(১)
আমি তখন স্কুলে পড়ি। প্রতিবছর ঈদের দিনের মতো শবে বরাতের দিনটির অপেক্ষায় থাকি।অনেকক্ষেত্রে দিনটি ঈদের চাইতে বেশি আনন্দের মনে হতো। দাদি-মা-বোন সকাল থেকে রুটি বানাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। নিজেদের খাওয়ার জন্য এবং প্রতিবেশী-আত্নীয় স্বজনদের বিলি করার জন্য চালের রুটি। আর গরীবদের বিতরনের জন্য আটার রুটি। ঘরে বানানো হতো রকমারি স্বাদ ও ডিজাইনের হালুয়া। হালুয়াতেও ছিল ধনী-দরিদ্র বৈষম্য। সকাল থেকেই মায়ের কাছে বসে হালুয়া-রুটি বানানো দেখতাম। ইচ্ছে হলেই নিয়ে খাওয়া শুরু করতাম। যতো খুশি ততো, কোন মানা ছিল না। কোন ভিক্ষুক দরজায় কড়া নাড়লেই হালুয়া-রুটি নিয়ে ছুটে যেতাম বিলি করতে। বিকেল প্রতিবেশী-আত্নীয় স্বজনদের বাসা থেকে হালুয়া-রুটি আসা শুরু হতো। বাড়ীর সিনিয়র ছেলে সদস্যদের উপর দায়িত্ব ছিল বিভিন্ন বাড়িতে হালুয়া-রুটি পৌঁছে দেওয়া। নিজেদের ও বিভিন্ন বাসা থেকে আসা হালুয়া-রুটি খেতে খেতে মুখটা একেবারে মিষ্টি মিষ্টি হয়ে যেত।
(২)
আমি তখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি । হল জীবনের প্রথম শবে বরাত। মনের মধ্যে চাপা কষ্ট। হালুয়া-রুটি খেতে খুব ইচ্ছে করছে। কিন্তু কোথায় পাই? বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজারে ছুটে গেলাম। কিন্তু নাহ, এ বস্তু কোথাও বিক্রি হয়না। অনেক দূরে মা হালুয়া-রুটি বানাচ্ছে আর চোখ মুছছে। আদরের ছেলেটি এবার হালুয়া-রুটি খেতে পারবে না। সন্তানের জন্য ফ্রিজে সকল ধরনের হালুয়া রেখে দিলেন। ছেলে আসলে চালের রুটি বানিয়ে দিবে। এ বছর মায়েরও হালুয়া-রুটি তেমন খাওয়া হয়নি। ছেলে ফিরলে একসাথে খাওয়া যাবে।
(৩)
গতকাল ছিল শবে বরাত। সকালেই স্ত্রী জানাল সে হালুয়া-রুটি বানাতে পারবে না। অবাক হইনি। কয়েকবছরই এমনটি হচ্ছে। তাকে দোষও দিচ্ছি না। বেচারা বিজনেস ও সংসার নিয়ে খুব ব্যস্ত থাকে। তাছাড়া হালুয়া-রুটির কালচারেরও অনেক পরিবর্তন হয়েছে। বিকেলে স্ত্রী হাইওয়ে সুইটস হতে রেডিমেট হালুয়া সেই সাথে মিষ্টি, সন্দেশ কিনে আনল। আমার কোন সমস্যা হয়নি। নতুন কালচারে দিন দিন অভ্যস্ত হয়ে যাচ্ছি। তবে মাঝে মাঝে সন্তানের কথা মনে পড়ে। শবে বরাতে হাতে তৈরি হালুয়া-রুটির আনন্দ সে দেখল না। কিংবা কে জানে! এই জেনারেশনের ছেলে হয়তো তৈরি খাবারের চাইতে রেডিমেট খাবারই বেশি পছন্দ করে।
পূনশ্চঃ আমি জানি মা এবছরও আমার জন্য হালুয়া ফ্রিজে রেখে দিবে।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে জুন, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৫০