাদের কাছে বেশকিছু অভিযোগ আছে। আপনি এখনি রাঙ্গামাটি দূর্ণীতি দমন কমিশনের ডিডি কে ফোন করুন। তার মোবাইল নম্বর -----।
ফোন করলাম ডিডিকে। সালাম দিয়ে পরিচয় দিতেই তিনি বলে উঠলেন, আপনাকে নিশ্চয় ঢাকা থেকে এডি ফোন দিয়েছিল? আপনার বিরুদ্ধে আমাদের কাছে অভিযোগ আছে। অভিযোগসমুহ -----। এ বিষয়ে আপনার বক্তব্য কি?
- বললাম, অভিযোগসমুহ সঠিক নয়।
- কিন্তু আমাদের প্রাথমিক তদন্তে অভিযোগ প্রমানিত হয়েছে। এ বিষয়ে আমরা ঢাকায় রিপোর্ট পাঠিয়ে দিয়েছি।ফাইল এখন এডির টেবিলে।
- বললাম, আপনাদের তদন্তে কেউতো আমার সাথে দেখা করেনি। আমার অফিসেও আপনাদের কেউ আসেনি।
- দেখুন তর্ক করবেন না।ওটা ছিল গোপন তদন্ত, তাই আপনি জানেন না। এখন শুনুন, আমরা আপনাকে সাহায্য করতে চাচ্ছি। আপনি ঢাকার এডিকে ফোন করুন। তাকে বলুন আপনার পক্ষে রিপোর্ট দিতে। অনুরোধের সুরে বলবেন। কোন তর্ক করতে যাবেন না
- আমি অনুরোধ করলেই কি এডি আমার পক্ষে রিপোর্ট দিবেন?
- জি, দিবেন। তার সাথে আমার কথা হয়েছে।
ফোন করলাম এডিকে। তাকে বললাম, ডিডি বলেছে আমার বিরুদ্ধে ----- অভিযোগ আছে। অভিযোগসমুহ সঠিক নয়।
- কিন্তু প্রাথমিক তদন্তের রিপোর্ট আপনার বিরুদ্ধে। রিপোর্ট আমার হাতে। আমি যদি লেখি আপনার বিরুদ্ধে অধিকতর তদন্তের প্রয়োজন, আপনি কিন্তু খুব ঝামেলায় পড়বেন।
- কি ঝামেলায় পড়ব? সকল অভিযোগ মিথ্যা। তদন্তে আমি ডিফেন্স করলেই তা প্রমান হয়ে যাবে।
- শুনুন মিঃ মনিরুল ইসলাম। আপনি খুব স্ট্রেট কথা বলছেন। আমিও আপনার সাথে স্ট্রেট কথা বলি। চূড়ান্ত তদন্তের রিপোর্ট যদি আপনার পক্ষেও যায়, তদন্ত চলাকালীন সময় কিন্তু আপনাকে খুব ঝামেলা পোহাতে হবে। আপনি সাসপেন্ড হতে পারেন, বার বার আমাদের অফিসে আসতে হতে পারে এবং আরো অনেক ধরনের ঝামেলা। বেটার আপনি আমার লোকদেরকে দশ হাজার টাকা চা-নাস্তা খেতে দিন, আমরা ফাইল ক্লোজ করে দিচ্ছি। আমার মনে হচ্ছে আপনি নির্দোষ। তাই আপনার কাছে অনেক কম টাকা চাইলাম। এখন আপনিই সিদ্বান্ত নিন ফাইল কি চলবে নাকি থেমে যাবে।
- ফাইল থামিয়ে দিন। বলুন টাকা কাকে দিতে হবে?
- কাউকে নয়। আপনাকে একটা বিকাশ নম্বর দিচ্ছি, আধা ঘন্টার মধ্যে বিকাশ করবেন।
- ভাই, আধা ঘন্টায় হবে না। ব্যাঙ্ক হতে টাকা তুলতে হবে। চেক বই বাসায়। আগামী কাল আপনি টাকা পেয়ে যাবেন। বিকাশ নম্বরটি দিন।
- শুনুন আপনাকে আমি এক ঘন্টা সময় দিলাম। আর বিকাশ করার সময় ফোন দিবেন আমি তখন বিকাশ নম্বর দিব। মনে রাখবেন জাস্ট এক ঘন্টা, বলেই ভদ্রলোক লাইন কেটে দিলেন।
অফিসের একজন স্টাফের মোটর সাইকেল নিয়ে ছুটে চললাম। তবে গন্তব্য বাস বা ব্যাঙ্ক নয়, রাঙামাটি দূর্ণীতি দমন কমিশন অফিস। অফিসে ডিডি সাহেবকে পেলাম না। অফিস থেকে তার মোবাইল নম্বর নিলাম। ফোন নম্বরটি ইতিমধ্যে ডিডি সাহেবকে যে নম্বরে ফোন দিয়াছিলাম তার সাথে মিল নেই। ডিডি সাহেবকে ফোন দিয়ে আমার পরিচয় দিলাম।
- জ্বি, বলুন আপনার জন্য কি করতে পারি।
- বললাম, আজ কি আপনার সাথে আমার মোবাইলে কথা হয়েছিল?
- কোথায়, না তো।
ভদ্রলোককে সব কিছু খুলে বললাম। তিনি বললেন, ভাই আপনি প্রতারকদেরর পাল্লায় পড়েছেন। বিষয়টি একেবারেই ভোগাস।
বিষয়টি যে ভোগাস তা অনেক আগেই টের পেয়েছিলাম। নিশ্চিত হতেই দূর্ণীতি দমন কমিশন অফিসে এসেছিলাম। মোটর সাইকেল নিয়ে এবার ছুটলাম থানায়।
ডিউটি অফিসারকে সব খুলে বললাম। ভদ্রলোকের পরামর্শে প্রতারকদের মোবাইল নম্বরসহ থানায় জিডি করলাম। ডিউটি অফিসার থানার ফোন থেকে নম্বরগুলোতে ফোন দিলেন। নম্বর বন্ধ।
থানা থেকে বের হবার সময় দূর্ণীতি দমন কমিশনের প্রকৃত ডিডি ফোন দিয়ে প্রতারকদের মোবাইল নম্বর চাইলেন। তাকে জানালাম, থানায় জিডি করেছি। জিডির ফটোকপি তার অফিসে দিয়ে যাব। ওখানেই প্রতারকদের মোবাইল নম্বর আছে।
বিকেল সাড়ে চারটার দিকে তথাকথিত এডি ফোন দিলান। তাকে জানালাম আপনাকে কোন টাকা দিব না। আপনি যা পারেন করেন।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই জানুয়ারি, ২০১৪ রাত ৯:৫২