বাংলায় ২০০ বছর ব্রিটিশ শাসন তথা শোষন তথা লুটপাটের ইতিহাস সবার জানা। কেউ কি জানেন, ব্রিটিশরা বাংলা থেকে ঠিক কি পরিমান অর্থ লুন্ঠন করেছিল? আসুন এ বিষয়ে একটু ধারনা নেওয়ার চেস্টা করি।
আমরা জানি পলাশী যুদ্ধের পর ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী নবাবের ট্রেজারী লুন্ঠন করেন। নবাবের ট্রেজারী থেকে ১০০ নৌকায় সোনা ও রূপা লুন্ঠন করে ফোর্ট উইলিয়ামে প্রেরন করা হয়। আর্থিক মূল্যে ২.৫ মিলিয়ন পাউন্ড কম্পানীর জন্য এবং ক্লাইভের জন্য ২৩৪০০০ পাউন্ড লুন্ঠন করা হয়। বর্তমান বাজারে এর মূল্য ২২০ মিলিয়ন পাউন্ড বা ২৭,৩৩৫ কোটি টাকা।
অন্যান্য হিসাব-
১৭৫৭ – ১৭৬৪ সাল পর্যন্ত বাংলার সকল নবাব তাদের মসনদ রক্ষার জন্য ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীকে প্রতি বছর মোটা অংকের টাকা প্রদান করত।
১৭৬৪ সালে দেওয়ানী লাভের পর কোম্পানী বাংলা থেকে রাজস্ব আদায় শুরু করে। ব্রিটিশ পার্লামেন্টের তৎকালীন এক বিবরনীতে দেখা যায়, ১৭৭৩ সালে কোম্পানী বাংলা থেকে মোট রাজস্ব আদায় ১৩০৬৬৭৬১ পাউন্ড, ব্যয় ৯০২৭৬০৯ পাউন্ড (মুঘল সম্রাট, নবাবকে প্রদান, সেনাবাহিনী, আমলা, কর্মচারী বেতন ও অন্যান্য ব্যবস্থাপনা ব্যয়)। তাহলে শুধু ১৭৭৩ সালেই কোম্পানী বাংলার রাজস্ব থেকে আয় করে(আদায় ও ব্যয় বিয়োগ করে) ৪.৩৯ মিলিয়ন পাউন্ড যা বর্তমান মূল্য ৩৫১.২ মিলিয়ন পাউন্ড বা ৪৩,৬৩৬.৬ কোটি টাকা । এক বছরে ৪৩ হাজার ৬৩৬ কোটি টাকা হলে প্রায় ২০০ বছর শাসনে কি পরিমান টাকা লুট করেছে কল্পনা করতে পারেন কি? আমি পারছি না।
আমি অর্থনীতির ছাত্র নই। খুব সহজ ভাবে আমি যা বুঝি তা হলো ব্রিটিশ শাসনের পূর্বে আমরা পৃথিবীর অন্যতম ধনী দেশ ছিলাম। আর আজ বিশ্বের অন্যতম দরিদ্র দেশ। ব্রিটিশ শাসনের ৫ বছরের (১৯৬৫ সালের দেওয়ানী লাভ) মাথায় বাংলায় ১ কোটি মানুষ না খেয়ে মারা গেল। রপ্তানী নির্ভর দেশটি পুরোপুরী আমদানী নির্ভর দেশে পরিনত হলো। উচ্চ শুল্ক আরোপ করে আমাদের শিল্প ধ্বংশ করা হলো। অন্যদিকে আমাদের কাছ থেকে পানির দরে কাচামাল কিনে (অন্যান্য প্রতিযোগীদের হটিয়ে মনোপলির মাধ্যমে বা জোর করে, যেমন-নীল) ফিনিশ প্রডাক্ট উচ্চ মূল্যে এদেশের বাজার সয়লাভ করে দেওয়া হলো। মোঘল আমলে বিশ্ব জিডিপির ২৬% ছিল ভারতের অবদান ( তৎকালীন সমগ্র ইউরোপের অবদান ২৩%)। ব্রিটিশরা চলে যাওয়ার সময় তা ৩% এ নেমে এলো। আমাদের সম্পদ লুন্ঠন করে তারা শিল্পন্নত দেশে পরিনত হলো।
এই View this link লিঙ্কে গেলে দেখতে পাবেন লেখক বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত ও যুক্ত-তর্কের মাধ্যমে প্রমান করেছেন ব্রিটিশরা ভারত-পাকিস্তান-বাংলাদেশ থেকে যে পরিমান সম্পদ লুট করেছে বর্তমান বাজারে তার আর্থিক মূল্য ৬০০ ট্রিলিয়ন পাউন্ড। ভারতীয় এই লেখকের দাবী অনুসারে জনসংখ্যা অনুপাতে এর ৪০৯ ট্রিলিয়ন পাউন্ড ভারতের প্রাপ্য। আর বাংলাদেশের প্রাপ্য যদি ৮০ ট্রিলিয়ন পাউন্ড ধরি তবে বাংলাদেশি অর্থে তার পরিমান ৯৯৪০০০০০০ কোটি টাকা যা আমাদের বর্তমান অর্থবছরের বাজেটের(২ লাখ ২২ হাজার ৪৯১ কোটি টাকা) প্রায় ৪.৫ গুন বেশি। এই টাকা বাংলাদেশের ১৬ কোটি লোককে ভাগ করে দিলে এদেশের প্রতিটি মানুষ আজ ধনী হয়ে যেত।
ব্রিটিশদের মতো অন্যন্য ইউরোপিয় দেশ এবং আমেরিকা(তাদেরই বংশধর) এদের কারনেই তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলো আজ দরিদ্র। তাদের লুন্ঠন এখনো শেষ হয়নি। ধনী ইরাকে তেলের কারনে হত দরিদ্র করে দিয়েছে, তাদের কারনে সমৃদ্ধ আফগানিস্তান আজ যুদ্ধ বিধ্বস্ত, খনিজ সমৃদ্ধ আফ্রিকার দেশগুলোর মানুষ পুষ্টির অভাবে মারা যাচ্ছে। সারা পৃথিবীর যুদ্ধ-বিগ্রহ ও অশান্তির মূল কারনই তারা। যুদ্ধ হলেই অস্ত্র বিক্রি, তাবেদার সরকার গঠন, সম্পদ লুট শুধু লাভ আর লাভ।
ডাকাতের বংশধররা আজ সভ্য, শিক্ষিত ও ধনী। আর আমরা অসভ্য, বর্বর ও দরিদ্র।
সুত্রঃ
View this link
View this link
http://www.hvk.org/2010/0310/20.html
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১:০৯